Banner Advertiser

Tuesday, February 16, 2016

[mukto-mona] বাংলা নববর্ষ , উৎসবের বাহিরানা



Anup Chandal shared his post.
1 hr ·

আক্ষেপটা আমার লেগেই থাকে। নিশ্চয়ই অনেকেরই। বসন্তের প্রাক্কালে, মাঘের বিদায়দিনে, 12ই ফেব্রুয়ারি কথাগুলো তাই লিখেছিলাম। সেই সূত্রে শ্রদ্ধেয় Farida Majid এবং Parthasarathi Basu-র সাথে আমার কিছু কথার ধারাবাহিকতায় আজ পাওয়া গেল পার্থসারথি বসুর একটা মূল্যবান তথ্যবহুল লেখা। সেটা বন্ধুদের জন্যে দিচ্ছি। তার আগে আক্ষেপটুকু আবার।

Anup Chandal with Parthasarathi Basu.

চলে যায় আজ মাঘ : বসন্ত জাগ্রত দ্বারে! কাল পয়লা ফাল্গুন--- রঙে মাতবার শুভদিন! তবু ব্যথিত ও বিচলিত-বিভ্রান্ত লাগে কারণ বসন্তের এই সূচনা কাল হবে বাংলার বাংলাদেশে শুধু, বাংলার পশ্চিমবঙ্গে হবে পর্শু।আবার, এই বাংলাদেশেও কোথাও কোথাও, যেমন আমাদের এই চাষাবাদভরা গাঁয়ে, এখনও সেই আদি পঞ্জিকা মেনেই সব উৎসব-অনুষ্ঠান, সম্পাদিত বাংলাদেশী অনুসারে নয়। তাহলে কী হবে ? অনুসূর্যা কবে মাতবে ফাগুনের নবীন আনন্দে ?? রবীন্দ্রনাথের জন্মও তো ভিন্ন ভিন্ন দিনে !!! ...

 *  * * * * * * * * * * * * *

১০ ফেব্রুয়ারি বন্ধু অনুপ চণ্ডাল ১লা বসন্তের আবাহন সহ আক্ষেপ করেছিলেন দু বাংলায় বাংলা পাঁজি আলাদা।তাই পাল্টে গেছে উদযাপনের তারিখ। দু দেশে।
এই প্রসঙ্গে একটি পুরনো লেখা
নববর্ষের লেখাটি এডিট করে আর একবার
বাংলা নববর্ষ , উৎসবের বাহিরানা /
পাঁজি এবং দেওয়াল পঞ্জী

পার্থ বসু


নববর্ষ নিয়ে লিখতে বসে ক্যালেন্ডারের খোঁজ পড়ল। ইংরেজির কত তারিখ যেন ? বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত হাতে নিলাম। লেখা ১৫ ই এপ্রিল ২০১৫। বাংলা পয়লা বৈশাখ ১৪২২। এদিকে ও বাংলায় ১৪ তারিখেই নববর্ষ পালন হবে। হচ্ছেটা কি ? ক্যালেন্ডার শব্দটি কিন্তু ভারতবর্ষীয়। এপিটোমোলজি বলছে calender > middle French calandre> medieval Latin calendra. অধ্যাপক সুহৃদ ভৌমিক আর একটু উৎসে গেছেন calendra> কালেন্দ্র ( কাল+ ইন্দ্র )। যে ভাবে centre < center< kenter< কেন্দ্র। থাক এ কথা। আমরা আসুন একটু পাঁজি ঘেঁটে নিই।
অনেকগুলি অনেক মতের পাঁজি আর সালতামামি চালু আছে বা ছিল ভারতবর্ষে। শকাব্দ , নিম্বার্কাব্দ, সংবৎ, ভাস্করাব্দ। সব গুলি সৌর সন। আমাদের উত্তর পূর্বেই ছিল প্রায় চব্বিশটা। মুঘল শাসকরা মানতেন হিজরি সন। যা কিনা চান্দ্র সন। ভারত কৃষি প্রধান দেশ। বছরের সময় ধরে ধরে ফসলের বীজ সংগ্রহ , বপন রোপণ , পরিচর্যা করতে গেলে চান্দ্র নয় সৌর ক্যালেন্ডার ছাড়া গতি নেই। খাজনা আদায় করতেও ফাঁপরে পড়তে হচ্ছিল।
মিশর কিন্তু ছ' হাজার বছর আগেই সৌর ক্যালেন্ডার আবিস্কার করে। চান্দ্র হিসাবের ভুল চিহ্নিত করে তাদের গণনা তখনই প্রায় ৩৬৫ দিনে বছরের হিসাবের খুব কাছাকাছি ছিল। মিশরীয় ভাষায় ইক্ষাকু রাজবংশের উল্লেখ আছে। বাংলা ভাষায় মিশরীয় শব্দ নিয়ে গবেষণাও চলছে। আমাদের ভারতীয় ক্যালেন্ডারে মিশরের প্রভাব থাকা বিচিত্র নয়। আমরা অবশ্য আমাদের একদম স্বকীয় বাংলা সনের কথা আলোচনা করব।সে ক্ষেত্রে রোমান ক্যালেন্ডার নিয়েও দু চার কথা বলতে হচ্ছে।
মিশর আর বাংলা দুটোই নদী সভ্যতা। রোমান ক্যালেন্ডার কিন্তু সমুদ্র তীরের সভ্যতার ফসল। ইংরেজদের ছিল জুলিয়ান ক্যালেন্ডার। তাতেও অনেক ভুল ভ্রান্তি ছিল। পোপ গ্রেগরী সে গুলি সংশোধন ক রে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার চালু করেন। ১৫৮২ সালের এই সংস্কার ইংরেজরা মেনে নিতে বাধ্য হয় ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে। বিস্তৃত কথায় না গিয়ে এইটুকু মনে করান যাক সে বছর ৩ রা সেপ্টেম্বরকে ১৪ ই সেপ্টেম্বর হিসাবে গণনা শুরু হল। অর্থাৎ ক্যালেন্ডার ১১ দিন এগিয়ে আনা হল।এই তথ্যটুকু আমাদের কাজে লাগবে। নববর্ষ নিয়ে চর্চা ও প্রস্তাবে।
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে চান্দ্র ও সৌর আবর্তনের মধ্যে যে সমন্বয় সাধিত হয়েছিল ভারতে সেই প্রক্রিয়ার সুচনা করেছিলেন মুঘল সম্রাট আকবর। শাসনের ২৯ তম বছরে হিজরি ৯৯২ সনে, ইংরাজি ১৫৮৪ সালে তাঁর নবরত্ন সভার প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ ফতেউল্লাহ সিরাজির নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় ইলাহী সন ও অঞ্চলভেদে প্রজাদের খাজনা দেওয়ার সুবিধার জন্য নানা ফসলী সনের কাঠামো গড়ে দেন। এই কাঠামো অনুসরণ করেই বাংলার নবাব মুরশিদ কুলি খান প্রবর্তন করলেন বাংলা সন। ফলত এই প্রথম একটি ত্রুটিমুক্ত এবং বিজ্ঞানসম্মত একটি সৌর সনের সুচনা হল যা কিনা জাতি বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য আদর্শ। সর্বজন গ্রাহ্য। এটি হিজরি নয়। আবার মূল ইলাহি থেকে উপজাত হলেও ইলাহি থেকে ভিন্ন। ভিত্তি হিজরি সন। কিন্তু গঠনে ভারতীয় শকাব্দের মত। তথাপি একে শকাব্দের সমগোত্রীয় বলা যাবে না। শকাব্দ থেকে মাস আর দিনগুলির নাম যা নেওয়া হয়েছে। নানা রাজা বাদশা বা ধর্মের নামে প্রচলিত অব্দের বাইরে এই বাংলা সন ক্রমে হয়ে উঠবে বাঙালীর জাতীয় অভিজ্ঞান। নববর্ষ হয়ে উঠবে ধর্মনিরপেক্ষ ভাবে সমুহ বাঙালীর জাতীয় উৎসব। কি ভাবে ? সে প্রসঙ্গেই আসছি।
ধান ভানতে শিবের গাজন আর একটু বাকি। সেটা শেষ হোক আগে।
এতদিনের বাংলা সন দু বাংলায় হঠাৎ আলাদা হল কি করে ? পঞ্জিকা সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিল প্রথমে ভারত। এখানে কেবল বাংলা সনের গ্রেগরিয়ান আদলে ডা মোঘনাদ সাহা প্রমুখ যে সংস্কার প্রস্তাব রেখেছিলেন তাতে চোখ বুলিয়ে নিই।
প্রস্তাব ১ ) বৈশাখ থেকে ভাদ্র হবে ৩১ দিনের
২ ) আশ্বিন থেকে চৈত্র হবে ৩০ দিনের
৩ ) লিপ ইয়ার তথা অধিবর্ষে ফাল্গুন হবে ৩১ দিনের
৪ ) আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী তারিখ পালটাবে রাত ১২ টায়
ভারত সরকার প্রস্তাবগুলি খতিয়ে দেখতে কে সি পাণ্ডে কমিটি নিয়োগ করলেন। পাণ্ডে কমিটির সুপারিশ প্রাসঙ্গিক অংশ টুকু পড়ে নিই আসুন--
' The year shall start with the month of Vaisaka when the sun enters niranayana mesa rasi which will be 14th April of thবেe Gregorian calender. ( Indian journal of History of Sciences 39.4 (2004 ) 519-534.
অর্থাৎ পাণ্ডে কমিটি স্পষ্ট করে বললেন বর্ষ শুরু হবে বৈশাখ মাসে। আর ১লা বৈশাখ হবে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের ১৪ ই এপ্রিল।
বাংলাদেশ নিয়মমাফিক নিজস্ব কমিটি গড়ে , টাস্ক ফোর্সের সুপারিশে ঠিক এই কাজটিই করেছেন। ভারতে পঞ্জিকা ব্যবসায়ীদের স্বার্থে সংস্কার শিকেয়। বাংলা তারিখ আমাদের এখনও মনে পড়ে নববর্ষে, নজরুল আর রবি ঠাকুরের জন্মদিনে। তিনটে দিনেই দু বাংলায় ফলত এখন সামঞ্জস্য থাকছে না।
প্রতিবাদ জরুরী । ব্রিটিশরা ১১ দিন শুধরেছিল। আমরা একটা দিন পারব না ?


নববর্ষ উৎসব ও বাংলায়
দেশ ভাগ হলেও দুই পাকিস্তানের সংস্কৃতির উত্তরাধিকার কিন্তু ভারতীয়। ধ্বনিটিরে প্রতিধ্বনি সদা ব্যঙ্গ করে। সেই প্রবণতায় ভুল দ্বিজাতিতত্ত্বের ফসল পাকিস্তানের ছিন্নমূল বিকার পুবেও আঘাত হানল। প্রথম আঘাত এল ভাষায়। বাহান্নর ভাষা আন্দোলনে বাঙালী তার মাতৃভাষার অধিকার আদায় করল। এর পর পাক আমলে নব্য শিক্ষিত বাঙালী মুসলমান ধর্ম ভিত্তিক রাষ্ট্রকাঠামোর মধ্যেও তার আবহমান বাঙালী সংস্কৃতি, লোকাচার ও ক্রিয়াকরণ জাতীয় আধারে বিন্যাস দিতে , সমন্বিত করতে প্রয়াসী হলেন। স্বভাবতই প্রমাদ গুনলেন দ্বিজাতিতত্ত্বের প্রবক্তারা। শাসক। নেমে এল নিষেধ আর নিপীড়ন। রবীন্দ্রনাথ অচ্ছুৎ। নজরুল ইসলামী প্রকরণে সম্পাদিত হচ্ছেন। জমিদারি উচ্ছেদের পর দু বাংলাতেই পুণ্যাহ লুপ্ত। নগদ কৃচ্ছতায় বাকিতে লেনদেন এবং বছরের শুরুতে বকেয়া উশুলের হালখাতা আগের জৌলুষ আর তাৎপর্য হারিয়েছে। তা হোক রয়ে গেছে নানা স্থানীয় অনুষ্ঠান, মেলা। মোরগলড়াই, কাঠিনাচ, হা ডু ডু খেলা, নৌকা বাইচ , আরও কত কি ! ১৯৫৪ সালেই মুসলিম লীগের পরাজয়ের পর শের-এ- বাংলা এ কে ফজলুল হক আর তাঁর যুক্তফ্রন্ট সরকার প্রথমবারের জন্য ছুটি ঘোষণা করলেন বাংলা নববর্ষে। বাঙালী জাতীয়তাবাদের একটি স্পষ্ট পথনির্দেশ পেল বাঙালী। শুরু হল বিপুল উৎসাহে বাঙালীর তের পাবনের অতিরিক্ত এক পাবন বাংলা নববর্ষ।
সংস্কৃতির এই মুক্তধারা রোধ করার চেষ্টায় সামরিক শাসন দমন পীড়ন চালিয়ে গেল। স্বৈর শাসন , সামরিক শাসনে ব্যাপক হারে আটক হলেন রাজনৈতিক আর সাংস্কৃতিক কর্মীরা। ১৯৫৮ র সামরিক শাসনে অত্যাচার হল মাত্রা ছাড়া।৬২ তে পাল্টা শ্লোগান দিলেন ছাত্ররা-- পদ্মা মেঘনা যমুনা , তোমার আমার ঠিকানা। ১৯৬৪ তে আবার ফিরে এল নববর্ষের ছুটি। বাংলা একাদেমি , ছায়ানট ( প্রতিষ্ঠা ১৯৬১ ), এবং নানা সহযোগী সংগঠন বাংলা একাদেমির চত্বরে বটমূলে ঐক্যতান অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেন। সমাবেশ হল প্রত্যাশার বেশিই হয়তো। ভিড়ের চাপে এমন কি আহত হলেন কেউ কেউ।
এরপর ১৯৬৭ থেকে শুরু হল রমনার অশ্বত্থমুলে নববর্ষের উৎসব। মুখ্য ভূমিকায় ছায়ানট। বাংলাদেশে রবীন্দ্র সঙ্গীতকে গ্রামশহরে তৃণমূল স্তরে যে ভাবে ছড়িয়ে দিয়েছেন , যে ভাবে প্রতিভা খুঁজে এনে তাকে লালন করছেন ছায়ানট তা বিস্ময়কর। শিক্ষনীয়। কালে কালে এ উৎসব পেল রাজনৈতিক তাৎপর্য। আজ তো বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র। সেখানে বাস করে একটি বাঙালী জাতি। আর নববর্ষ তাদের জাতীয় উৎসব। এই উৎসবে পাই গম্ভীরা , জারি , লোকগীতি, হাছন , লালন ছাড়াও রবীন্দ্রিসংগীত ,নজরুলগীতি এবং দেশাত্মবোধক গানের ডালি। এ সবই এখন উৎসবের উপাদান। একটি অসাম্প্রদায়িক অখণ্ড বাঙালী জাতীয়তার উৎসব।
এ বাংলার চালচিত্র
আমরা ভুলে যাই বাংলা দু ভাগ হয় নি। হয়েছে তিনভাগ। আরও জটিল কাটা ছেঁড়া। বরাক বাংলার কথা ভুলব কি করে ? শুধু বাঙালী দেশভাগের শিকার তাও নয়। আমি এখানে পাঞ্জাবের বা সিন্দ বালুচের কথা আনছি না। বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী ভাষার মানুষরাও একই দুর্ভাগ্যের শিকার। ভাষা আন্দোলনের এগারো শহীদের তীর্থে এঁদেরও একজন প্রাণ দিয়েছেন। সুদেষ্ণা সিংহ। ভাষাবিদ সুহৃদ ভৌমিকের কথায় সংস্কৃত যদি বাংলা ভাষার মা মেনেও নি তা পুষ্টি পেয়েছে দাই-মার বুকের দুধে। এই ধাত্রী মাতা সাঁওতালী। দেশভাগ এই উপজাতিকেও পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে।
কবি শামসুল হক কিছুদিন আগে উক্তি করেছেন-- এক বাঙালী। দুই দেশ। দেশ ভাগ হয়েছে। তাঁর কথায় বাঙালী জাতীয়তা অখণ্ড। তার সংস্কৃতি আবহমান। এ বাংলায় তথা সারা ভারতে যেখানেই বাঙালী আছেন আসুন আমরা বাঙালী আত্মপরিচয়কে গর্বের সঙ্গে তুলে ধরি। একে প্রাদেশিকতা ভাবার কারণ নেই। বাঙালী কবি অখণ্ড ভারতে একই সঙ্গের সোনার বাংলা আর ভারত মাতার গান গেয়েছেন। আসুন আমরা শুরু তো করি।
এক বাঙালী দুই দেশ / বাংলা নববর্ষ উৎসব প্রস্তুতি মঞ্চ।
মনের মানুষ খুঁজে পেতে দেরী হয় নি। খুব সম্প্রতি মাত্র কয়েক মাসের উদ্যোগে আমরা কোলকাতায় উদযাপন করব নববর্ষ আবাহন উৎসব। ১৪ ই এপ্রিল ২০১৫। ঠিক কোলকাতায় নয় , কোলকাতার উপকণ্ঠে। বেলঘরিয়ায়। আন্তর্জালে আমরা ব্যপক উৎসাহব্যঞ্জক সাড়া পেয়েছি। খুব সীমিত সামর্থ্যের আয়োজন। কিন্তু আমরা হাল ছাড়ি নি বন্ধু। আমরা গ্রাম থেকে গ্রামে এই উৎসবের বার্তা ছড়িয়ে দিতে চাই। এতদিন পাশে থেকেও আরশিনগরের যে পড়শিরা পরস্পরকে চেনার সুযোগ পাই নি এই নববর্ষ উৎসব আমাদের ধর্ম , বর্ণ , সম্প্রদায় নির্বিশেষে মেলামেশার পরিসর দিক। ভালবাসার দিগন্ত প্রসার পাক।
তা যদি নাই হল তবে কিসের একুশের আর উনিশের শহীদ স্মরণ ? ও বাংলায় যে বাঙালী চেতনার উন্মেষ হয়েছে আমিও তার শরীক বই কি। রাষ্ট্রপ্রেমের খাঁচায় তাকে বন্দী করার যে হিন্দি আর হিন্দুস্তানি প্রয়াস তা আজ ঘৃণাভরে প্রত্যাখানের দাবী রাখে। ভাষা জাতীয়তার একটি অসাম্প্রদায়িক ও মৌল একক। আমেরিকার মতই ভারতও একটি বহু ভাষাভাষী দেশের সমাহার। আমরা অবশ্য প্রদেশ বলছি। এবং হিন্দির নিরিখে দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত হচ্ছি। কেন্দ্রের শাসক দুই বাংলা সাংস্কৃতিক ভাবেও কাছে আসুক চায় না। হিন্দি সিনেমা সিরিয়ালের রপ্তানির বিনিময়ে বাংলাদশের সিনেমা সিরিয়াল এদেশে অবাধে আসার ছাড়পত্র পাচ্ছে না। দিল্লীর মধ্যস্থতায় নয় দুই বাংলা সরাসরি নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলিতে মত বিনিময় করুক। ও বাংলার ব্যাপক পাঠক পশ্চিম বাংলার বাংলা বইপত্র সহজে পান , আমাদের কাছেও তাদের লেখাপত্র , বইপত্র অবাধে পৌঁছক। হিন্দু ও মুসলমান এই দুই সম্প্রদায় যতক্ষণ না পরস্পরকে চিনছেন , বুঝছেন এবং বাঙালী হিসাবে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন ততদিন এ স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে।
বরাকের মাটিতে আরও যা প্রয়োজন উনিশের ভাষা আন্দোলনের সময় বাঙালী অনসমীয়া ভাষীদের যে বৃহত্তর ঐক্যে
সামিল করতে পেরেছিল নববর্ষ উৎসবে সেই ঐক্য পুনস্থাপনের একটি নতুন উদ্যোগ গ্রহণ। এখানে ডিমাসা জনগোষ্ঠীর কথা আলাদা করে টানছি। বাংলা ভাষা অখণ্ড ভারতে রাজভাষার মর্যাদা পেয়েছিল শুধু ত্রিপুরা নয় , ডিমাসা শাসিত কাছাড় রাজ্যেও। কবিগুরু ত্রিপুরার আতিথ্য নিয়েছিলেন। ত্রিপুরা তদনুপাতি প্রচার পেয়েছে। ত্রিপুরার রাজারা কিন্তু বাংলা সাহিত্যের চর্চা করেছেন এমন নয়। যা করেছিলেন ডিমাসা রাজারা। বাংলা সাহিত্যের সিলেবাসে বিষয়টি , মানে ডিমাসা রাজাদের ভূমিকা সেই গুরুত্বের সঙ্গে এখনও আলোচিত নয় বলেই জানি। ডিমাসা জনজাতি , শোনা যাচ্ছে , বাংলা লিপি বর্জন করে রোমান লিপির দিকে ঝুঁকেছেন। এই যে দুরত্ব তৈরি হয়েছে তা আমাদেরই ব্যর্থতা। নববর্ষ উৎসব সেতুটি নতুন করে গড়ুক।
আমরা এই দাবিই বা রাখব না কেন নেপালের মত বাংলাদেশের সাথেও ভিসা পাসপোর্ট হীন যাতায়াত শুরু হোক। কি বললেন-- জঙ্গিরা অবাধে ঢুকবে ? অভিজ্ঞতা বলে জঙ্গির পাসপোর্ট লাগে না। হয়রাণ হয় আম জনতা।
আমি কিছু সীমিত ভাবনার কথা বললাম। আসুন । কথা বলি। আরও নতুন ভাবে ভাবতে শিখি। সমৃদ্ধ হই। জোটবাঁধি। সফল হই।
যা বলতে চাইছি এ সব দাবী নিয়েই আমাদের নববর্ষের রেজলিউশন।
ভাষা নিয়ে , আরও নির্দিষ্ট ভাবে , মাতৃভাষা নিয়ে একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকার ১ম বর্ষ ৩য় সংখ্যার সম্পাদকীয় থেকে কিছুটা পড়ে শোনাই – ' বাংলা ভাষার মতো ভাষাগুলো কিছুদূর পর্যন্ত অধিকার পেয়েও এগোনোর রাস্তা তাদের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। যদি বাঙালীই কিছু না করে, তবে এক লাঞ্ছিত পোকায় কাটা ভাষা হিসাবে আমৃত্যু তাকে কাটাতে হবে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস তো সেইদিন ,-- সারা বছর নিজের ভাষার ন্যায্য স্থানের জন্য লড়াই করার পর অগ্রগতির নিয়ে আমরা যেদিন উৎফুল্ল হতে পারি। এমন দিন যাতে দিগন্তে দেখা যায় অন্যদিনের যখন বাংলা ভাষা শেখার জন্য অন্য ভাষার মানুষও অঞ্জলি পেতে থাকবে। --- জীবিকার সর্বস্তরে বাঙালীর পক্ষে বাংলাই হয়ে উঠবে তর্কাতীত স্বাভাবিক।'
পশ্চিমবঙ্গে তো দেখতে পাই সি বি এস ই , আই সি এস ই এই সব কেন্দ্রীয় স্কুল বোর্ডের পাশাপাশি ডি বি এস এবং নানা বেসরকারি শিক্ষা ব্যবসার রমরমিয়ে প্রসার। সংবিধান যে কোন ভারতীয়কে ভারতের যে কোন প্রদেশে মাতৃভাষায় শিক্ষালাভের অধিকার দিয়েছে। অথচ বাঙালীর অধিকার হয়েছে ক্রমশ সঙ্কুচিত। আসামের তিনসুকিয়ায় দেখেছি বাঙালী হাই স্কুল প্রভিন্সিয়ালাইস্ড হয়ে অস্তিত্ব রক্ষা করেছে। বাংলার সেকন্ডারি এডুকেশন বোর্ড সারা ভারতের বাংলা স্কুলগুলিকে এক ছাতার তলায় আনতে পারবে না কেন ?
অভিভাবক উৎসাহ পাবেন ? পাবেন , যদি বাংলা মাধ্যমে লেখাপড়া করে , বাংলা শিখে তার সন্তান পাতি বাংলায় করে খেতে পারে। বরাকেও বাংলা ভাষার অসমীয়াকরণের সরকারী প্রয়াস দিনে দিনে স্পষ্ট হচ্ছে। পশ্চিমবাংলায় বাংলা ভাষাই আজ ক্রমশ কোণঠাসা।
মনে রাখতে হবে দুই বাংলার বিভাজিত থাকার ইতিহাস ৬৮ বছরের। একসাথে থাকার ইতিহাস হাজার বছরের। আসুন হেমাঙ্গ বিশ্বাস যেমন বাউলগানের ঘরানা নয় বাহিরানার কথা বলেছিলেন আমরা মিলিতভাবে নববর্ষ উৎসবের একটি বাহিরানা নির্মাণ করি।



__._,_.___

Posted by: Farida Majid <farida_majid@hotmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___