Banner Advertiser

Saturday, May 7, 2016

[mukto-mona] বেলায় অবেলায় রবীন্দ্রনাথ



বেলায় অবেলায় রবীন্দ্রনাথ

প্রকাশ : ০৮ মে ২০১৬, ০০:০০ | আপডেট : ০৮ মে ২০১৬, ০০:৩৮ | প্রিন্ট সংস্করণ

আতা সরকার

বাঙালি এখনো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে গর্ব করে। এ ধারা চলবে বহুকাল। বাঙালির অস্তিত্বের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়ানো তিনি। বিশ্বকবি বা কবিগুরু অভিধার মধ্যে আর আটকে নেই, তিনি আরও গভীরে ঢুকে গিয়েছেনÑ তার সমূহ সার্বিকতা নিয়ে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা কবিতার, এমনকি বাংলা সাহিত্যেÑ গল্পে, উপন্যাসে, নাটকে, পত্রালাপে, প্রবন্ধে, মননশীল চিন্তা প্রকাশে সর্বত্রইÑ গতিমান ধারা সৃষ্টি করেছেন। শুরু থেকেই তাকে ঘিরে, তাকে কেন্দ্র করে ঝড়ো হাওয়া, এখনো তাই। রবীন্দ্রসাহিত্যের জীবন্ত-প্রভায় তার অস্তিত্ব রয়ে যাবে কালে-কালে।

বাঙালি পালা-পার্বণে, সুখে-দুঃখে, আনন্দ-উল্লাসে-উৎসবে, অনুষ্ঠানে, প্রার্থনায়, পূজায় এমনকি আটপৌরে প্রাত্যহিকতার নানান অবয়বে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গ-সাহচর্যে অভিষিক্ত হয়। আবার বাদ-প্রতিবাদ লড়াকু দিনেরও সাথী তিনি। প্রাণরস ও শক্তিবোধ সংগ্রহ করা হয় তারই সাহিত্য থেকে। ধর্মাধর্মের ঊর্ধ্বে অভিন্ন বাঙালি সত্তার অস্তিত্ব হিসেবে তাকে পাওয়া যায়।

রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য-জীবনের শুরু থেকেই বণিক প্রজন্মের মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়েছে। শুরুতে তার পূর্বপ্রজন্মের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে মোকাবিলা করতে হয়েছে 'ঠাকুরবাড়ির রবি সেও আবার কবি'Ñ এ উপহাসকে। তাদের ছাপিয়ে তিনি এগিয়ে গেছেন। মুখোমুখি হতে হয়েছে সতীর্থদের। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের তরুণরা তার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন। আধুনিক কাব্য-উপকরণ সাহিত্যিক হাতিয়ার নিয়ে তাকে ঘায়েল করতে চেয়েছেন। এমনকি এখনো যে কোনো তরুণ কবি বুক চিতিয়ে ঋজু দাঁড়িয়ে বলতে পারেন : এই আমি। এ জগৎকে ধারণ করেছি। আবাহন করেছি একালকে। সময়ের সব সাজসজ্জায় আমি। আশ্চর্য, রবীন্দ্রনাথ অবলীলায় তাকেও অতিক্রম করে কালের মহাসড়ক বেয়ে এগিয়ে চলেন। কাল-অতিক্রম করার এ অসাধারণ ক্ষমতা তিনি অর্জন করে নিয়েছেন বাঙালিবোধের মাঙ্গলিকতা থেকে। বাঙালি সত্তার অন্তর্গত গভীর চৈতন্য থেকে।

ভারতীয় আবহমান মিশ্র-দর্শনের ভাববাদ, মঙ্গলবোধ, ইহজাগতিকা ও কর্মযোগ, জীবনাচার ও জীবনচর্চা, ধর্মশাস্ত্রের মরমিয়া এসব কিছুকেই ধারণ করেছেন তিনি। তিনি তার চৈতন্য জীবনদেবতায় সমর্পিত করতে চেয়েছেন, খুঁজে ফিরেছেন মানুষের মাঝে দেবতার অস্তিত্ব, সাধন-ভজন করেছেন মঙ্গলবোধের, তার দীপ জ্বালাতে চেয়েছেন অন্তর্লোকে। ধারণ করেছেন মহাকালকে। জড়িয়ে দিয়েছেন সমকালকে। আবাহন করেছেন সময়ের অনাদি কালকে। এভাবেই ঘটেছে তার সৃজনশীলতার ব্যাপ্তি।

তার পক্ষেই সম্ভব হয়েছে ভবিষ্যৎ-কালকেও অতিক্রম করে নিজের কবিতা প্রোথিত করা : 'আজি হতে শতবর্ষ পরে/ কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি/ কৌতুকভরে/আজি হতে শতবর্ষ পরে!' আবার তিনিই ভবিষ্যৎ-প্রজন্মের কবিকে আগাম অভিবাদন জানাতে পারেন নির্দ্বিধায় : 'আজি হতে শতবর্ষ পরে/ এখন করিছে গান সে কোন নূতন কবি/ তোমাদের ঘরে! আজিকার বসন্তের আনন্দ-অভিবাদন/পাঠায়ে দিলাম তাঁর করে।/ আমার বসন্তগান তোমার বসন্তদিনে/ ধ্বনিত হউক ক্ষণতরেÑ/ হৃদয়স্পন্দনে তব, ভ্রমরগুঞ্জনে নব,/পল্লমর্মরে/ আজি হতে শতবর্ষ পরে।' (১৪০০ সাল : চিত্রা)

'গীতাঞ্জলি'র ইংরেজি সংস্করণের বদৌলতে বিশ্ব রবীন্দ্রনাথকে খানিকটা চিনেছে। কিন্তু সে চেনাটা সম্পূর্ণ নয়। গীতাঞ্জলির ভাবময়তা যে আধ্যাত্মিক পরিবেশ তৈরি করে, বিশেষ করে ইংরেজির অনুবাদগুলোয় তাতে তাকে ভারতীয় দর্শনের আধ্যাত্মিক সাধক বলে মনে হয়, মনে করা হয়েছিল তিনি ভারতীয় ধ্রুপদী সাহিত্যের প্রতিনিধিত্ব করছেন। এ গ্রন্থ 'মরমি কবি' হিসেবে তার পরিচয় তুলে ধরে। নোবেল পুরস্কারদাতা সুইডিশ অ্যাকাডেমিও গীতাঞ্জলিকে 'সেরা আদর্শবাদী রচনা' বলে অভিধা দেয়।

এভাবে পশ্চিমা জগৎ তাকে জানায় পারলৌকিকতায় নিমজ্জিত অধ্যাত্মবাদের কবি হিসেবে। প্রসঙ্গান্তরে ড. আনিসুজ্জামানের অবলোকন : 'এর ফলে, রবীন্দ্রসাহিত্যের বিষয় যে ইহজগৎ ও মানুষÑ মানুষের চিরকালীন আবেগ-অনুভূতি এবং সমকালীন জীবনের নানারকম ঘাত-প্রতিঘাতÑ সে কথাটা পাশ্চাত্য জগৎ বিশেষ করে জানল না। রবীন্দ্রনাথ যখন বর্তমান বিশ্ব ও তার সমস্যা নিয়ে কথা বলতে গেলেন, তখন পাশ্চাত্যের পাঠক ও শ্রোতাদের কানে তা বেসুরো ঠেকল। এই বৃত্তাবদ্ধতা থেকে বেরিয়ে আসতে রবীন্দ্রনাথের অনেক সময় লেগেছিল।' (ভূমিকা : গীতাঞ্জলি)

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দর্শন গভীর তাৎপর্যময়। এ দর্শন একদিকে যেমন অবলোকন, অন্য অর্থে ভাব-মতবাদ। তিনি মানুষ, তার জীবনাচার, ভাবজগৎ পর্যবেক্ষণ করেছেন গভীরভাবে। সেখান থেকে উৎসারিত হয়েছে মনো-দর্শন, যা আবার ভারতীয় দর্শন-ঐতিহ্যে জারিত। কোথাও কোনো ঘটনা দেখাটা স্বাভাবিক পর্যবেক্ষণ। কিন্তু ঘটনার সার্বিক ব্যাখ্যা দেওয়াটা হলো গুরুত্বপূর্ণ এবং এর প্রয়োগ সাহিত্যকে মহত্তম পর্যায়ে তুলে দেয়। সাহিত্যকে করে কালোত্তীর্ণ।

জমিদার-তনয় বলে তার দিকে বাঁকা চোখে তাকানোর প্রবণতাও ছিল কারও কারও। উচ্ছন্নে যাওয়া জমিদারির দেখভালের দায়িত্বও তাকে পালন করতে হয়েছিল। এ সম্পর্কেও কেউ কেউ লোমহর্ষক ও অরোমাঞ্চকর গল্প বলেন কেউ কেউ। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের প্রখর দৃষ্টি ও গভীর পর্যবেক্ষণ গ্রামের মানুষের জীবনযাপন ও ভাব-ভাবনা, আচার-আচরণ যত ঘনিষ্ঠভাবে তুলে এনেছে, তার সাক্ষী হয়ে আছে গল্পগুলো, কিছু কিছু কবিতাও। প্রাসঙ্গিক, শিল্প-বিপ্লবের আধুনিক বিশ্বে আধুনিক ছোটগল্পের যখন বিকাশ ঘটছে, ঠিক সে সময়টাতেই রবীন্দ্রনাথ আধুনিকতম ছোটগল্প বিশ্বকে উপহার দেন।

রবীন্দ্রনাথ নিরন্তর নিজেকে সম্পাদনা করেছেন। করতে করতে কাল-উপযোগিতা তৈরি করেছেন। প্রয়োজনে নিজের দুর্বল রচনাগুলো অস্বীকার করেছেন। কোনো কবি বা লেখক নিজেরই রচনায় সম্পাদক হওয়া কঠিন বিষয়। তার পা-ুলিপির চিত্রময় কাটাকুটি এর প্রমাণ দেয়। তার এ চরিত্রটির পরিচয় পাওয়া যায় 'সঞ্চয়িতা'র ভূমিকায় : 'সন্ধ্যাসঙ্গীত, প্রভাতসঙ্গীত এবং ছবি ও গান এখনো যে বই আকারে চলছে, একে বলা যেতে পারে কালাতিক্রমণ দোষ।' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একালের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। এতদিন পরেও তাকে ত্যাজ্য করার সাহস কি আমাদের আছে? নাকি তাকে নতুন মাত্রায় সম্পাদিত করার?

এখনো তা সম্ভব নয়। বোধহয় কখনই নয়। তিনি বাঙালি সত্তায় প্রোথিত হয়ে গিয়েছেন। বেলায় অবেলায় তার কাছেই আমাদের ফিরে ফিরে আসতে হবে।

 

লেখক : কথাসাহিত্যিক

বিশেষ প্রতিনিধি | আপডেট: ০২:০৩, মে ০৮, ২০১৬ | প্রিন্ট সংস্করণ
Like
      



__._,_.___

Posted by: "Jamal G. Khan" <M.JamalGhaus@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___