ওসমান পরিবারের ওপর থেকে আগে সরকারের ইমডেমিনিটি বাতিল করতে হবে
ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ইতিপূর্বে ধারাবাহিকভাবে অসংখ্য সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বী ব্যক্তিদের হেনস্থ ও লাঞ্ছিত করা হয়েছে। আমার হাতে এমন ৫০ থেকে ৬০টি ঘটনা আছে তুলে ধরতে পারি। লেখার কলেবর বৃদ্ধির কারণে হয়তো সবগুলো তুলে ধরা সম্ভব নয়। নারায়ণগঞ্জ ঘটনার সপ্তাহদিন আগে সাপ্তাহিক বর্ণমালায় ধর্ম ও নবীকে অবমাননার ঘটনা নিয়ে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। সেখানে অনেকগুলো ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। তার মধ্যে বাগেরহাটের চিতলমারী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণ মহলী ও বিজ্ঞান শিক্ষক অশোক ঘোষাল এবং মনোহরগঞ্জ উত্তর হাওলা উচ্চবিদ্যালয়ের কম্পিউটার ও আইসিটি শিক্ষক সঞ্চিতা রাণী সাহার ঘটনা উল্লেখযোগ্য।
এভাবে খুন-হত্যা-ধর্ষণ ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের পাশাপাশি সম্প্রতি ধর্ম অবমাননা অভিযোগের বিষয়টি জোরদার করা হয়েছে। উদ্দেশ্য সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়িয়ে সামাজিক পরিবেশ বিষাক্ত করে তোলা। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে হিন্দু বা ভিন্ন ধর্মাবলম্বী শিক্ষকদের সরিয়ে দেওয়া। সেখানে স্বাধীনতাবিরোধীদের পছন্দের লোক বসিয়ে বিদ্যালয়টি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেওয়া। কোথাও আবার ধর্মের অবমাননার অভিযোগ তুলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করতেও দেখা যায়। আবার অসৎ ব্যক্তিরা তাদের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থে ধর্মীয় অভিযোগ তুলতে দেখা যাচ্ছে।
আসা যাক নারায়ণগঞ্জ ঘটনার ব্যাপারে। নারারয়ণগঞ্জের ঘটনা অত্যন্ত সুপরিকল্পিত এবং বলা চলে দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার। ইতিমধ্যে ঘটনা দৃশ্যে যেসব আলামত দেখা গেছে সেব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ দেখিনা। প্রথমত সেলিম ওসমানের বর্তমান পরিবার একটি সন্ত্রাসী জালিম এবং খুনী পরিবার একথা সর্বজন স্বীকৃত। সমগ্র নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য এ পরিবার একটি ত্রাস সৃষ্টিকারী পরিবার। ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি হালিম আজাদ বলেন, ইসলাম ধর্মকে নিয়ে কটুক্তির অভিযোগ এনে প্রধান শিক্ষককে নিয়ে নাটক করেছে ওসমান পরিবার। সেলিম ওসমান নাটক করেছে। এই সেলিম ওসমান সেই পিস্তল সেলিম ওসমান। যিনি কিনা পিস্তল নিয়ে নারায়ণগঞ্জ বোস কেবিনে একজনকে মারতে গিয়েছিলেন। আজ সেই পিস্তল সেলিম ওসমান এমপি হয়ে দানবের মতো কাজ করছে। নারায়ণগঞ্জের ১৭টি হিন্দু পরিবারের জায়গা জমি দখল করেছে। ওসমান পরিবার একটি সাম্প্রদায়িক পরিবার।
শামীম ওসমান, সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জবাসীর পাহাড় সমান অপরাধের অভিযোগ। লোকে বলে এরা কত মায়ের কুল খালি করেছে। কত মহিলাকে বিধবা করেছে। কত মা-বাবা তার সন্তান হারিয়েছে। ত্বকী হত্যায় একজন কোর্টে স্বীকারোক্তি দেওয়ার পর আজও বিচারের বাণী নিরবে কাঁদছে। সাত খুনের ঘটনায় শামীম ওসমানের সম্পৃক্ত থাকার কথা শোনা গেলেও আইন অসহায়। শিক্ষামন্ত্রীর উদ্দেশ্যে নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রাব্বী বলেন, শিক্ষামন্ত্রী আরো আগেই তিনি প্রমাণ করেছেন তিনি মেরুদন্ডহীন। না হলে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সামনে একজন এমপি কিভাবে প্রধান শিক্ষককে কান ধরে উঠবস করাতে পারে। তাছাড়া পুলিশ সুপার অসহায়ের মতো যখন বলেন ওখানে কোন মানবিক ঘটনা ঘটেনি। আমার করারও কিছু নেই। সেক্ষেত্রে যে ব্যক্তিকে তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তিনি পারবেন ওসমান পরিবারকে উপেক্ষা করে নিরপেক্ষ তদন্ত করতে?
সেলিম ওসমান বলেছেন, শ্যামলবাবু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করায় তার বিরুদ্ধে এই শাস্তি। কিন্তু যে ছাত্র অভিযোগ করেছে বলে বলা হচ্ছে সে এবং তার পরিবার বলছে স্যার ধর্মের বিরুদ্ধে কিছু বলেননি। আরবী শিক্ষক এবং অন্যান্যরাও একই কথা বলেছেন। সুতরাং বিষয়টি যে মিথ্যা এবং স্কুল পরিচালনা পরিষদের চক্রান্ত তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। তাই দেখা গেল শ্যামলবাবুকে সরানোর সাথে সাথে স্কুল পরিচালনা কমিটির প্রধানের বোনকে হেড মাস্টারের দায়িত্বে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেলিম ওসমানের বক্তব্য অবস্থা সামাল দিতে সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন। এক ভাই আওয়ামী লীগের সাংসদ অন্য ভাই জাতীয় পার্টির সাংসদ। দু'ভাইয়ের এত দাপট অথচ অবস্থা সামাল দিতে পারেননি এটা বিশ^াসযোগ্য নয়। যদি বিশ^াস করি তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ডাকলেন না কেন। আইন নিজের হাতে নেবার অধিকার সংসদও তো অনুমোদন করেনা। তাছাড়া মিথ্যাবাদীতারও সীমা আছে, ক্যামেরার ছবিতে স্পষ্ট দেখা গেল সেলিম ওসমান নিজেই উঠবস পরিচালনা করছেন। অথচ বলা হচ্ছে শ্যামলবাবু নিজে থেকেই উঠবস করেছেন।
অনেকে এমনকি আওয়ামী লীগের মোঃ হানিফ বলেছেন সেলিম ওসমানকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। না, সেলিম ওসমান একজন সাংসদ হিসেবে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। শাস্তিই তার উপযুক্ত প্রাপ্য। কি সাজা প্রাপ্য সেটি আদালতই ঠিক করবেন। তবে এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনার উল্লেখ করতে চাই। ৭১ সালে জামাতের কামরুজ্জামান একজন শিক্ষককে উলঙ্গ করে সমস্ত শরীরে চুনকালি মাখিয়ে পিরোজপুর বাজার প্রদক্ষিণ করিয়েছিল। কেবলমাত্র সেই অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কামরুজ্জামানকে ১০ বছরের শাস্তি প্রদান করেন। সুতরাং সেলিম ওসমান ক্ষমা পাওয়া যোগ্য না শাস্তিই একমাত্র প্রাপ্য সেজন্য হয়তো আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে।
সেলিম ওসমান শিক্ষককে উঠবস করিয়ে সমগ্র জাতিকে লাঞ্ছিত করেছেন। সমগ্র জাতি তার শাস্তি দাবি করছে। কিন্তু ওসমান পরিবার শাস্তি পাবে একথা বিশ^াস করতেও কষ্ট হয়। কারণ তারা এক ধরণের সরকারের ইমডেমিনিট ভোগ করছেন। সেই ইনডেমিনিটির বদৌলতেই তাদের এত দাপট। আইনমন্ত্রী নিজে অপরাধের কথা বলার পরও অন্যায়ভাবে শ্যামলকান্তি ভক্তকে তার পদ থেকে বরখাস্ত করে স্কুল কমিটি প্রধানের বোনকে দায়িত্বে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই স্পর্ধা তাদের ঐ ইমডেমিনিটির জোর। সুতরাং শ্যামল কান্তি ভক্ত ন্যায় বিচার পেতে হলে কিংবা সমগ্র জাতির বিচারের দাবি গ্রাহ্য হতে হলে আগে তাদের ওপর থেকে ইমডেমিনিটি বাতিল হতে হবে। এছাড়া সকল আশাই বৃথা।
http://khabor.com/archives/82120
চড় দিয়ে বাইরে এনে কান ধরতে বলেন সেলিম ওসমান | জাতীয় | Jugantor
__._,_.___