Banner Advertiser

Tuesday, October 11, 2011

[ALOCHONA] Awami League's Jamaat Antipathy: Some Reasons & Analysis



প্রাসঙ্গিক ভাবনা
আওয়ামী লীগের জামায়াত বিদ্বেষ : কিছু কারণ ও বিশ্লেষণ
মো. নূরুল আমিন
 
গত মঙ্গলবার এই স্তম্ভে প্রকাশিত নিবন্ধে আমি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জামায়াত বিদ্বেষের কারণ অনুসন্ধান ও তা বিশ্লেষণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। নিবন্ধটি পড়ে একজন সাবেক সচিব ও আমার এককালের সিনিয়র সহকর্মী গত বুধবার রাতে টেলিফোনে আমাকে একটি চমকপ্রদ খবর দিয়েছেন। খবরটি শুনে আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জামায়াত বিএনপির গন্ধ আছে এ রকম শত শত সরকারি কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত অথবা ওএসডি করেছেন একথা সবারই জানা। কিন্তু এই গন্ধের তীব্রতা সম্পর্কে আমার খুব বেশি ধারণা ছিল না। আমার প্রবীণ সহকর্মী সেটাই আমাকে জানিয়েছেন। তিনি একজন ওএসডি যুগ্মসচিবের কথা বললেন যার পিতৃকুল, মাতৃকুল কোন কুলেই জামায়াত-বিএনপি ছিল না, এখনো নেই, তিনি নিজেও কোনও দল করেননি, এখনো করেন না। তবে তার মামাশ্বশুরের শালার মেয়ের জামাই ঢাকা মহানগরীর এক ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি। এই অপরাধে তিনি ওএসডি এবং পদোন্নতি বঞ্চিত অবস্থায় আছেন।
ন্যাশনাল সার্ভিস নামে পরিচিত সরকারি অর্থে দলীয় ক্যাডার পোষার একটি কর্মসূচির অধীনে জনবল নিয়োগের মানদন্ড তৈরির লক্ষ্যে বছর দুয়েক আগে সরকার প্রার্থীদের সম্পর্কে ছয়টি তথ্য সংগ্রহের নির্দেশনা জারি করেছিল। এই শর্তগুলোর মধ্যে প্রার্থীর বাপ-চাচারা আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোন দলের সাথে সম্পৃক্ত কি না সে সম্পর্কে একটি প্রশ্ন ছিল। কিন্তু এ সম্পর্ক যে বিদ্যমান সরকারি কর্মকর্তাদের বেলায় প্রয়োগ করা হবে এবং তা গিয়ে মামার শালার মেয়ের জামাই পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছাবে তা কখনো ভাবিনি। ঘটনাটা অমানবিক এবং সভ্যতার সকল নীতিবৈশিষ্ট্যের পরিপন্থী।
এখন আসল কথায় আসি। আওয়ামী লীগের জামায়াত বিদ্বেষকে কেউ যদি স্বাধীনতা-উত্তর ফিনমিনন বলে মনে করেন তাহলে তা সঠিক হবে বলে আমি মনে করি না। এই বিদ্বেষ পাকিস্তান আমলেও ছিল, যদিও তৎকালীন আওযামী লীগ নেতাদের অনেকেই এক্ষেত্রে একটি স্ট্যান্ডার্ড বজায় রেখে চলতেন এবং জাতীয় দুর্যোগ বিশেষ করে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে জামায়াতের সাথে তারা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনও করেছেন। সম্মিলিত বিরোধীদল (COP), পাকিস্তান গণতান্ত্রিক আন্দোলন (PDM), গণতান্ত্রিক সংগ্রাম কমিটি (DAC) প্রভৃতি জোটে অংশ নিয়ে দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ-জামায়াত নেতাকর্মীরা যেমন পাশাপাশি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে কাজ করেছেন তেমনি শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে রুজু করা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও তার মুক্তির আন্দোলনেও জামায়াত শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছে। তবে উগ্র ফ্যাসিবাদী বৈশিষ্ট্য থেকে আওয়ামী লীগ কখনো নিজেকে মুক্ত করতে পারেনি। ক্ষমতায় থাকুক কিংবা বিরোধীদলে, দলটির অসহিষ্ণু, অগণতান্ত্রিক ও শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ সর্বদা দেশবাসীকে পীড়া দিয়েছে। ১৯৭০ সালের ১৮ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে জামায়াতের জনসভায় আওয়ামী লীগের সশস্ত্র হামলা দলটির ফ্যাসিবাদী চরিত্রকেই ফুটিয়ে তুলেছিল। তখন আওয়ামী লীগাররা জামায়াতকে পাকিস্তানবিরোধী হিসেবে চিত্রিত করতো যেমনটি এখন করা হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে।
অনেকেই মনে করেন যে, জামায়াত সম্পর্কে অজ্ঞতাই হচ্ছে আওয়ামী লীগসহ অপরাপর কিছু দলের জামায়াত বিদ্বেষ ও জামায়াত বিরোধিতার মূল কারণ। জামায়াত নিছক কোনও রাজনৈতিক দল নয়। এটি ইসলামী জীবন ব্যবস্থার আলোকে রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি স্তরে দুষ্কৃতির অপসারণ ও সুকীর্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষে সমাজের প্রতিটি মানুষের কল্যাণকামী একটি আন্দোলন। এটি ধর্মান্ধ কোনও দল নয়। আধুনিক মন মানস ও যুগজিজ্ঞাসার আলোকে সর্বশেষ প্রযুক্তি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ইসলামী শরীয়াহ, আকিদা বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও অনুশাসনভিত্তিক, রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করা হচ্ছে জামায়াতের ভিশন, মিশন ও গোলের অন্তর্ভুক্ত। এই উদ্দেশ্যে চরিত্রবান ও উপযুক্ত লোক তৈরির উপর এই সংগঠনটি অধিকতর গুরুত্ব আরোপ করেছে এবং এজন্য তারা শিক্ষা প্রশিক্ষণের পাশাপাশি জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রসার ও বিচ্ছুরণের জন্য বিশাল সাহিত্য ভান্ডারও গড়ে তুলেছে। কুরআন, হাদিস, ফিকাহ-উছুলের চর্চা শুধু তিলাওয়াত বা সীমিতসংখ্যক লোকের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে তাতে শরিক হবার জন্য তারা সাধারণ মানুষকেও অনুপ্রাণিত করছে। আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞান, রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা, অর্থনীতি, দর্শন শাস্ত্র প্রভৃতির সাথে কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের তুলনামূলক অধ্যয়নকে উৎসাহিত করছে।
জামায়াত সাম্প্রদায়িক কোন দল নয় এবং তথাকথিত মোল্লাতন্ত্রেও বিশ্বাস করে না। জামায়াত গোপন কার্যকলাপে বিশ্বাসী কোন দলও নয়, উন্মুক্ত ময়দানে প্রকাশ্যে শুরু থেকেই তার কার্যকলাপ চালিয়ে আসছে এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ড কিংবা জঙ্গিবাদকে বরাবরই ঘৃণা করে আসছে। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে এই যে, আওয়ামী লীগসহ দেশ-বিদেশে কিছু দল আছে যারা জামায়াতের ঘোষিত লক্ষ্য উদ্দেশ্য ও কর্মসূচিকে অধ্যয়ন না করে তার ওপর তাদেরই মনগড়া সন্ত্রাসবাদ চাপিয়ে দিতে চান। তারা মনে করেন যে, জামায়াত ক্ষমতায় গেলে চুরির হাত কাটা আইন, জ্বেনা ব্যভিচারের জন্য বেত্রাঘাত, পাথর মেরে হত্যা কিংবা কুকুর লেলিয়ে দেয়ার আইন চালু করবে। ইসলামী আইনকে তারা মধ্যযুগীয় বর্বর আইন বলে মনে করেন। অবশ্য এটা বুঝা মুশকিল যে, যারা চুরি-চামারী ও জ্বেনা ব্যভিচারের সাথে সম্পৃক্ত নন তারা এই আইনকে ভয় করবেন কেন? প্রকাশ্য রাজপথে সাপের মতো পিটিয়ে নিরপরাধ মানুষ হত্যার মধ্যে তারা বর্বরতা দেখতে পান না।
তারা জামায়াতকে নারী স্বাধীনতা ও নারী অধিকারবিরোধী একটি দল বলেও মনে করেন যা মোটেই সত্য নয়। আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে যারা জামায়াতের বিরোধিতা করেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এই বিরোধিতা করার শতভাগ অধিকার তাদের রয়েছে। তবে বিরোধিতা বিদ্বেষ বা প্রতিহিংসায় রূপান্তরিত হওয়া উচিত নয়। আবার সংগঠনটির সামগ্রিক কর্মকান্ডকে না জেনে বিরোধিতা করাও গণতান্ত্রিক শিষ্টাচারের পরিপন্থী। না জেনে না শুনে টুপী, দাড়িধারী নামাজী ব্যক্তিদের জামায়াত-শিবির বলে প্রতিহত করার প্রবণতাও সভ্য সমাজের কাজ নয়। বস্তুনিষ্ঠভাবে জামায়াতের সাহিত্য অধ্যয়ন, তার নেতাকর্মীদের চরিত্র অবলোকন এবং বিদ্বেষমুক্ত হয়ে কাছে থেকে তা বিশ্লেষণ ও তার ভিত্তিতে প্রয়োজনবোধে বিরোধিতা করার জন্য আমি আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দলের প্রতি আহবান জানাবো।
বুদ্ধিবৃত্তিক ময়দানে বিশেষ করে প্রতিভা বিকাশের ক্ষেত্রে জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীদের অগ্রগতি এবং আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অধঃপতন তাদের মধ্যে এক ধরনের হীনমন্যতা ও ঈর্ষার জন্ম দিয়েছে যা আওয়ামী শিবিরে জামায়াত বিদ্বেষের সৃষ্টি করেছে বলে মনে হয়। দীর্ঘকাল যাবত আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি, ভর্তি বাণিজ্য এবং ছাত্রছাত্রীদের যৌন হয়রানির ন্যায় অনৈতিক কর্মকান্ড নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। ধর্ষণের সেঞ্চুরী পালন, ছাত্রলীগ কর্তৃক ছাত্রনেতা, রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ী শিল্পপতিকে মনোরঞ্জন ও অনৈতিক কাজে ছাত্রীদের ব্যবহার, মাদক ব্যবসায় প্রভৃতি এখন এই সংগঠনটির বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে। তাদের অধঃপতন এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য তাদের রক্ত ও পেশাব পরীক্ষা করাতে হয়। দলটি এখন আদর্শহীন। যেখানে প্রতিভাকে প্রতিভা দিয়ে এবং আদর্শকে আদর্শ দিয়ে মোকাবিলা করা যায় না সেখানে সন্ত্রাস ও প্রতিহিংসা প্রতিদ্বনদ্বী মোকাবিলায় প্রধান হাতিয়ারে পরিণত হয়।
এ ব্যাপারে ১৯৯৬ সালের নবেম্বর মাসে আওয়ামী লীগের মুখপত্র অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকার একটি সম্পাদকীয় নিবন্ধ প্রণিধানযোগ্য। এই নিবন্ধে আক্ষেপ করে বলা হয়েছিল যে, শিবিরের নেতাকর্মীরা যেখানে তাদের আন্দোলনের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে কঠোর অধ্যয়নে মনোনিবেশ করে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করছে, মেরিট লিস্টের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে সেখানে ছাত্রলীগের ছেলেরা লেখাপড়া ছেড়ে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাস-আধিপত্য নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। পত্রিকাটির মতে এই অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগে প্রতিভাবান নেতা পাওয়া যাবে না। প্রতিভা ও মেধার কারণে শিবিরের ছেলেরা বিসিএস ক্যাডারের অধিকাংশ পদ দখল করে নেবে। পত্রিকাটির এই উদ্বেগ কয়েক দশক ধরেই আওয়ামী নেতৃত্বকে উৎকণ্ঠায় নিক্ষেপ করেছে এবং জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে তাদের বেপরোয়া করে তুলেছে বলে অনেকের ধারণা।
তৃতীয় যে কারণটি আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী দলগুলোকে জামায়াতের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলেছে তা হচ্ছে নীতি-আদর্শের ব্যাপারে এই দলটির অনমনীয় অবস্থান এবং আওয়ামী লীগের আধিপত্যকে অস্বীকার। স্বাধীনতা পরবর্তী পুরো আশি ও নববই এর দশকের বেশিরভাগ তারা জামায়াতের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন করেছে। এই সময়ে জামায়াতের গায়ে যুদ্ধাপরাধের গন্ধ ছিল না। এরশাদের পতনের পর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে পরিচালিত জাতীয় নির্বাচনে জামায়াত এককভাবে প্রতিদ্বনিদ্বতা করে ১৮টি আসনে জয়ী হয়।
বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ যে আসন লাভ করে তাতে কোন দলের পক্ষেই অন্য দলের সমর্থন ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভবপর ছিল না। আওয়ামী লীগ তাদের সমর্থন করার জন্য জামায়াতকে ৫টি মন্ত্রীত্ব পদের প্রস্তাব দিয়েছিল। ঐ ক্ষেত্রে এরশাদের দলের সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ মন্ত্রিসভা গঠন করতে সক্ষম হতো। কিন্তু জামায়াত এই প্রস্তাব গ্রহণ না করে কোন প্রকার মন্ত্রীত্ব ছাড়াই বিএনপিকে সমর্থন জানায় এবং বিএনপি মন্ত্রিসভা গঠন করে। বলাবাহুল্য আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই বিএনপিকে তার প্রধান শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে এসেছে। জামায়াত তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বিএনপিকে সরকার গঠনে সাহায্য করায় দলটি তখন থেকেই জামায়াতকে শত্রু তালিকার অন্তর্ভুক্ত করে নেয়।
পরবর্তীকালে তাদের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি কর্তৃক রেসকোর্স ময়দানে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে গণআদালতের নাটক মঞ্চস্থ করা ছিল এরই ধারাবাহিকতা। এরপর কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ও জামায়াত বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করেছে, এই আন্দোলনের ফলে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা সংবিধানেও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াত বিএনপির সাথে জোট গঠন করায় পুনরায় দলটির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা তিরোহিত হয়ে যায় এবং চারদলীয় ঐক্যজোট নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ক্ষমতাসীন হয়। এরপর আওয়ামী লীগ এক্ষেত্রে জামায়াতকে অন্যতম প্রধান শত্রু হিসেবে গণ্য করতে শুরু করে। তার জামায়াত বিদ্বেষ চরমে ওঠে। দলটি পুনরায় ক্ষমতায় আসার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। তারা জামায়াত বিএনপি জোট ভাঙার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু তাতে ব্যর্থ হয়ে ধ্বংসাত্মক পথে অগ্রসর হয়।
তাদের এই ধ্বংস প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এক এগারোর জন্ম হয় এবং সেনা সমর্থিত কেয়ারটেকার সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এই সরকারের আমলে দুর্নীতি বিরোধী অভিযান তুঙ্গে ওঠে। শেখ হাসিনা ও বেগম জিয়া গ্রেফতার হন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষস্থানীয় বহু নেতা দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হন। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা রুজু হয় এবং তার মধ্যে ৪টি মামলার বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবার পথে ছিল। এই দলের সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষস্থানীয় নেতাদের অনেকেই রিমান্ডে যে জবানবন্দি দিয়েছেন তাতে স্পষ্টতই দলটির দেউলিয়াপনা ফুটে উঠে এবং প্রতীয়মান হয় যে, শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে তাদের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সন্ত্রাস, নৈরাজ্য এবং ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড ও ঘুষ দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। এতে তাদের দেশী-বিদেশী সুহৃদরা উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েন।
বিশেষ করে প্রতিবেশী ভারতের কিছু রাজনীতিবিদ ও থিঙ্কট্যাংক সদস্য এই মর্মে উস্কানি দিতে শুরু করেন যে, সেনাসমর্থিত কেয়ারটেকার সরকারের দুর্নীতি বিরোধী অভিযান যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে সামনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতাদের পক্ষে অংশগ্রহণ করা সম্ভবপর হবে না। তারা নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত হবেন এবং জামায়াত সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়ে বাংলাদেশে সরকার গঠন করবে। তারা জামায়াতকে ভারতবিরোধী একটি দল হিসেবে আখ্যায়িত করে তার অগ্রযাত্রা প্রতিহত করার উপর জোর দেন। ঐ সময় ভারতীয পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত ভাস্কর রায়, কার্লেসকর এবং ''-এর বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের লিখিত প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও প্রতিবেদনসমূহ পড়লে এটাই পরিষ্কার হয়ে উঠে যে, জামায়াতই হচ্ছে তাদের চোখে বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা এবং তারা ভারত বিরোধী- যদিও এর মধ্যে সত্যতার লেশমাত্র নেই। আওয়ামী লীগ ভারতীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই জামায়াতকে দেখে থাকে এবং তাদের ইচ্ছা অনুযায়ীই 'পথের কাঁটা' সরানোর অংশ হিসেবে জামায়াত বিরোধী অভিযান শুরু করেছে। এর পেছনে আরো কারণ হচ্ছে, উইকিলিকস-এর তথ্যানুযায়ী দলটি ভারতীয় অর্থ, আশীর্বাদ ও পরামর্শের উপর ভর করে ক্ষমতায় এসেছে। এর বিনিময়ে তারা ভারতকে ট্রানজিট, করিডোর, বন্দর ও গ্যাস সুবিধা প্রদান করার চুক্তি করেছে। এর বিরুদ্ধে জামায়াত-বিএনপি যাতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনমত গঠন করে চুক্তির বাস্তবায়ন নস্যাত করতে না পারে সে জন্য স্বাধীনতার ৪০ বছর পর যুদ্ধাপরাধের মিথ্যা অভিযোগ এনে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করে বিচারের প্রহসন চালাচ্ছে এবং সারাদেশে জামায়াত-শিবিরের উপর নির্যাতন শুরু করেছে।
একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, জামায়াত এবং বিএনপি ঐক্যবদ্ধ থাকলে যে শক্তির সৃষ্টি হবে তা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার ক্ষমতা সরকারের নেই। কিন্তু জামায়াত ছাড়া বিএনপির অস্তিত্ব নাই বলে সরকারের অর্বাচীন কিছু মন্ত্রী হাল আমলে যেসব কথা বলছেন, তার সাথে বাস্তবতার কোনও সম্পর্ক আছে বলে আমি মনে করি না। বিএনপি জামায়াতের কারণে শক্তিশালী একথা সত্য নয়। আবার জামায়াতকে স্তব্ধ করতে পারলে বিএনপি ধ্বংস হয়ে যাবে এই তত্ত্বে যারা বিশ্বাস করেন, তারা বোকার স্বর্গে বাস করেন। বিএনপি একটি জাতীয়তাবাদী ধারা। এই ধারার মূলশক্তি দেশপ্রেম, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। ইসলামী ধারা যুক্ত হয়ে একে শক্তিশালী করেছে সন্দেহ নেই। এদেশের মানুষের আধিপত্যবাদ বিরোধী চিন্তা-চেতনা এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি অঙ্গীকার ও শ্রদ্ধা এবং বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ঈমান-আকীদা ও বিশ্বাস যতদিন থাকবে ততদিন এই ধারাকে বিলুপ্ত করা যাবে না।
জামায়াত শিবির নেতাকর্মীদের উপর যে নির্যাতন শুরু হয়েছে তার শেষ কোথায় তা আমি জানি না। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭৫ সালের পূর্বে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের উপর এ ধরনের নির্যাতন হয়েছিল। তবে তার ব্যাপ্তি এত প্রসারিত ছিল না। সরকার মনে করছেন, জামায়াতকে ঠেকিয়ে ইসলামকে ঠেকাতে পারবেন এবং প্রতিবেশী দেশের ইচ্ছা ও আশীর্বাদের ভিত্তিতে অনন্তকাল ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। কিন্তু কোনও দলকে বেআইনি করে কিংবা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে তার নেতৃত্বকে ধ্বংস করে যে দলের আদর্শ ধ্বংস করা যায় না ইতিহাসই তার সাক্ষী। এক দল বেআইনি হলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আধুনিক রাজনীতিতে অন্য দল জন্ম নেয় এবং আদর্শ শুধু টিকে থাকে না তা আরো শক্তিশালী হয়। সরকারি দল যত শীঘ্রই বিষয়টি উপলব্ধি করবেন ততই মঙ্গল।
[http://www.dailysangram.com/news_details.php?news_id=66044]


__._,_.___


[Disclaimer: ALOCHONA Management is not liable for information contained in this message. The author takes full responsibility.]
To unsubscribe/subscribe, send request to alochona-owner@egroups.com




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___