বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বা ১৯৭৯ অ্যাক্ট বলে পরিচিত আইনের ওপর ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট হাইকোর্টের একটি রিট মামলার রায়কে বহাল রাখার আদেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। বিচার বিভাগের এই পদক্ষেপের ফল জাতির সংবিধান ১৯৭৯ আইনের মতো নীতিবিবর্জিত ও রীতি উপেক্ষা করে আরোপিত এক সর্বনেশে করাল ছায়া থেকে মুক্তি পেল, এটা আনন্দের কথা। গণতান্ত্রিক সরকারের কর্তৃত্ব যে তিনটি স্তম্ভের ওপর স্থাপিত, তার একটি যে বিচার বিভাগ_ সেকথা মানুষ খানিকটা টের পেল নতুন করে। ক্ষমতার পৃথক্করণ গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারের একটি অপরিহার্য শর্ত, যে শর্তের বলে সরকারের বিধানিক (পার্লামেন্ট), নির্বাহী ও বিচারিক ক্ষমতা আলাদা এবং স্বতন্ত্র বিভাগের ওপর ন্যস্ত থাকার কথা। পৃথক অথচ অভিন্ন, একমাত্র ধ্রুব লক্ষ্য হলো দেশ ও জাতির কল্যাণকর সেবা। সেই গুরুদায়িত্ব পালনে কোনো একটি বিভাগ অপারগ বা লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে অপর দুই বিভাগের যেন শক্তি থাকে ভুল শোধরানোর। এই অমোঘ শর্তের নিদারুণ অবমাননার ফলশ্রুতিই তো পঞ্চম সংশোধনী।
Sent: Sunday, March 27, 2016 11:18 PM
To: nabdc@googlegroups.com; pfc-friends@googlegroups.com; RANU CHOWDHURY; Mohammad Gani; Abid Bahar; NewEngland Awami League; Hussain Suhrawardy; Zoglul Husain; zainul abedin
Subject: {NA Bangladeshi Community} রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলের প্রক্রিয়া: যার সূত্রপাত ঘটেছিল একটি সিনেমা হল থেকে...
'মুন সিনেমা হল মামলা' সম্পর্কে সাধারণ মানুষদের কয়জন জানেন? কেউই হয়তো কিছু জানেন না, কারণ সাধারণ মানুষ ব্যস্ত রয়েছে ক্রিকেট খেলা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে। অথচ এই 'মুন সিনেমা হল' মামলাকেই ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে এমন এক রায় দেয়া হয়েছে, যাতে বাতিল হয়ে গিয়েছে সংবিধানের 'আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস', ফিরে এসেছে হিন্দু ও নাস্তিকদের বহুল আকাঙ্খিত 'ধর্মনিরপেক্ষতা'। ভাবছেন এটা কী করে সম্ভব? তো আসুন বিষয়টি আলোচনা করি। একাত্তরে যুদ্ধের পর এদেশের বহু পাকিস্তানী তাদের প্রচুর সম্পত্তি ফেলে চলে যায়। সেসব সম্পত্তি সরকার বাজেয়াপ্ত করে নেয় 'অর্পিত সম্পত্তি' হিসেবে। সেরকম একটি সম্পত্তি ছিলো পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাটের 'মুন সিনেমা হল', যার মালিক ছিলো পাকিস্তানের 'ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস'। এই সম্পত্তি বঙ্গবন্ধু সরকার বাজেয়াপ্ত করে প্রদান করেছিলো মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে। কিন্তু স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে কোম্পানীর নাম বদলে 'বাংলাদেশ ইটালিয়ান মার্বেলস ওয়ার্কস লিমিটেড' রাখা হয় । তারা মুন সিনেমা হল ফিরে পেতে নানা জায়গায় লবিং করতে থাকে। এর মধ্যেই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এর পর শিল্প মন্ত্রণালয় ২৭ জুন ১৯৭৫ সালে ওই সম্পত্তি 'পরিত্যাক্ত সম্পত্তি" বলে প্রাক্তন মালিককে চিঠি দিয়ে জানিয়ে সব আবেদন নাকচ করে দেয়। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস থেকে ১৯৭৬ সালে সম্পত্তি ফেরত পাবার আদেশ কামনা করে হাইকোর্টে রিট করেন। রিট দায়েরের প্রায় এক বছর পর ১৯৭৭ এর ১৫ জুনে হাইকোর্ট তার রায়ে মন্ত্রণালয় ও কল্যাণ ট্রাস্টকে সম্পত্তি ফেরত দিয়ে দেবার নির্দেশ জানিয়ে রিট নিষ্পত্তি করেন। কিন্তু তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের সংবিধানের ৫ম সংশোধনীতে আর্টিকেল ৭ এ একটি ধারা যুক্ত করেন যে, মুক্তিযুদ্ধের যাবতীয় শত্রুসম্পত্তি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ সংস্থা পাবে। আইনটি ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খুবই উপকারী। কিন্তু এর ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যায় মুন সিনেমা হল মামলা। এখানেই শুরু হয় আসল নাটক। এরপর সামরিক শাসন বাতিল হলে ১৯৯৪ সালে সিনেমা হলের মালিক ফের মামলা করেন। তখন মামলাটি গিয়ে দাঁড়ায় এই তর্কবিতর্কে যে, জিয়াউর রহমানের ঐ আইন করার এখতিয়ার ছিলো কি না ,শুনে অবাক হবেন, এই মামলার রায় দেয়া হয় ২০০৫ সালে বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়। রায়ে বলা হয়, জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখল অবৈধ, তার পুরো শাসনকাল অবৈধ, তার শাসনকালের সময়ে করা পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ। এই রায় দিয়ে হাইকোর্ট সিদ্ধান্ত দেয়, মুন সিনেমা হলের জমি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের কাছ থেকে নিয়ে ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কসের মালিক মাকসুদুল আলমকে বুঝিয়ে দিতে হবে। তখন বিএনপি সরকার তড়িঘড়ি করে মামলাটি কোনভাবে স্থগিত করিয়ে রাখে। কিন্তু পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই এই মামলাকে সচল করা হয়। ২০১০ সালে এই 'মুন সিনেমা হল' মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হয় এবং জিয়াউর রহমান আমলের সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করা হয়। জিয়াউর রহমান পঞ্চম সংশোধনীতে 'গণভোট' রেখেছিলেন, যেই 'গণভোট' নিয়েই সংবিধানে 'আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস' যোগ করা হয়েছিলো। ২০১০ সালের রায়ে এই 'গণভোট' বাতিল করে দেয়া হয়, যার ফলে 'আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস' সংবিধান থেকে বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু মজার বিষয় হলো, যেই 'মুন সিনেমা হল'কে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে কেড়ে নিয়ে মাকসুদুল আলমকে বুঝিয়ে দিতে বলা হলো, সেই মাকসুদুল আলম যুদ্ধের সময়েই পাকিস্তান চলে যায়। সে ফেরত আসেনি, এই ছুতোয় 'মুন সিনেমা হল' এর সম্পত্তি এখনও ফেরত দেয়া হয়নি। জমি জমির জায়গাতেই আছে, ওদিকে বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে 'আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস'।
এখানে আমরা যা দেখতে পেলাম-
১) 'বাহাত্তরের সংবিধান' পন্থীরা প্রায়ই বলে থাকে, তারা সংবিধান চেঞ্জ করেছে নাকি 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা' ফিরিয়ে আনার জন্য। কিন্তু 'মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট' থেকে সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে তা পাকিস্তান পলাতক মাকসুদুলকে বুঝিয়ে দেয়ার মধ্যে কোন 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা' কাজ করছে, তা সত্যিই আমার বুঝে আসে না। সাথে সাথে পাঠকদের এটাও জানা দরকার যে, সংবিধানে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস সংযুক্ত হয়েছিলো 'গণভোট' এর মাধ্যমে। হাইকোর্টের রায়ে এই গণভোট বাতিল করার ফলেই 'ধর্মনিরপেক্ষতা' প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। অর্থাৎ গণতন্ত্রের নাম করে 'গণভোট' বাতিল করা হলো, আর 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা'র নামে মুক্তিযুদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্টের বিরুদ্ধে রায় দেয়া হলো।
২) আওয়ামী লীগ সরকার খুব চালাক। সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তনের এখতিয়ার একমাত্র পার্লামেন্টের, কিন্তু আওয়ামী সরকার আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে 'আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস' উঠিয়ে দিয়েছে। কাজটি সম্পূর্ণই বেআইনি, কিন্তু আওয়ামী সরকার তা করেছিলো নিজের ঘাড়ে দায় না নেয়ার জন্য।ঠিক সেভাবেই বর্তমানে যে সংবিধান থেকে 'রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম' উঠিয়ে দেয়ার কাজ চলছে, তা করা হচ্ছে আদালতের মাধ্যমে। অথচ আদালতের এই বিষয়ে কিছু করার এখতিয়ার নেই। কিন্তু পার্লামেন্টে করলে আওয়ামী লীগের ঘাড়ে সরাসরি নাস্তিকতার দায় চাপবে, তাই তারা এখানেও আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে গুলি করছে।
৩) এখানে ইসলামবিরোধীদের মূল অস্ত্র হয়েছে একটি পরিত্যাক্ত সিনেমা হল। একটি সিনেমা হলের মামলার রায় দিতে গিয়ে সংবিধান থেকে 'আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস' উঠিয়ে দেয়া হয়েছে এবং 'ধর্মনিরপেক্ষতা' ফিরিয়ে আনা হয়েছে। অর্থাৎ হারাম থেকে হারামই উৎপন্ন হয়। বর্তমানে হয়তো সিনেমা হল নেই, কিন্তু ক্রিকেট খেলা তো রয়েছে। ভারত থেকে নর্তকী এনে কনসার্ট করা তো রয়েছে। এর সুদূরপ্রসারী ফলাফল আমাদেরকে চিন্তা করতে হবে। ক্রিকেট খেলায় জাতিকে ডুবিয়ে রেখে কতো ক্ষতি করা হচ্ছে, তা হয়তো কেউ চিন্তাও করতে পারবে না। কলকাতা থেকে বিভিন্ন অভিনেতা এনে সাক্ষাৎকারে বলানো হচ্ছে, বাংলাদেশে এই সম্পত্তি তার, ঐ সম্পত্তি তার। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে হয়তো এমন আইন পাশ করা হবে, যেখানে লেখা থাকবে কলকাতা থেকে হিন্দুরা সম্পত্তি ফেরত চাইলে তা মুসলমানরা ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে। একটি সিনেমা হলের জমির মামলাকে কেন্দ্র করে যদি সংবিধান বাতিল করে দেয়া যায়, তাহলে এমনটি হলে তাতে আশ্চর্যের কিছু থাকবে না।
অর্থাৎ মুসলমানদের এখন সমস্ত হারাম কাজ ত্যাগ করে মুসলমান হওয়াটাই সবচেয়ে বেশি জরুরী। একটি হারাম থেকেই উৎপত্তি ঘটতে পারে বিরাট দুর্যোগের, যাতে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। আজকের ক্রিকেটের উল্লাস আগামী দিনের পরাধীনতার হাহাকার, আজকের ভারতীয় শিল্পীর গিটার আগামী দিনের বিএসএফের হিংস্র বেয়নেট।
You received this message because you had subscribed to the Google Groups "North America Bangladeshi Community forum". Any posting to this group is solely the opinion of the author of the messages to nabdc@googlegroups.com who is responsible for the accuracy of his/her information and the conformance of his/her material with applicable copyright and other laws where applicable. The act of posting to the group indicates the subscriber's agreement to accept the adjudications of the moderator(s). To post to this group, send email to nabdc@googlegroups.com.
---
You received this message because you are subscribed to the Google Groups "North America Bangladeshi Community" group.
To unsubscribe from this group and stop receiving emails from it, send an email to nabdc+unsubscribe@googlegroups.com.
Visit this group at https://groups.google.com/group/nabdc.
For more options, visit https://groups.google.com/d/optout.
__._,_.___