বৌদ্ধ বিহারে হামলার ঘটনায় সরকারকে জড়িয়ে বক্তব্য দেয়ায় বিরোধীদলীয় নেতার সমালোচনায় প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা, ১১ অক্টোবর (বিডিএনএন২৪) :- রামুতে বৌদ্ধ বিহারে হামলার ঘটনার পরদিন সরকারকে জড়িয়ে বক্তব্য দেয়ায় বিরোধীদলীয় নেতার সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার গণভবনে রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, মিথ্যা বলায় তার পারদর্শিতা আছে। ফেইসবুকে কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ মন্দির ও ঘরবাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর চালায় ধর্মীয় উগ্রপন্থীরা। পরদিন এক বিবৃতিতে খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, বিক্ষুব্ধ জনতার নামে পরিচালিত ওই হামলায় সরকারি দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরাই নেতৃত্ব দিয়েছে।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রামু পরিদর্শনে গিয়ে হামলার ঘটনায় স্থানীয় সাংসদ ও বিএনপি নেতা লুৎফর রহমান কাজলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বুধবার খালেদা জিয়া বলেন, প্র্রকৃত ঘটনা না জেনে কারো ওপর দোষ চাপানো উচিৎ নয়। এর জবাবে গণভবনের অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা প্রশ্ন রাখেন, এই বোধদয়টা তার ছিল কোথায়? প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির এমপি ওখানে (রামু বাজার) যান রাত সাড়ে ১১টায়। তার সঙ্গে গাড়ি আর হোন্ডায় করে লোকজন ছিল। প্রত্যেকটা হোন্ডায় তিনজন করে ছিল... তারপর উনি চলে যান। বিএনপির এমপি বাড়ি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন, আর তখনই সব পুড়ছিল।
তদন্তেই বেরিয়ে আসবে- ওই ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত ছিল, বলেন শেখ হাসিনা। মত বিনিময়ের শুরুতেই দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে অনেকেই ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে। যে যখন ক্ষমতায় এসেছে- আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে চেয়েছে। এখনো চেষ্টা আছে। এখনো অনেকে কথা বলে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে, বলেন তিনি। তৃণমূলে সংগঠনকে শক্তিশালী করার তাগিদ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের ওপর মানুষের আস্থা আছে। বিএনপি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে যে আতঙ্কজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছিল, সেখান থেকে দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাওয়া অত্যন্ত কষ্টকর ছিল।
দলের সব স্তরের নেতা-কর্মীদের জনগণের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ তো আমাদের ভোট দিয়েছে। কাজ তো আমাদের করতে হবে। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা বলতে গিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদেরও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা এর আগে ক্ষমতায় থাকতে অনেক পত্রিকার অনুমতি দিয়েছি। কিন্তু পত্রিকাগুলো তো চালায় ব্যবসায়ীরা। তাদের আবার অনেক চাহিদা থাকে। তা পূরণ করতে না পারলেই তারা ব্যাজার হয়। বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেলে মধ্যরাতে প্রচারিত টক শোতে অংশগ্রহণকারীদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আগে তো আমরা জানতাম- মধ্যরাতে সিঁধ কাটতে যায়। আর এখন টক শোতে যায় আমাদের মাথা কাটতে।
কারো নাম উল্লেখ না করে শেখ হাসিনা বলেন, এখন এমন অনেকের কাছ থেকে টক শোতে আমাদের কথা শুনতে হয়, যারা নির্বাচন করতেও ব্যর্থ হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সাবেক সচিব আকবর আলি খানকে ইঙ্গিত করে যে এই বক্তব্য, তা স্পষ্ট। নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক দায়িত্ব থাকলেও ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হয়। অনেকে সরকারি চাকরি করতেন- নিয়ম ভেঙে অপকর্ম করেছেন। এখন তাদের কাছ থেকেই কথা শুনতে হয়। রাজনীতিবিদরাই যেন সকল দোষের ভাগিদার, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীসহ সংখ্যালঘু সমপ্র্দায়ের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর প্রতিহিংসার রাজনীতি না করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে আওয়ামী লীগ। ওরা (বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট) যা করেছিল, আমরা তার জবাব দিতে গেলে তাদের খুঁজেও পাওয়া যেত না। অন্যদের মধ্যে জাতীয় সংসদের উপনেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
__._,_.___