খবর : সংবাদ প্রতিদিন'র
ধর্ম পালটাতে বাধ্য করায় পাকিস্তান ছাড়ছেন হিন্দুরা
অনলাইন ডেস্ক
জন্মলগ্নে পাকিস্তানে হিন্দু ছিল ২৩ শতাংশ। জোর করে ধর্মান্তকরণের জেরেই দলে দলে পাকিস্তান ছাড়ছেন সংখ্যালঘু হিন্দুরা। ধর্মের ভিত্তিতে
দেশভাগ হলেও প্রথম প্রতিশ্রুতি অবশ্য অন্যরকমই ছিল। বলা হয়েছিল, পাকিস্তানে সব ধর্মের মানুষই তাদের ধর্মাচরণের সমান অধিকার পাবেন।
অক্ষুণ্ণ থাকবে হিন্দুদের মৌলিক অধিকার। সসম্মানেই সে দেশে থাকতে পারবেন তারা। কিন্তু বাস্তব বলছে সে প্রতিশ্রুতি তো পরে রাখা হয়ইনি,
উল্টো তা উড়িয়েই দেওয়া হয়েছে প্রতি পদে পদে। বেড়েছে জোর করে ধর্মান্তকরণের ঘটনা। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছে যে গত কয়েক দশকে
পাকিস্তান ছাড়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুরা।
ধর্মের চাপ তো আছেই। তার উপর আছে অত্যাচার ও নির্যাতন। পাকিস্তান ছাড়তে বাধ্য করার জন্য সংখ্যালঘু হিন্দু মহিলাদের উপর চলেছে ধর্ষণ,
শ্লীলতাহানির মতো ঘটনা। হয় অন্য ধর্ম গ্রহণ, নয় এই নির্যাতনের মুখোমুখি দাঁড়াতে হচ্ছে হিন্দুদের। এমনকী ব্যবসায়ীদের অপহরণ করে বসবাস
ওঠানোও আকছারই ঘটছে পাক মুলুকে। হিন্দুদের ধর্মাচরণ বা গরুকে পুজো করা নিয়ে চলে ঠাট্টা-তামাশা। তাতে হিন্দুদের ধর্মীয় বোধেই আঘাত লাগে।
যদিও তা নিয়ে বিন্দুমাত্র হেলদোল নেই সংখ্যাগুরু মুসলমানের। ফলত হিন্দুরা দেশ ছাড়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তা এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে পাকিস্তানে
হিন্দুদের সংখ্যা কমেছে মারাত্মকভাবে। আগে দেশের প্রায় সব জায়গাতেই হিন্দুদের দেখা মিলত। কিন্তু এখন সিন্ধ প্রদেশ ও গুটি কয়েক জায়গা ছাড়া
সে দেশে হিন্দুদের দেখা মেলাই ভার।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সিন্ধু প্রদেশে প্রতি বছর প্রায় ১০০০ নারীকে জোর করে ইসলাম গ্রহণ করানো হয়। প্রতি মাসে প্রায় ২০ জন নারী বিশেষত
তরুণীরা এর শিকার হন। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে কোনো সাহায্য করা হয় না। তার উপর আছে শরিয়তি আইনের নামে অত্যাচার ও নির্যাতন।
এর জেরে প্রতি বছর প্রায় ৫০০০ জন হিন্দু পাকিস্তান ছেড়ে ভারতেই আশ্রয় নিচ্ছেন।
বিডি প্রতিদিন/২১ জুন ২০১৭/এনায়েত করিম
পাকিস্তানি সংখ্যালঘুদের ভারতমুখী স্রোত দিলি্লর কাছে সাহায্যের আবেদন
যাযাদি ডেস্ক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকা হিন্দু ও শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ পাকিস্তান ছাড়ছেন। কেউ চলে যাচ্ছেন ভারতে, আর কেউ বা পাড়ি দিচ্ছেন দুবাইয়ে। প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা পাওয়ার নূ্যনতম আশা নেই সিন্ধু তীরে বসবাসকারী হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের কাছে। ফলে বাধ্য হয়েই ভারত এবং আমেরিকার কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন পাকিস্তানে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা। সিন্ধু প্রদেশের মিরপুরখাস এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা দুই দেশের দূতাবাস কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছেন। তবে পাকিস্তান সরকার হিন্দুদের ভারতে চলে যাওয়ার কথা স্বীকার করতে চায়নি।
গত কয়েক মাস ধরে পাকিস্তানের বেশকিছু এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর লাগাতার সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। মূলত সিন্ধু
প্রদেশ এবং বেলুচিস্তানে সবচেয়ে বেশি সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। এরপর থেকেই বহু হিন্দু পাকিস্তান ছাড়তে শুরু
করেছে বলে জানা গেছে। গত কয়েকদিন ধরেই হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা বেড়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া
গেছে। হিন্দু পরিবারগুলোর ওপর হামলা, হিন্দু ব্যবসায়ীদের অপহরণ, মেয়েদের অপহরণ এবং অপহরণের পর ধর্মান্তরিত
করে বিয়ের অভিযোগও উঠছে। হিন্দুদের কাছ থেকে অবাধে চাঁদাবাজি করছে দুষ্কৃতকারীরা।
হিন্দু পঞ্চায়েত চেয়ারম্যান লক্ষ্মণদাস পারওয়ারি অভিযোগ করেছেন, মিরখাসপুর এবং সংলগ্ন এলাকায় হিন্দুদের ওপর হামলার
ঘটনা সবচেয়ে বেশি। দুষ্কৃতকারীদের হামলা রুখতে পুলিশ সম্পূর্ণ উদাসীন। পাকিস্তানের প্রথম সারির টেলিভিশন চ্যানেল জিও টিভিকে পারওয়ানি বলেছেন, উপায় না দেখে পাক-ভূখ-
ছাড়ছে হিন্দুরা। গত ৫ মাসে মিরপুর এলাকা থেকেই ১৮টি পরিবার চলে গেছে। এদের অধিকাংশই গেছে ভারতে। অনেকে আবার পাড়ি দিয়েছে দুবাইয়ে। গত শুক্রবার থেকে প্রায় ২০০ জন
হিন্দুর ভারতে প্রবেশ নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পাকিস্তানি মিডিয়াগুলোর প্রচার, ওই হিন্দুরা ভারতে আশ্রয় নিতে যাচ্ছেন। ওরা আর পাকিস্তানে ফিরবেন না।
এক সময়ের সিন্ধু প্রদেশের আইনসভার সদস্য লক্ষ্মণদাস পারওয়ানির আরো অভিযোগ, চাঁদাবাজদের টাকা দেয়নি বলে দুই হিন্দু যুবককে হত্যা করা হয়েছে। তিনি এমন দুই ব্যবসায়ীর কথা জানিয়েছেন; যারা লক্ষাধিক টাকা মুক্তিপণ দিয়ে অপহরণকারীদের হাত থেকে ছাড়া পেয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, 'পরিস্থিতি বিচার করে আমরা আমেরিকান দূতাবাস ও ভারতীয়
হাইকমিশনকে চিঠি দিয়ে আমাদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখতে বলেছি।'
তবে হিন্দুরা যে অবস্থাতেই থাক, পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ বিষয়টি লঘু করেই দেখছে। পাক-প্রশাসনের দাবি, বিষয়টি নিয়ে অযথাই হইচই করা হচ্ছে। শুক্রবারই ওয়াঘা সীমান্তে পাক অভিবাসন
বিভাগ ভারতে যেতে চাওয়া পরিবারগুলোকে আটকে দিয়েছিল। অভিবাসন কর্তাদের দাবি, হিন্দু নেতারা কথা দিয়েছেন, তারা তীর্থ করতে ভারতে যাচ্ছেন। আবার পাকিস্তানে ফিরে আসবেন।
একই মত পাকিস্তান ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এফআইএ)। এর প্রধান জানিয়েছেন, ওই ২৫০ জন চিরদিনের জন্য ভারতে চলে যাচ্ছেন এমটা নয়। এজেন্সির সন্দেহ, টিভি
চ্যানেলগুলো উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব প্রচার করছে। কয়েকজন স্বার্থান্বেষী মানুষ নিজেদের আখের গোছাতে এ রকম অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করেছে। যদিও পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
রেহমান মালিক এফআইএকে নির্দেশ দিয়েছেন, সিন্ধু প্রদেশের বিষয়টিতে কড়া নজর রাখতে। হিন্দু পরিবারগুলোর ওপরে কোনো ধরনের অত্যাচার সহ্য করা হবে না। রেহমান মালিক হিন্দু
পরিবারগুলোকে সম্পূর্ণ সাংবিধানিক রক্ষাকরচ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এরইমধ্যেই তিন সংসদ সদস্যদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেন। কমিটিতে দুই হিন্দু
সদস্য ও এক পাকিস্তানি মন্ত্রী আছেন।তবে পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক টানাপড়েনের মধ্যে সম্প্রীতির আলো দেখাচ্ছেন খুরশিদ খান। এক সময়ের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খুরশিদ হিন্দু মন্দির ও ধর্মস্থানে 'সেবা' করার অপরাধে চাকরি
খুইয়েছেন। তিনি অবশ্য এতে নিম্নমানের রাজনীতির ছায়াই দেখেছেন। আর তাকে গুরুত্ব দিতেও রাজি নন খুরশিদ। তিনি জানিয়েছেন, 'সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন বাড়াতেই আমি হিন্দু দেবস্থানে
সেবাকাজ চালিয়ে যাব।' কয়েক বছর আগে পেশোয়ারের গুরুদ্বার জোগান শাহে থালা ধোয়া, জুতা পালিশের সেবা করে আলোড়ন তোলেন খুরশিদ খান। সেখানে তালেবান জঙ্গিরা কয়েকজন শিখকে
অপহরণ করে হত্যা করেছিল। খুরশিদের সেবা তারই প্রতিবাদ। তথ্যসূত্র : পিটিআই