জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা
কুয়েত আমিরের পাঠানো টাকা নিয়ে আদালতের প্রশ্ন
সমকাল প্রতিবেদক
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে সপ্তম দিনের মতো যুক্তি উপস্থাপন করেছেন তার আইনজীবী সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে এতিমদের কল্যাণের নামে কোনো তহবিল ছিল না। জালিয়াতি করে এবং গোঁজামিল দিয়ে একটা ফান্ড তৈরি করা হয়েছে। যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের এক পর্যায়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীর কাছে বিচারক জানতে চান, কুয়েতের আমির কত টাকা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে দান করেছিলেন? সেটা কীভাবে কোন অ্যাকাউন্ট থেকে ক্যাশ করেছেন? জবাবে এ জে মোহাম্মদ আলী আদালতকে বলেন, এই তহবিল পাবলিক তহবিল কি-না, সেটা আগে নির্ণয় করতে হবে। এই টাকার উৎস নির্ণয় করা জরুরি। বিচারকের প্রশ্নের কোনো সদুত্তর না দিয়ে তিনি অন্য প্রসঙ্গে চলে যান। তিনি সাবেক রাষ্ট্রদূত আবদুস সাত্তারের জবানবন্দি ও জেরার অংশ পড়ে শোনান। আদালতকে তিনি জানান, বাংলাদেশে কুয়েত দূতাবাস থেকে যে পত্র দেওয়া হয়েছিল, সেখানে বলা আছে, কুয়েতের আমির ব্যক্তিগতভাবে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টকেই টাকা দিয়েছিলেন। সেটা কোনো পাবলিক তহবিল ছিল না। পাবলিক তহবিল তৈরি করার জন্য তারা (দুদক) কারিগরি বিদ্যায় ঢুকে পড়েছিল। তিনি আরও বলেন, এটা সৌদি আরবের টাকা নয়, কুয়েতের আমিরের টাকা। তবে পাঠানো হয়েছে সৌদি আরবের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাধ্যমে। বাংলাদেশে যেমন বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা রয়েছে, সৌদি আরবেও বিভিন্ন দেশের ব্যাংকের শাখা রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার পঞ্চম বিশেষ আদালতে যুক্তি উপস্থাপনকালে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এসব কথা বলেন। তার বক্তব্যে শেষ না হওয়ায় আগামী ১০ ও ১১ জানুয়ারি পরবর্তী যুক্তি উপস্থাপনের দিন ধার্য করেন বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান। বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে খালেদা জিয়া বকশীবাজার মাঠে স্থাপিত আদালতে আসেন। তিন মিনিট পর আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়ে ৩০ মিনিট বিরতি দিয়ে বেলা সোয়া ৩টা পর্যন্ত চলে। এরপর গুলশানের উদ্দেশে খালেদা জিয়া আদালত ত্যাগ করেন। যুক্তিতর্কের এক পর্যায়ে বিচারক খালেদা জিয়ার আইনজীবীর কাছে জানতে চান, কুয়েত থেকে কত টাকা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে দেওয়া হয়েছিল এবং সেই টাকা কোন অ্যাকাউন্ট থেকে ক্যাশ করা হয়েছিল। জবাবে এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, এই পত্রে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি। আদালত তার কাছে আবারও প্রশ্ন করেন, টাকার অঙ্ক যেহেতু উল্লেখ নেই, তা হলে আপনারা কী জানতে চেয়েছিলেন? আদালত আরও জানতে চান, ওই পত্র কার স্বাক্ষরিত। জবাবে এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, একটা লিখিত ডকুমেন্টস দাখিল করা হবে। আদালত আবার প্রশ্ন করেন, বুঝলাম এটা কুয়েতের টাকা। সেটা কীভাবে এলো এবং কোন অ্যাকাউন্ট থেকে ভাঙানো হয়েছিল? কুয়েতের আমির যে শহীদ জিয়ার এতিমখানায় টাকা পাঠিয়েছিলেন, তা প্রমাণ করেন। বিচারক আবার বলেন, ধরলাম রাষ্ট্রপক্ষ এটা প্রমাণ করতে পারেনি, আপনারা করেন। এ পর্যায়ে এজে মোহাম্মদ আলী বলেন, কুয়েত থেকে টাকা আসছে, কিন্তু টাকা বণ্টনে খালেদা জিয়ার কোনো সংশ্নিষ্টতা নেই। আদালতের কার্যক্রম শেষ হলে বাইরে খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মূল নথিপত্র পাওয়া যায়নি। সে জন্য রাষ্ট্রপক্ষ জালিয়াতি করে ছায়ানথি সৃজন করেছে। এখানে ছেঁড়া ও গোঁজামিল দেওয়া কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। এগুলো সব ফলস ডকুমেন্টস। জালিয়াতি হয়েছে- সেজন্য মামলায় এটাই প্রমানিত যে, খালেদা জিয়া নির্দোষ। ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, মামলাটি যারা জালিয়াতি করে তৈরি করেছেন তাদের বিরুদ্ধেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদালতে আবেদন করা হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাতজনের নাম পাওয়া গেছে। এই জালিয়াতির কারণে তাদের সাজা হতে পারে। কত কাঁচা হাতে এ কাজটি করেছে তারা! মামলাটি আইনের চোখে সম্পূর্ণ অস্তিত্বহীন। এই প্রাইভেট ফান্ডকে পাবলিক ফান্ড করার জন্য এ ছলচাতুরি, জাল জালিয়াতির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরপর দুদকের এ মামলার প্রধান কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, গতকাল (বুধবার) পর্যন্ত আসামিপক্ষ বলেছে ঘষামাজা ও কাটাকাটি করে মামলা সাজানো হয়েছে। এখন তারা বলছেন, টাকা বণ্টনের সঙ্গে খালেদা জিয়া জড়িত নয়। এখন নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা চলছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকীর ওপর দোষ চাপিয়ে খালেদা জিয়া বাঁচার চেষ্টা করছেন। এ কারণে তার আইনজীবীরা নানা কৌশল অবলম্বন করছেন। ৩২ সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রমাণ করা গেছে বলে জানান তিনি।
http://samakal.com/bangladesh/article/1801241/-জিয়া-অরফানেজ-ট্রাস্ট-মামলায়-খালেদা-জিয়ার-পক্ষে-যুক্তি-উপস্থাপন-অব্যাহত
__._,_.___