গত শতকের সত্তর-আশির দশকের কোন এক সময়ে, বিটিভিতে একটি নাটক দেখানো হয়, যাতে অভিনেতা, যিনি নাটকে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন এবং সরকারী কার্যোপলক্ষে নোয়াখালীর চরাঞ্চলে গিয়ে সেবাপ্রার্থীদের কাছে শুধু পাঙ্গাশ মাছের খোঁজ নিচ্ছিলেন। সরকারী কাজের চাইতে তিনি বারবার পাঙ্গাশ মাছের খোঁজ নিচ্ছিলেন, যেটা দ্বারা তিনি "ঘুষের" ইঙ্গিতও দিচ্ছিলেন। তার একথা বারবার শুনে একজন লোক বলেছিল, "হেতেরে হাঙ্গাশ মাছে হাগল কইচ্ছে"( উনাকে পাঙ্গাশ মাছে পাগল করেছে)।
দেশী-বিদেশী গনমাধ্যম, সংস্থা, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হচ্ছে বা হয়েছে বলে বহুবার অভিমত ব্যক্ত করেছেন। আর এটা শুনে আমাদের দেশের অনেক নেতা-নেত্রী আহ্লাদে আটখানা। হওয়ারই কথা। তলাবিহীন ঝূড়ির দেশকে কেউ মধ্যম আয়ের দেশ বললে বা মধ্যম আয়ের দেশ হলে কার না ভাল লাগবে। যদি মধ্যম আয়ের দেশ না হয়ে থাকে, তাহলে তাকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত করা বা পরিনত করার চেষ্টা করা অন্যায় নহে, বরং সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য কাজ। কিন্তু তা করতে গিয়ে লুটপাট করতে হবে কেন বা করার চেষ্টা করা হবে কেন? তা (মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত )করতে গিয়ে অনেকের চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
যেমন দরপত্র ছাড়াই বিদ্যুতের ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ(বিদ্যুৎ মন্ত্রনালয়), যেখানে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ, মন্ত্রীসভা কমিটি, ইআরডির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিরোধিতা রয়েছে। যুক্তি হিসাবে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০-এর আওতায় এসব প্রকল্প অনুমোদন করা যেতে পারে। বিশেষ আইনের মেয়াদকাল এখনও বলবৎ রয়েছে। দেশের ভবিষ্যৎ বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে নতুন নতুন বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নিতে হবেই। যত দেরি হবে উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছতে তত দেরি হবে। কেননা বিদ্যুৎ ছাড়া শিল্পায়ন সম্ভব নয়।
চীনের ঘুষ দেওয়ার তথ্য থেকে এবং অন্যান্য বাস্তব ঘটনার আলোকে এটা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলা যায় যে, নিজস্ব অর্থায়নে কাজগুলো করলে একই মানের একই পরিমান কাজ এক তৃতীয়াংশ থেকে সর্বোচ্চ অর্ধেক অর্থে সম্পন্ন করা যাবে। এবং দেশে দুর্নীতি সহনীয় পর্যায়ে আনতে পারলে, ইতিমধ্যে চিহ্নিত খাতগুলো, যেগুলোতে করযোগ্য হওয়া সত্বেও কর আদায় হচ্ছেনা, সেখান থেকে রাজস্ব আদায় করে, কোন প্রকার কঠিন শর্তের ঋন ছাড়াই নিজস্ব অর্থায়নে একই মানের একই পরিমান কাজগুলো এক তৃতীয়াংশ থেকে সর্বোচ্চ অর্ধেক অর্থে সম্পন্ন করা যাবে।
কিন্তু পাঙ্গাশ মাছের মত তথাকথিত "মধ্যম আয়ের দেশ, জিডিপি বৃদ্ধি" ইত্যাদিতে যেহেতু কোন কোন নেতা নেত্রী পাগল হয়েছে, সেহেতু এর ধূয়া তুলে একটি আমলা শ্রেনী তাদের আখের গোছাতে গিয়ে, কয়েক কোটি টাকার বিনিময়ে দেশের লাখ লাখ কোটি টাকার স্বার্থ বিদেশীদের কাছে বিলিয়ে দিচ্ছে। তা নাহলে ৫-৬গুন অর্থে পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ৫-৬গুন বেশী অর্থে পদ্মাসেতুর উপর রেলসেতু-রেল লাইন, ৩-৪গুন বেশী অর্থে মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ইত্যাদি নির্মানের প্রয়োজন কি? বিদ্যুতের, রেলসেতু-লাইনের, ইত্যাদির প্রয়োজন আছে। কিন্তু এত বেশী দামে কেন? ৩-৪-৫-৬ অংকগুলো ছোট হলেও ৩-৪-৫-৬গুন অর্থের সংখ্যাগুলো অনেক বড়। পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মাসেতুর উপর রেলসেতু-রেল লাইন, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ইত্যাদি নির্মানেই ন্যুনতম ১,০০,০০০(এক লাখ)কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করা হচ্ছে। কারও কারও মতে ৪০০০(চার হাজার) কোটি টাকা কিছু না হলেও ১,০০,০০০(এক লাখ)কোটি টাকা অবশ্যই অনেক কিছু।
Please visit www.corruptionwatchbd.com
__._,_.___