BURNING INNOCENT PEOPLE ALIVE !!
RESCUER COULD NOT SAVE THIS INNOCENT MAN DUE TO LIFE THREATENING OPPOSITION FROM BNP-JAMAT CADRES !!
REMINISCENCE OF JAMATI'S ATROCITIES OF '71 !!!
READ THE ARTICLE POSTED BELOW FOR DETAILS.
শিরোনাম:
বাসে আগুন
জুতায় লুকিয়ে আছে পোড়া মানুষের ঘ্রাণ
এক জোড়া জুতা। কালো সু-জুতা। মোজা নেই। যে পায়ে মোজা ছিল, সেই পাসমেত মানুষটা নেই। আগুনে পুড়ে কোমল হয়েছেন। তিনি জুতার মালিক। তাঁকে চেনার কোনো উপায় ছিল না। কিন্তু জুতা জোড়া ঠিকই চেনা গেল। জুতার ভেতর একজন মানুষ ছিলেন।
জুতা দেখে বোঝা গেল তিনি মধ্য বয়সী। জুতা পরা মানুষটার গন্তব্য ছিল সিলেট। যাত্রীবাহী বাসটি ছিল তাঁর বাহন। আগুন দেওয়ার পর বাস থেকে সবাই বেরোতে পারলেও জুতার মালিক আর বেরোতে পারলেন না। নিজে বের হতে না পারলেও বাসের জানালা দিয়ে বের করে রেখেছিলেন দুটো পা। জুতা জোড়া আর পুড়ল না! নির্মম মৃত্যুর চরম মুহূর্ত জুতা দেখানোর মতোই রয়ে গেল!
হ্যাঁ, পাঠক! প্রথম আলোর প্রধান শিরোনামের সেই ছবির খবরের কথাই বলছি। ১৮ ডিসেম্বর সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের যাত্রীবাহী 'সিলেট হবিগঞ্জ সুপার এক্সপ্রেস' নামের বাসে ত্রাসের আগুনের কথা। ভয়ংকর খবরের চেয়ে বড় একটি ছবির কথা। পরের দিন ১৯ ডিসেম্বর প্রথম আলোর লাখো হূদয়কে পুড়িয়েছে। পেশাগত দায় আর হূদয়-পোড়া মন নিয়ে তখন থেকেই খুঁজছি সেই জুতার মালিকের অদেখা স্বজনদের।
বাসে আগুন যখন জ্বলছিল, তখনো পোড়া বাসের জানালায় নড়ছিল জুতা পরা পা দুটো। মানুষটা ভেতরে। আগুনের লেলিহান শিখা ছাড়া আর কিছুই দেখাচ্ছিল না। দমকল-কর্মীরা এসে আগুনে পানি দিলেন। নিভে গেল আগুন। বাসের জানালায় জুতা দেখানো অবস্থায় উদ্ধার করা হলো মরদেহ। জুতার মালিকের মরদেহ। বাসের আগুন নিভে গেলেও মনের আগুন জ্বলছিল। সেই জ্বলা থেকে হাসপাতালে তাঁর সহযাত্রীরা কাতরতার সঙ্গে জানিয়েছিলেন জুতা পরা মানুষটি জানালা দিয়ে বেরোনোর এক দফা বৃথা চেষ্টা করেছিলেন।
জীবন বাঁচানোর চেষ্টাতেই শুনতে হয়েছিল অগ্নিসংযোগকারী দুর্বৃত্তদের পাল্টা হুংকার। সমব্যথী কয়েকজন যাত্রী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁকে বের করতে এগোলেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করার মুহূর্তে ফের দুর্বৃত্তরা ধাওয়া করে। গালিগালাজ করে দুর্বৃত্তদের হুমকি 'যে আগাইবা, তাঁরে ধরে আগুনে ফেলব... যাও ভাগো, আগে নিজেরে বাঁচাও...!' এই এক হুংকারে সহযাত্রীরা ছিলেন ত্রস্তপদ।
লাশের ছবি প্রথম আলো ছাপে না। তাই হত্যা-মৃত্যুর খবর সংগ্রহে লাশকে ঘিরে সহকর্মী সংবাদকর্মীদের মতো অতিরিক্ত কোনো টানও থাকে না। থাকে শুধু লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনকে ঘিরে। সে দিন কিন্তু লাশের কাছে কাছেই কাটাতে হয়েছে বেশি সময়। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে শুধু পোড়া লাশের অনেকগুলো ছবি তুলেছেন আলোকচিত্রী আনিস মাহমুদ। লাশ নামের ছাই ভস্মকে একবার-দুবার নয়, ঘটনাস্থলে-থানায়-মর্গে —অনেক বার দেখা হয়েছে। কারণ একটিই—অপরিচিত লোকটির পরিচয় বের করতে যদি কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়।
ঘটনার তিন দিন কেটে গেল। কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। না পুলিশ, না সংবাদকর্মী। পুলিশ ছাইভস্ম হওয়া লাশ দুদিন রেখেছিল মর্গে। পরে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন হলো সিলেট নগরের মানিকপীরটিলা গোরস্থানে। সিলেট বিভাগের সব থানায় থানায় ওয়্যারলেস বার্তা পাঠাল পুলিশ। 'এক জোড়া জুতা আছে। জুতা দেখে স্বজনেরা খোঁজ নিন...!' পুলিশের পাঠানো বার্তা এ রকমই হবে। কিন্তু এ বার্তায় সাড়া মিলবে কি?
মানুষটার পরিচয় বের করতে সম্বল এখন এই এক জোড়া জুতা। তাই তো পোড়া মানুষটার লাশ নামের ছাইভস্মের সুরতহাল তৈরি করতে পুলিশকে কেবল জুতার সুরতহাল করতে হয়েছে। জুতার রকমফের তালাশ করা হয়। কতটা দামি ছিল জুতা? নাকি কম দামি? জুতায় রং করা ছিল কি? নাকি পালিশ ছিল?—প্র্রভৃতি পর্যবেক্ষণ থেকে খোঁজার চেষ্টা ছিল জুতার মালিকের অবয়ব। পুলিশের সব অনুমান জুতা দেখে দেখে। জুতা বলছে জুতার মালিকের বয়স ৪০। চল্লিশের চালশে দেহ নিয়ে ছিল তাঁর পথচলা।
জুতা দেখে অনুমান যদি সত্যি হয়, তাহলে জুতার মালিকের তো একটি পরিবার আছে। আছে স্ত্রী-ছেলে-মেয়ে-আত্মীয়-স্বজন। মধ্যবিত্ত পরিবারে জুতা নিয়ে কত তো কথা থাকে। অজানা স্বজনদের কেউ একজন হয়তো এ জুতা জোড়া পরম যত্ন করে পরিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর পায়ে। অথবা জুতা পায়ের কাছে পেয়েও মোজা খুঁজে না পাওয়া নিয়ে অম্ল-মধুর কোনো পারিবারিক কাহিনি। দুর্বৃত্তদের আগুন-বর্বরতার পরও থাকল শুধু জুতা। এই এক জোড়া জুতায় লুকিয়ে আছে পোড়া মানুষের ঘ্রাণ! এ ঘ্রাণ শুঁকতে কেউ কি আসবে? হবে কি জুতার মালিকের সন্ধান? তা না হলে যে শনাক্ত না করতে পারা লাশের মতো জুতা জোড়াও হয়ে থাকবে বেওয়ারিশ!
উজ্জ্বল মেহেদী, সাংবাদিক।
ujjalmehedi@yahoo.com
জুতা দেখে বোঝা গেল তিনি মধ্য বয়সী। জুতা পরা মানুষটার গন্তব্য ছিল সিলেট। যাত্রীবাহী বাসটি ছিল তাঁর বাহন। আগুন দেওয়ার পর বাস থেকে সবাই বেরোতে পারলেও জুতার মালিক আর বেরোতে পারলেন না। নিজে বের হতে না পারলেও বাসের জানালা দিয়ে বের করে রেখেছিলেন দুটো পা। জুতা জোড়া আর পুড়ল না! নির্মম মৃত্যুর চরম মুহূর্ত জুতা দেখানোর মতোই রয়ে গেল!
হ্যাঁ, পাঠক! প্রথম আলোর প্রধান শিরোনামের সেই ছবির খবরের কথাই বলছি। ১৮ ডিসেম্বর সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের যাত্রীবাহী 'সিলেট হবিগঞ্জ সুপার এক্সপ্রেস' নামের বাসে ত্রাসের আগুনের কথা। ভয়ংকর খবরের চেয়ে বড় একটি ছবির কথা। পরের দিন ১৯ ডিসেম্বর প্রথম আলোর লাখো হূদয়কে পুড়িয়েছে। পেশাগত দায় আর হূদয়-পোড়া মন নিয়ে তখন থেকেই খুঁজছি সেই জুতার মালিকের অদেখা স্বজনদের।
বাসে আগুন যখন জ্বলছিল, তখনো পোড়া বাসের জানালায় নড়ছিল জুতা পরা পা দুটো। মানুষটা ভেতরে। আগুনের লেলিহান শিখা ছাড়া আর কিছুই দেখাচ্ছিল না। দমকল-কর্মীরা এসে আগুনে পানি দিলেন। নিভে গেল আগুন। বাসের জানালায় জুতা দেখানো অবস্থায় উদ্ধার করা হলো মরদেহ। জুতার মালিকের মরদেহ। বাসের আগুন নিভে গেলেও মনের আগুন জ্বলছিল। সেই জ্বলা থেকে হাসপাতালে তাঁর সহযাত্রীরা কাতরতার সঙ্গে জানিয়েছিলেন জুতা পরা মানুষটি জানালা দিয়ে বেরোনোর এক দফা বৃথা চেষ্টা করেছিলেন।
জীবন বাঁচানোর চেষ্টাতেই শুনতে হয়েছিল অগ্নিসংযোগকারী দুর্বৃত্তদের পাল্টা হুংকার। সমব্যথী কয়েকজন যাত্রী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁকে বের করতে এগোলেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করার মুহূর্তে ফের দুর্বৃত্তরা ধাওয়া করে। গালিগালাজ করে দুর্বৃত্তদের হুমকি 'যে আগাইবা, তাঁরে ধরে আগুনে ফেলব... যাও ভাগো, আগে নিজেরে বাঁচাও...!' এই এক হুংকারে সহযাত্রীরা ছিলেন ত্রস্তপদ।
লাশের ছবি প্রথম আলো ছাপে না। তাই হত্যা-মৃত্যুর খবর সংগ্রহে লাশকে ঘিরে সহকর্মী সংবাদকর্মীদের মতো অতিরিক্ত কোনো টানও থাকে না। থাকে শুধু লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনকে ঘিরে। সে দিন কিন্তু লাশের কাছে কাছেই কাটাতে হয়েছে বেশি সময়। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে শুধু পোড়া লাশের অনেকগুলো ছবি তুলেছেন আলোকচিত্রী আনিস মাহমুদ। লাশ নামের ছাই ভস্মকে একবার-দুবার নয়, ঘটনাস্থলে-থানায়-মর্গে —অনেক বার দেখা হয়েছে। কারণ একটিই—অপরিচিত লোকটির পরিচয় বের করতে যদি কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়।
ঘটনার তিন দিন কেটে গেল। কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। না পুলিশ, না সংবাদকর্মী। পুলিশ ছাইভস্ম হওয়া লাশ দুদিন রেখেছিল মর্গে। পরে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন হলো সিলেট নগরের মানিকপীরটিলা গোরস্থানে। সিলেট বিভাগের সব থানায় থানায় ওয়্যারলেস বার্তা পাঠাল পুলিশ। 'এক জোড়া জুতা আছে। জুতা দেখে স্বজনেরা খোঁজ নিন...!' পুলিশের পাঠানো বার্তা এ রকমই হবে। কিন্তু এ বার্তায় সাড়া মিলবে কি?
মানুষটার পরিচয় বের করতে সম্বল এখন এই এক জোড়া জুতা। তাই তো পোড়া মানুষটার লাশ নামের ছাইভস্মের সুরতহাল তৈরি করতে পুলিশকে কেবল জুতার সুরতহাল করতে হয়েছে। জুতার রকমফের তালাশ করা হয়। কতটা দামি ছিল জুতা? নাকি কম দামি? জুতায় রং করা ছিল কি? নাকি পালিশ ছিল?—প্র্রভৃতি পর্যবেক্ষণ থেকে খোঁজার চেষ্টা ছিল জুতার মালিকের অবয়ব। পুলিশের সব অনুমান জুতা দেখে দেখে। জুতা বলছে জুতার মালিকের বয়স ৪০। চল্লিশের চালশে দেহ নিয়ে ছিল তাঁর পথচলা।
জুতা দেখে অনুমান যদি সত্যি হয়, তাহলে জুতার মালিকের তো একটি পরিবার আছে। আছে স্ত্রী-ছেলে-মেয়ে-আত্মীয়-স্বজন। মধ্যবিত্ত পরিবারে জুতা নিয়ে কত তো কথা থাকে। অজানা স্বজনদের কেউ একজন হয়তো এ জুতা জোড়া পরম যত্ন করে পরিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর পায়ে। অথবা জুতা পায়ের কাছে পেয়েও মোজা খুঁজে না পাওয়া নিয়ে অম্ল-মধুর কোনো পারিবারিক কাহিনি। দুর্বৃত্তদের আগুন-বর্বরতার পরও থাকল শুধু জুতা। এই এক জোড়া জুতায় লুকিয়ে আছে পোড়া মানুষের ঘ্রাণ! এ ঘ্রাণ শুঁকতে কেউ কি আসবে? হবে কি জুতার মালিকের সন্ধান? তা না হলে যে শনাক্ত না করতে পারা লাশের মতো জুতা জোড়াও হয়ে থাকবে বেওয়ারিশ!
উজ্জ্বল মেহেদী, সাংবাদিক।
ujjalmehedi@yahoo.com
__._,_.___