2012/10/3 Mohiuddin Anwar <mohiuddin@netzero.net>
বিদেশের চর বলে সন্দেহ গোয়েন্দাদের : কে এই বৌদ্ধ যুবক উত্তম কুমার বড়ুয়া
আনছার হোসেন, কক্সবাজারউত্তম কুমার বড়ুয়া! ৫ দিন আগেও তাকে বলতে গেলে কেউ চিনতেন না। সেই উত্তম বড়ুয়াকে এখন হাড়ে হাড়েই চিনছেন কক্সবাজার জেলাবাসী। দেশব্যাপীও কুখ্যাতি পেয়েছে সে। এই যুবকটির জন্যই কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকা এখন উত্তাল। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আছেন লজ্জা আর ভয়ে। তার অপকর্মের কারণে দীর্ঘকালের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হওয়ার পথে। রামু উপজেলার হাজার বছরের সম্প্রীতির ঐতিহ্য নিমিষেই হারিয়ে গিয়ে মুসলমান আর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে অবিশ্বাস। এই যুবক এখন পুরো বাংলাদেশের 'খলনায়ক'!
কেন কুখ্যাত হলো উত্তম বড়ুয়া : মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ 'কোরআনের ওপর মহিলার দুই পা' দেয়া একটি ছবি তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ট্যাগ করে কোনো এক ফেসবুক বন্ধু। 'ইনসাল্ট আল্লাহ' নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ট্যাগ করা ছবিটি উত্তম বড়ুয়া 'লাইক' দিয়ে তার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করে। এতে মুহূর্তেই কোরআনের অবমাননাকর ছবিটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ইন্টারনেটে। ফেসবুকে উত্তম বড়ুয়ার রামু এলাকার বন্ধুরা ছবি দেখে এবং ছবিটির পোস্টকারী হিসেবে উত্তম কুমারের নাম দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়।
২৯ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে ফেসবুকের সেই ছবিটি প্রিন্টআউট করে রামু উপজেলা মত্স্যজীবী লীগের সভাপতি আনছারুল হক ভুট্টোর নেতৃত্বে প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। ওই মিছিলটিই ক্ষণে ক্ষণে বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে মিছিলকারীর সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়ে যায়। রাত সাড়ে ১১টার উত্তেজিত জনতা ঢুকে পড়ে রামু সদরের কাছের এলাকা বৌদ্ধ বসতি 'বড়ুয়াপাড়া'য়। ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত কিশোর যুবকরা বৌদ্ধ বসতি ও বৌদ্ধ বিহারে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং হামলা ও ভাংচুর চালায়। আগুনে পুড়ে যায় ১২টি বৌদ্ধবিহার এবং ২৮টি বসতবাড়ি ও দোকান। পুড়িয়ে দেয়া হয় উত্তম কুমার বড়ুয়ার বাড়িটিও। হামলাকারীদের লুটপাটের শিকার হয় আরও ৬টি বৌদ্ধবিহার ও শতাধিক বৌদ্ধ বসতবাড়ি।
কে এই উত্তম বড়ুয়া : উত্তম বড়ুয়া (৩২) কক্সবাজার সদরের কাছের উপজেলা রামু সদরের চেরাংঘাটা এলাকার মৃত সুদত্ত বড়ুয়ার ছেলে। দীর্ঘদিন আগে তার বাবা মারা যান। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের এই ছেলে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা করলেও কাজ করতো দলিল লেখকের সহকারী হিসেবে। সে রামু উপজেলা আদালতের সুবল মুন্সির (দলিল লেখক) অধীনে কাজ করতো। রামু চৌমুহনী এলাকার প্যারাগন মার্কেটের দোতলায় তাদের কম্পিউটারের দোকান। উত্তম বড়ুয়ার পরিবারে মা ও ভাই বোনসহ ৪ জন। ওই ঘটনার পর মা মাধুরী বড়ুয়া ও এক বোনকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছেন। শনিবার থেকে উত্তম কুমার বড়ুয়া পলাতক রয়েছে। সহিংস ঘটনার পর পুলিশ উত্তম কুমার বড়ুয়ার কম্পিউটারটি জব্দ করেছে।
ফেসবুকে কর্মকাণ্ড : রামু চৌমুহনীর প্যারাগন মার্কেটের দোতলায় কম্পিউটার দোকানে বসেই উত্তম বড়ুয়া ফেসবুকে তার বন্ধুদের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করত। অ্যাকাউন্ট থেকে জানা যায় তার ফেসবুক বন্ধু রয়েছে সহস্রাধিক। তাদের বেশিরভাগই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। বন্ধুদের অর্ধেকের বেশি ফেসবুক আইডি দেশের বাইরের।
একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, উত্তম বড়ুয়ার ফেসবুক থেকে পাওয়া যায় ৫০টিরও বেশি ইসলাম ধর্মের অবমাননাকর ছবি। প্রায় প্রতিটি ছবিই ইসলাম ধর্মের প্রতি চরম অবমাননাকর। এসব ছবি এসেছে দেশের বাইরে থেকে। সূত্র মতে, ছবিগুলো রামু এলাকায় তার মাধ্যমেই মোবাইলে মোবাইলে ছড়িয়ে পড়েছে।
উত্তম বড়ুয়া এখন কোথায় : ২৯ সেপ্টেম্বর রাতের সহিংসতার আগ পর্যন্ত উত্তম বড়ুয়া রামুতেই ছিল। সহিংসতার পর থেকে সে পলাতক। তবে সে গুম কিংবা পুলিশ হেফাজতে নেই বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে। সে এখন কোথায় জানেন না দাবি করেছেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতা নীতিশ বড়ুয়া।
সহকারী পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) ফারুক আহমদ জানান, উত্তম কুমারকে আসামি করে রামু থানায় একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ চেষ্টা করছে তাকে ধরার। তিনি জানান, যে কোনো উপায়ে উত্তম কুমারকে ধরা হবে। নিরাপত্তা হেফাজতে আনা তার মা মাধুরী বড়ুয়া ও তার বোনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
বিদেশের চর সন্দেহ গোয়েন্দাদের : পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা মনে করেন, বিদেশি কোনো চক্র উত্তম বড়ুয়াকে টার্গেট করে রামুর দীর্ঘকালের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধ্বংসের জন্য এ কাজ করিয়েছে। এই ষড়যন্ত্র একদিনে হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একাধিক ব্যক্তি জানান, উত্তম বড়ুয়াকে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন তেমন চিনতেন না। উত্তম রামুর বৌদ্ধ সমাজে পরিচিত যুবকও নয়। তার বাবা ছিলেন স'মিল শ্রমিক। উত্তম তার পরিবারের দায়িত্ব নেয়ার মতোও কেউ নয়। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সাধারণ লোকজন এই ঘটনার আগে উত্তম বড়ুয়াকে তেমনভাবে চিনতেনই না। তাই সে কোনো ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিনা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কোনো পক্ষই নিশ্চিত নন।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আহমদ হোসাইন বলেন, 'উত্তম বড়ুয়াকে গ্রেফতার করে কোরআন অবমাননার রহস্য উন্মোচন করতে হবে।' তিনি বলেন, উত্তম কুমার যে অপকর্ম করেছে তা মেনে নেয়া যায় না। শুধু মুসলমান নয়, যে কোনো ধর্মের মানুষই এটার প্রতিবাদ না করে পারবেন না।
উত্তম বড়ুয়ার বিরুদ্ধে মামলা : রামু থানার সদ্য প্রত্যাহার হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একে নজিবুল ইসলাম বাদী হয়ে উত্তম কুমার বড়ুয়াকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। এ মামলায় অজ্ঞাত আরও ৩০ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার বাদী আর্জিতে উল্লেখ করেছেন, '২৯ সেপ্টেম্বর রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে জনৈক যুবকের কথায় জানতে পারেন উত্তম বড়ুয়া ফেসবুকে পবিত্র কোরআনের দুটি পৃষ্ঠায় একজন মহিলার দুই পায়ের ছবি ও কোরআনের একটি ছেঁড়া পৃষ্ঠা টয়লেট পেপার হিসেবে ব্যবহার করার ছবি পোস্ট করেছে। এতে মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। বিষয়টি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হিসেবে লিপিবদ্ধ করে 'ফারুক স্টোর' নামে কম্পিউটারের দোকানে যান। সেখানে লোকজন ছবিটি দেখছেন। তিনি ছবি দুটি দেখে কম্পিউটারটি জব্দ করেন।' পুলিশ কর্মকর্তা ফারুক আহমদ জানান, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে উত্তম বড়ুয়ার নামে মামলা করা হয়েছে।
____________________________________________________________
53 Year Old Mom Looks 33
The Stunning Results of Her Wrinkle Trick Has Botox Doctors Worried
consumerproducts.com
__._,_.___