বিলম্বে হলেও বাংলাদেশ সরকার লন্ডন থেকে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাময়িকী 'দি ইকোনমিস্ট'-এর সাম্প্রতিক দুটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বাংলাদেশবিরোধী লেখার এবং সাময়িকীটির এ জাতীয় ভূমিকার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। এজন্য তাদেরকে ধন্যবাদ। তবে প্রতিবাদলিপিতে আরও তথ্য ও যুক্তি উপস্থাপন করলে ভাল হতো। যাক সন্দেহ নেই যে, ইকোনমিস্টের বাংলাদেশের বর্তমান সরকারবিরোধী এই ভূমিকা পত্রিকাটির জন্য লজ্জাজনক এবং সুনাম ক্ষুণকারী। অবিশ্যি, ১৮৪৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে প্রকাশিত এই পত্রিকাটির বর্তমান কর্ণধাররা গণতন্ত্র, মানবাধিকার, প্রগতিবাদ ইত্যকার বিষয়ে বোধকরি নিজেদের প্রভুদের মনস্তুষ্টি বিধানকল্পে মনগড়া ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ইত্যাদি করে চলেছেন আজকাল। পত্রিকাটি গণতন্ত্র ও প্রগতির ধ্বজাধারী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিলেও বিশ্বের বিভিন্ন সঙ্কট মুহূর্তে একে প্রতিক্রিয়াশীলতার সকল সীমাই পেরিয়ে যেতে দেখা গেছে। ভিয়েতনাম যুদ্ধ, ইরাক বা আফগানিস্তান যুদ্ধে বিপন্ন মানবতা এ পত্রিকার উপজীব্য হয়নি, বরং সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসী ভূমিকার প্রতিই একে জোরালো সমর্থন দিতে দেখা গেছে। পত্রিকাটির দাবি এই যে, তারা মুক্তবাজার বা মুক্তবাণিজ্য, বিশ্বায়ন ও সামাজিক কিছু উদার বিষয়ের সমর্থক। তবে ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রে তাদের সাংবাদিকতার এ নীতিকৌশল সর্বতোভাবে তারা ধরে রাখতে পারছে কিনা তা পত্রিকাটির পাঠকরা ভাল বলতে পারবেন। অবিশ্যি, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের ব্যাপারে তাদের অযাচিত নসিহত কিংবা তীব্র বিষোদ্গার বা অভব্য ও আক্রমণাত্মক সমালোচনা পত্রিকাটির উদ্দেশ্য সম্পর্কে জনমনে নানান প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। বেশ কিছুকাল যাবত অত্যন্ত উদ্বেগ এবং ক্ষোভের সঙ্গে এ দেশের রাজনীতিসচেতন প্রগতিবাদী ও গণতন্ত্রমনা ব্যক্তিবর্গ লক্ষ্য করছেন যে, ইকোনমিস্ট পত্রিকাটি বাংলাদেশের ব্যাপারে অত্যন্ত আপত্তিকর এবং ন্যক্কারজনক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। সম্প্রতি পত্রিকাটি যেন শেখ হাসিনা পরিচালিত সরকারকে উৎখাতের জন্য বিএনপি-জামায়াতের হাতে হাত এবং কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে চলেছে।
সর্বশেষ যে দুটি নিবন্ধ এতে প্রকাশিত হয়েছে তাকে সাংবাদিকতার নীতিমালার পরিপন্থী বললে অত্যুক্তি হয় না নিশ্চয়ই! এর গত ২৬ মে সংখ্যায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বিষয়ে 'বাংলাদেশের বিষাক্ত রাজনীতি : হ্যালো দিল্লী' এবং 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে বিপজ্জনক পথে নিয়ে যাচ্ছেন' শিরোনামে যে দুটি নিবন্ধ ছাপা হয়েছে তা থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় যে, এ নিবন্ধকারদের সঙ্গে বাংলাদেশের বিএনপি-জামায়াতপন্থীদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। কেননা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রতিহত করতে বা একে প্রশ্নবিদ্ধ করতে তথা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বিএনপি-জামায়াতের স্যাঙ্গাতরা নিত্যদিন যে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে ইকোনমিস্টের ঐ দুই নিবন্ধে হুবহু তারই প্রতিধ্বনি শোনা যায়। প্রগতির ধ্বজাধারী এ সাময়িকী এ দেশের যুদ্ধাপরধীদের বাঁচাবার নানান কূটচাল ও ফন্দি-ফিকিরের সারথি হয়েছে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ তাদের প্রবন্ধ ও নিবন্ধের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়। 'বাংলাদেশের বিষাক্ত রাজনীতি : হ্যালো দিল্লী' জাতীয় নিবন্ধ কোন সভ্য দেশের কোন পত্রিকা অপর একটি দেশের নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে লিখতে পারে তাও আবার দেশটির প্রতিবেশী একটি রাষ্ট্রকে জড়িয়ে তা ভাবাই যায় না। আধুনিক গণতন্ত্রের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত ইংল্যান্ডে সংবাদপত্রের বিকাশ লাভ ঘটেছিল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের হাতে হাত রেখে। আজ সেই দেশের সংবাদপত্রের এ মতিভ্রম কারুর দৃষ্টি এড়ায় না নিশ্চয়ই! আসলে সংবাদপত্র সেখানে কর্পোরেট পুঁজির সেবাদাসে পরিণত হয়েছে। কনজারভেটিভই বলি আর লেবার পার্টিই বলি উভয় দলের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ব্যবসাবাণিজ্যিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে সংবাদপত্র হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে সংবাদপত্র তার নীতিআদর্শ সম্পর্কে উচ্চৈঃস্বরে যত বাগাড়ম্বরই করুক না কেন প্রকৃতপক্ষে তার মুখোশটি খসে পড়তে দেরি হয় না। সংবাদপত্র যে বৃহৎ পুঁজির দাসত্ব করার মধ্যেই আজ আত্মোন্নয়নের পথ খুঁজে ফিরছে সে কথা বলাই বাহুল্য। দি ইকোনমিস্টের বাংলাদেশ সরকারবিরোধী ভূমিকা আরও যে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে তা এই যে, আর্থিক বা বাণিজ্যিক গোষ্ঠীর স্বার্থে ভব্যতা-সভ্যতার বা শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধের মাথা খেয়ে অন্য কোন দেশের রাজনীতি বা সরকার সম্পর্কে যা ইচ্ছেতাই করতে তারা পিছপা হবে না। নিছক অর্থাগম বা গোষ্ঠীস্বার্থের পায়রবিই এ ক্ষেত্রে তাদের একমাত্র বিবেচ্য বিষয়! লজ্জা-শরমের কিংবা নীতিআদর্শের বা অন্ততপক্ষে এথিকসের কোন বালাই থাকলে ইকোনমিস্ট নিশ্চয়ই হাসিনা সরকারের এত দুর্নাম-বদনাম গাইতে এবং শেখ হাসিনা সরকার সম্পর্কে ভারতের প্রতি এত নগ্ন আহ্বান জানাতে পারত না। এ কোন্ সাংবাদিকতা যে, একটি ভিন্ দেশী পত্রিকা অপর এক দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এমন গর্হিত অপবাদ এবং হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটায়? এ ধরনের উস্কানিমূলক লেখার মাধ্যমে ইকোনমিস্ট যাদের হীনউদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে মদদ যোগাচ্ছে তাদের শনাক্ত করা এ দেশের সচেতন পাঠককুলের জন্য দুরূহ ব্যাপার নয়। একই সঙ্গে ইকোনমিস্টের দুরভিসন্ধি কিংবা ঐ বাংলাদেশবিরোধী গোষ্ঠীর হয়ে তাদের এ জাতীয় নিবন্ধ প্রকাশনা ক্ষোভের সঞ্চার না করে পারে না।
আমরা অত্যন্ত আশ্চর্যান্বিত হয়ে লক্ষ্য করছি যে, দি ইকোনমিস্ট বেশ কিছুকাল যাবত বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে নানাবিধ মনগড়া অভিযোগ এনে বর্তমান সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এ ক্ষেত্রে বিএনপি ও জামায়াতের কথা-সুর-তাল-লয় আর ইকোনমিস্টের নিবন্ধকারের বক্তব্যের কথা-সুর-তাল-লয়ের মধ্যে কোন ফারাকই নেই। এসব লেখা পড়ে মনে হয় যে, বিএনপি বা জামায়াতের মুখচেনা থিঙ্কট্যাঙ্কের বা ম্যাডামের বক্তৃতা-লেখকদের কেউ এসব লিখে দিয়েছেন আর ইকোনমিস্টের নিজস্ব প্রতিবেদক পরে সেটিকে তার নিজের ভাষায় উপস্থাপন করেছেন। এ সাংবাদিকতাকে যে সৎ সাংবাদিকতা বলা যায় না তা ইংল্যান্ডের ইকোনমিস্ট সাময়িকীর কর্তারা জানে না বা বোঝেন না এমনটি মনে করার কোন কারণই নেই। এটি বিশেষ উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে বিধায় সাংবাদিকতার সততা-সাধুতার কোন পরোয়াই তাঁরা করছেন না এই যা! ইকোনমিস্ট লিখছে যে, 'বাংলাদেশে ১৭ কোটি মুসলমানের দেশ।' এ তথ্য তারা কোত্থেকে আবিষ্কার করল? বাংলাদেশ ১৭০ মিলিয়ন বা ১৭ কোটি দরিদ্র মুসলমানের দেশ এ তথ্যটি তাদের কে সরবরাহ করেছে? এ দেশের সবাই মুসলমান আর সবাই দরিদ্র এত সোজা হিসেব কষার উদ্দেশ্য কি? পত্রিকাটি লিখেছে যে, বাংলাদেশের 'বর্তমান নিকৃষ্ট সরকার' নাকি '১৭ কোটি দরিদ্র মুসলমানকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে।' স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, একটি নির্বাচিত সরকার সম্পর্কে এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য পরিবেশনের অর্থ কি? এ সরকারের কি কোন সাফল্যই নেই? তাছাড়া 'নিকৃষ্টতম'Ñ এই সুপারলেটিভ ডিগ্রী ব্যবহারের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারকে বিশ্বে হেয়প্রতিপন্ন করার এই স্পর্ধা ও অজ্ঞতা প্রদর্শন যে সম্পূর্ণভাবে ইচ্ছাকৃত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তা তো বলাই বাহুল্য! একই সঙ্গে জামায়াত ও বিএনপির ভারতবিদ্বেষের বুলি বা সেই একই ভারতবিরোধী বক্তব্য অত্যন্ত চাতুর্যের সঙ্গে পরিবেশিত হয়েছে এসব নিবন্ধে।
কিছুদিন আগে বাংলাদেশে এক সামরিক অভ্যুত্থানের প্রয়াস আমাদের সেনা কর্মকর্তারা ব্যর্থ করে দেয়। এ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার সঙ্গে মৌলবাদী একটি চক্র জড়িত ছিল এমন তথ্য-প্রমাণ সেনা কর্মকর্তাদের হস্তগত হয়। অথচ এ প্রসঙ্গে নিবন্ধ ফেঁদে দি ইকোনমিস্ট এ বিষয়ে একটি নেতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করে এবং প্রকারান্তরে মৌলবাদী ঐ কুচক্রী মহলের পক্ষে এক ধরনের সাফাই গায়। একটি দেশের নির্বাচিত সরকার উৎখাতের এই চক্রান্তমূলক মৌলবাদী সামরিক অভ্যুত্থান প্রয়াসের প্রতি অতি সূক্ষ্মভাবে সহানুভূতি প্রদর্শন সৎ সাংবাদিকতার নিদর্শন নয়। এর আগেও এই সাময়িকীটি বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি বিদ্বেষপূর্ণ ও আক্রমণাত্মক প্রতিবেদন ছেপেছে।
এ দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে খবর বেরিয়েছে যে, জামায়াতে ইসলামী এবং বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি বাংলাদেশে অনুষ্ঠানরত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বানচালের জন্য আদা জল খেয়ে লেগেছে এবং এ উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে আইনজীবী ফার্ম নিয়োগ করেছে তারা। তাছাড়াও বিদেশী প্রচার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নানান বিভ্রান্তিমূলক খবর ও প্রতিবেদন প্রকাশের জন্যও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করছে, এরই অংশ হিসেবে দি ইকোনমিস্ট বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াতের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি তুলছে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। যুদ্ধাপরাধের মতো এত জঘন্য অপরাধের ব্যাপারে দি ইকোনমিস্টের সূক্ষ্ম পক্ষপাতিত্ব এবং বর্তমান সরকারবিরোধী প্রতিবেদনের ধরন এ ধারণাকেই সুপ্রতিষ্ঠিত করে যে, তারা বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষাবলম্বনকারী প্রতিক্রিয়াশীল ধারার রাজনীতি এ দেশে পুনরায় ফিরিয়ে আনার সহযোগী হিসেবে কাজ করছে।
একটি বিষয় অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বোঝা দরকার যে, ইকোনমিস্টের এই আচরণ সর্বতোভাবে কূটনৈতিক শিষ্টাচারের সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতকে হস্তক্ষেপ করতে বলার মতো শিষ্টাচারবহির্ভূত এমন আহ্বান অন্য কোন দেশের পত্রিকা করে কি করে? ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাক এমন উস্কানিমূলক আবেদন-অনুরোধ বা উপরোধ ঐ প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করার উদ্দেশ্য কি? বাংলাদেশের ঘরোয়া ব্যাপারে ভারত হস্তক্ষেপ করতে পারে তাদের এমন অনুমানের ভিত্তিই বা কি? এসব কি বাংলাদেশে ভারতবিরোধী ভাবাবেগ তৈরির অপকৌশল মাত্র নয়? আর এ ধরনের নিবন্ধ রচনা করে তারা যে বাংলাদেশের ভারতবিরোধী রাজনৈতিক সংগঠনসমূহকে বিশেষভাবে চাঙ্গা করতে চাইছে তা নিশ্চয়ই কাউকে বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন পড়ে না। সুতরাং তাদের এসব কার্যকলাপদৃষ্টে স্বভাবতই জনমনে প্রশ্ন জাগে যে, ইকোনমিস্ট কার হয়ে এসব নিবন্ধ ফাঁদছে বা এ দেশে কাদের উদ্দেশ্য সাধন করছে? বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে জামায়াত ও বিএনপির বক্তব্যের হুবহু প্রতিধ্বনি তুলে দি ইকোনমিস্ট কি প্রকৃত প্রস্তাবে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশবিরোধী তথা অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চেতনার বাংলাদেশ রাষ্ট্রটিকে পাকিস্তানী ভাবধারার প্রতিক্রিয়াশীল রাষ্ট্রে পুনরায় পরিণত করার ব্যাপারে ইন্ধন যোগাচ্ছে না? বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে এবং চলমান যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রক্রিয়াকে নস্যাত করতে যারা উঠেপড়ে লেগেছে তাদের হয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোই ইকোনমিস্টের উদ্দেশ্যÑ এমনটাই এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাস্নাত মানুষরা মনে করে। কাদের স্বার্থ টিকিয়ে রাখতে শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ইকোনমিস্টের এই উপর্যুপরি আক্রমণ?
সত্যি বলতে অসৎ কোন উদ্দেশ্য বা মতলব চরিতার্থ করতে গেলে দৃষ্টির বিভ্রম সৃষ্টি হতে বাধ্য আর সে ক্ষেত্রে কোন যুক্তি ন্যায়নীতি ইত্যাদি তখন গৌণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে উদ্দেশ্যসাধনের নিমিত্ত অযৌক্তিক বক্তব্য ও মিথ্যাচার ছাড়া উপায় থাকে না। তাই ইকোনমিস্ট বর্তমান সরকারের ছোট ছোট ব্যর্থতাগুলোকে বিরাট করে দেখাতে গিয়ে সরকারের বড় সাফল্যগুলো তাদের নজরেই পড়ছে না। বাংলাদেশ যে মৌলবাদী ও সন্ত্রাসবাদীদের কবল থেকে এ সরকারের তেজীয়ান ভূমিকার কারণে ইতোমধ্যে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে এ সত্যটি ইকোনমিস্টের চোখেই পড়েনি। বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট ক্ষমতায় থাকাকালে মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদ এখানে যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল এবং রক্তের হোলিখেলায় মেতে উঠতে বেপরোয়া ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল সেই ঘোরতর অমানিশা থেকে বাংলাদেশকে শেখ হাসিনা অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে বের করে এনে এ ক্ষেত্রে দেশটিকে যে সেদিনের তুলনায় অপেক্ষাকৃত অনেক শান্তি ও নিরাপত্তাময় দেশে রূপান্তরিত করেছেন এ বিষয়টি বোধগম্য কারণেই ইকোনমিস্টের দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। প্রশ্নটি হচ্ছে ইকোনমিস্ট কি বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক প্রগতিবাদী গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে দেখতে চায়, নাকি একে মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদের চারণক্ষেত্ররূপে দেখতে চায়?
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে একটি 'পারফেক্ট' সরকার বলা যাবে না নিশ্চয়ই! সত্যি বটে, বিভিন্ন ক্ষেত্রেই এ সরকারের আরও অনেক ভাল কাজ করা উচিত ছিল। বাংলাদেশের মানুষ তা জানে এবং তা বোঝেও। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত বা ইকোনমিস্ট কারুরই কোন নসিহত করার প্রয়োজন পড়ে না। উদারহণস্বরূপ বলা যেতে পারে যে, দুর্নীতি উচ্ছেদ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি সাধন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির রাস টেনে ধরা এবং দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে আরও কিছু করা এ সরকারের পক্ষে খুব একটি কঠিন কাজ ছিল না। এগুলো অনায়াসেই অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব ছিল। কিন্তু এ সরকার তা করেনি। আর তা না করে জনগণের দারুণ বিরক্তি উৎপাদন করছে। এতএব, এজন্য এ দেশের মানুষকেই সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে বৈকি! বাংলাদেশের ওপর বিদেশী কোন রাষ্ট্রকে চাপ সৃষ্টি করার জন্য ইকোনমিস্ট যে ওকালতি করেছে তা এ ব্যাপারে কখনই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এ দেশটির ভবিষ্যত বাংলাদেশের মানুষই নির্ধারণ করবে, কোন বিদেশী শক্তি বা মিডিয়া নয় নিশ্চয়ই!
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট