On Thursday, December 3, 2015 10:42 AM, Muhammad Ali <manik195709@yahoo.com> wrote:
শেখ হাসিনার জন্য দু:খ হয়!
03 Dec, 2015
বাংলাদেশে কেউ কি কখনো ভেবেছিল সাকাচৌ বা মুজাহিদদের মত তথাকথিত হাই প্রোফাইল নেতাদেরও বিচারের রায়ে ফাঁসি হতে পারে এবং সেই রায় দ্রুততার সাথে কার্যকরও হতে পারে? এমন কি স্বয়ং সাকাচৌ বা মুজাহিদও কারাগারে বসে জীবদ্দশায় তা ভাবতে পেরেছিল? অথচ আজ তা চরমভাবে বাস্তব। উদ্বেগে কত ভ্রু কুঁচকে উঠেছে! ফাঁসি যদি কার্যকর হয়ও, তার প্রতিক্রিয়ায় দেশ জুড়ে যে তান্ডব শুরু হবে তা কি সরকারের পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব হবে? কী আশ্চর্য!ফাঁসি হবার পরেও কোথাও দৃশ্যমান তেমন কোন তান্ডব নেই, আছে কিছু কাগুজে বিবৃতি আর মিনমিনে প্রতিবাদ। বরং দেশ-বিদেশ বাঙালিদের মধ্যে চলছে আনন্দ-উল্লাস-উদযাপন। দীর্ঘ চুয়াল্লিশ বছর পরে মানবতা বিরোধী অপরাধে শীর্ষ দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি হয়েছে। ধীরে ধীরে বাংলাদেশ কলঙ্কমুক্ত হচ্ছে। তবে কলঙ্ক মোচনের এই প্রক্রিয়া মোটেও সহজ ছিল না।
ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী ইয়াজউদ্দিন – ফখরুদ্দিন সরকারের আমলে, বাংলাদেশে যখন অলিখিত সামরিক শাসন চলছে, তখন অস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকে জাস্টিস ফর বাংলাদেশ ১৯৭১ এর নেতৃত্বে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের দাবিতে নতুন পর্যায়ে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। সেই আন্দোলন তখন বিশ্বব্যাপী বাঙালিদের মাঝে অভূতপূর্ব সাড়া জাগিয়েছিল। স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন, কিন্ত শেষ করতে পারেননি। তার আগেই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। নব্বই দশকের শুরুতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে নতুন করে দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু হয়। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গঠিত গণ আদালতে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী- নরঘাতক গোলাম আযমের প্রতীকী মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে এই আন্দোলনের গতি খানিকের জন্য শ্লথ হয়ে যায়। সিডনিতে ২০০৭ সালে নতুন পর্যায়ে আন্দোলনটি আবার শুরু হয় যা একটু আগেই লিখেছি। এটি ছিল সে সময়ে তারুণ্যেরও প্রাণের দাবী।
গণ মানুষের এই প্রাণের দাবিটি ২০০৮ সালে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি অনুধাবন করতে ব্যর্থ হলেও আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে অন্তর্ভুক্ত করে। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভূমিধ্বস বিজয়ের পেছনে এটিও অন্যতম কারণ বলে অনেকে মনে করেন। সমস্যাটা শুরু হয় সে সময় থেকেই। জামায়াত- বিএনপির বাইরেও অনেকে বলা শুরু করেন যে, এটি ছিল স্রেফ নির্বাচনে জয়লাভের কৌশল। আওয়ামী লীগ কখনোই এই বিচারটি করবে না। বিচারের লক্ষ্যে যখন বিশেষ ট্রাইবুন্যাল গঠিত হল, তখনো সেই একই আওয়াজ। এটা আইওয়াশ, বিচার হোক তো আগে! প্রকাশ্য- অপ্রকাশিত জামায়াত-বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীরা সুকৌশলে এই সংশয়গুলো ছড়িয়ে দিতে লাগল, আর সেই ফাঁদে বুঝে কিংবা না বুঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অনেকেই পা দিতে থাকল।
২০১৩ সালের পাঁচই ফেব্রুয়ারী স্পেশাল ট্রাইবুনালের রায়ে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করা হল। আর যায় কোথায়? সে কি উচ্চকন্ঠ ছুপা জামায়াতিরা! 'বলেছিলাম না, এ রায় লোক দেখানো, প্রহসনের!' আরো কত কী? রায়ের বিরূদ্ধে আপিলের সুযোগ ছিল শুধু আসামী পক্ষের, জাতীয় সংসদে সেটির সংশোধন করা হল। পরবর্তীতে আপিলের মাধ্যমে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় হল, কিন্তু সন্দেহ তবু দূর হয় না। রায়ের বিরূদ্ধে আসামী পক্ষ রিভিউ করতে পারবে কী না তা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আরেক প্রস্থ সংশয়! এমন কী কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়ে গেলে বলা হল এটা কেবল আসন্ন নির্বাচনী বৈতরণী পেরোনোর জন্যই! আর প্রতিবার এইসব সংশয়ের তীর প্রধানত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকেই তাক করা থাকত।
একদিকে বিচার নিয়ে সরকারের আন্তরিকতা ও শক্ত অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, অন্যদিকে এই বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করবার জন্য বিদেশী লবিস্ট নিয়োগ করে কোটি কোটি ডলার খরচ করেছে জামায়াত। এইসব লবিংয়ের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে যুদ্ধাপরাধীদের রায় কার্যকর যাতে না হয় তা ঠেকাতে জাতি সংঘ, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মত প্রতিষ্ঠানও শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করেছে। কিন্তু কোনকিছুতেই ফাঁসি ঠেকানো যায়নি। আর লক্ষ্যে অবিচল থেকে সব অন্যায় চাপ শক্তভাবে মোকাবেলা করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অথচ তাঁকেই আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানের জন্য ছুপা জামায়াতীদের কত ছল!
সম্প্রতি দুই শীর্ষ নাটের গুরু যুদ্ধাপরাধী সাকাচৌ এবং মুজাহিদের ফাঁসি নিয়েও কম নাটক হল না। এমন কী ফাঁসি যখন প্রায় নিশ্চিত, রিভিউ শুনানী চলাকালিন মুজাহিদের মামলার পরে সাকাচৌর শুনানী সেদিন হবে না বলার সাথে সাথেই সেই একই কায়দায় সংশয়ের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দেওয়া হল। একজন আমাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করল, সাকাচৌর রিভিউ শুনানি কেন হল না? কবে হবে তাও কেন বলা হল না। কী মুস্কিল! আমি বললাম, আদালত মনে করেছে সেদিন শুনানি হবে না তাই হয়নি। নিশ্চয়ই খুব তাড়াতাড়িই হবে। মামলার এই পর্যায়ে এসে এসব সংশয় অমূলক। প্রত্যুত্তরে পিলে চমকানো তথ্য পেলাম, সাকাচৌর ফাঁসি ঠেকাতে নাকি লন্ডনে প্রচুর টাকাপয়সার লেনদেন হয়েছে। তার প্রভাবেই রায় নিয়ে নাকি টালবাহানা চলছে, শেষমেষ কী হয় দেখেন! আবার পরদিনই রিভিউ প্রত্যাখাত হয়ে যখন সাকাচৌ- মুজাহিদ যুগলের ফাঁসি বহাল থাকল, তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম, লন্ডনে দেওয়া টাকার এখন কী হবে? ভদ্রলোক চুপ, কোন জবাব দিতে পারলেন না।
রিভিউ শুনানীর কয়েকদিন আগে থেকেই
সিডনি প্রবাসী এক সাংবাদিকের ফেসবুকে একের পর এক স্ট্যাটাস দেখলাম। দুই শীর্ষ ঘাতকের বিচার নিয়ে তিনি সকাল-বিকাল ফেসবুকে বিভ্রান্তি ছড়াতে লাগলেন। তিনি নাকি তার ঢাকার সাংবাদিক বন্ধুদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ সব খবর পেয়েছেন। তার সন্দেহগুলো ছিল মূলত সন্মানিত প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে। মন্তব্য কলামে অনেককেই দেখলাম সেই সাংবাদিকের সন্দেহের সাথে তাল মেলাতে। তখন আবার মাননীয় বিচারপতি ওই সময়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদানের লক্ষ্যে সিডনিতেই ছিলেন। সৌভাগ্যক্রমে সে সময়ে আমাদের কয়েকজনের মাননীয় প্রধান বিচারপতির সাথে একটি সৌজন্যমূলক মতবিনিময় সভায় দেখা হয়েছিল। সেখানে যারা উপস্থিত ছিলেন, আমরা কয়েকজন বাদে তাদের অধিকাংশই পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে আইন পেশার সাথে সম্পৃক্ত। আলোচনাটাও হয়েছিল প্রধানত অ্যাকাডেমিক, প্রসঙ্গক্রমে বাংলাদেশের চলমান যুদ্ধাপরাধের বিষয়টিও উঠে এসেছিল। সবকিছু শুনে মনে হয়েছে, বিচারের আইনগত দিকটি কোনরকমের বাইরের হস্তক্ষেপ ছাড়া আইনানুযায়ীই চলছে। ফাঁসি কার্যকর হবার পরেও দেখলাম কেউ কেউ থামেনি। ঢাকার একজন বিপ্লবী সাংবাদিক লিখলেন, শেখ হাসিনার দুই উপদেষ্টা যারা সাকাচৌর ঘনিষ্ট, তারা নাকি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সাকাচৌর ফাঁসি ঠেকাতে তৎপর ছিলেন! কল্পনার গরু গাছে চড়তেও সময় লাগে না! ফাঁসি কার্যকর হবার পরে এদের কেউ কেউ আবার বিশাল নিবন্ধ লিখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা উদ্ধার করে ফেলে, আর বিশাল লেখাটার এককোনায় কোনরকমে শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো থাকে! অথচ দুদিন আগেই যে তারা ফাঁসির রায় কার্যকর নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছিল, তাও বেমালুম ভুলে যায়।
এদের তৎপরতা, লেখালেখি ভাল করে খেয়াল করলে দেখা যায় ছলে-বল-কৌশলে এরা শেখ হাসিনার সমালোচনায় ব্যস্ত। এদের চোখে প্রায় সময়ই শেখ হাসিনার চলন বাকা! এসবের মাধ্যমে এরা সুকৌশলে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেয়। বারবার তারা চাতুর্য্যের সাথে এই অপকর্মটি করে। আর এর ফলে তারা কিছু দুর্বল ঈমানের লোকজনকে বিভ্রান্ত করতে সফলও হয়। চিহ্নিত জামায়াত-শিবিরের চেয়ে এই ছুপা জামায়াতি গ্রুপও কম ভয়ংকর না।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে দেশে- বিদেশে বিভিন্ন পর্যায়ে আমরা অনেকেই দাবি জানিয়েছি ঠিকই, তবে শেখ হাসিনার দৃঢ় অবস্থান না থাকলে আজও হয়তো এই দাবিটি বাস্তবায়িত হত না। নিজের জীবনের ঝুঁকিকে উপেক্ষা করে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করছেন। আর আমরা সুযোগ পেলেই তাঁর ভূমিকাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছি। কেন এবং কী উদ্দেশ্যে এই অন্যায্য আচরণ? কারাই বা এরা?
উৎসঃ banglamail24
__._,_.___