সৌদি আরবে বাংলাদেশি গৃহকর্মী: আমি তো দেহ ব্যবসা করতে যাইনি
কালের কণ্ঠ অনলাইন
৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ২৩:৩৭
বাংলাদেশ থেকে পুরুষ কর্মীরা যেখানে টাকা খরচ করে সৌদি যাবার জন্য উদগ্রীব সেখানে বিনা খরচে নারীকর্মীরা কেন আরবে যেতে চান না? বাংলাদেশ এবং সৌদি আরবের মধ্যে গৃহকর্মী নেওয়ার জন্য চুক্তি হয়েছিল গত বছর। সৌদি সরকার দুই লাখের বেশি নারীকর্মীর চাহিদা জানালে বাংলাদেশ থেকে মাসে ১০ হাজার নারীকর্মী পাঠানোর কথা বলা হয়। অথচ ২০১৫ সালের হিসেবে মাত্র ২০ হাজার ৯৫২ জন নারী সৌদি আরবে গিয়েছে। সৌদি সরকার সম্প্রতি বাংলাদেশকে জানিয়েছে, তাদের পক্ষে এখন দুই লাখ নারীর জন্য ভিসা প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু গৃহকর্মী হিসেবে বাংলাদেশি নারীদের সৌদি আরবে যাওয়ার আগ্রহ খুবই কম। চুক্তির এক বছরে চাহিদার দশ ভাগের একভাগ নারী বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে গেছেন। কাজ করতে যাবার অল্প দিনের মধ্যে আবার নারীদের ফেরত আসার প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে। ঢাকায় সৌদি একটি নিয়োগকারী সংস্থা আল শারক'র ব্যবস্থাপক বলেন, বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি নারীকর্মী সৌদি আরবে দরকার। গত এক বছরে আমরা মাত্র ১৫০ জনের মতো নারী নিয়োগ দিতে পেরেছি। বাংলাদেশি গৃহপরিচারিকা আমাদের জনগণের পছন্দ কারণ তারা মুসলিম এবং কাজে বেশ ভালো। ২০১৫ সালে যারা সৌদি আরব গেছে তাদের মধ্যে থেকেও বেশকিছু নারী দেশে ফিরে এসেছে। ঋণ করে সৌদিতে কাজে গিয়ে এক মাস থেকেই ফেরত আসা একজন বলছিলেন তার স্বপ্নভঙ্গের কথা। রহিমা বলেন, ১০-১৫ দিন ভালই ছিলাম। কিন্তু আমারে বাড়িতে ফোন করতে দেয় না, বাড়ির বাইরেও যাইতে দেয় না। তবে যে অভিযোগে তিনি দেশে ফিরেছেন সেটি আরো বেশি ভয়াবহ। তিনি বলেন, আমি সারাদিন কামকাজ করি, পরে যখন রাইতে ঘুমাইতে যাবো তার আগে কাপড় ইস্ত্রি করি, ঐ সময় উনি (বাড়ির মালিক) আমার ঘরে গিয়া ডিস্ট্রাব করতো। আমার রুমে ও ঘুমাইবো। আমি রাজি হইনি, তারপরও জোর করে থাকতে চায়। আমার কথা শুনতো না, পরে আমি ওর বউরে ডাক দিলাম মামা বাবা খারাপ, বাবা আমার রুমে ঘুমাতে চায়, ভালো না। পরে কৌশলে অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেশে ফেরত আসেন তিনি। 'আমিতো দেহ ব্যবসা করতে যাই নাই। আমিতো গেছি কামের জন্য, কাম করমু, ভাত খামু, পয়সা ইনকাম কইরা পোলাপান মানুষ করমু। কষ্টের লাইগা গেছি'- এ কথাগুলো বলছিলেন রহিমা। তিনমাস কাজ করে ফিরে এসেছেন রূপগঞ্জের রহিমা। তার অভিযোগ সেখানে অতিরিক্ত কাজের চাপ। তিনি বলেন, কাজের নির্যাতনে পইরা গেসিগা, সময়তে ওরা ভাল ব্যবহার করতো সময় খারাপ ব্যবহার করতো। অসুস্থ্য হয়া কাম করতে পারি না হেরপরও জোর কইরা করাইতো। সইতে না পাইরা আমি কইছি মা আমি বাংলাদেশে যামুগা। ফেরত আসা নারীদের এসব অভিজ্ঞতাও অনেক ক্ষেত্রে সৌদি আরবে নারীকর্মী কম যাওয়ার একটি কারণ বলে মনে করা হয়। সৌদি কর্তৃপক্ষের চাহিদার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার সভাপতি আবুল বাসার বলেন,নারীদের খুব দ্রুত পাঠানো সম্ভব নয়। তারাতো চায় এক মাসে দুই মাসের মধ্যে পাঠান। আমাদের পক্ষে তা সম্ভব নয়। মহিলাতো। পুরুষ হইলে দুই লক্ষ পুরুষ তিন মাসের মধ্যে পাঠানো সম্ভব কিন্তু দুই লক্ষ মহিলা আমরা দুই বছরেও পাঠাইতে পারবো না। আমাদের দেশের মহিলারা পর্দাশীল তাই তারা যেতে চায় খুবই কম। অত্যাচার বা নিপীড়নের প্রসঙ্গে আবুল বাসার বলেন, নারীদের ক্ষেত্রে নির্যাতনের ঘটনা এখন অনেক কম। তবে বিদেশে কেউ নির্যাতিত হলে পাড়া প্রতিবেশি কেউ যেতে চায় না। এতে তো আমরা অ্যাফেক্ট হবোই। আসলে এ কারণে আমাদের সংকট একটু বেশি হয়। তিনি আরো বলেন, গত বছর যারা গিয়েছে তার মধ্যে ফিরে আসার হার ৫ শতাংশের বেশি হবে না। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কাজী আবুল কালাম বলেন, সৌদিতে নারীরা যেখানে যায় কোনো পরিবার ভাল আবার কোনো পরিবার খারাপও হতে পারে। রিয়াদে দূতাবাস আছে এবং জেদ্দায় কনস্যুলেট আছে। রিয়াদে সাময়িক শেল্টার হাউজও আছে। সেখানে থেকে সে তার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে পারবে এবং দূতাবাস তাকে সাহায্য করবে। এছাড়া যদি নির্যাতনের বিষয়টি খুব গভীরতর হয় সে শ্রম আদালতে মামলা করবে। এ ব্যাপারেও দূতাবাস তাকে সহায়তা করে তিনি বলেন, নিরাপত্তা বা তার সমস্যা অ্যাড্রেস করার মত ব্যবস্থা যে একেবারে নেই তা না। আছে তবে এটা আমাদের কর্মীদের জানতে হবে বুঝতে হবে এবং সেটার সুযোগও নিতে হবে। সৌদি আরবে প্রায় ১৩ লাখ বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশায় কর্মরত রয়েছে। সাত বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৫ সালে নারীকর্মী পাঠানোর মধ্যে দিয়ে সৌদি আরবে বাংলাদেশি জনশক্তি রপ্তানির বাজার পুনরায় উন্মুক্ত হয়। সৌদি আরবে যাবার ক্ষেত্রে নারীকর্মীদের সমস্ত খরচ বহন করে সৌদি নিয়োগকারী সংস্থা। নারীদের আকৃষ্ট করতে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে বিনা খরচে এক মাসের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া নারীকর্মীদের বিদেশে পাঠানোর আগে স্বল্প খরচে বাংলাদেশে সরকারি ২৬টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আরবি ভাষা, গৃহস্থলীর কাজকর্ম এবং সৌদি নিয়ম-কানুন শেখানো হয়। সুত্র: বিবিসি বাংলা - See more at: http://www.kalerkantho.com/online/world/2016/02/04/321196#sthash.7uDDSCEH.dpuf
Also read:
Human Trafficking & Modern-day Slavery in Saudi Arabia
gvnet.com/humantrafficking/SaudiArabia.htm
Child Prostitution in [Saudi Arabia] [other countries]. Human Trafficking & Modern-day Slavery. In the early ... Saudi Arabia and contemporary slavery. Pat Roush ...__._,_.___