তপন বিশ্বাস ॥ এবার গ্রীষ্ম মৌসুমে সর্বোচ্চ ৬শ' মেগাওয়াট বিদ্যুত ঘাটতি থাকতে পারে। তবে আগামী বছর থেকে দেশে আর বিদ্যুত ঘাটতি থাকবে না বলে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করেছে সরকারের বিদ্যুত বিভাগ। সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে বিদ্যুত খাতের উন্নয়ন কার্যক্রম অবহিত করতে গিয়ে এ তথ্য জানানো হয়। এ ছাড়া মন্ত্রিসভা বিশিষ্ট অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদীর মৃত্যু এবং সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন নাহার রুনির মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভায় জানানো হয়, এবার গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা ধরা হয়েছে ৬ হাজার মেগাওয়াট। এ সময়ে ৫ হাজার ৩শ' থেকে ৫ হাজার ৫শ' মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ৫/৬শ' মেগাওয়াট লোডশেডিং থাকতে পারে। বিগত বছর গ্রীষ্ম মৌসুমে লোড ছিল ১ হাজার ১শ' থেকে এক হাজার ২শ' মেগাওয়াট। এই মৌসুমে নতুন করে ২ হাজার ৯৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে।
মন্ত্রিসভায় জানানো হয়, মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের দিন দেশে মোট বিদ্যুত উৎপাদন হয়েছিল ৩ হাজার ২৬৮ মেগাওয়াট। চলতি বছরে এই উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫শ' মেগাওয়াটে। ২০০৯ সালে মোট উৎপাদন ছিল ৩ হাজার ২৬৮ মেগাওয়াট, ২০১০ সালে ৩ হাজার ৭২০ মেগাওয়াট এবং ২০১১ সালে ছিল ৫ হাজার ৩০ মেগাওয়াট।
২০১২ সালে জাতীয় গ্রিডে নতুন করে ১ হাজার ৯৮৭ মেগাওয়াট বিদ্যুত যুক্ত হওয়ার কথা। সরকারের পরিকল্পনানুযায়ী বিদ্যুত উৎপাদন হলে ২০১৩ সালে নতুন করে যুক্ত হবে ৩ হাজার ৩৩৯ মেগাওয়াট, ২০১৪ সালে যুক্ত হবে ৩ হাজার ২৯৭ মেগাওয়াট, ২০১৫ সালে যুক্ত হবে ২ হাজার ১৮২ মেগাওয়াট এবং ২০১৬ সালে নতুন করে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে ২ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট। সব মিলে ২০১৬ সালে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে ১৩ হাজার ১৫৪ মেগাওয়াট। নতুন যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি বর্তমান সাড়ে ৫ হাজার মেগাওয়াট যুক্ত হয়ে তখন মোট উৎপাদন দাঁড়াবে ১৮ হাজার ৬৫৪ মেগাওয়াট। চাহিদা বেড়ে ২০১৬ সালে দেশে মোট চাহিদা দাঁড়াবে ১১ হাজার ৪০৫ মেগাওয়াটে।
মন্ত্রিসভাকে আরও জানানো হয়, চলতি বছর অর্থাৎ ২০১২ সালে ১ হাজার ৯৮৬ মেগাওয়াট বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলে দেশে আর বিদ্যুত ঘাটতি থাকবে না। সরকারের পরিকল্পনানুযায়ী বিদ্যুত উৎপাদন হলে ২০১৬ সালে চাহিদার চেয়েও ২৩ শতাংশ বিদ্যুত বেশি উৎপাদন হবে। এতে বলা হয়, বিগত তিন বছরে দেশে বিদ্যুতের সঞ্চালন ও ব্যবস্থাপনা ঘাটতি (সিস্টেম লস) ১৩ দশমিক ২২ শতাংশ কমেছে। এতে দেশে বর্তমানে সিস্টেম লসের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ২১ শতাংশে।
সভায় জানানো হয়, দেশে বর্তমানে ৫৬ হাজার প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করা হচ্ছে। আরও প্রায় দুই লাখ প্রিপেইড মিটার সংযোগ দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে এসব প্রিপেইড মিটারের সংযোগ দেয়া সম্ভব হবে।
এ ছাড়া রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত (পাবলিক) সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শি¶কদের অবসরের বয়সসীমা ৬৫ বছর করার একটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে 'পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শি¶ক (অবসর প্রহণ) (বিশেষ বিধান) আইন-২০১২'এর খসড়া উপস্থাপন করা হলে এতে নীতিগত অনুমোদন দিয়ে ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ওই বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান। তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে ৩৪টি সরকার নিয়ন্ত্রিত বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র চারটি (ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম) বিশ্ববিদ্যালয়ের শি¶কদের অবসরের বয়সসীমা ৬৫ বছর। বাকি ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সীমা ৬০ বছর।
এ বৈষম্য দূর করে বিশ্ববিদ্যালয় শি¶কদের চাকরির বয়সে সামঞ্জস্য আনতেই একটি সমšি^ত আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসর নেয়ার বয়স ৬৫ হবে।
আইন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় সংযোজন ও সংশোধন করে মতামতসহ খসড়াটি ফেরত পাঠালে তা মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। এরপর পাস করার জন্য তোলা হবে জাতীয় সংসদে।