প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল, ২০১৬ ২১:৪১:৪০আপডেট : ০৬ এপ্রিল, ২০১৬ ২১:৪৮:০৮ |
চাঁদপুর: জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্য জাহানারা বেগম। গত ইউপি নির্বাচনে শুধু পুরুষের ভোটে সদস্য নির্বাচিত হন। কোন নারী ভোটার তাকে ভোট দেয়নি। তিনি নিজেও ভোট দেন না। এজন্য আক্ষেপের শেষ নেই তার।
জাহানারার মত এই ইউনিয়নের প্রায় আট হাজার নারী নির্বাচনের সময় ভোট দেন না। জানা গেছে, পর্দার অজুহাতে এখানকার নারীরা ভোটকেন্দ্রে যান না। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরেই এই রীতি চলে আসছে। তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও তারা ভোট দেবেন কি না তা নিয়ে সংশয়ে আছেন স্থানীয় প্রার্থীরা।
কেন ভোট দেন না নারীরা?
শুধুমাত্র পর্দার কারণেই রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের নারীরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন না। ফলে এখানকার নারীরা ধরেই নিয়েছেন তাদের ভোটের অধিকার নেই! পর্দা প্রথার কুসংস্কারের ওপর ভিত্তি করে গত অর্ধশত বছর ধরে এমন রীতি চলে আসছে এখানে।
রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ রোকেয়া বেগম। তিনি প্রতিটি নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালন করলেও ভোট দেন না। কেন ভোট দেন না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, পীরের নির্দেশেই তারা ভোটকেন্দ্রে যান না। ভোট দিতে গেলে নারীর পর্দার সমস্যা হয়।
স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা এমিলি বেগম বলেন, এই এলাকার নারীরা সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে; কিন্তু তারা ভোট দিতে পারবে না এটা মেনে নেয়া যায় না। তবে ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি আমাদের মা, দাদি-নানিরা ভোট দেন না, তাই ইচ্ছা থাকার পরও আমরা ভোট দিতে পারছি না।
তবে ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা সাবেক সেনা কর্মকর্তা বীরমুক্তিযোদ্ধা রমিজ উদ্দিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, বহু বছর আগে এই এলাকায় মহামারি আকারে কলেরা দেখা দেয়। এক জৈনপুরের পীর নারীদের পর্দার সঙ্গে চলাচলের পরামর্শ দেন এবং প্রকাশ্যে পুরুষের সামনে আসতে নিষেধ করেন। তখন থেকেই পর্দাসীন রাখতে নারীদের ভোট দেয়া থেকে বিরত রাখা হয়।
পরবর্তীতে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকরি (এনজিও) সংস্থা নারীদের ভোট প্রদানে উৎসাহ প্রদান করলেও স্থানীয় লোকজনের অসহযোগিতায় তা ভেস্তে যেতে বসেছে বলে জানান রমিজ।
তিনি আরও বলেন, ভোট বাদে বাকি সব কাজেই নারীরা এগিয়ে। হাট-বাজার থেকে শুরু করে অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমা সব ক্ষেত্রেই নারীর উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। শিক্ষার হারেও এখানকার নারীরা এগিয়ে।
সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালের ৯ম সংসদ নির্বাচনে ওই ইউনিয়নের কাউনিয়া ওয়াই এম উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রায় তিন শতাধিক নারী ভোট দিলেও অন্য ৮টি কেন্দ্রে কোন নারী ভোটার ছিল না। বরং ভোট দিতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন এরকম গুজব ছড়িয়ে পরবর্তী পর্যায়ে অনুষ্ঠিত অন্য সব নির্বাচনে নারী ভোটারদের অংশগ্রহণ বন্ধ করে দেয় এক শ্রেণির সুবিধাভোগী।
আগামী ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও এই এলাকার প্রায় ৮ সহ¯্রাধিক নারী ভোট দিতে পারবেন কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে স্থানীয় প্রশাসন বলছে, এবার নারীদের ভোটকেন্দ্রে এনে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রার্থী ঢাকাটাইমসকে বলেন, 'নারীরা ভোট দিলে ভালো, না দিলে আরও ভালো। তিনি বলেন, এখানকার জনপ্রতিনিধিসহ প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাওয়া ও বাড়তি খরচ থেকে বাঁচতে কুসংস্কারকেই পীরের নির্দেশ বলে ফায়দা লুটছে।'
বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া চেয়ারম্যান প্রার্থী বিল্লাল হোসেন খাঁন বলেন, 'একটি কুসংস্কারে বিশ্বাস করে নারীরা ভোটকেন্দ্রে যান না। তবে বর্তমানে নারী ভোটার নিয়ে নোংরা রাজনীতিও রয়েছে। তারা চান না নারীরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করুক।'
আওয়ামী লীগ মনোনীত দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসকান্দার মিয়া ঢাকাটাইমসকে বলেন, 'নারীদের ভোটদানে বিরত থাকার বিষয়ে পীরের নিষেধ আছে, কথাটি ঠিক নয়। পীর সাহেব নারীদের পর্দা করতে বলেছেন, ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেননি।'
এ ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবদিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, 'বিগত বছরগুলোতেও নির্বাচনের আগে প্রশাসন নানা ভাবে নারীদের ভোটদানে উৎসাহিত করেছে। এবারও আমরা চেষ্টা করব। প্রয়োজনে আলেম ওলামা ও স্থানীয় মসজিদের ইমামদের কাজে লাগানো হবে।'
(ঢাকাটাইমস/৬এপ্রিল/প্রতিনিধি/জেডএ)
__._,_.___