বুদ্ধ পূর্ণিমায় উদ্ভাসিত আমার দেশ আমার মা
সোনা কান্তি বড়ুয়া
বিশ্ব মা দিবসে জনতা এবং বিশ্ববৌদ্ধ সমাজ বুদ্ধপূর্ণিমায় আমাদের ইচ্ছা ও প্রার্থনা, �মা, তুমি ভাল থেকো।� বুদ্ধ পূর্ণিমা বাংলাদেশ সহ বিশ্ববৌদ্ধ সমপ্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় মহোৎসব। আজ থেকে ২৫৫২ বছর পূর্বে গৌতমবুদ্ধ রাজপুত্র (সিদ্ধার্থ) রূপে এ তিথিতে জন্ম গ্রহন করেছিলেন। বৌদ্ধ ইতিহাসে এই ত্রিস্মৃতিতে সমুজ্জ্বল বুদ্ধপূর্ণিমায় পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে এই তিথিতেই তিনি পরম জ্ঞান বুদ্ধত্ব বা সম্বোধি এবং আশি বছর বয়সে এই শুভ তিথিতেই তিনি মহা পরিনির্বান লাভ (বা ইহলোক ত্যাগ) করেন। এই ত্রিস্মৃতি সমুজ্জ্বল বুদ্ধপূর্ণিমা সগৌরবে অনুষ্ঠিত হবে আগামি ১৮ই ও ১৯ই মে ২০০৮ সাল।
রবীন্দ্রনাথের বুদ্ধপূজা:
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বুদ্ধ পূজার ভাষন আজ প্রণিধান যোগ্য, �আমি যাঁকে অন্তরের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব বলে উপলব্ধি করি আজ এই বৈশাখী পূর্ণিমায় তাঁর জন্মোৎসবে আমার প্রণাম নিবেদন করতে এসেছি�। বিশাল রবীন্দ্র সাহিত্যে কবিতা, গানে, নাটকে, উপন্যাসে, নৃত্যনাট্যে বিপুল বৌদ্ধধারা বিদ্যমান। ইহাই বৈদিক ইতিহাসের পূর্বে প্রাগৈতিহাসিক মহেঞ্জোদারো-হরপ্পার বৌদ্ধধর্মের প্রাচীন ২৭ জন বুদ্ধগণ ইতিহাসের ক্ষেত্রে অখন্ড সাধনা। এই অখন্ড সাধনার ফলেই ভারতের স্বাধীন জাতীয় পতাকায় এবং সরকারি মনোগ্রামে বুদ্ধের প্রতীত্যসমুৎপাদের (কার্য কারন প্রবাহ) গভীর দর্শন অশোকের ধর্মচক্রে প্রতিবিম্বিত হয়ে ইতিহাসের অবিচ্ছিন্ন ধারা প্রবহমান রয়েছে। রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল, �ভারতবর্ষে বুদ্ধদেব মানবতাকে তুলে ধরেছিলেন। তিনি জাতি মানেন নাই, যাগযজ্ঞের অবলম্বন থেকে মানুষকে মুক্তি দিয়েছিলেন, দেবতাকে মানুষের লক্ষ্য হইতে অপসৃত করিয়াছিলেন। তিনি মানুষের আত্মশক্তি প্রচার করিয়াছিলেন। দয়া ও কল্যাণ তিনি স্বর্গ হইতে প্রার্থনা করেন নাই। মানুষের অন্তর হইতে তাহা তিনি আহবান করিয়াছিলেন। এমনি করিয়া শ্রদ্ধার দ্বারা ভক্তির দ্বারা মানুষের অন্তরের জ্ঞানশক্তি ও উদ্যমকে তিনি মহীয়ান করিয়া তুলিলেন। মানুষ যে দীন দৈবাধীন হীন পদার্থ নহে তাহা তিনি ঘোষণা করিলেন।
সকল কলুষ তামস হর জয়হোক তব জয়
অমৃতবারি সিঞ্চন কর নিখিল ভুবনময়।
মহাশক্তি মহাক্ষেম, মহাপুন্য মহাক্ষেম
জ্ঞানসূর্য উদয় ভাতি ধ্বংস করুক তিমির রাতি
দুঃসহ দুঃস্বপ্ন খ্যাতি অপগত কর ভয়
দুর্দিন শংকিত চিত্ত পান'।�
(২) বাংলাদেশ বিশ্বমানবতার তীর্থভূমি তে আমার দেশ আমার মাকে নমস্কার করি। অনেক ঘুরেছি আমি রাজকুমার সিদ্ধার্থের জন্মভূমি নেপালের লুম্বিনী কানন থেকে বাংলার অতীশ দীপংকরের বজ্রযোগীনি গ্রাম। একদা বৌদ্ধভিক্ষু ও চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং বাংলাদেশে পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিশ্ববিদ্যালয় এবং মহাস্থানগড়ে বৌদ্ধমহাবিহার দেখতে তীর্থ ভ্রমনে এসেছিলেন। বাংলাদেশ বৌদ্ধজগতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ তীর্থস্থান। সর্বজনীন দেশ মাতৃকা আমাদের সবার। মায়ের সামনে ধর্মের নামে মস্তক বিক্রয় করে মৌলবাদীরা মাতৃজাতির উপর অত্যাচার করে চলেছে দিনের পর দিন। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি সর্বজনীন মাকে খন্ড বিখন্ড করে ফেলেছে। মহাপন্ডিত অতীশ দীপংকরের (৯৮২ - ১০৫৪) জন্মভূমি গ্রামের নাম �বজ্রযোগিনী� মহাচীনের বিনম্র প্রণামের শিলালিপিময় স্মৃতির সুশোভিত মণিদীপজ্বালা �অতীশ দীপংকর বন্দনায়� আজ ও বাংলাদেশের ইতিহাসে দেদীপ্যমান হয়ে আছে। বাঙালি বংশের দীপমালায় কত প্রান হল বলিদান, লেখা আছে আমাদের অশ্রুজলে। যেই বাংলাদেশের নাম অন্নপূর্ণা, তার সন্তানেরা কেন অন্ন না পেয়ে আলু খাবে? সকল দেশের রাণী হয়ে যেই বাংলা বিরাজমান আজ সেই মায়ের অত্যাচারী সন্তানেরা কেহ দালান কোটায়, দুর্বল সন্তানেরা ক্ষুধার যন্ত্রনায় কাঁদছে। আরব, বৃটিশ, ফরাসী, পর্তুগীজ ও পাকিস্তানী �বণিকদের মানদন্ড দেখা দিয়ে ছিল রাজদন্ড রূপে�। বঙ্কিম চন্দ্র চট্টেপাধ্যায়ের রচিত �বন্দে মাতরম� কবিতার ভাষায় আমার দেশ ও আমার মাকে নমস্কার করি। সুহাসিনী ও সুমধুর বাসিনী বাংলা মায়ের আকাশ বাতাস সর্বদা আমাদের প্রাণে বেঁচে থাকার মৃতসঞ্জীবনী বাঁশী বাজায়। অহিংসার বাংলায় হিংসা নিয়ে এলো কর্ণাটকের সেনবংশীয় রাজা, পরে তুরস্কের বখতিয়ার ও তার অষ্ঠাদশ অশ্বাবোহী সৈন্যদল। অহিংসার বানী নিয়ে অতীশ দীপংকর তিব্বতে �জ্ঞানের আলো� জ্বালাতে জ্বালাতে তাঁর জন্মভুমি বজ্রযোগীনি সহ বাংলাদেশ হিংসার অন্ধকারের অতল তলে তলিয়ে গেল।
১২০৪ সালে বখতিয়ার খিলজি বাংলাদেশে এসে দেশমাতৃকার দেহে লীন হয়ে গেল। বাংলা মা সবাইকে আপন করে নেয়। উনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি সন্তান রামকৃষ্ণ পরমংসদেব (১৮৩৬ - ১৮৮৬) �যত মত তত পথ� শীর্ষক মতবাদে তিনি তাঁর ধর্মানুভুতিকে মা বলতেন। আমাদের কাছে দেশ সর্বকালের মা, �আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি।� পবিত্র কুরআন শরীফের নির্দেশ, �মায়ের চরণতলে মানব সন্তানের স্বর্গ বিরাজমান।� চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী। নারী বা মাতৃজাতির ক্ষমতায়নে মৌলবাদীরা রাজি নয়। পবিত্র ইসলাম ধর্মকে হাইজাক করে জঙ্গিরা বোমা মার্কা ধর্মকে তাদের সেরা হাতিয়ার করে একযোগে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট রেল ষ্টেশনে বোমা মেরে জঙ্গীদের জিঘাংসার ভয়াবহ অস্তিত্ব জনতার সামনে তুলে ধরেছে । তদারকি সরকারের গভীর তলদেশে জামাত জড়িত কি না আমরা জানি না । সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে জেলে রাখা কত সহজে এই ব্যাপারে দেশের জনসাধারণ আজ ও সন্দিহান। উল্টো বাঁকের রাজনীতির রূপরেখায় রাষ্ট্রপতি শাসিত ষড়যন্ত্রের ডান্ডাবাজিতে আজকের তদারকি সরকার একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার কবে শুরু করবেন?
মৌলবাদীরা দেশমাতৃকাকে কি ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বোরখা পরাবে? মাতৃজাতির স্বাধীনতায় জামাতের মাথা ব্যথা কেন? বাংলাদেশের খালি জায়গা সব কি জামাতের ধর্মের অধীনে? দেশমাতৃকাকে জামাত ধর্মের ষড়যন্ত্রে রাজনীতির মস্তক বিক্রয় করে চলেছে দিনের পর দিন। পবিত্র ইসলাম ধর্ম কি জামাতের �ট্রেড মার্ক�? এই পরিবেশ একদিনে তৈরী হয়নি। এর পিছনে এক গভীর ষড়যন্ত্রের দ্বিজাতি তত্ত্বের ইতিহাস রচিত হয়েছিল ১৯৭৫ সালের গোড়ার দিকে সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের একটি উপ অনুচ্ছেদ ১২২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করা হয়েছিল, যার ফলে পাকিস্তানের দালালরা ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। এই প্রসঙ্গে ইহা উল্লেখ্য যে, একাত্তর সালে মতিউর রহমান নিজামী ও জামায়েতে ইসলামী দ্বারা সংখ্যালঘু ও মুক্তিবাহিনী হত্যার প্ররোচনার বহু সংবাদ ও দলীয় মুখপাত্র আছে। জেনারেল জিয়ার রাজত্বকালে পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমা, বোমাং সহ সংখ্যালঘু সমপ্রদায়কে হত্যা, ধর্ষণ, অত্যাচারে মুসলমান বানানো হয়েছিল ছলে, বলে, কলে ও কৌশলে। দিনের পর দিন গভীর অরণ্যের চাকমা মেয়েদেরকে ধরে ধর্ষণ করেছে এবং মুসলমান ধর্ম অবলম্বনের জন্য বাধ্য করা হয়েছে। অনেক সংখ্যালঘু অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ভারতবর্ষে পালিয়ে গেছে।
চোরাইয়া চুরি করি মসজিদে ঘুমায় এবং তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানে সংখ্যালঘু নির্মূল করার লক্ষ্যে হত্যা, লুট, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্ত করণ ইত্যাদি কাজ রাজাকার, জামাত ও যুদ্ধাপরাধীরা করেছে দীর্ঘ নয় মাস। মুসলমান না হওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ ও খৃষ্টান হওয়া ছিল অনেক মৃত্যুর কারণ। যেখানে সেখানে পুরুষের বস্ত্র উন্মোচন করে খাঁটি মুসলমান পরীক্ষা করো হতো এবং মুসলমান না হলে একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড। বাংলাদেশ কি একমাত্র মুসলমানদের জন্য? মুনতাসীর মামুন � রাজাকারের মন� নামক বইয়ের একানব্বই পৃষ্ঠায় লিখেছেন, �প্রায় সাত-আটশো লোককে আনুষ্ঠানিকভাবে মুসলমান করা হয় এবং গরু জবাই করে মেজবানী বা প্রীতিভোজের ব্যবস্থা করার জন্য নবমুসলমানদের বাধ্য করা হয়, শুধু প্রীতিভোজের মধ্যে ফতোয়া সীমবিদ্ধ থাকে না। পিস কমিটির ইচ্ছানুযায়ী বিবাহযোগ্য মুসলিম কন্যাদের একটি অংশ কমিটির অনুগত যুবকদের বাড়িতে তুলে দেবরা ব্যবস্থা করা হয়। সমগ্র দেশে এ রকম ঘটনার প্রচুর প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রসঙ্গত; ১৯০৫ সালে ঢাকার বুকে মুসলিম লীগের জন্ম এবং শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক সাহেব ঐতিহাসিক লাহোর বৈঠকে পাকিস্তান প্রস্তাব করেছিলেন এবং পাশ করা হলো ২৩ শে মার্চ ১৯৪০ সালে যে দিনটি আজও �পাকিস্তান দিবস� নামে অভিহিত করা হয়। বাঙালিরা পাকিস্তানী নেতাদেরকে বিশ্বাস করে খাল কেটে কুমির এনেছে বাংলাদেশে।
(৩) রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি:
বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার খালেদা-সাঈদী ও নিযামীর শাসন কালের অনাচার, অবিচার ও বঞ্চনার ফলেই সৃষ্ঠ আজকের দুর্ভিক্ষ কলির সন্ধ্যায় সমাগত। আসল বিচারের ব্যবস্থা না করে দুর্নীতির মাফিয়া - চক্রে রাজনীতির মস্তক বিক্রয় করার পর আজ জনতার নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। জোট সরকার প্রধান বেগম খালেদা জিয়াই দুর্নীতির প্রধান কারণ ও নাটের গুরু। আবার রাজনীতির শতরঞ্জিতে �সংবিধান বধ� কাব্যের মহড়ায় আসল দুর্নীতির সাহেব বিবি গোলামদের পুঞ্জীভূত সম্পদের সম বন্টন না হওয়াতে আজ দেশের মানুষ দুর্ভিক্ষের দুঃখের দহনে করুণরোদনে তিলে তিলে ক্ষয় হচ্ছে।
দিনের পর দিন অঘটন - ঘটন পটীয়সীর দাবাখেলায় মনে হচ্ছে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশ আকণ্ঠ নিমজ্জিত। অনেকদিন থেকে আমাদের ইতিহাসের পাতা রক্তে ডুবে আছে। আজও মনে পড়ছে একাত্তরের পাকিস্তানের ধর্মমার্কা অন্ধকার রাজনীতির জোয়ারে পাকবাহিনী ও তার দোসর স্বদেশী রাজাকার সহ আলবদর চক্র সংখ্যালঘু নির্মূলকরণ অপরাধেও অপরাধী। বাংলাদেশের রাষ্ঠ্রক্ষমতা ও গণতন্ত্র কি নষ্ট রাজনীতির দুষ্ট জামায়েতের অধীনে? কারন যে কোন ধর্মের পুরোহিত বা মোল্লা - মাফিয়ার ষড়যন্ত্র থেকে আজকের বাংলাদেশ মুক্ত নয়। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সহ গণতন্ত্রের বুক গ্রেনেডে বিধ্বস্ত। দিনের পর দিন আমাদের বাংলাদেশে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃষ্টান মহিলাদের জীবন নিয়ে তথাকথিত ধর্মের ঠিকাদারেরা অমানবিক নির্যাতিন চালাচ্ছে। আর গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে রাষ্ট্রপতি নিয়ন্ত্রিত দেশে সংবাদ মাধ্যমে ঢাক বাজিয়ে কোনো লাভ নেই।
প্রশ্ন হচ্ছে, আজ ছত্রিশ বছর ব্যাপী রাজাকারতোষণে বাংলাদেশ কি সত্যিই কোনোভাবে লাভবান হয়েছে? না শুধুমাত্র লাভবান হয়েছে অন্ধকারমার্কা রাজাকারদের শক্তি? আর যদি একাত্তরের অপকর্মের জন্য জিজ্ঞাসা করা হয়, কাকে ক্ষমা করা হবে, কেহতো ক্ষমা চায় নি! বাংলাদেশকে গায়ের জোরে জোট সরকার ও আই. এস. আই পাকিস্তানের ( ভোরের কাগজ, জুন ২৯, ২০০৭, �কলকাঠি নাড়ে পাকিস্তান), অধীনে রাখার ষড়যন্ত্র বানানোর পরও একাত্তরের ওয়ারক্রাইমের বিচার নিস্পত্তি না করে অগুনি- প্রশ্ন জিঁয়ে দিয়েছে আই.এস. আই-এর মনোনিত ইসলামিক জঙ্গী গুষ্ঠির সদস্যগণ। অথচ আমেরিকার প্রতিরক্ষা সেক্রেটারি রামস্ ফিল্ড্ পদত্যাগ করতে না করতেই জার্মানের আদালতে তার বিরুদ্ধে ইরাকে ওয়ারক্রাইমের জন্য বিচারের দাবী করা হয়েছে। জাতিসংঘ খোঁজ নিলেই দেখতে পেতেন, উক্ত আই.এস. আই-এ মনোনিত জোট সরকারের সদস্যগণ কেউ নিজ গুণে সদস্যপদ পান নি, কোনো না কোনো ভাবে ইসলামিক জঙ্গী ও রাজাকারদের গিভ্ এন্ড টেক্ নীতির পৃষ্ঠপোষনা করে পেয়েছেন। এইসব প্রাপকদের চেহারাগুলো কিন' নানা ধরণের। এমনকী বাইরে থেকে দেখেও বোঝার কোনো উপায় নেই, রাজাকার সহ পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আই.এস. আই-এর কাছে কার শীরদাড়া কোথায় কতটা বিকিয়ে গিয়েছিল। কার টুপি কোথায় বাঁধা ছিল। ধর্মের নাম দিয়ে অনেক বছর ধরে হাজার হাজার ইসলামিক জঙ্গীরা নানা উপায়ে টাকা কামাচ্ছে, খালেদা-সাঈদী ও নিযামী মাফিয়া আমাদের সংবিধান এবং হাইকোর্টের দন্ডাদেশ না মানার সাহস করেছিল কেমন করে?
বরঞ্চ প্রতিনিয়ত প্রচেষ্টা চলছে, বাংলাদেশকে পিছনে ঠেলে নিয়ে আরেক একটা পাকিস্তান বানানোর গভীর ষড়যন্ত্র। কিন' সত্য সর্বদা জয়ী। সত্য ও বাঙালি বুদ্ধিজীবিদের কাছে উগ্রবাদী মোল্লাদের পরাজয় সুনিশ্চিত। মইত্যা রাজাকার সরল ধর্মভীরু বাঙালির চোখে মওদুদির পাকিস্তান মার্কা ইসলামের ধোকা দিয়ে শক্তিবান মন্ত্রী হয়েছে বলে কি খালেদার সাথে বাঙালিদের জীবন কিনে নিয়েছিল? জনতার দরবারে জনতার সরকার আসবে।
এখন জনসাধারনের প্রশ্ন, শেখ হাসিনার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ধর্মান্ধ রাজাকারপন্থী জামাতের বিদ্রোহে বাংলাদেশে অমুসলমান হয়ে জন্মগ্রহণ করা এবং বুদ্ধিজীবি হওয়া কি অপরাধ? পরে শেখ হাসিনা খেলাফতে মজলিসের সাথে সন্ধি করার পর ও কোন লাভ হ�ল না। বিষকে বিষের দাহন দিয়ে দহন করে মারতে হবে। এ এক গভীর রহস্য। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সহ দেশপ্রেমিক নাগরিকদের অধিকার লুন্ঠন করতে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আই. এস. আই এর একাত্তরের �অপারেশন সার্চ লাইট� নামে হত্যাযজ্ঞ আজও ইসলামিক জঙ্গীদের সাথে মিলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিলোপ করতে সিদ্ধহস্ত।
বিগত জোট সরকারের নানা অত্যাচার হতেই সৃষ্টি হয়েছে বুদ্ধিজীবিদের মর্মশীল লেখা ও সচিত্র সংবাদ প্রবাহ। তাই মতিউর রহমান নিজামী এবং খালেদার ধর্মমার্কা রাজরীতির নামে আজ পঙ্কিল করে তুলেছিল বাংলাদেশের ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় ছোট ছোট গ্রামগুলো পর্যন্ত। আমরা কি আজও পাকিস্তানী মনোভাবাপন্ন পরিবেশ দ্বারা অবরুদ্ধ? অথচ বাঙালিদের বিজয়ের সূর্য্য প্রতিদিনের সকালে পূর্বাকাশে স্বাধীনতার রং চড়ায় এবং বলে, �বাঙালি জাগো!� এই ভ্রাতৃবিদ্বেষ কলূষিত দেশে শাসক হয়ে দেশ শাসনের নামে পরস্পর ঘৃণায় বাংলাদেশের মানুষ আজ পদে পদে বিভাজিত ও অপমানিত। তবে সবার মনে রাখা উচিৎ, �শাসনে যতই ঘেরো, আছে বল দুর্বলেরও।� সরকারের অপশক্তির অস্তিত্ব স্বীকারে রাজনৈতিক থলের বেড়াল বের করে জনতার দরবারে পরাজিত হ�ল এবং মনে পড়ে গেল রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত কবিতা, �বিধির বিধান কাটাবে তুমি, তুমি কি এমনি শক্তিমান।� বিগত জোট সরকারের আমলে অত্যাচারী রাজাকার ও ধর্মের ঠিকাদারেরা মিলে পুলিশকে ভেড়া বানিয়ে মাদ্রাসাকে বাংলা ভাইয়ের দল পাপের ক্যাম্প করেছিল। জোট সরকার ইসলাম প্রচারের নাম করেও বক্তৃতার ফোয়ারা ছোটাচ্ছিল এবং নানারকম গিমিক দেখায়ে পাবলিককে সান্তনা দেবার চেষ্টা করেছিল এবং তা আজ অপশক্তির অস্তিত্ব স্বীকার করে হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে দেশের ভাব ও মূর্তি দুটোই কোথায় হারিয়ে গেল। বাকী রয়ে গেছে আজকের ভোটের নামে কলংকের রাজনৈতিক দুর্নীতির ঢেউ আর ঢেউ। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আমরা সবাই বাংলা মায়ের সন্তান। জন গন মনের জয় বাংলার আলোকে বাংলাদেশ চির উদ্ভাসিত হয়ে থাকবে।