পরাজিতদের আবার কিসের বিজয় দিবস?
মুনতাসীর মামুন
বর্তমান আইন প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের সঙ্গে পরিচয় বেগম জিয়ার দুঃসহ আমলের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় থেকে, রাস্তায়। এখনও তিনি দেখা হলে মন্ত্রী হিসাবে নয়, পুরনো সংগ্রামী হিসাবে সম্মান করেন। আমিও তাঁকে পুরনো সহযোদ্ধা হিসাবে সম্মান করি। অবশ্য তাঁর অনেক রাজনৈতিক কথাবার্তার সঙ্গে আমি একমত নই, তিনিও হয়ত আমার অনেক বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন। কয়েক দিন আগে টেলিভিশনে এক আলোচনায় আমরা দু'জন ছিলাম। আমার বক্তব্য ছিল, জিয়াউর রহমান নিজ স্বার্থ অটুট রাখতে রাজাকারদের বুকের গভীরে গ্রহণ করেছিলেন। কামরুল এ মন্তব্যের প্রতিবাদ করে বললেন, তিনি তা মনে করেন না। দৃঢ়কণ্ঠে বললেন, জিয়া পাকিস্তানী এজেন্ট ছিলেন। তার যুদ্ধে যাওয়ার ধরন, তার স্ত্রীর স্বেচ্ছায় ক্যান্টনমেন্টে থেকে যাওয়া, তার মতাদর্শ সবই এর প্রমাণ।
আমি তাঁর মন্তব্যের সঙ্গে তখন একমত হইনি। এখনও একমত হব এমন নয়। বিএনপির একজন মহিলা এমপি ফোনে প্রশ্ন করেছিলেন, তা হলে জিয়াকে কেন বীরোত্তম উপাধি দেয়া হয়েছিল, উপসেনাধ্যক্ষ করা হয়েছিল? কামরুল জবাব দিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধু সবাইকে বিশ্বাস করতেন, তাকেও করেছেন, কিন্তু ১৯৭৫-এর পর তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে।
কামরুলের এ মন্তব্য আবার আমার মনে পড়ল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুলের এক মন্তব্যে। তিনি বলেছিলেন, তাদের বিজয় দিবস পালন করতে দিচ্ছে না সরকার। মনে হলো, তিনি কেন বিজয় দিবস পালন করতে চাচ্ছেন? এতে তার লাভটা কী? সরকার তাদের বিজয় দিবস পালন করতে দিচ্ছে না এ কথার সত্যতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থাকা সত্ত্বেও বলছি, আচ্ছা কেন তাদের বিজয় দিবস পালন করতে দিতে হবে?
১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর, শানত্মি কমিটির সদস্য বা অন্য কথায় জামায়াতে ইসলামী বা মুসলিম লীগ ছিল পরাজিত শক্তি। এরা পাকিস্তানী ভাবধারা বা মতাদর্শে ছিল বিশ্বাসী।
বাঙালীরা বিজয়ী হয়েছিলেন, বাঙালী মতাদর্শ জয়ী হয়েছিল।
জিয়াউর রহমান এসে বাঙালীর মতাদর্শের প্রতীক সংবিধান থেকে বাঙালিত্ব ছেঁটে ফেললেন। তিনি পরাজিতদের মুক্ত করে তাদের নিয়ে দল গঠন করলেন বা তাদের সহযোগী শক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করলেন। তার জীবদ্দশায় তিনি পাকিসত্মানী মতাদর্শ যতটা সম্ভব ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট হলেন। বাঙালী মুক্তিযোদ্ধা হলে তিনি এটা কেন করবেন? এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া জরম্নরী।
এ একই মতাদর্শ এগিয়ে নিয়েছেন খালেদা জিয়াও। পরাজিত শক্তিদের তিনি স্থায়ী মিত্র করেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের তিনি ৰমতায় এনেছেন। এটা ভাবতে আমার খুব অবাক লাগে_ যারা সমাজ-রাষ্ট্রে খুনী, ধর্ষক এবং লুটেরা হিসাবে পরিচিত তাদের কিভাবে মন্ত্রী করা যায়? তাদের মতাদর্শ কিভাবে রাষ্ট্রে তুলে ধরা হয়? আমি কি একজন খুনীর সঙ্গে বসবাস করতে পারব? তবে, আমি যদি তাকে খুনী না মনে করি তা হলে বসবাস করতে পারব। বেগম জিয়া যদি তাদের পাকি আমলের মিত্র মনে না করতেন তা হলে এটি কি সম্ভব ছিল!
রাজনৈতিকভাবেও এ ধরনের মৈত্রী সম্ভব নয়। ইউরোপে মূল স্রোতধারায় কোন দল নাজি বা ফ্যাসিস্ট কোন দলের সঙ্গে মৈত্রী করেছে এমন উদাহরণ দেয়া যাবে না। সেখানে এ মতাদর্শ নিষিদ্ধ। কিন্তু অবাক ব্যাপার হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরম্ন হলে বিএনপি এর বিরোধিতা শুরম্ন করে। খালেদা জিয়া, মির্জা ফখরম্নল থেকে শুরম্ন করে বিএনপির সবাই যুদ্ধাপরাধীদের রৰায় আন্দোলনে প্রস্তুত হচ্ছেন। পরাজিত মতাদর্শ, পরাজিত শক্তির সঙ্গে এ ধরনের মৈত্রী তখনই সম্ভব যখন নিজেদেরও কেউ সেই মতাদর্শে বিশ্বাসী মনে করে। শর্মিলা যেমন মর্ষকামী পাকিসত্মানী সৈন্যদের দ্বারা নিপীড়িত হওয়ার বাসনা পোষণ করে, সে কারণে পরপর পাকিসত্মানী ধর্ষক-খুনীদের সাফাই গাইছে, বিএনপি নেতানেত্রীদেরও তাই মনে হয়।
যুদ্ধাপরাধীদের যারা প্রকাশ্যে সমর্থন করে তারাও বাঙালীদের শত্রম্ন। যুদ্ধাপরাধীদের যারা সমর্থন করে তারাও অপরাধী। খুনীকে যদি কেউ প্রশ্রয় দেয় ফৌজদারি আইনে সেও অপরাধী। আর এখানে প্রকাশ্যে খুনী-ধর্ষকদের সমর্থন দেয়া হবে তারা অপরাধী হবে না কেন? বিজয়ের মাসে তারা রাজাকারদের বিজয় গাইবেন এটা কেন মানা হবে? বিএনপিতে মুক্তিযোদ্ধা থাকে কিভাবে? যারা থাকে তারা হলো জিয়া টাইপের মুক্তিযোদ্ধা, কামরম্নলের ভাষায় পাকিসত্মানী এজেন্ট? আমার মনে হয়, মুক্তিযুদ্ধ পদকের অবমাননা করছে তারা এবং এসব পদক ফিরিয়ে নেয়া যৌক্তিক। রাজাকারদের সমর্থকরা কেন বিজয় দিবস পালন করতে চায় তাই বোধগম্য নয়। এর একটা কারণ তারা জানে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ রাজাকারবিরোধী। সুতরাং বিজয়ের মাসে মুক্তিযুদ্ধের কথা না বললে লোকজন রাসত্মাঘাটে তাদের প্রহার করতে পারে। এভাবে তারা বিভ্রানত্মি ছড়াতে চাচ্ছে। এটিই বিজয়ের বিরম্নদ্ধে এক ধরনের ষড়যন্ত্র। পুরনো রাজাকারদের যারা সমর্থক, তারা অবশ্যই নও রাজাকার, নও মুসলমান বা নও নাজিদের মতো।
আমরা বাঙালী আদর্শে বিজয়ী, বিজয় দিবস আমাদের। রাজাকাররা ডিসেম্বরে পরাজিত। তারা পরাজিত শক্তি। রাজাকার ও নও রাজাকাররা পরাজয় দিবস পালন করুক, আপত্তি নেই। তাদের আবার বিজয় দিবস কিসের?
আমি তাঁর মন্তব্যের সঙ্গে তখন একমত হইনি। এখনও একমত হব এমন নয়। বিএনপির একজন মহিলা এমপি ফোনে প্রশ্ন করেছিলেন, তা হলে জিয়াকে কেন বীরোত্তম উপাধি দেয়া হয়েছিল, উপসেনাধ্যক্ষ করা হয়েছিল? কামরুল জবাব দিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধু সবাইকে বিশ্বাস করতেন, তাকেও করেছেন, কিন্তু ১৯৭৫-এর পর তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে।
কামরুলের এ মন্তব্য আবার আমার মনে পড়ল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুলের এক মন্তব্যে। তিনি বলেছিলেন, তাদের বিজয় দিবস পালন করতে দিচ্ছে না সরকার। মনে হলো, তিনি কেন বিজয় দিবস পালন করতে চাচ্ছেন? এতে তার লাভটা কী? সরকার তাদের বিজয় দিবস পালন করতে দিচ্ছে না এ কথার সত্যতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থাকা সত্ত্বেও বলছি, আচ্ছা কেন তাদের বিজয় দিবস পালন করতে দিতে হবে?
১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর, শানত্মি কমিটির সদস্য বা অন্য কথায় জামায়াতে ইসলামী বা মুসলিম লীগ ছিল পরাজিত শক্তি। এরা পাকিস্তানী ভাবধারা বা মতাদর্শে ছিল বিশ্বাসী।
বাঙালীরা বিজয়ী হয়েছিলেন, বাঙালী মতাদর্শ জয়ী হয়েছিল।
জিয়াউর রহমান এসে বাঙালীর মতাদর্শের প্রতীক সংবিধান থেকে বাঙালিত্ব ছেঁটে ফেললেন। তিনি পরাজিতদের মুক্ত করে তাদের নিয়ে দল গঠন করলেন বা তাদের সহযোগী শক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করলেন। তার জীবদ্দশায় তিনি পাকিসত্মানী মতাদর্শ যতটা সম্ভব ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট হলেন। বাঙালী মুক্তিযোদ্ধা হলে তিনি এটা কেন করবেন? এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া জরম্নরী।
এ একই মতাদর্শ এগিয়ে নিয়েছেন খালেদা জিয়াও। পরাজিত শক্তিদের তিনি স্থায়ী মিত্র করেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের তিনি ৰমতায় এনেছেন। এটা ভাবতে আমার খুব অবাক লাগে_ যারা সমাজ-রাষ্ট্রে খুনী, ধর্ষক এবং লুটেরা হিসাবে পরিচিত তাদের কিভাবে মন্ত্রী করা যায়? তাদের মতাদর্শ কিভাবে রাষ্ট্রে তুলে ধরা হয়? আমি কি একজন খুনীর সঙ্গে বসবাস করতে পারব? তবে, আমি যদি তাকে খুনী না মনে করি তা হলে বসবাস করতে পারব। বেগম জিয়া যদি তাদের পাকি আমলের মিত্র মনে না করতেন তা হলে এটি কি সম্ভব ছিল!
রাজনৈতিকভাবেও এ ধরনের মৈত্রী সম্ভব নয়। ইউরোপে মূল স্রোতধারায় কোন দল নাজি বা ফ্যাসিস্ট কোন দলের সঙ্গে মৈত্রী করেছে এমন উদাহরণ দেয়া যাবে না। সেখানে এ মতাদর্শ নিষিদ্ধ। কিন্তু অবাক ব্যাপার হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরম্ন হলে বিএনপি এর বিরোধিতা শুরম্ন করে। খালেদা জিয়া, মির্জা ফখরম্নল থেকে শুরম্ন করে বিএনপির সবাই যুদ্ধাপরাধীদের রৰায় আন্দোলনে প্রস্তুত হচ্ছেন। পরাজিত মতাদর্শ, পরাজিত শক্তির সঙ্গে এ ধরনের মৈত্রী তখনই সম্ভব যখন নিজেদেরও কেউ সেই মতাদর্শে বিশ্বাসী মনে করে। শর্মিলা যেমন মর্ষকামী পাকিসত্মানী সৈন্যদের দ্বারা নিপীড়িত হওয়ার বাসনা পোষণ করে, সে কারণে পরপর পাকিসত্মানী ধর্ষক-খুনীদের সাফাই গাইছে, বিএনপি নেতানেত্রীদেরও তাই মনে হয়।
যুদ্ধাপরাধীদের যারা প্রকাশ্যে সমর্থন করে তারাও বাঙালীদের শত্রম্ন। যুদ্ধাপরাধীদের যারা সমর্থন করে তারাও অপরাধী। খুনীকে যদি কেউ প্রশ্রয় দেয় ফৌজদারি আইনে সেও অপরাধী। আর এখানে প্রকাশ্যে খুনী-ধর্ষকদের সমর্থন দেয়া হবে তারা অপরাধী হবে না কেন? বিজয়ের মাসে তারা রাজাকারদের বিজয় গাইবেন এটা কেন মানা হবে? বিএনপিতে মুক্তিযোদ্ধা থাকে কিভাবে? যারা থাকে তারা হলো জিয়া টাইপের মুক্তিযোদ্ধা, কামরম্নলের ভাষায় পাকিসত্মানী এজেন্ট? আমার মনে হয়, মুক্তিযুদ্ধ পদকের অবমাননা করছে তারা এবং এসব পদক ফিরিয়ে নেয়া যৌক্তিক। রাজাকারদের সমর্থকরা কেন বিজয় দিবস পালন করতে চায় তাই বোধগম্য নয়। এর একটা কারণ তারা জানে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ রাজাকারবিরোধী। সুতরাং বিজয়ের মাসে মুক্তিযুদ্ধের কথা না বললে লোকজন রাসত্মাঘাটে তাদের প্রহার করতে পারে। এভাবে তারা বিভ্রানত্মি ছড়াতে চাচ্ছে। এটিই বিজয়ের বিরম্নদ্ধে এক ধরনের ষড়যন্ত্র। পুরনো রাজাকারদের যারা সমর্থক, তারা অবশ্যই নও রাজাকার, নও মুসলমান বা নও নাজিদের মতো।
আমরা বাঙালী আদর্শে বিজয়ী, বিজয় দিবস আমাদের। রাজাকাররা ডিসেম্বরে পরাজিত। তারা পরাজিত শক্তি। রাজাকার ও নও রাজাকাররা পরাজয় দিবস পালন করুক, আপত্তি নেই। তাদের আবার বিজয় দিবস কিসের?
__._,_.___