যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক লবিয়িস্ট নিয়োগ করেছে বিএনপি। বড় অঙ্কের অর্থ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে একটি বড় লবিং ফার্ম নিয়োগ করে দলটি।একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নস্যাৎ করাই ছিল এ চুক্তির প্রথম উদ্দেশ্য। সহসাই আরেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেয়া, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা মার্কিন প্রশাসন ও আইন প্রণেতাদের কাছে তুলে ধরার জন্য কাজ করছে মার্কিন লবিং ফার্মটি। একজন ব্রিটিশ আইনজীবীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মার্কিন লবিং ফার্মের সঙ্গে যোগাযোগ চুক্তি সম্পাদন ও নিয়মিত তথ্য প্রদানের জন্য। মহাজোট সরকারকে আন্তর্জাতিকভাবে বেকায়দায় ফেলতেই বিএনপি এই ফার্ম নিয়োগ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক লবিং ফার্ম 'একিন গাম্প স্ট্রস হাওয়ার এন্ড ফেল্ড'কে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বিএনপির জন্য লবিং করতে নিয়োগ দেয়া হয়। যখন আন্দোলনের ডাক দিয়ে খালেদা জিয়া নিজ রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন। দলটির হয়ে এ চুক্তিতে সহায়তা করেন বিট্রিশ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান, যিনি যুদ্ধাপরাধীর অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াত নেতাদের হয়ে কাজ করছেন।আগামী ১৭ নভেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রিভিউ আবেদনের শুনানি রয়েছে। একই দিনে জামায়াতে ইসলামী নেতা আলী আহসান মোহাম্মদমুজাহিদের রিভিউ শুনানি হবার কথা রয়েছে। এবারই প্রথম বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় কোন নেতার যুদ্ধাপরাধের দ- কার্যকর খুবই সনি্নকটে এসে পড়েছে।এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সংবাদকে বলেন, তারা তো আগেও এরকম করেছে। লবিয়িস্ট নিয়োগ করে যুদ্ধাপরাধের বিচার বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে। যতো চেষ্টাই করুক না কেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানো যাবে না।বিএনপির সঙ্গে একিন গাম্পের চুক্তি হওয়া নথিটি সংবাদ'র কাছে রয়েছে। প্রাপ্ত চুক্তিপত্র ও শর্তগুলো পর্যালোচনা করে জানা যায়, ব্রিটিশ আইনজীবীর মাধ্যমে বিএনপি প্রথম পর্যায়ে এক লাখ ২০ হাজার ডলার দেয় ফার্মটিকে, যা টাকায় দাঁড়ায় প্রায় ১ কোটি টাকা। আর প্রতিমাসে মার্কিন ফার্মকে দেয়া হচ্ছে ৪০ হাজার মার্কিন ডলার, যা টাকায় দাঁড়ায় প্রায় ৩২ লাখ টাকা। কাজের মাত্রা ও ধরন বিবেচনায় মাসিক ফি দ্বিগুণ বা তারও বেশি হতে পারে বলে ওই চুক্তিতে লেখা রয়েছে। ফার্মটি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের বিরুদ্ধে মার্কিন নীতিনির্ধারক, সুশীল সমাজ, থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম এবং সিনেটর ও কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে যোগাযোগ, তথ্য প্রদান ও জনমত তৈরির কাজ করবে।'একিন গাম্প স্ট্রস হাওয়ার এন্ড ফেল্ড' পরিচিতি শুধু 'একিন গাম্প' নামে। ২০১৪ সালে প্রায় ৩৬ মিলিয়ন ডলার আয় করে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় লবিং ফার্ম হিসেবে স্বীকৃতি পায়েছে। এদের কেন্দ্রীয় অফিস যুক্তরাষ্ট্রে হলেও উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার ২১ দেশে রয়েছে এদের শাখা। আর তাদের ১৮শ' নির্বাহী রয়েছে বিশ্বজুড়ে। ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ফার্মটির অন্যতম অংশীদার পরিচালক মার্স সি হ্যামারসন এবং বিএনপির পক্ষে ব্রিটিশ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান চুক্তিটি স্বাক্ষর করেন। মার্স সি হ্যামারসন লবিং ফার্মটির লন্ডন ও দুবাই অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত।'একিন গাম্প' ২০১৫ সালে প্রথম চুক্তি করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল-বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সঙ্গে। ফার্মটির ক্লায়েন্ট তালিকায় ২৮ ভিআইপি রোড, নয়াপল্টন, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ, এ ঠিকানায় বিএনপির নাম রয়েছে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি চুক্তিটি সম্পাদিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির কারণে উক্ত চুক্তিটি নিবন্ধন করা হয় 'ফরেন অ্যাজেন্ট রেজিস্ট্রশন অ্যাক্ট' (ফারা) -১৯৩৮ এর দ্বারা। যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ওএমবি-১১২৪-০০৬। যার মেয়াদ ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল পর্যন্ত।মার্কিন সরকারের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস-এর নির্ধারিত ফরমে লবিং ফার্মটি তাদের কার্যক্রমের বিবরণ হিসেবে বিএনপির সঙ্গে চুক্তির কথা উল্লেখ করেছে। বিবরণে বিএনপির পক্ষে ব্রিটিশ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান, ব্যারিস্টার এট ল-এর নাম, ঠিকানা ও বিস্তারিত তথ্য রয়েছে।ব্রিটেনের প্রখ্যাত আইনজীবীদের চেম্বার লন্ডনের নাইন বেডফোর্ড রো-তে আন্তর্জাতিক আইন নিয়ে কাজ করেন টবি ক্যাডম্যান। ২০১০ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করেন তিনি। জামায়াতে ইসলামীর নেতা যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজম, মতিউর রহমান নিজামীসহ অভিযুক্ত নেতাদের পক্ষে পশ্চিমা দেশগুলোতে প্রচার ও নানা ব্যাখ্যা দেয়ার কাজ করেন টবি ক্যাডম্যান। এই আইনজীবী কোন কোন যুদ্ধাপরাধীর পরিবারের সদস্যদেরও আইনি পরামর্শ দেন। জাতিসংঘেও তিনি যুদ্ধাপরাধের মামলার কাগজপত্র জমা দেন।বিএনপির লবিং ফার্ম নিয়োগের ব্যাপারে জানেন না দেশের বেশিরভাগ নেতৃবৃন্দ। তবে ওয়াশিংটন ডিসি ও নিউইয়র্কে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা অবস্থান করছেন। তারা বিভিন্ন সময়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক, আলোচনা করে থাকেন। এদিকে লবিং ফার্ম নিয়োগের বিষয়ে বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে চাওয়া হলে তারা এ বিষয়ে অবহিত নন বলে জানান। এ বিষয়ে তারা বলেছেন, এ বিষয়ে তার কিছু জানা নেই তবে লবিংয়ে কোন দোষ নেই।
http://www.thedailysangbad.com/first-page/2015/11/05/33318
__._,_.___