Good one.
All man-made problems are eating our motherland.
Hasan Mahmud.
From: Sitangshu Guha [mailto:guhasb@gmail.com]
Sent: Wednesday, August 10, 2016 10:19 PM
To: Khobor; mokto mona
Subject: Bhorer Kagoj, 9 August 2016
http://www.bhorerkagoj.net/print-edition/2016/08/09/101504.php
'হার্ড ওয়ার্ক' শুধু নয় চাই 'স্মার্ট ওয়ার্ক'
ব্রাজিলের রিও-ডি-জেনোরিও তে অনুষ্ঠেয় সামার অলিম্পিকের উদ্বোধনী ছিলো সাবলীল। স্পোর্টস-গেম চলছে। রাশিয়া নেই, অন্যরা এবার কিছু সোনা-রুপা পেতে পারে। বাংলাদেশ কি পাবে? ইউনুস সেন্টার ঢাক-ঢোল পিটিয়ে জানিয়েছিল ডঃ ইউনুস মশাল নিয়ে দৌড়াবেন এবং মূল সম্মেলনে বক্ত্রিতা দেবেন। উদ্বোধনী অনুষ্টানের আগের দিন সাদা-হলুদ মেশানো পোশাক ও হাফপ্যান্ট পরে ডঃ ইউনুস মশাল শেষ প্রান্তে পৌঁছে দেন। তবে তাকে দৌড়াতে দেখা যায়নি, তিনি হেঁটেছেন এবং হাটতে গিয়ে পড়ে যান, নিরাপত্তা কর্মীরা তাকে ধরে উঠিয়ে দেয়। https://www.facebook.com/himelmahmud075/videos/1088682697867232/
যারা ইউনুসকে দেখবেন বলে আশা করেছিলেন, তারা আশাহত হয়েছেন। কারণ মশাল পৌঁছে দেয়াটা মূল অনুষ্ঠানে ছিলোনা। তাকে ভাষণ দিতেও দেখা যায়নি। অলিম্পিকে বাংলাদেশের জনসংখ্যা দেখানো হয়েছে ১৬৯ মিলিয়ন, মানে ১৬কোটি ৯০ লক্ষ; এথলেট ৭জন।
ডঃ ইউনুস শুকনো রাস্তায় আছাড় খেয়েছেন। জঙ্গী দমনেও বাংলাদেশ কি আছাড় খাবে? বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করা হলেও কেউ কেউ আশংকা প্রকাশ করছেন যে, সমস্যার মুলে পৌঁছতে না পারলে মৌলবাদ-জঙ্গীবাদ দমন তৎপরতা ডঃ ইউনূসের মত শুকনো মাঠেই আছাড় খেয়ে পড়তে পারে। এতে সংখ্যালঘু নির্যাতন, ব্লগার হত্যা, এলজিবিটি ইত্যাদি ইস্যুর প্রসঙ্গ আসছে। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, মৌলবাদকে খুশি রেখে জঙ্গীবাদ নির্মূল করা কি সম্ভব? সংখ্যালঘু নির্যাতন একটি মৌলবাদী ঘটনা এবং এটি এখনো সমান তালে চলছে। হত্যার হুমকী সম্বলিত চিঠি পাচ্ছেন অনেকে। দেশ ছেড়েছেন কেউ কেউ। পূজা বন্ধ হয়েছে অনেক মন্দিরে। এরমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় কুড়িগ্রামের একটি ভিডিও এসেছে যা লজ্জাস্কর।
ঘটনাটি এরকম: বাঁশের মোটা লাঠি দিয়ে তাগড়া এক জওয়ান প্রকাশ্য দিবালোকে একজন অসহায় মহিলাকে লাফিয়ে লাফিয়ে অসুরের মত পেটাচ্ছে। ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। আমাদের পুলিশ যখন তা দেখেনা তখন বুঝতে হবে সিস্টেমে সমস্যা আছে। https://www.facebook.com/niloy.sobhan/videos/10208992300798562/ ঘটনা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে। নিলয় সোবহান নামে একজন ২৫শে জুলাই ফেইসবুকে ভিডিও-টি আপলোড করেছেন। জানা যায়, জমি দখলে বাঁধা দিলে লাল চাঁদ ও চান মিয়া ওই মহিলাকে পেটায়। রঞ্জিতের পরিবারের ওপর হামলা হলেও পুলিশ নীরব। মামলা হওয়ার সাথে সাথে জামিনও হয়েছে। পরিবারটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য চেয়েছেন। যেখানে পুলিশের সহযোগিতা নাই, সেখানে রঞ্জিতের ফরিয়াদ প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পৌঁছবে? দুর্বৃত্তরা পরিবারটিকে এখন প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। তাদের সামনে এখন দু'টি রাস্তা, হয় জমি নাহয় প্রাণ!
সদ্য নারায়ণগঞ্জের লাঞ্ছিত শিক্ষক শ্যামলবাবু'র ঘটনার রিপোর্ট দিয়েছে পুলিশ। সাংসদ সেলিম ওসমান বেকসুর খালাস। অর্থাৎ দেশবাসী যা স্বচক্ষে দেখেছে পুলিশ তা মিথ্যা প্রমান করে দিয়েছে। সমস্যা এখানেই। মানুষ বোঝে, পুলিশের ওপর চাপ থাকতে পারে, কিন্তু চাপ তো উৎরে আসতে হবে। এসময়ে বিচার বিভাগ প্রমান যে, ইচ্ছে থাকলে চাপ এড়ানো যায়। নাকি ওই শিক্ষক হিন্দু, একজন বিধর্মী! এই মানসিকতা যাদের, তারা সংখ্যায় খুব কম নয়, তারা কি খুনী জঙ্গীদের চেয়ে খুব ভালো? আমাদের দেশের পুলিশ অনেক ভালো কাজ করে, যেমন জঙ্গী দমনে পুলিশের তৎপরতা প্রশংসনীয়, কিন্তু তাদের ছোট ছোট ভুলভ্রান্তি সকল ভালো কাজের ক্রেডিবিলিটি নষ্ট করে দেয়। ইউরোপ-আমেরিকায় পুলিশ কোন জঙ্গীকে খুন করলে প্রশ্ন ওঠেনা, আমাদের দেশে ওঠে, কারণ 'বিশ্বাসযোগ্যতা বা গ্রহণযোগ্যতা', ওটা অর্জন করতে হয়।
আবার ধর্মীয় রাজনীতিকে প্রশ্রয় দিয়ে কি সন্ত্রাস নির্মূল সম্ভব? মনে হয়না। কারণ, ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার শুরু হলে, নিচের তলায় সবার অজান্তে ধর্মান্ধরা তাদের সকল অপকর্মই ধর্মের নামে জায়েজ করার প্রয়াস নেয়। বাংলাদেশেও হয়েছে তাই। সাঈদী বা শফি হুজুররা সেই সুযোগটা নিয়েছেন। ধর্মকে যারা রাজনীতিতে ব্যবহার করে তারা ধর্ম-ব্যবসায়ী বা ধর্ম-বণিক, ধর্মকে তারা পণ্য হিসাবে বিক্রি করে, এরা হীন। মসজিদ থেকে মাইকে আহবান করে যখন হিন্দু বাড়ী আক্রমণ হয়, তখন হিন্দুরা যতটা ক্ষতিগ্রস্থ হন, তারচেয়ে ঢের ক্ষতি হয় ধর্মের এবং এটাও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার! স্বার্থান্বেষী সামরিক বা রাজনৈতিক নেতারা যেমন ধর্মকে রাজনীতিতে টেনে আনেন, তেমনি রাজনীতিবিদরাই পারেন রাষ্ট্র ও ধর্মকে পৃথক করতে। রাজীব গান্ধীকে একবার সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন, 'আপনি কি হিন্দু'? তিনি উত্তর করেছিলেন, 'আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রী'। এতে হিন্দুত্বের কোন ক্ষতি হয়েছিলো বলে শুনিনি। এমেনিসটি ইন্টারন্যাশনালের আব্বাস ফয়েজ-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো তার ধর্ম কি? তিনি বলেছিলেন, তার ধর্ম, 'মানবাধিকার'।
জিয়াকে আমরা কোন কিছুতেই চাইনা, কিন্তু রাজনীতিতে তার প্রবর্তিত 'বিসমিল্লাহির রাহমানের রাহিম' আমরা ঠিকই রেখে দিয়েছি এবং ধর্ম নিরপেক্ষতার দাবীদার আওয়ামী লীগ নেতারা সমানে তা ব্যবহার করে চলেছেন। এমনকি হিন্দু নেতারা অনেকেই তা করে থাকেন। বছর দুই আগে নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সম্বর্ধনায় সর্ব-ইউরোপীয় আওয়ামী লীগ সভাপতি শ্রী অনিল দাশগুপ্ত 'বিসমিল্লাহির রাহমানের রাহিম' বলে ভাষণ শুরু করলে সবাই মুখ চেপে হাসেন এবং হলে মৃদু গুঞ্জন ওঠে। কেউ তাকে বলে দেয়নি, তবু তিনি তা করেছেন, এটা এক ধরণের মানসিকতা। এত ধর্মের আদৌ কোন উপকার হয় কিনা জানিনা, কিন্তু রাজনীতিতে ধর্মের অনুপ্রবেশ ঘটে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রায় সকল দলে ধর্ম এখন ঘরের ভেতরে ঢুকে গেছে। 'ধর্মকর্ম সমাজতন্ত্র' শ্লোগান শুনতে ভালো, কিন্তু ওটা ইতিমধ্যে বাম দলগুলোর বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে।
এবার ফেইসবুক থেকে নেয়া একটি ইংরেজী গল্পের বঙ্গানুবাদ শোনাচ্ছি: হেডিং: পাকিস্তানে রাস্তা পারাপারের নিয়মাবলী: ডানেবায়ে দেখুন গাড়ী-মোটর সাইকেল-পশু বা পথচারী আছে কিনা। ওপরের দিকে তাকান মার্কিন ড্রোন দেখা যায় কিনা। নীচের দিকে দেখুন, বোমা বা ল্যান্ড মাইনাস আছে কিনা। তারপর হাতের ব্যাগটি টাইট করে ধরুন যাতে ছিনতাই না হয়। এবার এঁকেবেঁকে দ্রুত রাস্তা পার হউন যাতে বিক্ষিপ্ত গুলী না লাগে। এই হলো ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তানের দশা। পাকিস্তান মোটামুটিভাবে এর বিধর্মী জনসংখ্যাকে বিতারণ বা নির্মূল করে ফেলেছে। বাংলাদেশ সেইদিকেই যাচ্ছে। তাই বোমা-গুম-খুনখারাবী-জঙ্গী তৎপরতা সমানতালে বাড়ছে। ওপরে ওপরে পাকিস্তানের বিরোধিতা করে তলে তলে পাকিস্তানী ধর্মান্ধ নীতি অনুসরণ করলে হয়তো ক'দিন পর বাংলাদেশেও রাস্তা পারাপারের বিষয়টি পাকিস্তানের মতোই হয়ে যাবে?
গাফফার চৌধুরী বলেছিলেন, সেনাবাহিনীতে ৫% হিন্দু থাকলে অভ্যুত্থান হতোনা। কথাটা সত্য। কারণ বাংলাদেশে হিন্দুরা 'ডিটারেন্ট' ফ্যাক্টর। বাংলাদেশে এখনো ১০% হিন্দু আছে বলেই দেশটি বসবাসযোগ্য। সব হিন্দুকে ঝেটিয়ে খেদিয়ে দিলে দেশটি পাকিস্তান, সিরিয়া বা আফগানিস্তান হতে খুব বেশি সময় নেবেনা। ইউরোপ বা আমেরিকা সুন্দর, কারণ এখানে সবধরণের মানুষ 'ইউনিটি ইন ডাইভার্সিটি'- মধ্যে বসবাস করে। মধ্যপ্রাচ্যে যেসব দেশে এক রকম মানুষের বসবাস, সেইসব দেশ কিন্তু খুব সভ্য হিসাবে পরিচিত নয়! তাছাড়া, যারা অন্যদের সাথে থাকতে পারেনা, তারা নিজেদের সভ্য বলে দাবী করে কিকরে? সুতরাং, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ হউক। এখনো প্রতিদিন সংখ্যালঘু নির্যাতনের হাজার হাজার ঘটনা ঘটছে, ওগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বব ডিলানের একটি গান আছে যা একটু ঘুরিয়ে বলা যায়, 'আর কত নির্যাতন হলে প্রশাসন স্বীকার করবেন যে হিন্দুরা নির্যাতিত হচ্ছেন'? বাংলাদেশে হিন্দু বা সংখ্যালঘু নির্যাতন একটি সমন্বিত প্রচেষ্টায় হিন্দুদের দেশত্যাগে বাধ্য করার হাতিয়ার। জঙ্গি দমনে সরকার বেশ তৎপর হয়েছেন, যা উৎসাহব্যাঞ্জক কিন্তু সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধে তৎপর হতে বাধা কোথায়? জঙ্গী দমনে 'জিরো টলারেন্স', সংখ্যালঘু নির্যাতনে 'জিরো টলারেন্স' নয় কেন?
এসব প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই নিহিত আছে বাংলাদেশে জঙ্গী দমন সম্ভব কিনা? সদ্য ঢাকায় জঙ্গী বিরোধী লক্ষ মানুষের সমাবেশ হয়েছে। যা আশাব্যঞ্জক। 'বাংলা স্প্রিং' কি তাহলে আসলো? আরব স্প্রিং সফল হয়নি, অন্তত: এখনো নয়; বাংলা স্প্রিং মুখ থুবড়ে পড়বে না-তো? গণজাগরণ মঞ্চ আন্দোলন মানুষকে জাগালেও সেটি সফল হয়নি বা হতে দেয়া হয়নি। আমেরিকায় একটি কথা আছে, 'ওয়ার্ক হার্ড'। এও বলা হয়, সফলতার চরমে উঠতে হলে শুধু কঠিন পরিশ্রমই যথেষ্ট নয়, ইউ হ্যাভ টু 'ওয়ার্ক স্মার্ট'। সরকার জঙ্গী দমনে হার্ড ওয়ার্ক করছেন, কিন্তু সফলতা পেতে হলে 'স্মার্ট ওয়ার্ক' করতেই হবে। কারণ জঙ্গী দমনে ব্যর্থতার কোন সুযোগ নেই। দেশ বাঁচাতে সফল হতেই হবে।
শিতাংশু গুহ, কলাম লেখক।
৭ই আগস্ট ২০১৬। নিউইয়র্ক।
__._,_.___