Enter your message here.
পাকিস্তানের লাহোরে ভেজাল ওষুধ খেয়ে শতাধিক ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছে। গত কয়েকদিনে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। যাঁরা মারা গেছেন তাঁরা সবাই হৃদরোগে ভুগছিলেন। তাঁরা সবাই হৃদরোগের ওষুধ খেয়েছিলেন। ওষুধটি ছিল ভেজাল। আসল তথা পরীক্ষিত ওষুধ নয়। খবরটি দেশী-বিদেশী মিডিয়ায় প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক।
যে রোগে তাঁরা ভুগছিলেন, তারই নিরাময় এবং উপশমের জন্য তাঁরা হৃদরোগের যে ওষুধ খেয়েছিলেন সেটাই তাঁদের হৃদযন্ত্রকে বন্ধ করে দিয়েছে। এটা একদিকে যেমন অত্যন্ত দুঃখজনক তেমনি অন্যদিকে অপর একশ্রেণীর মানুষের লোভ, দায়িত্বজ্ঞানহীনতার নির্লজ্জ প্রকাশও এর মাধ্যমে দেখা যায়। এই মানুষেরা হচ্ছে যারা ওই ওষুধ তৈরি করেছে, খাওয়ার জন্য বলেছে বা দিয়েছে এবং যারা ওই ওষুধ বাজারে বিক্রির জন্য ছেড়েছে তারা সবাই এ জন্য দায়ী।
এটি একটি সমস্যা। সমস্যাটি শুধু পাকিস্তানের নয়। অনেক দেশের সমস্যা এটি। আমাদের দেশেও এটা একটা বড় ধরনের সমস্যা। আমাদের এ সমস্যার কথা অনেকেরই জানা। পাকিস্তানের এই ঘটনা নতুন করে সে সমস্যার কথা মনে করিয়ে দিল এবং তাগিদ দিল এ ব্যাপারে জরুরী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।
পাকিস্তানের এই মৃত্যুর খবর জনকণ্ঠে যেদিন প্রকাশিত হয়েছে সেই একই দিন অর্থাৎ শুক্রবারে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক খবরে জানা গেল আমাদের দেশেও হৃদরোগ সম্পর্কে একটি উদ্বেগজনক রিপোর্ট।
রিপোর্টটি থেকে জানা যায়, এদেশে হৃদরোগীদের ক্ষেত্রে এমন কিছু ওষুধ প্রেসক্রাইব করা হচ্ছে যেগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পুরোপুরি পরীক্ষিত না হয়ে দেশে অবলীলায় চলে এসেছে। কয়েকটি ওষুধ কোম্পানি সেগুলোই তৈরি করে ছাড়ছে বাজারে। জানা যায়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তিন দফা ফেস ট্রায়াল পার হতে হয় কোন ওষুধে। সেগুলো পার হলে তবে বাজারে ছাড়া হয়। দেশের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, আন্তর্জাতিক ফেস ট্রায়াল তিন পর্যায়ে পার হয়নি এমন অন্তত বারো ধরনের হৃদরোগের ওষুধ বাজারে রয়েছে। প্রকাশিত রিপোর্টটি থেকেই জানা যায় এসব তথ্য।
বিষয়টি যে কত বড় বিপজ্জনক এবং ঝুঁকিপূর্ণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই ধরনের ওষুধ যাঁরা খাবেন বা খাচ্ছেন তাঁরা ওষুধের বদলে যে মৃত্যুবটিকাই খাবেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অবিলম্বে বিষয়টি যাচাই ও পরীক্ষা করা উচিত। রোগ উপশমের জন্য মৃত্যুর বড়ি যাতে কোনভাবেই বাজারে না থাকে বা ভবিষ্যতেও বাজারে ঢুকতে না পারে সেটা অত্যন্ত কঠোরভাবে নিশ্চিত করা জরুরী।
আমাদের বাজারে শুধু হৃদরোগের ওষুধই নয়, কত ধরনের নিম্নমানের বড়ি যে রয়েছে তার হিসেবে নেই। নিম্নমানের জিনিস দিয়ে, এমনকি আটাময়দা ইত্যাদি দিয়েও যে ট্যাবলেট বা বড়ি ও অন্যান্য ওষুধ তৈরি হয় এমন রিপোর্ট বিভিন্ন সময়ে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। নিম্নমানের এবং ভেজাল ওষুধ খেয়ে কত রোগী যে রোগের উপশমের বদলে রোগ বাড়িয়েছে বা প্রাণ হারিয়েছে, তা কে বলবে! ভেজাল ওষুধ এবং ইনজেকশন দেয়ার ফলে এদেশে এক সময় কয়েকজন শিশুকে প্রাণ হারাতে হয়েছে।
ওষুধের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। ওষুধ ঠিকমতো উপাদান দিয়ে তৈরি হচ্ছে কিনা, ভেজাল দ্রব্য বা বিষাক্ত কোন দ্রব্য সেখানে ঢুকছে কিনা, প্রতিটি ওষুধ সুনির্দিষ্ট পরীক্ষায় বাজারজাত হচ্ছে কি না সেটা কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে। মানুষের রোগ, ব্যাধি, সুস্থতা-অসুস্থতা নিয়ে কিছু অসাধু ব্যক্তি ছেলেখেলা শুধু নয়, রীতিমতো অপরাধ করে চলবে; এটা মেনে নেয়া যায় না। লাহোরের উল্লেখিত ঘটনা আমাদের কর্তৃপক্ষকে অধিকতর সজাগ ও সতর্ক করে দেবে সেটাই প্রত্যাশিত।