৩ ডিসেম্বর ১৯৭১। মণিপুরের কৈলাশহর থেকে গভীর রাতে একটা অটার বিমান উড়ে গেল। গন্তব্য চট্টগ্রামের পতেঙ্গা। উদ্দেশ্য, পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারির তেল ডিপো ধ্বংস করে দেওয়া। কিছুক্ষণ পর আগরতলার তেলিয়ামুড়া থেকে উড়ে গেল একটি এলুয়েট হেলিকপ্টার। গন্তব্য নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল তেলের ডিপো। উদ্দেশ্য একই, গোদনাইল তেল ডিপো ধ্বংস।
তেলের ...ডিপো দুটিতে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি মজুদ থাকে। পাকিস্তানি বাহিনীর স্থল, নৌ আর আকাশযানগুলোর জ্বালানি সরবরাহ হয় এসব ডিপো থেকে। ডিপো দুটি ধ্বংস হলে তাদের জ্বালানিসংকট দেখা দেবে। এই তেলের ডিপো দুটি স্থলভাগের সেক্টর গেরিলারা ধ্বংস করার পরিকল্পনা করলেও কড়া নিরাপত্তার জন্য তা সম্ভব হয়নি।
পাকিস্তান বিমান বাহিনী ত্যাগ করে আসা বাঙ্গালী অফিসার, ক্যাডেট ও বিমানসেনারা সেপ্টেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত স্থলযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মোট প্রায় ৩৫ জন অফিসার ও ক্যাডেট এবং প্রায় ৫০০ বিমানসেনা পাকিস্তান পক্ষ ত্যাগ করেমুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। এইসব বিমান বাহিনীর সদস্যরা যদিও স্থলযুদ্ধে খুবই বিরোচিত ভুমিকা রাখছিলেন তবুও তাদের মধ্যে একটি স্বাধীন বিমান বাহিনী গঠনের চেতনা খুব প্রবল ভাবে কাজ করছিল। এই চেতনা নিয়েই কিছু সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধাপাইলট ভারতীয় বিমান বাহিনী, ভারতীয় সরকার এবং বাংলাদেশ ফোর্সেস (বিডি এফ) এর সাথে বিভিন্ন রকমের আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
১৯৭১ এর সেপ্টেম্বর এর মাঝামাঝি ভারত সরকার অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারকে একটি স্বাধীন বিমান বাহিনী গঠনের জন্য আমেরিকায় তৈরী ১টি পুরানো ডিসি-৩ বিমান, কানাডার তৈরী ১টি অটার বিমান এবং ফ্রান্সের তৈরী ১টি এ্যালুয়েট-৩ হেলিকপ্টার দেয়। এর সাথে ভারতের নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে একটি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরিত্যক্ত রানওয়ে ব্যবহারের অনুমতি দেয়। এই সীমিত সম্পদ নিয়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়। বিমান বাহিনী প্রধান হিসাবে মুক্তিযুদ্ধের উপ-প্রধান গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকারকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
সশস্ত্র বিমান বাহিনী গঠনে গোপনীয়তা রক্ষার্থে এর গুপ্ত নাম হয় 'কিলো ফ্লাইট'। 'কিলো ফ্লাইটের' অস্তিত্ব বিডি এফ এবং গোটা কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছাড়া আর কেউ জানতেন না। কিলো ফ্লাইটে বিমান বাহিনীর পাইলটদের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন পি আই এ এবং প্লান্ট প্রটেকশনের পাইলট এসে যোগ দেন। বিভিন্ন সেক্টর হতে যুদ্ধরত মোট ৫৮ জন বিমানসেনাকে এই ফ্লাইটে নিয়ে আসা হয়। এই ফ্লাইটের নেতৃত্বের দায়িত্ব দেয়া হয় স্কোঃ লীঃ সুলতান মাহমুদকে।
এই সব অত্যুৎসাহী বিমান বাহিনী সদস্যদের সমন্বয়ে ১৯৭১ এর ২৮ সেপ্টেম্বর সশস্ত্র বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর উদ্ধোধন হয়। শুরু হয় কঠোর প্রশিক্ষণ। এই ফ্লাইট, ঢাকা, চট্টগ্রাম, লালমনিরহাট এলাকায় মোট ৫০টি অভিযান সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনা করে। এদের মধ্যে মোগলহাটে (১৫ অক্টোবর ৭১), লালমনিরহাট ও ঠাকুরগাঁয়ে (১৬ অক্টোবর ৭১), চৌগাছায় (২১ নভেম্বর ৭১), গোদনাইল ও পতেঙ্গায় (৩ ডিসেম্বর ৭১), সিলেটে (৪ ডিসেম্বর ৭১), জামালপুরে (৫ ডিসেম্বর ৭১), মেঘনা নদীতে (৬ ডিসেম্বর ৭১), সিলেটে (৭ ডিসেম্বর ৭১) এবং নরসিংদীতে (১১ ডিসেম্বর ৭১) বিমান হামলা বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
কানাডার তৈরি অটার বিমানটি বেসামরিক কাজে ব্যবহার হতো। রকেট পড লাগিয়ে এটিকে যুদ্ধের উপযোগী করা হয়েছে। ১৪টি রকেট ব্যবহার করা যায়। পেছনের দরজা খুলে লাগানো হয়েছে মেশিনগান। বিমানের মেঝের পাটাতন খুলে ফিট করা হয়েছে ২৫ পাউন্ডের ১০টি বোমা। বোমাগুলো স্বয়ংক্রিয় ছিল না, হাত দিয়ে পিন খুলে নিক্ষেপ করতে হতো। অটারের গতি ছিল ঘণ্টায় ৮০ মাইল।
এলুয়েট হেলিকপ্টারটি ছোট আকৃতির। ফ্রান্সের তৈরি। ভারত থেকে পাওয়া। আগে বেসামরিক কাজে ব্যবহার করা হতো। হেলিকপ্টার থেকে ১৪টি রকেট ছোড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেশিনগানও লাগানো হয়েছে। ২৫ পাউন্ড ওজনের বোমা ফেলার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। খুব নিচু দিয়ে উড়তে হয়, তাই আর্মার প্রোটেকশনের জন্য এর তলদেশে এক ইঞ্চি পুরু স্টিল প্লেট লাগিয়ে একেও যুদ্ধের উপযোগী করা হয়েছে।
তেল ডিপোগুলো ধ্বংসের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কিলো ফ্লাইটকে। অটারের আরোহী ক্যাপ্টেন শরফুদ্দিন, ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট শামসুল আলম। অটার কৈলাশহর থেকে দক্ষিণ-পূর্বে উড়ে বঙ্গোপসাগরে এসে সমুদ্র ধরে চট্টগ্রাম পৌঁছে যায়। ইস্টার্ন রিফাইনারিতে তাদের রকেট আক্রমণ শুরু করে। জ্বলে ওঠে ট্যাংকারগুলো আর বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে একের পর এক।
প্রায় একই সময়ে এলুয়েট পৌঁছে যায় নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলে। এলুয়েটটি পরিচালনা করছেন কিলো ফ্লাইটের কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার সুলতান মাহমুদ, ক্যাপ্টেন সাহাব উদ্দিন ও ফ্লাইং অফিসার বদরুল আলম। তাঁরা তেলিয়ামুরা থেকে উড়ে ইলিয়টগঞ্জ হয়ে ঢাকা-কুমিল্লা মহাসড়ক ধরে ডেমরা পৌঁছায়। তারপর দক্ষিণে মোড় নিয়ে সোজা গোদনাইল। লক্ষ্যস্থলে পৌঁছেই তেলের ট্যাংকারের ওপর বোমা নিক্ষেপ করে। মুহূর্তের মধ্যেই ট্যাংকারগুলো বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়ে আগুনের লেলিহান শিখা আকাশ গ্রাস করে ফেলে। পাকিস্তান বাহিনী কিছু বুঝে ওঠার আগেই অটার আর এলুয়েট মিশন শেষ করে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পৌঁছে যায়।
কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই স্কোয়াড্রন লিডার সুলতান মাহমুদের কিলো ফ্লাইট আরেকটি সফল মিশন শেষ করল।
=========
ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন কিলো-ফ্লাইটের গর্বিত কয়েকজন সৈনিককে।
=========
তেলের ...ডিপো দুটিতে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি মজুদ থাকে। পাকিস্তানি বাহিনীর স্থল, নৌ আর আকাশযানগুলোর জ্বালানি সরবরাহ হয় এসব ডিপো থেকে। ডিপো দুটি ধ্বংস হলে তাদের জ্বালানিসংকট দেখা দেবে। এই তেলের ডিপো দুটি স্থলভাগের সেক্টর গেরিলারা ধ্বংস করার পরিকল্পনা করলেও কড়া নিরাপত্তার জন্য তা সম্ভব হয়নি।
পাকিস্তান বিমান বাহিনী ত্যাগ করে আসা বাঙ্গালী অফিসার, ক্যাডেট ও বিমানসেনারা সেপ্টেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত স্থলযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মোট প্রায় ৩৫ জন অফিসার ও ক্যাডেট এবং প্রায় ৫০০ বিমানসেনা পাকিস্তান পক্ষ ত্যাগ করেমুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। এইসব বিমান বাহিনীর সদস্যরা যদিও স্থলযুদ্ধে খুবই বিরোচিত ভুমিকা রাখছিলেন তবুও তাদের মধ্যে একটি স্বাধীন বিমান বাহিনী গঠনের চেতনা খুব প্রবল ভাবে কাজ করছিল। এই চেতনা নিয়েই কিছু সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধাপাইলট ভারতীয় বিমান বাহিনী, ভারতীয় সরকার এবং বাংলাদেশ ফোর্সেস (বিডি এফ) এর সাথে বিভিন্ন রকমের আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
১৯৭১ এর সেপ্টেম্বর এর মাঝামাঝি ভারত সরকার অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারকে একটি স্বাধীন বিমান বাহিনী গঠনের জন্য আমেরিকায় তৈরী ১টি পুরানো ডিসি-৩ বিমান, কানাডার তৈরী ১টি অটার বিমান এবং ফ্রান্সের তৈরী ১টি এ্যালুয়েট-৩ হেলিকপ্টার দেয়। এর সাথে ভারতের নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে একটি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরিত্যক্ত রানওয়ে ব্যবহারের অনুমতি দেয়। এই সীমিত সম্পদ নিয়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়। বিমান বাহিনী প্রধান হিসাবে মুক্তিযুদ্ধের উপ-প্রধান গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকারকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
সশস্ত্র বিমান বাহিনী গঠনে গোপনীয়তা রক্ষার্থে এর গুপ্ত নাম হয় 'কিলো ফ্লাইট'। 'কিলো ফ্লাইটের' অস্তিত্ব বিডি এফ এবং গোটা কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছাড়া আর কেউ জানতেন না। কিলো ফ্লাইটে বিমান বাহিনীর পাইলটদের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন পি আই এ এবং প্লান্ট প্রটেকশনের পাইলট এসে যোগ দেন। বিভিন্ন সেক্টর হতে যুদ্ধরত মোট ৫৮ জন বিমানসেনাকে এই ফ্লাইটে নিয়ে আসা হয়। এই ফ্লাইটের নেতৃত্বের দায়িত্ব দেয়া হয় স্কোঃ লীঃ সুলতান মাহমুদকে।
এই সব অত্যুৎসাহী বিমান বাহিনী সদস্যদের সমন্বয়ে ১৯৭১ এর ২৮ সেপ্টেম্বর সশস্ত্র বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর উদ্ধোধন হয়। শুরু হয় কঠোর প্রশিক্ষণ। এই ফ্লাইট, ঢাকা, চট্টগ্রাম, লালমনিরহাট এলাকায় মোট ৫০টি অভিযান সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনা করে। এদের মধ্যে মোগলহাটে (১৫ অক্টোবর ৭১), লালমনিরহাট ও ঠাকুরগাঁয়ে (১৬ অক্টোবর ৭১), চৌগাছায় (২১ নভেম্বর ৭১), গোদনাইল ও পতেঙ্গায় (৩ ডিসেম্বর ৭১), সিলেটে (৪ ডিসেম্বর ৭১), জামালপুরে (৫ ডিসেম্বর ৭১), মেঘনা নদীতে (৬ ডিসেম্বর ৭১), সিলেটে (৭ ডিসেম্বর ৭১) এবং নরসিংদীতে (১১ ডিসেম্বর ৭১) বিমান হামলা বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
কানাডার তৈরি অটার বিমানটি বেসামরিক কাজে ব্যবহার হতো। রকেট পড লাগিয়ে এটিকে যুদ্ধের উপযোগী করা হয়েছে। ১৪টি রকেট ব্যবহার করা যায়। পেছনের দরজা খুলে লাগানো হয়েছে মেশিনগান। বিমানের মেঝের পাটাতন খুলে ফিট করা হয়েছে ২৫ পাউন্ডের ১০টি বোমা। বোমাগুলো স্বয়ংক্রিয় ছিল না, হাত দিয়ে পিন খুলে নিক্ষেপ করতে হতো। অটারের গতি ছিল ঘণ্টায় ৮০ মাইল।
এলুয়েট হেলিকপ্টারটি ছোট আকৃতির। ফ্রান্সের তৈরি। ভারত থেকে পাওয়া। আগে বেসামরিক কাজে ব্যবহার করা হতো। হেলিকপ্টার থেকে ১৪টি রকেট ছোড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেশিনগানও লাগানো হয়েছে। ২৫ পাউন্ড ওজনের বোমা ফেলার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। খুব নিচু দিয়ে উড়তে হয়, তাই আর্মার প্রোটেকশনের জন্য এর তলদেশে এক ইঞ্চি পুরু স্টিল প্লেট লাগিয়ে একেও যুদ্ধের উপযোগী করা হয়েছে।
তেল ডিপোগুলো ধ্বংসের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কিলো ফ্লাইটকে। অটারের আরোহী ক্যাপ্টেন শরফুদ্দিন, ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট শামসুল আলম। অটার কৈলাশহর থেকে দক্ষিণ-পূর্বে উড়ে বঙ্গোপসাগরে এসে সমুদ্র ধরে চট্টগ্রাম পৌঁছে যায়। ইস্টার্ন রিফাইনারিতে তাদের রকেট আক্রমণ শুরু করে। জ্বলে ওঠে ট্যাংকারগুলো আর বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে একের পর এক।
প্রায় একই সময়ে এলুয়েট পৌঁছে যায় নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলে। এলুয়েটটি পরিচালনা করছেন কিলো ফ্লাইটের কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার সুলতান মাহমুদ, ক্যাপ্টেন সাহাব উদ্দিন ও ফ্লাইং অফিসার বদরুল আলম। তাঁরা তেলিয়ামুরা থেকে উড়ে ইলিয়টগঞ্জ হয়ে ঢাকা-কুমিল্লা মহাসড়ক ধরে ডেমরা পৌঁছায়। তারপর দক্ষিণে মোড় নিয়ে সোজা গোদনাইল। লক্ষ্যস্থলে পৌঁছেই তেলের ট্যাংকারের ওপর বোমা নিক্ষেপ করে। মুহূর্তের মধ্যেই ট্যাংকারগুলো বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়ে আগুনের লেলিহান শিখা আকাশ গ্রাস করে ফেলে। পাকিস্তান বাহিনী কিছু বুঝে ওঠার আগেই অটার আর এলুয়েট মিশন শেষ করে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পৌঁছে যায়।
কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই স্কোয়াড্রন লিডার সুলতান মাহমুদের কিলো ফ্লাইট আরেকটি সফল মিশন শেষ করল।
=========
ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন কিলো-ফ্লাইটের গর্বিত কয়েকজন সৈনিককে।
=========
__._,_.___