Banner Advertiser

Monday, April 23, 2012

[mukto-mona] Fw: [KHABOR] অথ আইএসআই সমাচার - শাহীন রেজা নূর


----- Forwarded Message -----
From: SyedAslam <Syed.Aslam3@gmail.com>
To: Khobor <khabor@yahoogroups.com>
Sent: Monday, April 23, 2012 3:51 PM
Subject: [KHABOR] অথ আইএসআই সমাচার - শাহীন রেজা নূর

 
অথ আইএসআই সমাচার
শাহীন রেজা নূর
পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই যে তাদের হয়ে তৎপরতা চালাবার জন্য বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তিদের অর্থের যোগান দিয়ে থাকে সম্প্রতি এমন একটি বিষয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতে প্রমাণিত এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কারাদ- হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া রাজ্যের ফেয়ার ফ্যাক্সের পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক সৈয়দ গুলাম নবী ফাইকে আইএসআইয়ের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে পাকিস্তানের পক্ষে ওকালতি করার বিষয়টি গোপন করা এবং কর ফাঁকি দেয়ার অভিযোগে ভার্জিনিয়ার একটি আদালত দুই বছরের কারাদ- প্রদান করেছে এবং আরও তিন বছর নজরবন্দী রাখার আদেশ দিয়েছে। ফাই ওয়াশিংটনভিত্তিক কাশ্মীর আমেরিকান কাউন্সিল নামক একটি সংগঠনের কর্তাব্যক্তি। এই সংগঠনটি যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্টের কাজ করে এবং কাশ্মীরীদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে থিঙ্কট্যাক হিসেবে পরিচিত। ভার্জিনিয়ার বিচার বিভাগ এই সংগঠনটির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগে বলে, এটি পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের কাছ থেকে গোপনে অর্থ নিয়ে তাদের কাজকর্ম করে থাকে। ফাই ইতোমধ্যেই ওই গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে কমপক্ষে ৩৫ লাখ মার্কিন ডলার নিয়েছেন। এক বিবৃতিতে মার্কিন আইনজীবী নেইল ম্যাকাব্রইড বলেন, সৈয়দ গুলাম নবী ফাই বিগত ২০ বছর যাবত কাশ্মীরী আমেরিকান কাউন্সিলটিকে আইএসআইয়ের একটি ফ্রন্ট হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। এই সংগঠনের মাধ্যমে কাশ্মীর বিষয়ে আইএসআইয়ের হয়ে যাবতীয় অপপ্রচার চালিয়ে গেছেন তিনি অবলীলায়। আর সেক্ষেত্রে এসব কার্যকলাপের ও অর্থের উৎস বিষয়ে মার্কিন বিচার বিভাগকে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বহু রাজনীতিককে ধোঁকা দিয়েছেন, মিথ্যা বলেছেন।
দ্য এশিয়ান এজ, দ্য হিল ও দ্য হিন্দু পত্রিকায় এ ব্যাপারে চকমপ্রদ সব খবর বেরিয়েছে। এসব প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ব্যুরো বা এফবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসার জবাবে ফাই পাকিস্তানের হয়ে বিদেশী চর হিসেবে কাজ করার কথা প্রথমদিকে বরাবরই অস্বীকার করেন। মার্কিন ফেডারেল কর্তৃপক্ষ জানায়, যেহেতু তিনি পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে অর্থ পেয়ে আসছিলেন সেহেতু তাঁর উচিত ছিল ফরেন এজেন্টস রেজিস্ট্রেশন আইনের আওতায় রেজিস্ট্রেশন নেয়া। এফবিআইয়ের কর্মকর্তা জেমস ম্যাকজুন কিন এক বিবৃতিতে বলেন, লবিংয়ের জন্য পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে অর্থ নেয়ার বিষয়টি মার্কিন সরকারকে জানানো ফাইয়ের কর্তব্য ছিল। এ ধরনের বৈদেশিক সংযোগের তথ্য গোপন করা মার্কিন গণতন্ত্রের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ হুমকি হিসেবে প্রতিপন্ন হতে পারে। অবশেষে ফাই গত ডিসেম্বরেই এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিজ অপরাধ মেনে নেন।
দ্য এশিয়ান এজ পত্রিকায় এ ব্যাপারে 'এক গোয়েন্দার কাহিনী যে কিনা তার স্বার্থকেই বিকিয়ে দিয়েছে' এ শিরোনামে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, ফাইয়ের এই সাজা ভারতের জন্য একধরনের বিজয় আর কাশ্মীরের পূর্ণ স্বাধীনতার দাবিদারদের জন্য এক দারুণ চপেটাঘাত। ফাই ভারতের ও পাকিস্তানের কব্জা থেকে মুক্ত একটি স্বাধীন কাশ্মীর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ধুয়া তুলে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্য এবং সেখানে বসবাসরত উচ্চপদে আসীন কাশ্মীরীদের মধ্যে সুদীর্ঘকাল ধরে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। এক্ষেত্রে মার্কিন কংগ্রেসের অনেক সদস্য এবং কাশ্মীরীদের মন অনেকটা জয় করেছিলেন তিনি। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, গোটা ব্যাপারটিই একটি ফাঁকা বুলি মাত্র অর্থাৎ আইএসআইয়ের অর্থানুকূল্যে তিনি প্রকারান্তরে এ বিষয়ে আইএসআইয়ের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের কাজেই ব্যাপৃত ছিলেন। স্বাধীন কাশ্মীর প্রতিষ্ঠা নয়, বরং এই ধুয়া তুলে গোটা বিষয়টিকে ভারতের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর কৌশল হিসেবেই ব্যবহার করতে চেয়েছেন তিনি। ফাই যে পাকিস্তানী ওই গোয়েন্দা সংস্থার একজন বড় চর এটিই এখন খোলাসা হয়ে গেছে মার্কিন আদালতের চোখে। বিদেশের টাকায় গোপনে এ জাতীয় গুপ্তচরবৃত্তি দ-নীয় অপরাধ আর তাই ফাই এখন দ-প্রাপ্ত আসামি বিশেষ।
কাশ্মীর উপত্যকায় ভারতবিরোধী বিপ্লব-বিদ্রোহের সূচনা ঘটার পর বিগত প্রায় দুই দশকজুুড়ে ফাই যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, সভা-সমিতি আয়োজনের মাধ্যমে কাশ্মীর প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবল সোচ্চার কণ্ঠ ব্যক্তি হয়ে ওঠেন। কাশ্মীরকে স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা প্রদানের দাবিতে তিনি মার্কিন প্রশাসন ও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত কাশ্মীরীদের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন তোলেন। তাঁর এই দাবির প্রতি সমর্থন লাভের জন্য প্রয়োজনে ঘুষ-উপঢৌকন ইত্যাদি প্রদানেও তিনি পিছপা ছিলেন না। মার্কিন প্রশাসনের সর্বত্র ব্যাপক যোগাযোগ থাকার কারণে ফাই প্রায়ই গর্ববোধও করতেন। 'হিন্দু ভারত'-এর কবল থেকে কাশ্মীরী মুসলমানদের মুক্ত করার প্রত্যয় ও অঙ্গীকার ঘোষণার মধ্য দিয়ে প্রকারান্তরে বাহ্যিকভাবে তিনি সকলকে এই ধারণা দিতে সক্ষম হন যে তার এই আন্দোলনটি ফিলিস্তিনীদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। একই সঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীরে সংগ্রামরত সন্ত্রাসবাদী মুজাহেদীনদের মনস্তাত্ত্বি¡ক প্রতিপক্ষ হিসেবেও তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। আসলে এই গোটা প্রক্রিয়াতেই তিনি ছিলেন আইএসআই নিযুক্ত চর। সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরীদের হয়ে তাদের আজাদী লাভের যে ইচ্ছা তার প্রতিভূ হিসেবে ফাই এভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পান। এতে করে তিনি আইএসআইয়ের সঙ্গে তার নিজের সংযোগ বা সম্পৃক্তি ঢেকে রাখার প্রয়াসও পান বৈকি! অন্যদিকে, পাকিস্তান সরকার কাশ্মীরীদের আজাদী সংগ্রামের প্রতিনিধিরূপে ফাইয়ের এই ভূমিকা বা এই ভাবমূর্তি তৈরির মাধ্যমে ভারত ভূমিতে পরিচালিত নানান সন্ত্রাসী কর্মকা-ে বা ভারতে সশস্ত্র বিদ্রোহী তৎপরতায় তাদের সংশ্লিষ্টতা কৌশলে অস্বীকারের সুবিধা পায়। ফাই এবং আইএসআইয়ের এই গোপন কর্মকা-ের ওপর ভিত্তি করেই ক্লিনটন প্রশাসন নব্বই দশকের গোড়ার দিকে কাশ্মীর প্রশ্নে ভারতবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করে। ফাই তখন ওই মার্কিন প্রশাসনের ভারতবিরোধী মনোভঙ্গি সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন নীতিনির্ধারণের ব্যাপারে সম্পৃক্ত সব উচ্চ পদস্থ ব্যক্তির সঙ্গেই তখন ফাইয়ের দারুণ দহরম মহরম ছিল। কাশ্মীরে ভারতীয় 'দখলদারী' অবসানকল্পে ফাই নিজেকে স্বতন্ত্র এবং অসামরিক জিহাদীরূপে সকলের কাছে প্রতিপন্ন করতে পেরেছেন। কিন্তু বাস্তবে তিনি পাশ্চাত্যে কাশ্মীরী মুসলমান পেশাদার ব্যক্তিবর্গকে একত্রিত করে কাশ্মীর উপত্যকার চলমান সহিংস জিহাদকে 'স্বাধীনতা সংগ্রাম' হিসেবে আখ্যায়িত করার মাধ্যমে তাদের ওই জিহাদে শামিল করার কাজটিই করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগে তদন্তের সময় ফাই স্বীকার করেন, তার পরিচালনাধীন কাশ্মীরী আমেরিকান কাউন্সিল আসলে আইএসআইয়ের উর্ধতন সেনা কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে তাদেরই একটি গুপ্ত সংগঠন হিসেবে কাজ করে আসছে। কাশ্মীরের জিহাদী গ্রুপগুলোকে আশ্রয়, প্রশিক্ষণ ও অর্থকড়ি প্রদানের দায়িত্বে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার, জেনারেল ইত্যাদি পদবিধারী ব্যক্তিবর্গ জড়িত আছেন। বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়ায় ভাড়াটে লেখকদের দ্বারা কাশ্মীরের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার এবং কাশ্মীর উপত্যকায় কথিত মানবাধিকার সম্পর্কে প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখিয়ে এবং তা ছাপার বন্দোবস্ত করে জনমত গঠনের কাজও করেছেন ফাই ও তার দোসররা। আর এসবই তাঁরা করেছেন আইএসআইয়ের অর্থ ও পরামর্শ মোতাবেক। কাশ্মীরীদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের দাবি তুলে ফাই ও তাঁর তল্পীবাহকরা যা করেছেন তা আসলে এক ধরনের আইওয়াশ মাত্র। ফাই গ্রেফতার হওয়ার পর তদন্তকারীরা তাঁর সংগঠনের বাজেট তদন্তকালে দেখতে পান, কাশ্মীরে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে জনমত গড়ে তোলার জন্য মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদেরই শুধু নয়, পত্রপত্রিকাগুলোতেও ভারতবিরোধী প্রবন্ধ-নিবদ্ধ লেখানোর জন্য সাংবাদিকদেরও টাকা-পয়সা দেয়া হয়েছে। দূরবর্তী অঞ্চল থেকে যেসব পাকিস্তানী সন্ত্রাসী সংগঠন কাশ্মীর উপত্যকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছে জঈশে মোহাম্মদ ও লস্করে তৈয়্যেবার মতো সংগঠন। অন্যদিকে, ভারত অধিকৃত কাশ্মীরকে আজাদীর নামে পাকিস্তানী ভাবধারায় গড়ে তোলার কাজে ফাইয়ের কেএসি সংগঠন সংগোপনে বহির্বিশ্বের মাটিতে বসে তাদের গোপন দূরভিসন্ধি চরিতার্থ করার জন্য নির্দ্বিধায় কাজ করে গেছে। বিচারকালে ফাই আদালতে স্বীকার করেন যে, তার সংগঠনের এসব তৎপরতা চূড়ান্ত পর্যায়ে কাশ্মীরী স্বার্থকে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এদিকে আবার, আজাদী শিবিরের অধিকাংশ মানুষই এক ধরনের আপোসরফার পক্ষপাতী হওয়ায় ফাই ও তার মুরব্বিদের যাবতীয় দূরভিসন্ধি ভেস্তে যেতে বসেছে। কাশ্মীর উপত্যকার বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ও এর মধ্যপন্থী নেতা বলে পরিচিত যথাক্রমে হুররিয়াত সম্মেলন ও মীর ওয়াইজ ওমর ফারুক উভয়ই আইএসআইয়ের 'সমর্থিত ও নিয়ন্ত্রিত' এমনটাই দাবি করেছেন ফাইয়ের কৌঁসুলি। এতে করে এই হুররিয়াত সম্মেলনের অভ্যন্তরে চরমপন্থী ইসলামী গ্রুপ, যা 'জিলানী উপদল' হিসেবে পরিচিত সেটির সঙ্গে ওই মধ্যপন্থী বা মীর ওয়াইজ ফারুক সমর্থিত ধারার মতপার্থক্য বা বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এদের সকলেই আসলে আইএসআইয়ের ঘেঁটু এবং এরা কেউই প্রকৃত প্রস্তাবে কাশ্মীরী জনগণই ভারত ও পাকিস্তানের কর্তৃত্বমুক্ত একটি স্বাধীন কাশ্মীরের স্বপ্নই দেখে থাকে।
আইএসআই হচ্ছে পাকিস্তানে সরকার অভ্যন্তরের আরেকটি সরকার। আর এর ক্ষমতার হাতও অনেক লম্বা। ফাই আজ আইএসআইয়ের কারণে একেবারেই আকাশ থেকে ভূমিতে আছাড় খেয়ে পড়েছেন। একটি বিষয় বোঝা দুষ্কর যে, পাকিস্তান সরকার এ বিষয়ে ওকালতি করার জন্য স্বতন্ত্র ও বৈধ লবিস্ট ইতোমধ্যেই নিয়োগ করা সত্ত্বেও কেন আবার ফাইয়ের মতো গুপ্ত এজেন্টকে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের এ জাতীয় নিয়োগ দানের প্রয়োজন পড়ল? পাকিস্তানে আইএসআই বেসামরিক ও সামরিক কাঠামোর উর্ধে অবস্থানকারী সর্বাপেক্ষা শক্তিধর সংগঠন। এটি কাশ্মীরের জিহাদ প্রশ্নে নিজের মতবাদ বা কার্যক্রম নিয়ে অন্য কোন সংস্থার সঙ্গে মতবিনিময় করতে রাজি নয়। এ ক্ষেত্রে যে এর নিজস্ব পররাষ্ট্র নীতি ও অভ্যন্তরীণ নীতি রয়েছে তা ফাইয়ের কার্যকলাপ থেকেই স্পষ্ট হলো। আইএসআই সম্পর্কে পাকিস্তানের সুপ্রীমকোর্টে সম্প্রতি এক মামলার শুনানিতে আরও পরিষ্কার হলো যে, নির্বাচনকালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাদের পছন্দসই রাজনৈতিক দলগুলোকে বরাবরই আর্থিক সহায়তা যুগিয়ে আসছে।
যাহোক, দক্ষিণ এশিয়ায় বৈরিতা অবসান না হওয়ার পেছনে ফাই এবং সংগঠনের দ্বারা পরিচালিত কার্যক্রমসমূহও যে কম দায়ী নয় সে তো বলাইবাহুল্য! এর মাধ্যমে আরও প্রমাণিত হলো, পাকিস্তান এখন এমন একটি রাষ্ট্র যা পরিচালিত হয় নিরাপত্তা সংস্থাসমূহের কর্তাদের দ্বারা। দেশটিতে বেসামরিক শাসন একটি বায়বীয় ব্যাপার বা ফানুস বৈ নয়। পাকিস্তানের এ্যাবোটাবাদে আত্মগোপনকারী আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিল লাদেনকে মার্কিন বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা হত্যা করার পর দু'দেশের সম্পর্কে যে খানিক চিড় ধরেছিল তারই জের হিসেবে ফাইয়ের কুড়ি বছরেরও অধিক সময় যাবত পরিচালিত দূরভিসন্ধি ধরা পড়ে যায়। অবশ্য, ভারত তার অপকীর্তি সম্পর্কে বহু নথিপত্র ও প্রমাণপঞ্জি যুক্তরাষ্ট্রকে হস্তান্তর করলেও ফাইকে ধারার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এ্যাবোটাবাদের ঘটনার পর আইএসআই ও পাকিস্তান সরকারের ভূমিকা পর্যালোচনা শেষে এই সিদ্ধান্ত নেয়। ফাইয়ের ঘটনা থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নিশ্চয়ই এই শিক্ষাই গ্রহণ করবে যে, আফগানিস্তান ও কাশ্মীর সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে পাকিস্তানের এই সামরিক-শিল্প কমপ্লেক্সই প্রধান বাধা। তাই রাষ্ট্রবিহীন সংস্থা যেমন আল-কায়েদা বা তালেবানরাই শান্তির প্রতি প্রধানত হুমকিস্বরূপ এই যুক্তি আর মানা যাচ্ছে না। আল-কায়েদা বা তালেবানদের এ ধরনের মূল্যায়নের ফলেই একটি বিষাক্ত ও হিংস্র চক্র গড়ে উঠেছে। যুদ্ধের কৌশলের ক্ষেত্রে শত্রুকে চিহ্নিত করা কিংবা তাকে জানা বা বোঝাই মৌলিক বিষয়। আসলে এ ক্ষেত্রে প্রধান শত্রু কিন্তু ফাই, হাফিজ মুহাম্মদ সাঈদ বা তালেবান নয়। প্রধান শত্রু হচ্ছে এদের প্রভুরা বা এদেরকে যারা চালায় তারা। আর তারা হচ্ছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা এবং একটি সেনাবাহিনী, যারা কিনা 'গণতান্ত্রিক' রাষ্ট্র বলে কথিত পাকিস্তানের সাড়ে ১৭ কোটি মানুষের ওপর সর্বক্ষণই অনানুষ্ঠানিকভাবে ডা-া ঘোরায়।
সম্প্রতি আইএসআইয়ের সাবেক প্রধান লে. জেনারেল আসাদ দুররানী পাকিস্তানের একটি আদালতে প্রধান বিচারপতি ইফতেখারের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের বেঞ্চের সামনে হলফনামার মাধ্যমে যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন মার্কিন আদালতে গুলাম নবী ফাইয়ের শাস্তিপ্রাপ্তির আলোকে তা বিশ্লেষণ করলে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে আইএসআইয়ের ভূমিকা আরও পরিষ্কার হয়ে যায়। বিভিন্ন বিদেশী পত্রিকা (যেমন খালিজ টাইমস, ডেইলি মেইল) তখন দুররানীর হলফনামাভিত্তিক জবানবন্দী উদ্ধৃত করে বলেছিল, আইএসআই পাকিস্তানে নির্বাচনকালে বেনজীর ভুট্টোর দলকে পরাজিত করতে তার প্রতিপক্ষ দলকে অর্থ সাহায্য দিয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের নির্বাচনে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে ৫ কোটি রুপী প্রদানের কথাও উল্লেখ করেছেন বলে ওই সব পত্রিকায় ওই হলফনামার সূত্র ধরে দাবি করা হয়, বাংলাদেশে বেগম জিয়ার দলকে ক্ষমতাসীন করার জন্য এই অর্থ সাহায্য করা হয়েছিল। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে এতদঞ্চলে আইএসআইয়ের এজেন্ডা বাস্তবায়নের সুবিধা হয় এমন কথাও নাকি আসাদ দুররানী তাঁর হলফনামায় উল্লেখ করেন। তার এই বক্তব্য পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর বিএনপি শিবিরে তোলপাড় সৃষ্টি হয় বিএনপি এবং এই বক্তব্য ভিত্তিহীন বলেও দাবি করেছে। পাকিস্তান সরকার অবশ্য এই খবর প্রকাশিত হওয়ার কুড়ি/একুশ দিন পর তা অস্বীকার করে এবং আদালতে প্রদত্ত দুররানীর হলফনামাকে 'ক্লাসিফাইড' ঘোষণা করা হয়। বিষয়টি সম্পর্কে পাকিস্তান সরকার কেন এত দেরিতে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করল এবং কেনইবা ওই হলফনামা বা সাক্ষ্য 'ক্লাসিফাইড' ঘোষণা করা হলো এ নিয়ে উভয় দেশের বিভিন্ন মহলেই ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা চলছে। গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের কাজের ধরন যে একটু ভিন্ন তা তো যে কেউই বোঝে। আর কার্যসিদ্ধির জন্য তারা যেসব কার্যক্রম হাতে নেয় তা সব সময় গোপন রাখাটাই তাদের এই ভিন্ন বিশেষ 'ধরনের' অঙ্গীভূত। সুতরাং, আইএসআই যে বিদেশে চর নিয়োগের মাধ্যমে নিজেদের কার্যসিদ্ধিকল্পে বিস্তর অর্থ কড়ি ব্যয় করে ভার্জিনিয়ার আদালতে গুলাম নবী ফাইয়ের দোষী সাব্যস্ত এবং দ-প্রাপ্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে তা প্রকটিত হলো এবং স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেল। 

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=15&dd=2012-04-24&ni=94158