The Different is Yahia is your father and Sk.Mujib is our father of Nation. BAKSAL is our goal.
To: world_peace_movement@yahoogroups.com; alochona@yahoogroups.com; mukto_mona@yahoo.com; khabor@yahoogroups.com; sonarbangladesh@yahoogroups.com; voice-of-south@yahoogroups.com; odhora@yahoogroups.com; bangladesh-zindabad@yahoogroups.com; amra-bangladeshi@yahoogroups.com; notun_bangladesh@yahoogroups.com; khabor-subscribe@yahoogroups.com; dahuk-subscribe@yahoogroups.com
From: mhkhan71bd@yahoo.com
Date: Mon, 9 May 2011 04:51:14 -0700
Subject: [ALOCHONA] Killing Democracy by Yahia & Mujib's BAKSHALI Facibad
Dear Friends,
What is different between Yahia & Mujib, the killers of democracy, people verdicts & BAKSHALI facibad!!!
Please find the details in the following link :
http://bangladeshprotidin.co.cc/
Thank you,
M H Khan
খোলা কলাম (Published on 8/5/11) শাসনতন্ত্র সংশোধন : নানা শঙ্কা কাজী সিরাজ
বঙ্গবন্ধুর আমলে প্রথম তিনটি সংশোধনীর ব্যাপারে তেমন কোনো উচ্চবাচ্য হয়নি। কিন্তু চতুর্থ সংশোধনী নিয়ে দেশ-বিদেশে সাংঘাতিক বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। দেশে তখন শক্তিশালী কোনো বিরোধীদল ছিল না পার্লামেন্টে। মাত্র ৮ জন সদস্য ছিলেন যারা আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচিত হননি। পার্লামেন্টে অবশ্য এ নিয়ে তেমন কোনো আলোচনাই হয়নি। বিস্ময়করভাবে মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে বিলটি পাস হয়ে যায়। আরও বিস্ময়কর ব্যাপার ছিল প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান আতাউর রহমান খানের সুবোধ বালকের মতো বাকশালে যোগদান। অথচ জাতির প্রত্যাশা ছিল, তিনি এর বিরোধিতা করবেন। শ্রদ্ধার সঙ্গে এখানে দু'জন সাহসী মানুষের কথা স্মরণ করতে হয়, যারা বাকশালী একদলীয় একনায়কতান্ত্রিক শাসনের বিরোধিতা করে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। তারা দু'জন হলেন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী এবং ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। দেশের অভ্যন্তরে শাসনতন্ত্রে মৌলিক পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বাহ্যত জোরদার কোনো আন্দোলন ছিল না বটে, তবে ভেতরে ভেতরে জনগণ দ্রোহী হয়ে উঠছিল। মস্কোপন্থি কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি ও মস্কোপন্থি ন্যাপ-মুজাফ্ফর তখন সরকারের ধামাধরা বি টিম। মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাপ, কৃষক সমিতি, বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন এবং পিকিংপন্থি হিসেবে পরিচিত অন্যান্য সংগঠন আর তারুণ্যদীপ্ত জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ শাসনতন্ত্রের পরিবর্তন ও একদলীয় বাকশাল শাসন মানেনি। কিন্তু কার্যকর তেমন কোনো প্রতিরোধ গড়তে পারেনি গণতান্ত্রিক সব পথ রুদ্ধ থাকার কারণে। হত্যা, গুপ্ত হত্যার ভয় তো ছিলই। ভাসানীর 'হককথা' এবং ফয়জুর রহমানের ইংরেজি সাপ্তাহিক 'স্পোকসম্যান' ও বাংলা সাপ্তাহিক 'মুখপত্র' আর মওলানা ভাসানীর পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত এ কে এম শাখাওয়াত হোসেন সম্পাদিত (প্রধান সম্পাদক ছিলেন ফয়েজ আহমদ, বার্তা সম্পাদক কামাল লোহানী) দৈনিক বংগবার্তা কিছুটা সাহসের পরিচয় দিয়েছিল। সাংবাদিকদের মধ্যে প্রায় সবাই লাইন ধরে বাকশালে যোগদান করেছিলেন (এনায়েত উল্লাহ খান, কামাল লোহানীসহ মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাড়া)। সামরিক বাহিনীসহ সরকারি কর্মচারীদের জন্যও বাকশালে যোগদান ছিল বাধ্যতামূলক। বিদেশে প্রতিক্রিয়াও ছিল উল্লেখ্যযোগ্য। বিশেষ করে মিডিয়া ছিল সোচ্চার। অর্থাৎ, বাহাত্তরের শাসনতন্ত্রের মৌলিক গণতান্ত্রিক চেতনা ও সুশাসনের নিশ্চয়তা পরিপন্থি চতুর্থ সংশোধনী আওয়ামী লীগ ও মস্কোপন্থি দলগুলো ছাড়া দেশ-বিদেশে কোথাও কারও কাছে সমাদৃত হয়নি। পঞ্চদশ সংশোধনীও যদি শাসনতন্ত্রের মৌলিক চেতনা ও দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাস ও আবেগের মর্মমূলে আঘাত হানে, তাও দলীয় লোকজন ও বেনিফিশিয়ারি ছাড়া দেশে-বিদেশে কারও কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার কথা নয়। এ ব্যাপারে শাসনতন্ত্র সংশোধনের লক্ষ্যে গঠিত বিশেষ কমিটিকেই শুধু নয়, প্রধানমন্ত্রীকেও সতর্ক থাকতে হবে। বোঝাই যাচ্ছে যে, সাবেকি চিন্তা ও বিশ্বাসে অটল আওয়ামী লীগের শাসনতন্ত্র সংশোধনের দলীয় উদ্যোগে সংসদের বিরোধী দল সায় দেবে না। বিভিন্ন মহল থেকে যদিও বিরোধীদলের সম্মতি ছাড়া শাসনতন্ত্র সংশোধনকে ঝুঁকিপূর্ণ হবে বলে সরকারকে সতর্ক করা হচ্ছে। তাতে কোনো ফলোদয় হবে বলে মনে হয় না। এ জন্যই বারবার সতর্কতার কথা বলা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের মনে রাখতে হবে, ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের পক্ষে বিপুল গণরায় শাসনতন্ত্রের চতুর্থ সংশোধনীতে 'যা খুশি তা করার লাইসেন্স' হিসেবে পরিগণিত হয়নি। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের পক্ষে গণরায়কেও (বিরোধী দল কর্তৃক প্রশ্নবিদ্ধ) পঞ্চদশ সংশোধনীতে দলবাজি করার বা যা খুশি তা করার লাইসেন্স হিসেবে ব্যবহার করা সমীচীন হবে না। জনগণের মানস গঠন, আশা ও স্বপ্নের প্রতিপক্ষ হিসেবে যদি দেশের শাসনতন্ত্রকে উপস্থাপন করা হয়, 'ব্রুট মেজরিটি'র জোরে তা পার্লামেন্টে পাস করানো গেলেও দেশ-বিদেশে তার প্রতিক্রিয়া (দেশে বর্তমান বিরোধী দল শাসক দলের চাইতে কম শক্তিশালী নয়) কী রকম বিরূপ হতে পারে তা দেখা গেছে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি শাসনতন্ত্রের চতুর্থ সংশোধনীর পর। ১৯৭৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নয়াদিলি্লর টেস্টসম্যান উইকলীতে ভারতের বিশিষ্ট সাংবাদিক-কলামিস্ট কুলদীপ নায়ার 'শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তন' শিরোনামে লিখেছিলেন 'শেখ মুজিবুর রহমান জেনারেল ইয়াহিয়ার স্বেচ্ছাচারী শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন। কিন্তু আজ তিনি নিজেই রাষ্ট্রের সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছেন। ক্ষমতা দখল করতে গিয়ে তিনি 'নিয়মানুবর্তিতা', 'সমাজবিরোধী দল', 'বৈদেশিক চক্রান্ত' প্রভৃতি শব্দ ব্যবহার করে চলেছেন, যা এক সময় পাকিস্তানি সামরিক চক্রও ব্যবহার করত। আশ্চর্য, বাংলাদেশের জন্মের আগে যে জনসাধারণ এতো দুর্ভোগ সহ্য করেছে তাদের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। এমন কি আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টিকেও কিছু জানতে দেয়া হয়নি।...আগে থেকে সবকিছু জানিয়ে দিলে পার্টির ভেতর থেকে বিরোধিতা আসত, সম্ভবত মুজিব সেটাই আশঙ্কা করেছিলেন। অন্যথায় এ ধরনের ব্যাপক শাসনতান্ত্রিক সংশোধন প্রস্তাব এক ঘণ্টার মধ্যে পার্লামেন্টে পাস হতো না এবং প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ উল্লাহও পার্লামেন্ট ভবনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে তা সই করতেন না। ... এই পটভূমিকায় কি করে মিসেস গান্ধী এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে শেখকে খোশ আমদেদ জানালেন, বোঝা মুশকিল। কূটনৈতিক শিষ্টাচার যাই হোক না কেন, বাংলাদেশের প্রতিটি কাজে ভারতের সমর্থন করার কোনো দরকার করে না।' ১৯৭৫ সালের ২৭ জানুয়ারি লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফে পিটার গিল লিখেছিলেন, 'বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান তার দেশে পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রের শেষ চিহ্নটুকু লাথি মেরে ফেলে দিয়েছেন। গত শনিবার (২৫-০১-৭৫) ঢাকায় পার্লামেন্টের এক ঘণ্টা স্থায়ী অধিবেশনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে শেখ মুজিবকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছে এবং একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য তাকে ক্ষমতা অর্পণ করেছে। অনেকটা নিঃশব্দে গণতন্ত্রের করব দেয়া হয়েছে।... প্রেসিডেন্ট এখন খেয়াল খুশিমত বিচারকগণকে বরখাস্ত করতে পারবেন, নাগরিক অধিকার বিন্দুমাত্রও যদি প্রয়োগ করা হয় তা প্রয়োগ করবে নতুন 'পার্লামেন্ট' কর্তৃক নিযুক্ত স্পেশাল আদালত। এক্সিকিউটিভ অর্ডারের মাধ্যমে একটি 'জাতীয় দল' প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন শাসনতন্ত্র মুজিবকে ক্ষমতা দিয়েছে। এটাই হবে দেশের একমাত্র বৈধ পার্টি। যদি কোনো এমপি যোগদান করতে নারাজ হন অথবা এর বিরুদ্ধে ভোট দেন তাহলে তার সদস্যপদ নাকচ হয়ে যাবে।... একদলীয় শাসন সৃষ্টির ফলে দুর্নীতি দূর না হয়ে বরং বাড়তে থাকবে। কেননা উদ্ধত আওয়ামী লীগারদের 'চেক' করতে পারবেন একমাত্র প্রেসিডেন্ট। তিনি থাকবেন নানা কাজের চাপে। সরকারবিরোধীরা যতোই আত্মগোপন করতে বাধ্য হবে, ততোই গ্রাম-বাংলায় চরমপন্থি গেরিলা ও লুটতরাজকারীদের সমর্থন বাড়তে থাকবে।" ১৯৭৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি কলকাতার ফ্রনটিয়ার পত্রিকা মন্তব্য করেছিল, "...মুজিব যে সর্বাত্মক ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন তা মার্কিন প্রেসিডেন্টেরও নেই। তিনি নিজের মর্জিমতো একটি মাত্র রাজনৈতিক দলকে 'জাতীয় দল' হিসেবে কাজ করার অনুমতি দিতে পারবেন। তিনিই এই পার্টির কর্মসূচি, সদস্যপদ এবং সংগঠন নিয়ন্ত্রণ করবেন এবং শুধু এই পার্টির সদস্যরাই পার্লামেন্টের সদস্য হতে পারবেন। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের মৌলিক মানবাধিকার প্রয়োগের ক্ষমতা আর থাকবে না। এসব অধিকার যদি কিছু আদৌ থেকে থাকে তা প্রয়োগ করবে পার্লামেন্ট অর্থাৎ মুজিবের লোকদের নিযুক্ত স্পেশাল কোর্ট ট্রাইব্যুনাল অথবা কমিশন। মুজিব 'দুর্ব্যবহার ও অযোগ্যতার' অজুহাতে বিচারপতিগণকে অপসারণ করতে পারবেন।' ১৯৭৫ সালের ১৭ আগস্ট লন্ডনের 'সানডে টেলিগ্রাফ'-এ অমিত রায়ের মন্তব্য ছিলো, 'বাংলাদেশের রাজনীতির প্রধান নিয়ন্তা হলো শহরের বাসিন্দা মধ্যবিত্ত শ্রেণী। এদের সমর্থনই মুজিবকে নেতা বানিয়েছিল, ক্ষমতায় বসিয়েছিল। কিন্তু শাসনতন্ত্র সংশোধনের ফলে তিনি তাদের সমর্থন হারিয়ে ফেলেন এবং সেদিন থেকেই তিনি নিজেকে অতীতের পাতায় তুলে দিয়েছিলেন।' ১৯৭৫ সালের ১৭ আগস্ট লন্ডনের সানডে টাইমস্-এ এন্থনি ম্যাসকারেনহাস 'কিসে ভুল হলো' শিরোনামে এক লেখায় শেখ মুজিবুর রহমানের করুণ পরিণামের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি লিখেছিলেন, 'তার বিপর্যয়ের রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় প্রধানত তিনটি উপকরণ মিশে আছে। তার ব্যাখ্যেয় তিনটি উপকরণের মধ্যে দ্বিতীয়টিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, '...মুজিবের পতনের দ্বিতীয় প্রধান কারণ হচ্ছে ১৯৭২ সালের রচিত বাংলাদেশ শাসনতন্ত্রে ইসলামকে রাষ্ট্রীয় ধর্মের মর্যাদা থেকে সরিয়ে দেয়া। ইসলামের মর্যাদার এই অবমাননা অনিশ্চয়তাসূচক প্রমাণিত হয়েছে।... এই পটভূমিতে মুজিবের অনুসৃত ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বাংলাদেশের জনগণের বৃহত্তম অংশকে আহত করেছিল।' চতুর্থ সংশোধনীটি ছিল ভয়ঙ্কর, বাহাত্তরের শাসনতন্ত্রের মৌল চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। ক্ষমতা কুক্ষিগত, নিরঙ্কুশ ও চিরস্থায়ী করার কু-বাসনায় শাসনতন্ত্রের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদসমূহে ব্যবচ্ছেদ ঘটিয়ে দেশে কায়েম করা হয় একদলীয় বাকশালী শাসন। সেই সংশোধন ও বাকশালী শাসন তৎকালীন শাসকদের রক্ষাকবচ হতে পারেনি। এ প্রসঙ্গেও ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের একটি মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, 'বাংলাদেশ স্বাধীন হইবার পর গণতান্ত্রিক সংগ্রামের চেতনা সমুন্নত রাখিয়া জনপ্রতিনিধিরা ১৯৭২ সালের নতুন শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করেন। শাসনতন্ত্রের মাধ্যমে জনগণ বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি অবিচল আস্থা প্রকাশ করে। জনগণ প্রদত্ত এই শাসনতন্ত্র রক্ষার দায়িত্ব সম্পর্কেও সকলকে সচেতন করিয়া দেওয়া হয়। কিন্তু তিন বছর যাইতে না যাইতেই এক ধরনের মতলববাজ শাসনতন্ত্র-বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুসরণ করিয়া ১৯৭২ সালের গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্রের অপমৃত্যু ঘটানো হয় এবং পার্লামেন্টে দলীয় সমর্থনে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার শাসনতন্ত্র পাস করে। ফলে দীর্ঘ সংগ্রামের পটভূমিতে অর্জিত জনগণের শাসনতন্ত্রের গন্ধটুকুও থাকিল না। স্বাধীনতা সংগ্রামের গণতান্ত্রিক ভিত্তিও থাকিল না। ইহা আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, বঙ্গবন্ধু বা আওয়ামী লীগের নিকট একদলীয় গণতন্ত্র বলিয়া কিছু গ্রহণযোগ্য হইতে পারে না। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অবিশ্বাসী অনুপ্রবেশকারীদের রাজনৈতিক মতলব তাহাদের মাধ্যমে কার্যকর করা হইয়াছিল (সাপ্তাহিক রোববার, ২৪ এপ্রিল, ২০১১)।' ৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি শাসনতন্ত্র সংশোধন বিল (চতুর্থ সংশোধনী) সংসদে পাস করানোর পেছনে আওয়ামী লীগের তৎকালীন মিত্র প্রথমে ত্রি-দলীয় ঐক্যজোট ও পরে গণঐক্যজোটভুক্ত মনি সিংহ'র কমিউনিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশ- সিপিবি এবং অধ্যাপক মুজাফ্ফর আহমদের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ, মস্কোপন্থি এই দুটি দলের কারসাজি ছিল বলে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের অনুরাগী কেউ কেউ এখনো অভিযোগ করে থাকেন। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনও এদের প্রতিই ইঙ্গিত করেছেন কিনা জানি না। বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তখন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির নেতা ছিলেন (পরে একতা পার্টি-তাও মস্কোপন্থি) এবং শাসনতন্ত্র সংশোধনের পক্ষে ছিলেন। কাকতালীয় ব্যাপার হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিয়ন্ত্রিত মহাজোট সরকারের বর্তমান শাসনতন্ত্র সংশোধন কমিটিরও কো-চেয়ারম্যান হচ্ছেন বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। বেগম সাজেদা চৌধুরী কমিটির চেয়ারম্যান হলেও সুরঞ্জিত বাবুই এর মূল ব্যক্তি। আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিকও আওয়ামী লীগের লোক ছিলেন না, ছিলেন সিপিবি-সংশ্লিষ্ট। এ ছাড়া মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী ও নুরুল ইসলাম নাহিদও প্রভাবশালী মস্কোপন্থি ছিলেন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনভিজ্ঞ বলে অভিজ্ঞজন কর্তৃক সমালোচিত বেগম সাজেদা চৌধুরীকে এ কমিটির চেয়ারম্যান কেন করা হয়েছে তা প্রধানমন্ত্রীই বলতে পারবেন। সুরঞ্জিত বাবু শাসনতন্ত্র সংশোধন প্রশ্নে যেসব কথা বলছেন, তা কোনো কোনো ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যহীন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভীতিকর। সব কথা তিনি বা কমিটির অন্য কেউ বলছেনও না। এটা আরও সন্দেহজনক। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা বলেছেন তার কোনো কোনো অংশ '৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারির সংশোধনীর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিশেষ করে বিচারকদের অভিশংসন এবং ৯০ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন করতে ব্যর্থ হলে পূর্ববর্তী সরকার বহাল ও সেই সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে বক্তব্য তিনি উত্থাপন করেছেন তা আগামীদিনের রাজনীতিকে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির দিকেই ঠেলে দেবে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন। শাসনতন্ত্র সংশোধনের উদ্যোক্তারা একদিকে বলছেন তারা বাহাত্তর সংবিধানে ফিরে যাবেন, অপরদিকে একই মুখে বলছেন বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এবং ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের বিধান থাকবে, আবার বাহাত্তর সংবিধানের চার মূলনীতি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাও থাকবে। কিন্তু তা কেমন করে সম্ভব? এখানেই সন্দেহ করা হচ্ছে যে, তাদের মনে অন্য কোনো দুরভিসন্ধী থাকতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের শাসনতন্ত্রে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ সংযোজন, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনুসহ মহাজোট শরিকদের বিসমিল্লাহ্, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম শাসনতন্ত্র থেকে বাদ দেয়ার প্রস্তাব এবং ইতোমধ্যে বাকশাল প্রথার জেলা গভর্নরের আদলে আওয়ামী লীগ নেতাদের জেলা প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত এই উদ্বেগ প্রকট করে তুলছে যে, সরকার কি তাহলে 'খোল-নল্চে' সম্পূর্ণ পাল্টে আবার দলীয় শাসন চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে, দেশ ও জনগণের শাসনতন্ত্রকে দলীয় শাসনতন্ত্রে পুনঃরূপান্তর ঘটাবে? পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, বিরোধীদলের বর্তমান দুর্বলতা ও অক্ষমতার সুযোগ গ্রহণ করে সরকার পার্লামেন্টে 'ব্রুট মেজরির্টি'র জোরে যদি শাসনতন্ত্রে নিজেদের সুবিধামতো পরিবর্তন সাধন করে তার ফল তাদের জন্য সুখকর নাও হতে পারে। সরকারি ও বিরোধীদলের ৩৪৫ জন সংসদ সদস্য এই ধরনের সংশোধনীকে কিভাবে নিচ্ছেন এক্ষেত্রে সেটা বড় বেশি বিবেচ্য নয়, রুগ্ন ও ভাগ-বাটোয়ারার রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী লোক দেখানো বিরোধিতা-প্রতিবাদের নাটক মঞ্চায়নের পর ভেতরগত সহযোগিতা-সমর্থনে, বিরোধী দলের লোক দেখানো অনুপস্থিতিতে সংসদে শাসনতন্ত্র সংশোধনী বিল পাস হয়ে গেলেও জনগণ তা মেনে নিচ্ছে কিনা সেটাই হবে বড় বিবেচ্য বিষয়। জনগণের গ্রহণ-বর্জনের বিষয়টি মাথায় রেখেই শাসনতন্ত্রে অস্ত্রোপচার করার কথা ভাবা উচিত সরকারের। লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট |
__._,_.___