যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতের 'প্রধান অর্থ জোগানদাতা' মীর কাসেমের আপিলের রায়ের আগে এই যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি বহাল রাখার আহ্বানে সোমবার শাহবাগে এক সমাবেশে এ মন্তব্য করেন তিনি।
সম্প্রতি আপিলের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ মামলার পরিচালনার দুর্বলতা চিহ্নিত করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা এবং প্রসিকিউশনের কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানান।
এতে যুদ্ধাপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আন্দোলনকারীদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মতো মীর কাসেমও আপিলের রায়ে মৃত্যুদণ্ড থেকে পার পেয়ে যাবেন; যদিও অ্যাটর্নি জেনারেল আশা করছেন, আদালতের ওই অসন্তোষের প্রভাব রায়ে পড়বে না।
মীর কাসেমকে 'রক্ষার ষড়যন্ত্রের' প্রতিবাদে শাহবাগে মশাল মিছিলের সমাবেশে ইমরান বলেন, "আজকে যদি কোনো পক্ষের গাফিলতির কারণে (সেটি হোক প্রসিকিউশন, তদন্তকারী সংস্থা কিংবা মহামান্য আদালত) কোনো যুদ্ধাপরাধী তার প্রাপ্য শাস্তি না পেয়ে লঘু দণ্ড পায়। তার দায়টা কিন্তু আমরা কেউই এড়াতে পারব না। এমনকি আমাদের মহামান্য আদালতও এড়াতে পারবেন না।"
নিজেদের শঙ্কার ভিত্তি তুলে ধরে বিচারক হিসেবে অবসর নিয়েই মীর কাসেমের পক্ষে কৌঁসুলি হিসেবে বিচারপতি নজরুল ইসলামের শুনানিতে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন গণজাগরণের মুখপাত্র।
"বিচারপতি নজরুল ইসলাম, কয়েকদিন আগেও এজলাসে বসে বিচার করেছেন, তিনি যখন আদালতের এজলাসে দাঁড়িয়ে তার সহকর্মীদের সামনেই যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে তথ্য দেন কিংবা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন, তখন কিন্তু আমাদের মধ্যে গভীর শঙ্কা তৈরি হয়।"
প্রধান বিচারপতির বক্তব্য ধরে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের শক্তি 'জল ঘোলা' করার সুযোগ করে নিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন ইমরান। অবসরের পর রাষ্ট্রীয় সুবিধা নিয়ে বিচারপতি নজরুল ইসলামের বিষয়ে রাষ্ট্র কিংবা আদালতের পদক্ষেপ আশা করেছেন তিনি।
তদন্ত সংস্থা বা প্রসিকিউশনের কোনো গাফিলতি থাকলে মীর কাসেম আলীর মামলায় তা কাটিয়ে ওঠার সুযোগ এখনও রয়েছে বলে মনে করেন ইমরান।
"অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের, সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তাদের কিন্তু যুক্তিতর্ক উপস্থাপণের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। কোনোভাবে কারও উপর দায় চাপিয়ে দিয়ে কোনো যুদ্ধাপরাধীকে রক্ষার চেষ্টা করবার সুযোগ আছে বলে মনে করি না।"
"যদি সেই চেষ্টা করা হয়, আমরা ধরেই নেব, এই মীর কাসেম আলীর অর্থবিত্তের কাছে পরাজিত হয়ে অন্যায্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের অপচেষ্টা চলেছে," বলেই ইমরান হুঁশিয়ার করেন, "যদি সে চেষ্টা করা হয়, তার দাঁতভাঙা জবাব দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের মানুষ প্রস্তুত।"
ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মীর কাসেম রাবেতা আল ইসলামী নামে একটি এনজিওর বাংলাদেশের সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন। ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান তিনি।
মীর কাসেম আলী
দৈনিক নয়া দিগন্ত এবং দিগন্ত টেলিভিশনের মালিকানা প্রতিষ্ঠান দিগন্ত মিডিয়ার সাবেক চেয়ারম্যন মীর কাসেম ইবনে সিনা ট্রাস্টেরও অন্যতম সদস্য।
মুক্তিযুদ্ধকালীন চট্টগ্রামের কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন আহমেদসহ আটজনকে হত্যার দুটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তখনকার আলবদর কমান্ডার মীর কাসেম আলীকে ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল।
মীর কাসেমের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে যে ভবনটিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষের লোকদের ধরে নিয়ে নির্যাতন চালানো হতো, সেই ডালিম হোটেলকে রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয় 'ডেথ ফ্যাক্টরি'।
বিচারক ওই রায়ে বলেন, "আলবদর সদস্য ও পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে ডালিম হোটেলে নিয়ে আসতো আমৃত্যু নির্যাতন করার উদ্দেশ্যেই। এটাও প্রমাণিত যে, ডালিম হোটেলে আলবদর সদস্যদের পরিচালনা ও নির্দেশনা দিতেন মীর কাসেম আলী নিজে। ডালিম হোটেল সত্যিকার অর্থেই ছিল একটি 'মৃত্যুর কারখানা'।"
ডালিম হোটেল ছাড়াও নগরীর চাক্তাই চামড়ার গুদামের দোস্ত মোহাম্মদ বিল্ডিং, দেওয়ানহাটের দেওয়ান হোটেল ও পাঁচলাইশ এলাকার সালমা মঞ্জিলে বদর বাহিনীর আলাদা ক্যাম্প ও নির্যাতন কেন্দ্র ছিল।
মীর কাসেমের চূড়ান্ত রায় ৮ মার্চ - bdnews24.com
বেকসুর খালাস পাবেন মীর কাসেম :... - সেরা খবর - Google
__._,_.___