NOT ONLY YOU , WHOLE NATION IS EAGERLY WAITING TO WITNESS "EXEMPLARY PUNISHMENT" !!
কলযশলযশষঘাতকদের বিচার না দেখে কবরে যাব নাসাখিনা ইসাহাক
বিল ডাকাতিয়া নদীর পাশেই আমাদের বাড়ি। আমার স্বামী শেখ ইসাহাক আলী ছিলেন ধনাঢ্য সওদাগর। আমাদের বিরাট আকৃতির ছয়টি নৌকা। স্বামী হাজার মণ ধান-পাট নিয়ে এক বন্দর থেকে আরেক বন্দরে সওদা করতেন। আমাদের ১১টি সন্তান। কেউ ব্যবসা করে। কেউ লেখাপড়া করে। বিল ডাকাতিয়ার ঢেউয়ের মতো সংসারে আনন্দ-খুশির ঢেউ সব সময় আছড়ে পড়ত। কিন্তু হানাদারদের কালো থাবা আমাদের সব সুখ-শান্তি কেড়ে নিয়েছে।
১৯৭১ সাল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আমাদের গ্রাম ডুমুরিয়া উপজেলার শাহাপুরে হামলা চালায়। তারা নির্বিচারে নিরীহ বাঙালিদের হত্যা করে। আমার স্বামী এর প্রতিবাদ জানান। তিনি বাড়ির উঠানে কালো পতাকা টাঙিয়ে গ্রামবাসীকে হানাদারদের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার আহ্বান জানান। আমার বড় ছেলে ব্যবসায়ী শেখ সুলতান উদ্দিন ও আরেক ছেলে দশম শ্রেণীর ছাত্র আবদুর রউফ হানাদারদের হত্যাযজ্ঞ দেখে আগুনের ফুলকি হয়ে যায়। আমাকে বলে, 'মা আমরা যুদ্ধে যাব। হানাদারদের গুলি করে হত্যা করব। দেশ স্বাধীন করে বাড়ি ফিরব।' আমি বাধা দিইনি। দোয়া-দরুদ পড়ে সন্তানদের বুকে ফুঁ দিয়ে বিদায় জানাই।
এদিকে ছেলেরা যুদ্ধে গেছে এ খবর জানতে পেরে রাজাকাররা আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা সহায়-সম্পদ সব লুট করে আমাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আমার স্বামীকে রাজাকাররা সাহাপুর ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায়। অমানুষিক নির্যাতন চালানোর পর মৃতপ্রায় অবস্থায় রাজাকাররা কয়েক দিন পর তাঁকে ছেড়ে দেয়।
একাত্তরের ১৯ আগস্ট। আমার জীবনের সবচেয়ে কালো দিন। গ্রামের পাশের একটি ঘাঁটি থেকে পাকিস্তানি সৈন্য আর রাজাকাররা আমার দুই ছেলে শেখ সুলতান উদ্দিন ও শেখ আবদুর রউফকে ধরে নিয়ে যায়। থাকুরা গ্রামে নরপশুরা সুলতানকে গুলি করে হত্যা করে। আর খুলনার গল্লামারীতে গুলি করে মেরে ফেলে রউফকে। হানাদাররা চলে গেলে গ্রামের মানুষ থাকুরা গ্রাম থেকে সুলতানের লাশ এনে বাড়ির পাশে কবর দেয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত রউফের লাশের সন্ধান পাইনি। আমার অন্য সন্তান দীন মোহাম্মদ এবং কামালকেও শত্রুরা ধরে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালায়।
বড় ছেলে সুলতান শহীদ হওয়ার ১৯ দিন পর তার স্ত্রী একটি পুত্রসন্তান জন্ম দেয়। সুলতানকে হারানোর শোক ভুলতে নবজাতকের নাম রাখি শহীদ। এখন শহীদ ইজিবাইক চালায়। আমি প্রতিদিন সুলতানের কবরের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। কিছুতেই শহীদ দুই সন্তানের স্মৃতি ভুলতে পারি না।
আমি একাত্তরের খুনিদের বিচার চাই। এ কারণে ২০০৯ সালের ২৭ অক্টোবর খুলনার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আমার ছেলের খুনি থাকুরা গ্রামের ফজলু পেয়াদা, আবদুর রশিদ ফকির, আন্দুলিয়া গ্রামের মোজাহার গাজী, খোরনিয়া গ্রামের বাচ্চু খান, মধু গ্রামের ইসমাইল গাজী ও মিকশিমিল গ্রামের আবুল কাশেম মোল্লার বিরুদ্ধে মামলা করি। এরা যুদ্ধাপরাধী, দেশদ্রোহী ও রাজাকার বাহিনীর সদস্য। এরাই আমার দুই ছেলেকে হত্যা করেছে। বাড়িঘরে লুটপাট চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে আমাদের পথের ফকির করেছে। আমি এর বিচার চাই। আমার সন্তানদের যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার না দেখে আমি কবরে যাব না। আমি কোনো মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পরিবারের ভাতাও পাইনি।
সাখিনা ইসাহাক : খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার সাহাপুর গ্রামের শহীদ শেখ সুলতান উদ্দিন ও শেখ আবদুর রউফের মা। একাত্তরে দুই সন্তানহারা এই মা আজ ৯৬ বছরের বৃদ্ধা।
অনুলিখন : ফখরে আলম, সিনিয়র রিপোর্টার, কালের কণ্ঠ, যশোর অফিস।
১৯৭১ সাল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আমাদের গ্রাম ডুমুরিয়া উপজেলার শাহাপুরে হামলা চালায়। তারা নির্বিচারে নিরীহ বাঙালিদের হত্যা করে। আমার স্বামী এর প্রতিবাদ জানান। তিনি বাড়ির উঠানে কালো পতাকা টাঙিয়ে গ্রামবাসীকে হানাদারদের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার আহ্বান জানান। আমার বড় ছেলে ব্যবসায়ী শেখ সুলতান উদ্দিন ও আরেক ছেলে দশম শ্রেণীর ছাত্র আবদুর রউফ হানাদারদের হত্যাযজ্ঞ দেখে আগুনের ফুলকি হয়ে যায়। আমাকে বলে, 'মা আমরা যুদ্ধে যাব। হানাদারদের গুলি করে হত্যা করব। দেশ স্বাধীন করে বাড়ি ফিরব।' আমি বাধা দিইনি। দোয়া-দরুদ পড়ে সন্তানদের বুকে ফুঁ দিয়ে বিদায় জানাই।
এদিকে ছেলেরা যুদ্ধে গেছে এ খবর জানতে পেরে রাজাকাররা আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা সহায়-সম্পদ সব লুট করে আমাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আমার স্বামীকে রাজাকাররা সাহাপুর ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায়। অমানুষিক নির্যাতন চালানোর পর মৃতপ্রায় অবস্থায় রাজাকাররা কয়েক দিন পর তাঁকে ছেড়ে দেয়।
একাত্তরের ১৯ আগস্ট। আমার জীবনের সবচেয়ে কালো দিন। গ্রামের পাশের একটি ঘাঁটি থেকে পাকিস্তানি সৈন্য আর রাজাকাররা আমার দুই ছেলে শেখ সুলতান উদ্দিন ও শেখ আবদুর রউফকে ধরে নিয়ে যায়। থাকুরা গ্রামে নরপশুরা সুলতানকে গুলি করে হত্যা করে। আর খুলনার গল্লামারীতে গুলি করে মেরে ফেলে রউফকে। হানাদাররা চলে গেলে গ্রামের মানুষ থাকুরা গ্রাম থেকে সুলতানের লাশ এনে বাড়ির পাশে কবর দেয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত রউফের লাশের সন্ধান পাইনি। আমার অন্য সন্তান দীন মোহাম্মদ এবং কামালকেও শত্রুরা ধরে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালায়।
বড় ছেলে সুলতান শহীদ হওয়ার ১৯ দিন পর তার স্ত্রী একটি পুত্রসন্তান জন্ম দেয়। সুলতানকে হারানোর শোক ভুলতে নবজাতকের নাম রাখি শহীদ। এখন শহীদ ইজিবাইক চালায়। আমি প্রতিদিন সুলতানের কবরের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। কিছুতেই শহীদ দুই সন্তানের স্মৃতি ভুলতে পারি না।
আমি একাত্তরের খুনিদের বিচার চাই। এ কারণে ২০০৯ সালের ২৭ অক্টোবর খুলনার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আমার ছেলের খুনি থাকুরা গ্রামের ফজলু পেয়াদা, আবদুর রশিদ ফকির, আন্দুলিয়া গ্রামের মোজাহার গাজী, খোরনিয়া গ্রামের বাচ্চু খান, মধু গ্রামের ইসমাইল গাজী ও মিকশিমিল গ্রামের আবুল কাশেম মোল্লার বিরুদ্ধে মামলা করি। এরা যুদ্ধাপরাধী, দেশদ্রোহী ও রাজাকার বাহিনীর সদস্য। এরাই আমার দুই ছেলেকে হত্যা করেছে। বাড়িঘরে লুটপাট চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে আমাদের পথের ফকির করেছে। আমি এর বিচার চাই। আমার সন্তানদের যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার না দেখে আমি কবরে যাব না। আমি কোনো মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পরিবারের ভাতাও পাইনি।
সাখিনা ইসাহাক : খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার সাহাপুর গ্রামের শহীদ শেখ সুলতান উদ্দিন ও শেখ আবদুর রউফের মা। একাত্তরে দুই সন্তানহারা এই মা আজ ৯৬ বছরের বৃদ্ধা।
অনুলিখন : ফখরে আলম, সিনিয়র রিপোর্টার, কালের কণ্ঠ, যশোর অফিস।
এই প্রতিবেদন সম্পর্কে
__._,_.___