অভিযোগপত্র থেকে রসরাজের নাম বাদ দিচ্ছে পুলিশ
সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন সরকার নির্লিপ্ত থেকে প্রত্যক্ষ করছে : ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
আমাদের অর্থনীতি :
বিশ্বজিৎ দত্ত: আইসিটি আইনে গ্রেফতার ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার হিন্দুযুবক রসরাজকে চার্জশিট থেকে বাদ দিচ্ছে পুলিশ। গতকাল ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, পুলিশি তদন্তে ধর্ম অবমাননার মামলায় রসরাজের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। সেখানে অন্য এক যুবক জাহাঙ্গীর আলমের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। সে গত বৃহস্পতিবার নিজের অপরাধ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দীও দিয়েছে। সুতরাং তার নামেই পুলিশের অভিযোগপত্র দেয়া হবে। তবে এ অভিযোগপত্র কবে দেয়া হতে পারে তা তিনি বলতে পারেননি। তিনি বলেন, কয়েকটি ধাপে তদন্ত করা হয়েছে। তাই অভিযোগপত্র দিতে একটু দেরি হবে।
অন্যদিকে হিন্দু-বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাণা দাশগুপ্ত জানান, রসরাজের ক্ষেত্রে আইনের ন্যায়বিচার বিঘিœত হয়েছে। সরকারি তদন্তে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ না থাকার পরও তাকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। আইসিটি আইনে গ্রেফতার ব্যক্তিকেও আদালত জামিন দিতে পারে। আদালত যদি মনে করে এই লোক জামিনের পর পালিয়ে যাবে না। তবে তাকে জামিন দিতে কোনো বাধা নেই।
হিন্দু মহাজোটের সভাপতি সুকৃতি মন্ডল জানান, আগামী ৩ জানুয়ারি রসরাজের জামিন শুনানি ধার্য করা হয়েছে। কিন্তু তিনি প্রশ্ন রাখেন, যেখানে সবকিছু পরিষ্কার। রসরাজ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়, সেখানে কেন তাকে জামিন চাইতে হবে। সরকারতো তাকে খালাস দিতে পারে। আইনের গ্যারোকী শুধু রসরাজের জন্যই। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত মহাসমাবেশে ৭ দফা দাবি গ্রহণের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আয়োজিত গোলটেবিল সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে অধ্যাপক অজয় রায় বাংলাদেশ উল্টোপথে হাঁটছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশের উন্নয়নে সংখ্যালঘুরা কোনো ভূমিকা পালন করতে পারছে না। তার মতে, রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম থাকতে পারে না।
সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, রাষ্ট্রধর্মের মধ্য দিয়ে নাগরিকদের সংখ্যালঘুতে পরিণত করা হয়েছে। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক কারণ ছাড়াও মৌলবাদী আদর্শের ভিত্তিতে টার্গেট করে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা হচ্ছে। তিনি বলেন, শুধু সংখ্যালঘুরা নয়, আজকের বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ নিরাপদ নয়। সরকারের মধ্যে আপসকামিতা রয়েছে। অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, প্রশাসনের উচ্চ পদে কয়েকজন সংখ্যালঘুকে নিয়োগ দিয়েই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না। এ জন্যে কাঠামোগত পরিবর্তন প্রয়োজন। তিনি বলেন, হলি আর্টিজানের ঘটনার আগে প্রায় এক বছর ধরে দেশব্যাপী ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ব্লগারদের একের পর এক হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র ও সরকার নির্লিপ্ত থেকে তা প্রত্যক্ষ করেছে। কিন্তু সেদিন যদি তারা জিরো টলারেন্স গ্রহণ করতো তাহলে হলিআর্টিজান ও শোলাকিয়ার ঘটনার ঘটত না। তিনি সংখ্যালঘুদের জনজীবনে বিরাজিত পরিস্থিতির জন্যে সরকার, রাজনৈতিক শক্তি ও সামাজিক আন্দোলনের ব্যর্থতাকে দায়ী করেন।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, নিজ দেশের সংখ্যালঘুদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে অন্য দেশের সংখ্যালঘুদের অধিকার ও নিরাপত্তাদানের দাবি হাস্যকর। তিনি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপরে যে জাতিগত সহিংসতা চলছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের সবকটি দলের নীতি নির্ধারকদের কাছে কোনো সংখ্যালঘু নিরাপদ নয় উল্লেখ করে বলেন, আমাদের দেশ 'সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত' বলে যে সেøাগান দেওয়া হয় তা রীতিমত হাস্যকর। তিনি বলেন, উন্নয়নের আগে নিরাপত্তা দরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতা ও সদিচ্ছায় যারা বাধা দিচ্ছে প্রশাসন ও সরকারি দলের মধ্য থেকে তাদের চিহ্নিত করার সময় এসেছে বলে উল্লেখ করেন। মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের বিরোধী নই তবে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুুদ্ধের পথে চলুক এটাই আমাদের দাবি। সাংবাদিক সোহরাব হাসান আত্মজিজ্ঞাসার আজ বড় বেশি প্রয়োজন উল্লেখ করে বলেন, রসরাজ অপরাধ না করেও আজ জেলে। এটাই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের অবস্থা। কোথায় মানবতা, কোথায় ধর্মনিরপেক্ষতা। রাষ্ট্রীয় আবহ সংখ্যালঘুদের জন্যে ভীতিকর। ক্ষমতাসীন সবারই রাজনৈতিক সমীকরণ হচ্ছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। সাবেক রাষ্ট্রদূত শরদেন্দু শেখর চাকমা সংখ্যালঘুদের ক্ষমতায়নের উপর জোর গুরুত্ব আরোপ করেন। মানবাধিকারকর্মী শামছুল হুদা মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন আজ বিবর্ণ বলে উল্লেখ করে বলেন, দেশ সংখ্যালঘুশূন্য হলে গণতন্ত্রেও শূন্যতা আসবে। সম্পাদনা :উম্মুল ওয়ারা সুইটি
http://amaderorthoneeti.net/new/2016/12/10/49246/#.WEsKi9QrJXx
__._,_.___