Banner Advertiser

Tuesday, December 15, 2015

[mukto-mona] বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের বীজ ও বিষবৃক্ষ



বুদ্ধিজীবী হত্যা

বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের বীজ ও বিষবৃক্ষ

মফিদুল হক | আপডেট: ০১:২৫, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৫ | প্রিন্ট সংস্করণ

      

রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে হত্যাযজ্ঞ, ১৯৭১মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের প্রাক্কালে, পাকিস্তানি বাহিনী ও তার দোসরদের চূড়ান্ত পরাভব স্বীকারের আগমুহূর্তে, বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের ঠান্ডা মাথায় যে নৃশংসতার সঙ্গে হত্যা করা হয় এবং হত্যার পর ছিন্নভিন্ন রক্তাক্ত শবদেহগুলো বুড়িগঙ্গা নদীতীরের পরিত্যক্ত ইটের ভাটায় গাদাগাদি করে ফেলে রাখা হয়, সেই নিষ্ঠুরতার পেছনে মতাদর্শের ভূমিকা ও স্বরূপ যে এখনো আমরা পুরোপুরি বুঝে উঠতে পেরেছি, তা বলা যাবে না। পরতে পরতে উন্মোচিত হয়েছে এই হত্যাকাণ্ডের বাস্তবতা এবং সেই উন্মোচন এখনো এত বছর পরও রয়েছে অব্যাহত। ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ যে বুদ্ধিজীবীদের বেছে বেছে ঘর থেকে তুলে নিয়ে একত্রে হত্যা করা হয়েছে, সেটা তো জানা গেল বিজয় অর্জনের পর। তিন দিন খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকা ক্ষত-বিক্ষত অনেক লাশ শনাক্ত করা যায়নি। অনেকের লাশের কোনো সন্ধান আর মেলেনি, হয়তো খুবলে খেয়েছে শকুন কিংবা কুকুর, কিংবা ফেলা হয়েছে আর কোনো গর্তে, যা আর কেউ কখনো খুঁজে পায়নি।
দেশব্যাপী পরিচালিত নয় মাসের গণহত্যায় অগণিত মানুষের প্রাণদানের সীমাহীন ট্র্যাজেডিতে ভয়াবহ মাত্রা যোগ করেছিল বুদ্ধিজীবী হত্যা, যার কোনো সামরিক কার্যকারণ ছিল না, তবে বাঙালি জাতির বিরুদ্ধে প্রবল আক্রোশ যে এখানে ফুটে উঠেছে, সেটা বুঝতে ভুল হওয়ার অবকাশ ছিল না। অচিরেই জানা গেল দুই ঘাতকের পরিচয়—চৌধুরী মঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খান এবং হন্তারক সংগঠন, ইসলামী ছাত্রসংঘের পরীক্ষিত সদস্যদের নিয়ে গঠিত আলবদর বাহিনী-সম্পর্কিত কিছু তথ্য। গভর্নর হাউসে প্রশাসনের প্রধান মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর ডেস্ক ডায়েরিতে পাওয়া গেল অনেক বুদ্ধিজীবীর নাম, কারও নামের পাশে আছে ক্রসচিহ্ন, কোথাও বা লেখা বাড়ির নম্বর, অথবা কোনো মন্তব্য। নোটশিটের এক জায়গায় লেখা ছিল, ক্যাপ্টেন তাহির ব্যবস্থা করবে আলবদরদের গাড়ির। বুঝতে পারা যায়, সামরিক বাহিনী ও রাজনৈতিক শক্তির যোগসাজশ, কিন্তু এর পেছনের দর্শন ও তথাকথিত ধর্মাদর্শ বিচার-বিশ্লেষণ অনেকটা থেকে যায় আড়ালে।
ঘটনার পরম্পরা উদ্ঘাটিত হয়েছে পরতে পরতে, এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানি ঘাতকপ্রধানের কাছ থেকে পাওয়া গেছে তথ্য, আর ঘাতক দলের পক্ষ থেকেও পাওয়া গেছে গুপ্তবাহিনী গঠনের বিবরণী। উভয় ক্ষেত্রেই নিজেদের সাফাই গাওয়া এবং অহং প্রকাশের তাগিদ ছিল মুখ্য, কিন্তু সত্য তো অলক্ষেই তার কাজ করে চলে। মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী লিখেছেন তাঁর স্মৃতিকথা, লাহোরের জং পাবলিশার্স প্রকাশ করেছে ১৯৯২ সালে, সেখানে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে অদ্ভুত সাফাই তিনি গেয়েছেন, লিখেছেন, 'আমার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ ছিল যে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে ২০০ বুদ্ধিজীবী হত্যার ব্যবস্থা আমি করেছি। আগের সন্ধ্যায় ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠিত হয় এবং ভারতীয়রা ঢাকা শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয়। সত্য ঘটনা হচ্ছে, ১৭ ডিসেম্বর সকালে অনেক মৃতদেহ পাওয়া যায়। এর আগে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছে, তাই এই হত্যাকাণ্ড নিশ্চয় তারা ছাড়া অন্য কেউ করেছে।'
বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ১৪ ডিসেম্বর, বধ্যভূমি থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষ এর সরব সাক্ষী, আর গলাপচা শবদেহগুলো সাক্ষ্য দিয়েছে নীরবে। রাও ফরমান আলীর পক্ষে তাই ১৬ ডিসেম্বর রাতে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটার আষাঢ়ে গপ্প ফাঁদতে হয়, তবে গল্পকথার ফাঁকেও সত্য প্রকাশিত হয় অজান্তে। কাদালেপা মাইক্রোবাসে করে যে বুদ্ধিজীবীদের তুলে নিয়ে আসা হয়েছিল, তাঁদের বাড়ি থেকে, সেটা তো বিভিন্নভাবে জানা গিয়েছিল। এই প্রসঙ্গে রাও ফরমান আলী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পেছনের এক ঘটনা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বলেছেন, অবশ্যই নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য। তিনি লিখেছেন, '১০ ডিসেম্বর সূর্যাস্তের সময় ঢাকার কমান্ডার মেজর জেনারেল জামশেদ আমাকে পিলখানায় তাঁর দপ্তরে আসতে বলেন। তাঁর কম্যান্ড পোস্টের কাছাকাছি এসে আমি অনেকগুলো গাড়ি দেখতে পাই। বাঙ্কার থেকে বেরিয়ে এসে তিনি আমাকে গাড়িতে উঠতে বলেন, কয়েক মিনিট পর আমি জানতে চাই, এই গাড়িগুলো কেন আনা হয়েছে? তিনি বললেন, "নিয়াজির সঙ্গে সেটা নিয়েই কথা বলতে চাই।" ক্যান্টনমেন্টের হেডকোয়ার্টারের দিকে যেতে যেতে তিনি জানালেন, বিপুলসংখ্যক বুদ্ধিজীবী ও অগ্রণী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করার আদেশ তিনি পেয়েছেন। আমি তাঁকে বলি, কেন, কী কারণে? গ্রেপ্তার করার সময় তো এটা নয়।'
এই বয়ান স্পষ্টত বুঝিয়ে দেয় বুদ্ধিজীবীদের নিশ্চিহ্ন করার তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছিল, তালিকা অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করার জন্য গাড়িও ছিল প্রস্তুত। তালিকা নিয়ে গাড়ির সওয়ারি হয়ে বাড়ি বাড়ি যারা যাবে, সেই বাঙালি ঘাতকেরাও ছিল তৈরি। এই ঘাতকদের দেখেছেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা, মুখ কাপড় দিয়ে আবৃত ছিল বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, তবে কারও কারও মুখের কাপড় সরে গিয়েছিল, পরে ছবি দেখে তাদের শনাক্ত করা যায় এবং এভাবে ঘটনার পরম্পরা হয়েছিল যুক্ত ও উন্মোচিত। ১০ ডিসেম্বর যে প্রশান্ত সন্ধ্যায় পিলখানায় প্রবেশের বিবরণ দিয়েছেন ফরমান আলী, সেখানে সেই দিনটির নাটকীয়তার কোনো উল্লেখ নেই, অথচ এই দিন সকালেই লড়াইয়ে হার মেনে গভর্নর হাউস থেকে জাতিসংঘ প্রতিনিধির কাছে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন ফরমান আলী স্বয়ং। যুদ্ধবিরতির সেই প্রস্তাব কার্যকর হয়নি, দাবি ছিল নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের। এরপর সংকট আরও ঘনীভূত হয় এবং ১৩ ডিসেম্বর জেনারেল গুল হাসান রাওয়ালপিন্ডি থেকে প্রেরিত বার্তায় ইঙ্গিত দেন, পীতজাতি আসবে উত্তর থেকে, আর দক্ষিণ থেকে আসবে শ্বেতাঙ্গ। অর্থাৎ চীন ভারত সীমান্ত আক্রমণ করবে এবং বঙ্গোপসাগর দিয়ে ধেয়ে আসবে মার্কিন সপ্তম নৌবহর। এই পরিপ্রেক্ষিতে নিয়াজিকে আত্মসমর্পণ না করার পরামর্শ দেওয়া হয় এবং বিলম্বিত হয় পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ। বাড়তি সময়টুকুতে ঘটে বাড়তি ও ভয়ংকর নৃশংসতা—বুদ্ধিজীবী হত্যা।
বুদ্ধিজীবী নিধন পরিকল্পনা যারা বাস্তবায়ন করেছিল, সেই ঘাতক আলবদর কখনো তাদের অপরাধ স্বীকার করেনি, কিন্তু আলবদর বাহিনী গঠনের সবিস্তার বিবরণী তারা দাখিল করেছে তাদেরই প্রণীত গ্রন্থে। সেলিম মনসুর খালিদ প্রণীত উর্দু গ্রন্থ আলবদর প্রকাশিত হয়েছিল লাহোর থেকে জেনারেল জিয়াউল হকের শাসনামলে, ১৯৮৫ সালে। এই বইয়ে আলবদরপ্রধান, তাঁদের সহকারী ও অন্য সদস্যদের বিভিন্ন ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে ইসলামের স্বঘোষিত রক্ষকের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, তবে সবার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে ছদ্মনাম। তারপরও সবচেয়ে বড় যে স্বীকৃতি ফুটে উঠেছে তা হলো, সেনাবাহিনীর বিধিবদ্ধ কাঠামোর বাইরে জঙ্গি ও হিংসাশ্রয়ী ইসলামের অনুসারী রাজনৈতিক দলের তরুণ ক্যাডারদের সেনাবাহিনীর অস্ত্র ও অর্থ দ্বারা সমর্থিত ও পরিচালিত গোষ্ঠীতে রূপান্তর। এই গোষ্ঠী যে হবে ঘাতক গোষ্ঠী, তাদের কার্যকলাপ যে হবে 'ইসলামের শত্রুকে উৎখাত' করা, সেটা ছিল স্বতঃসিদ্ধ। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বুদ্ধিজীবী হত্যায় আলবদর নেতা আলী আহসান মুজাহিদ, মতিউর রহমান নিজামী, মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, চৌধুরী মঈনুদ্দিন, আশরাফুজ্জামান খান ও কাদের মোল্লার ভূমিকা বারবার উঠে এসেছে এবং এই বই সেখানে গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তবে এসব হচ্ছে ঘটনার পরম্পরা, এর পেছনে যে মতাদর্শ, যা ধর্মের মহৎ আদর্শ অবলম্বন করে ঘৃণার বিষভাণ্ড তৈরি করে এবং পূর্ণ করে তোলে কানায় কানায়, সেসব তো দাবি করে আরও গভীর বিবেচনা। এই বিশ্লেষণ আমাদের বুঝতে সহায়তা করবে কীভাবে রোপিত হয় ঘৃণার বীজ এবং তা ক্রমে ক্রমে হয়ে ওঠে বিষবৃক্ষ, হয়ে ওঠে সমাজের ব্যাপক মানুষের জীবন-সংহারক। এর সূচনা আপাতদৃষ্টিতে অহিংস সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব ঘিরে, কিন্তু সেখানে অসহিষ্ণুতা ও হিংসার উপাদান যেমন নিহিত থাকে, তেমনি দেখা যায় অন্যকে চিহ্নিত করার প্রবণতা, রাষ্ট্রের সমাজের ধর্মের শত্রু হিসেবে গণ্য করা।
এমনই সংঘাতের বীজ রোপণ করেছিল পাকিস্তানি দ্বি-জাতিতত্ত্বের সাম্প্রদায়িক আদর্শ এবং প্রকাশ পেয়েছিল সর্বজনীন রাষ্ট্রকে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রে রূপদানের প্রচেষ্টায়। তথাকথিত ধর্মভিত্তিক জাতীয়তার পরিপোষক পাকিস্তান ছিল এক বায়বীয় ধারণা, কেননা ধর্ম ব্যক্তিগত বিশ্বাসের বিষয়, যা ব্যক্তিকে গোষ্ঠীবদ্ধ করে, কোনো জাতিসত্তায় রূপায়িত করে না। একই ধর্মের মানুষ নানা ভাষা-সংস্কৃতির অনুসারী হতে পারে, হওয়াটাই সংগত। কিন্তু এর বিপরীতে পাকিস্তানি জাতিসত্তা তথা ধর্মভিত্তিক জাতীয়তা মুছে ফেলতে চাইছিল ভাষা-সংস্কৃতি-ইতিহাস-ঐতিহ্যভিত্তিক সত্তা। দ্বন্দ্বের এমনই প্রকাশ আমরা দেখি ১৯৪৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর কার্জন হলে অনুষ্ঠিত সাহিত্য সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে যখন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, 'আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙালি। মা প্রকৃতি নিজের হাতে আমাদের চেহারায় ও ভাষায় বাঙালিত্বের এমন ছাপ মেরে দিয়েছেন যে মালা-তিলক-টিকিতে কিংবা টুপি-লুঙ্গি-দাড়িতে ঢাকার জো টি নেই।'
সভায় উপস্থিত অবাঙালি শিক্ষাসচিব ফজলে আহমেদ সব শিষ্টাচার ভঙ্গ করে সভাপতির ভাষণের পর মঞ্চে তেড়ে উঠে বক্তৃতা শুরু করেন। তিনি বলেন, 'আজ এখানে যেসব প্রবন্ধ পড়া হলো, সেগুলো শোনার পর আমি ভাবছি, আমি কি ঢাকায় আছি না কলকাতায়।'
সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্র যদি প্রতিষ্ঠা করতে হয়, তবে বাঙালি জাতিসত্তার ওপর চাপিয়ে দিতে হবে 'মুসলিম জাতিসত্তা', আর সে ক্ষেত্রে বাংলার সম্প্রীতির সমাজবন্ধন বিনষ্ট করতে হবে এবং বাঙালি সংস্কৃতির বিলুপ্তি না হোক, অন্তত বিভ্রম সৃষ্টি করে জগাখিচুড়ি এক সংস্কৃতি বা সংস্কৃতিহীনতার জন্ম দিতে হবে। আর এই কাজ করার শ্রেষ্ঠ অবলম্বন হতে পারে ধর্ম। ১৯৪৮ সালে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুর পক্ষে জিন্নাহর সদম্ভ উক্তি ছিল এই পাকিস্তানি রাষ্ট্রনীতির প্রকাশ। ১৯৫০ সালের দাঙ্গা ও ব্যাপকভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের দেশত্যাগ ছিল এই নীতির প্রতিফল। বায়ান্নর একুশেতে বাংলা ভাষার জন্য তরুণের আত্মাহুতিতে জাতির জাগরণ সূচিত হলে মর্নিং নিউজ পত্রিকার শিরোনাম 'ঢাকার রাজপথে ধুতির বিচরণ' সেই বিকৃত চিন্তাজাত বিকৃত মানস মেলে ধরে, অন্য সম্প্রদায়কে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা সঞ্চারের বর্বরতা আর চাপা থাকে না।
জাতিকে পদানত, বিভ্রান্ত ও বিপথগামী করার নানা আয়োজনে ভরপুর ছিল পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসনকাল। ধর্ম হয়েছিল তাদের এই অভিযানের ঢাল ও তলোয়ার। সশস্ত্র এই দুই শক্তির ওপর মালিকানা থাকে রাষ্ট্রের, একাত্তরে চূড়ান্ত সমাধানের জন্য সশস্ত্র সব শক্তি নিয়ে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল পাকিস্তানি বাহিনী তথা পাকিস্তানি রাষ্ট্র। সেই পটভূমিকায় বাঙালির প্রতিরোধ মোকাবিলায় ঢাল হাতে নিল জঙ্গি ইসলামের প্রবক্তা রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী, তাদের তরুণ অনুসারীদের হাতে তুলে দিল তলোয়ার, সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সমর্থন ও মদদে।
এই সংযোগ যে বিষময়তা ও সশস্ত্রতার জন্ম দিয়েছিল, তারই নিষ্ঠুর ছোবলে মৃত্যুবরণ করতে হয় বাংলার বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের। এর পেছনের জঙ্গি মতাদর্শ ও সংগঠন বুঝে-ওঠা তাই বহন করে অশেষ গুরুত্ব। গণহত্যার বীজ যদি বেড়ে উঠতে দেওয়া হয়, তবে বিষবৃক্ষের শিকড়ের বিস্তার, কাণ্ডের শক্ত হয়ে ওঠা ও সমাজে ডালপালা মেলে দেওয়া রোধ সম্ভব হয় না। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের বর্বরতার সামগ্রিক কাঠামো ও মতাদর্শ পর্যালোচনা তাই বহন করে বিশেষ তাৎপর্য।
'জেনোসাইডওয়াচ'-এর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক গ্রেগরি স্ট্যানটন গণহত্যার আটটি ধাপ শনাক্ত করেছিলেন। এর শুরু সাদামাটাভাবে বিভাজন বা ক্লাসিফিকেশনের মাধ্যমে যখন কোনো গোষ্ঠীকে আলাদাভাবে ক্ষতিকারক বা শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এরপর ধাপে ধাপে তা রূপ নেয় আদর্শগত সংহতি ও সংগঠনে, কেননা গণহত্যা কিংবা বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের মতো কাজ সম্পাদনে চাই মতাদর্শ দ্বারা অন্ধ ব্যক্তিদের দিয়ে গঠিত উপযুক্ত সাংগঠনিক শক্তি। সপ্তম ধাপে গণহত্যা রূপ নেয় বীভৎসতার, গ্রেগরি স্ট্যানটন এই ধাপকে চিহ্নিত করেছেন উৎসাদন বা এক্সটারমিনেশন হিসেবে। এরপরও সর্বশেষ আরেকটি ধাপ চিহ্নিত করেছেন এই বিশ্লেষক, চূড়ান্ত সেই ধাপ হচ্ছে ডিনাইয়াল বা অস্বীকৃতি। আমরা এই ধাপের পরিচয় পাই মেজর জেনারেল ফরমান আলীর ভাষ্যে, নিজামী কিংবা মুজাহিদের বক্তব্যে, যাঁরা অস্বীকার করতে চান গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ কিংবা বুদ্ধিজীবী নিধনের ঘটনা।
বুদ্ধিজীবী হত্যাবিষয়ক বিচার-বিবেচনা তাই ধর্ম-অবলম্বন করে রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলা এবং সেই সংগঠন দ্বারা সাম্প্রদায়িক সহিংস প্রচারণার নিষ্ঠুর পরিণতি প্রকাশ করে। অতীত পর্যালোচনা থেকে আমরা বুঝি ধর্মকে ব্যবহার করে নৃশংসতার প্রতিরোধে সমাজের ঐক্য ও অঙ্গীকার এবং সম্প্রীতির সমাজ নির্মাণে অবদান রচনার কোনো বিকল্প নেই। তাই প্রয়োজন বিষবৃক্ষের বীজ উৎপাটন, জঙ্গি ইসলামের মোকাবিলার সেই কর্তব্য সর্বতোভাবে পালনে এগিয়ে যাওয়া হয়ে উঠেছে সময়ের দাবি।

মফিদুল হক: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি ও লেখক

http://www.prothom-alo.com/special-supplement/article/713356/ বুদ্ধিজীবী-হত্যাকাণ্ডের-বীজ-ও-বিষবৃক্ষ

Prothom Alo

আরও পড়ুন :

অমিয় তরফদারের মুক্তিযুদ্ধের অপ্রকাশিত ছবি

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/713158/ অমিয়-তরফদারের-মুক্তিযুদ্ধের-অপ্রকাশিত-ছবি

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/713593/ যে-টেবিল-আত্মসমর্পণের-সাক্ষী


http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/713752/ অপরাজেয়-অমিত-শক্তির-বাংলাদেশ

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/713161/ ১৬-ডিসেম্বর-আত্মসমর্পণ-১৯-ডিসেম্বর-অস্ত্রসমর্পণ


http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/712789/ রেললাইন-ধরে-হাঁটিয়ে-পাকিস্তানিদের-ঢাকায়-নেওয়া-হয়

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/712717/ মসজিদে-শহীদদের-স্মরণে-স্তম্ভ

যুদ্ধাপরাধের বিচার

ভারতকে মুচলেকা দিয়েছিল পাকিস্তান!

মিজানুর রহমান খান | আপডেট: ০০:২৭, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৫ | প্রিন্ট সংস্করণ



__._,_.___

Posted by: "Jamal G. Khan" <M.JamalGhaus@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___