কাউন্সিলে চাঙ্গা বিএনপি হতাশা মহাসচিব নিয়েযাযাদি রিপোর্ট ব্যাপক শো-ডাউন করে কাউন্সিল সম্পন্ন করায় বিএনপিতে যেমন চাঙ্গাভাব ফিরে এসেছে। তেমনি দীর্ঘদিনের মহাসচিবের শূন্য পদে নতুন ঘোষণা না আসায় হতাশাও আছে। কাউন্সিলে পূর্ণ কমিটি না হলেও অন্তত মহাসচিবের নাম ঘোষণা করা হবে এমনই আশা করেছিল দলের নেতাকর্মীরা। এই পদে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নাম ঘোষণা করতে কাউন্সিলে এসেছিল অনেক সুপারিশও। কিন্তু দলের প্রভাবশালী মহলে মহাসচিব নির্বাচন নিয়ে মতানৈক্য দেখা দেয়ায় এই পদে নাম ঘোষণা করতে আরো বিলম্ব হবে বলে জানা গেছে।
কাউন্সিলের পরদিন রোববার দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জানান, শোডাউনের দিক থেকে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি অর্জন থাকায় কাউন্সিল নিয়ে তারা সন্তুষ্ট। তাদের মতে, হামলা-মামলা নির্যাতনের কারণে সারাদেশে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে। এরপর ১০ দিন আগেও কাউন্সিল হবে কিনা এমন অনিশ্চয়তা থাকা সত্ত্বেও দেশব্যাপী এই কাউন্সিলে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। লাখ লাখ নেতাকর্মী যোগ দেয়ার মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর আভাসও দিয়েছে। তবে তাদের হতাশার একটাই জায়গা। তা হচ্ছে নেতা নির্বাচনে বিলম্ব। বিশেষ করে মহাসচিব পদে নাম ঘোষণায় আরো বিলম্ব করা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলেও মন্তব্য তাদের।
শনিবার কাউন্সিল শেষে ইঞ্জিনিয়ার ইন্সটিটিউট থেকে বের হয়ে এক কাউন্সিলর বলেন, সময়ের কাজ সময়ে না করার কারণে বিএনপিকে এরই মধ্যে অনেক খেসারত দিতে হয়েছে। আন্দোলন বন্ধ ও শুরু করার সিদ্ধান্ত সময়োচিত ছিল না। সঙ্গত কারণে তা ব্যর্থ হয়েছে। এখন কাউন্সিলের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর যে আভাস পাওয়া গেছে, এই পর্যায়ে মহাসচিব নির্বাচন করা ছিল সময়ের দাবি। কিন্তু তা হয়নি। তবে আর দেরি করাও ঠিক হবে না বলেও মনে করেন এই কাউন্সিলর।
কাউন্সিল অধিবেশনে অন্তত ১৪ জন কাউন্সিলর বক্তব্য রাখেন। এর মধ্যে অনেকেই দ্রুত মহাসচিব নিয়োগ দেয়ার দাবি জানান। অধিবেশনে ঠাকুরগাঁ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তৈমুর রহমান বলেন,
দলে এত সিদ্ধান্তহীনতা কেন? ভারপ্রাপ্ত নিয়ে আর কতদিন টানব? যোগ্যতা থাকলে মির্জা ফখরুলকে মহাসচিব করুন। নইলে অন্য কাউকে মহাসচিব নিয়োগ দেন।
এ বিষয়ে দলের দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, দাবি থাকবে, সমালোচনাও থাকবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, কাউন্সিলে মহাসচিবের নাম ঘোষণা করার কোনো সিদ্ধান্তই ছিল না। পাশাপাশি গঠনতন্ত্র সংশোধনের একটি ব্যাপার আছে। সেক্ষেত্রে ইচ্ছা করলেই মহাসচিবের নাম ঘোষণা করা যেত না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মহাসচিব করার সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্তই ছিল। দলের চেয়ারপারসন এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের গ্রিন সিগনালও ছিল তার পক্ষে। কিন্তু সম্প্রতি দলের একটি প্রভাবশালী অংশ মির্জা আলমগীরের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। আর এই অংশের নেতৃত্বে আছেন দলের স্থায়ী কমিটির দুই নেতা এবং এক যুগ্ম মহাসচিব। তারা বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়ে মির্জা আলমগীরের নাম ঘোষণা থেকে হাইকমান্ডকে এখন পর্যন্ত বিরত রেখেছেন। এছাড়া কাউন্সিল প্রস্তুতিতে সুকৌশলে এই অংশটি মির্জা আলমগীরকে খুব বেশি সক্রিয় হতে দেয়নি। অন্যদিকে মির্জা আলমগীরের পক্ষে সক্রিয় অবস্থান হচ্ছে, দলের স্থায়ী কমিটির এক সদস্য, এক ভাইস চেয়ারম্যানসহ ঢাকা মহানগর রাজনীতির নিয়ন্ত্রণে থাকা দলের একটি বড় অংশ। তারা দলের হাইকমান্ডের পাশাপাশি বিরোধিতা করা নেতাদের বোঝাতে চেষ্টা করছেন, কেন মির্জা আলমগীরই এই পদের জন্য সবচেয়ে বেশি যোগ্য। তুলে ধরছেন, আন্দোলন-সংগ্রামে মির্জা আলমগীরের ত্যাগও সবচেয়ে বেশি এবং নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা।
মহাসচিব নিয়োগের ইস্যু ছাড়া অন্য সবদিক দিয়ে কাউন্সিল সফল বলে মনে করেন দলের সবস্তরের নেতাকর্মীরা। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক লায়ন আসলাম চৌধুরী জানান, কাউন্সিলে প্রাপ্তি তো আছেই। তবে মহাসচিবের নামের ঘোষণা আসলে হয়তো তৃণমূলের নেতারা আরো বেশি খুশি হতো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সব পদে নেতা নির্বাচনের দায়িত্ব চেয়ারপারসনকে দেয়া হলেও আরো তিন চারদিন পর এর কার্যক্রম শুরু হবে। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের কারণেই মূলত ২৫ মার্চের পর থেকে এর কার্যক্রম শুরু করতে চায় সংশ্লিষ্টরা। আর বিগত সময়ের মতো এবারো চেয়ারপারসন তার আস্থাভাজন কয়েকজন নেতাকে দায়িত্ব দিচ্ছেন সব পর্যায়ের নেতার রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রমের রিপোর্ট তৈরি করতে। এই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরে সক্রিয় নিষ্ক্রিয় বিষয়টি বিবেচনা করে কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করবেন বিএনপিপ্রধান খালেদা জিয়া।
এদিকে শত প্রতিকূলতার পরও কাউন্সিল সফল হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে আনুষ্ঠানিক ধন্যবাদও জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গতকাল নয়া পল্টনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, 'জাতীয় সম্মেলন ও কাউন্সিল-২০১৬ সর্বাত্মক, সুন্দর, সুষ্ঠু ও প্রাণবন্তভাবে সুসম্পন্ন হওয়ায়, দেশি-বিদেশি আমন্ত্রিত অতিথি, সারাদেশ থেকে আগত লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী, জাতীয় কাউন্সিল উপলক্ষে গঠিত উপ-কমিটির আহ্বায়কসহ সব সদস্য, কাউন্সিলররা, নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সদস্যরা, সর্বোপরি মুদ্রণ, বৈদ্যুতিক, অনলাইন, গণমাধ্যমের সব সাংবাদিক, ক্যামেরাপারসন ও তাদের সহকারী এবং ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের সহযোগিতার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে প্রাণঢালা অভিনন্দন, শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
সোমবার, মার্চ, ২১, ২০১৬: চৈত্র ০৭, ১৪২২ বঙ্গাব্দ: ১১ জমাদিউস সানী, ১৪৩৭ হিজরি,Also read:
Analyze This : নেতাকর্মীরা অর্ধেক তৎপর হলে খালেদার রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হতো : গয়েশ্বর
আমাদের সময়.কম
শাহানুজ্জামান টিটু : দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, আমরা দলের মধ্যে যতটা তৎপর রাজপথে যদি এর অর্ধেকটা হতাম তাহলে বাংলাদেশে হাসিনার নয় খালেদা জিয়ার রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হতো।
রোববার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টন ভাসানী ভবনে ঢাকা মহানগর বিএনপির কাউন্সিলদের সঙ্গে মত বিনিময় সভায় তিনি এমন্তব্য করেন।
১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিল নিয়ে এখনো ষড়যন্ত্র চলছে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে সরকারের উদ্দেশ্যে গয়েশ্বর বলেন, ১৯ তারিখে কত ষড়যন্ত্র করবেন আর করবেন না তা জানি না। তবে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান পুন নির্বাচিত হয়ে গেছেন। তিনি বলেন, কাউন্সিলের মুল কাজ আমাদের হয়ে গেছে। দলের চেয়ারম্যান ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হয়ে গেছে। তাই ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ বসন্ত।
এ প্রসঙ্গে গয়েশ্বর আরো বলেন, প্রথম থেকেই আমরা কাউন্সিল নিয়ে কিছু ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি বাকী ষড়যন্ত্র মোকাবেলা হবে। ষড়যন্ত্র করে বেশী দিন টিকে থাকা যায় না।
তিনি বলেন, দলের নেতাকর্মীদের সহযোগিতা নিয়ে স্ব স্ব এলাকায় সুবিধা জনক স্থানে পোস্টার লাগালে সারা শহর পোষ্টার ছেয়ে যাবে।
কাউন্সিল উপলক্ষে ব্যাক্তিগত পোষ্টার করার ব্যাপারে দলের নেতাকর্মীদের সর্তক করে দিয়ে ব্যবস্থাপনা ও প্রচার উপকমিটির আহ্বায়ক বলেন, পোষ্টার ছাপাবেন সমস্যা নেই। তবে এসব পোষ্টারে নিজের ছবি বড় বড় করে দিয়ে ছাপাবেন। আর দলের শীর্ষনেতাদের পাসর্পোট সাইজের ছবি দিয়ে ছাপালে এবং সেই পোষ্টার যদি আমাদের হাতে আসে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অর্থহীন মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া
আমাদের সময়.কম__._,_.___