আমেরিকার আইএস তৎপরতা
ওয়াশিংটন পোস্টের একটা ফটোফিচার পড়ছিলাম 'বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেট এবং ইসলামিক মৌলবাদিতা বৃদ্ধি' এই শিরোনামে। ঢাকা-মুম্বাই ঘোরাঘুরি করেন বোস্টনে জন্ম নেওয়া এমন একজন এনজিওকর্মী কাম ফটোসাংবাদিক অ্যালিসন জয়েস লিখেছেন। তথ্যে নতুন কিছু নেই, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক টার্গেট কিলিংগুলো নিজেরা করেছে বলে আইএস যে প্রচার করছে তার স্বীকৃতি প্রদানের চেষ্টা বলা চলে। তবে মেয়েটির তোলা চার্চের ছবিগুলো সুন্দর, একইসঙ্গে খৃষ্ট ধর্মীয় সুড়সুড়ি জাগানোর মতো। আইএস এখন বিশ্ব মিডিয়ার কাছে হট আইটেম, কলাবাগানে জুলহাজ মান্নানের খুনের পর পর আইএস মোড়কে তার এই ফিচার মার্কিন মিডিয়ায় কেনার মতোই আইটেম।
এটা পড়া শেষ না হতেই সংবাদ পেলাম মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ফোন করেছেন প্রধানমন্ত্রীকে। তিনি কলাবাগানের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জুলহাজ মান্নানের হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীও সরকারের চেষ্টার কথা বলেছেন এবং বঙ্গবন্ধুর দুই খুনিকে ফেরত পাঠানোর কথাও বলেছেন কেরিকে। জন কেরি যখন ফোন করেন আমাদের বুঝতে হবে, এটা শুধু জুলহাজের জন্য নয়, বাংলাদেশে আইএস প্রতিষ্ঠার মার্কিন মহড়ার অংশ। তার আগের দিন ২৭ এপ্রিল ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আসলে তিনি নিজের নয়, ক্যাপিটল হিলের বার্তা দিয়ে এসেছেন।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন, বাংলাদেশে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যেখানে খুনি খুন করে পার পেয়ে যাচ্ছে এবং তা পুলিশ বা সরকার একার পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, তাই যৌথভাবে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। তিনি আকারে ইঙ্গিতে তার পূর্বসূরি ড্যান মজিনার মতো আরও বলেছেন যে, বাংলাদেশে আইএস রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকা প্রমাণ করার চেষ্টা করছে যে, বাংলাদেশে আইএস এর অস্তিত্ব আছে। ড্যান মজিনা সরাসরি বাংলাদেশের স্বীকারোক্তিও চেয়েছিলেন। ঢাকায় পুলিশের এক কর্মকর্তা একবার চারজনকে গ্রেফতার করে কথিত আইএস বলে প্রচার করলেও সরকারের কর্তাব্যক্তিরা এখন পর্যন্ত কোথাও কখনও আইএস-এর অস্তিত্ব স্বীকার করেননি, যদিও দেশি জঙ্গি বিস্তার এবং থাকার ব্যাপারে কেউ দ্বিমত করেন না। সরকারের অনেকে আইএস নিয়ে আমেরিকার এই একতরফা প্রচারকে দূরভিসন্ধি বলে মনে করছেন।
আরও পড়তে পারেন: সহিংসতা ঠেকাতে ১০ হাজার সাউন্ড গ্রেনেড আমদানি পুলিশের
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এসেছিল। ফলাফল শূন্য। বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক অভিজিতের হত্যাকাণ্ডের পরও এফবিআই এসেছিল। এখানেও ফলাফল শূন্য। তারা কোনও বস্তুনিষ্ঠ সহায়তা প্রদান করতে পারেননি- যদিও আমেরিকার এফবিআই সম্পর্কে প্রচার রয়েছে যে এটি খুবই শক্তিশালী সংস্থা।
আমেরিকা ন্যাটোর লিডার। এখন আইএস নিয়ে সবচেয়ে বেশি মুশকিলে পড়েছে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো। প্যারিসের হামলায় অনেক লোক মারা গেছেন। বেলজিয়ামের ক্ষয়ক্ষতিও প্রচুর। এখন আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেছে যে, অচিরেই আইএস বৃটেন, জার্মানি ও ইটালিতে অপারেশন চালাতে প্রস্তুত হচ্ছে। আমেরিকার উচিৎ তার সর্বশক্তি নিয়োগ করে ইউরোপকে সাহায্য করা। কারণ এখন যে তিন রাষ্ট্রকে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থার মতে টার্গেট করা হয়েছে তারা আধুনিক সভ্যতার বাতিঘর।
বাংলাদেশে হচ্ছে টার্গেট কিলিং আর ইউরোপে হচ্ছে মাস কিলিং। আমরা কোনওরকম কিলিং চাই না। কিন্তু এটাও সত্য বৃটিশের সময়েও বাংলাদেশে টার্গেট কিলিং ছিল। টার্গেট করে বৃটিশদের হত্যা করা হতো। ক্ষুদিরাম, সূর্যসেনসহ বহু বাঙালির টার্গেট কিলিং এর জন্য ফাঁসি হয়েছে বৃটিশদের আদালতে। সরকার এসব টার্গেট কিলিং মোকাবেলায় শুধু অন্যের দিকে ইঙ্গিত করলে হবে না, নির্মূলে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
জঙ্গি দমনে আমেরিকা যতই বাংলাদেশের পাশে থাকতে আগ্রহী হোক, বাংলাদেশ চাইতে পারে না। কারণ আমেরিকাকে নিয়ে শান্তিকামী বিশ্বের ভয় রয়েছে প্রচুর। কোনওখানে গোলমাল দেখলে তারা গায়ে পড়ে পক্ষভুক্ত হয় আর সে এলাকাকে দীর্ঘদিনের জন্য অশান্তিময় এলাকা হিসেবে গড়ে তোলে। এলাকাটাকে বিধ্বস্ত করে ফেলে। আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়ায় তার সাম্প্রতিক প্রমাণ।
আরও পড়তে পারেন: এটা যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈতনীতি!
http://www.banglatribune.com/columns/opinion/100733/আমেরিকার-আইএস-তৎপরতা
শনিবার ; এপ্রিল ৩০, ২০১৬
সম্পর্কিত সংবাদ
The Islamic State and Islamic fundamentalism on the rise in ...
https://www.washingtonpost.com/.../the-islamic-state-a...The Washington Post4 days ago - ... rise in Bangladesh. Photographer Allison Joyce felt compelled to travel there to see what has been happening. ... The Washington Post. Sections .... The Islamic State's presence is on the rise in Bangladesh. Photographer ...
খেলাফতে খোরাসান
আরও পড়তে পারেন: একজন রূপবানের মৃত্যু
প্রধানমন্ত্রীকে জন কেরির ফোন
__._,_.___