অর্থহীন মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া
আমাদের সময়.কম
মোহাম্মদ রবিউল্লাহ: সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর রায় মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দেশের বুদ্ধিজীবী ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পরিবারের সদস্যরা। ইংরেজী দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার তাদের প্রতিক্রিয়া ছাপিয়েছে। তা নিচে তুলে ধরা হলো-
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী : মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদদের সংখ্যা নিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য দুর্ভাগ্যজনক ও অযাচিত। মীমাংসিত একটি বিষয়, এটি নিয়ে বিতর্ক করার সুযোগ নেই। এই বিষয়ে কাউকেই রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া উচিত নয়।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান : শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে নেতিবাচক বক্তব্য অপ্রত্যাশিত ও অবমাননাকর। শহীদদের নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করার অর্থ হচ্ছে শহীদদের প্রতি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি অসম্মান দেখানো সমান। যারা এখনো পাকিস্তানের আদর্শকে সমর্থন করেন ও পাকিস্তানের জন্য কাজ করেন তারাই এই ধরনের মন্তব্য করতে পারে।
শহীদ চিকিৎসক আলীম চৌধুরীর স্ত্রী শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী : খালেদা জিয়া পাকিস্তানকে খুশি করে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যই এই ধরনের মন্তব্য করেছেন। গয়েশ্বরের মতো খালেদা জিয়ার সহকর্মীরাও তার কথার সমর্থন দিচ্ছেন। তারা প্রকৃতপক্ষে দেশের সার্বভৌমত্বকে ধ্বংস করতে চায়। তবে তারা সফল হবে না।
অধ্যাপক জাফর ইকবাল : দেশের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে সমালোচনাকারীদের নিন্দা জানানোর মতো শব্দ আমার জানা নেই। যারা দেশের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেন বা বক্তব্য দেন আমি তার জন্য ঘৃণা প্রকাশ করছি। আমি খুবই আতঙ্কগ্রস্ত যে এই ধরনের ব্যক্তি দেশে এখনো বাস করছে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ- উল আলম লেনিন: যে ব্যক্তি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আহাম্মক আখ্যা দিয়ে থাকে সে নিজেই একজন বড় আহাম্মক। তারা স্বাধীনতার অর্থই জানে না। তারা নিজের বিবেককে পাকিস্তানের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। তারা মানসিক সুস্থতা হারিয়ে ফেলেছেন। তাদের মানসিক হাসপাতালে প্রেরণ করা উচিৎ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর জেনারেল (অবঃ) মাহবুবুর রহমান: গয়েশ্বরের মন্তব্য খুবই নির্মম। তার নির্মম মন্তব্য আমাকে কষ্ট দিয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দেশের বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এমনকি এখনো তাদের অনেকের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
যুদ্ধাপরাধ গবেষক শাহরিয়ার কবির: কোন দেশই কী স্থানীয়দের বাধাদান ছাড়া স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছে? গেরিলারা যদি তাদের বিতারিত করতে অবদান না রাখতে পারত তবে কিভাবে যুদ্ধে বিজয়ী হওয়া যেত? খালেদা জিয়া ও গয়েশ্বর রায় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তারা স্বাধীনতার যুদ্ধকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। তারা বাংলাদেশের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন না। ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত শহীদ ও বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে কেন তারা অবমাননাকর মন্তব্য দিয়েছেন?
সেক্টর কমান্ডার ও আওয়ামী লীগের এমপি মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম: যারা স্বাধীনতার যুদ্ধ নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন তারা প্রকৃত দেশপ্রেমী নয়। একজন প্রকৃত দেশপ্রেমী কখনোই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিয়ে অপমানজনিত ও মর্যাদাহানিকর মন্তব্য করতে পারে না।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ড. সারোয়ার আলী : এই ধরনের মন্তব্য একজনকে অপমানিত করা হয়নি পুরো জাতিকে অপমান করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে তাদের বিন্দুমাত্র ধারণা নেই কীভাবে যুদ্ধ হয়েছিল।
ওয়্যার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহবায়ক এম এ হাসান : যারা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে অশ্রদ্ধাজনক মন্তব্য করেছেন তারা সম্পূর্ণ নির্বোধ ও চেতনাহীন। তার মন্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহীতার শামিল। দেশের মাটির বুকে থাকা সন্তানদের দুর্নাম বয়ে এনেছেন। তারা জাতিকে করেছেন কলঙ্কিত। তাকে আইনের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার কন্যা মেঘনা গুহঠাকুরতা : এই ধরনের মন্তব্য নতুন কিছু নয়। স্বাধীনতার পরেই আমরা পাকিস্তানিমনাদের কাছ থেকে শুনতে পাচ্ছি। ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল। আমরা কেন নিজের দেশ ত্যাগ করব? আমরা আমাদের দেশে থেকেই বন্দী ছিলাম। শিক্ষক, চিকিৎসক ও সাংবাদিকরা মানুষের স্বার্থে কাজ করেছেন যা দেশপ্রেম।
__._,_.___