রোহিঙ্গা বিষফোড়া মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে বসবাসকারী মুসলিম নাগরিকরা রোহিঙ্গা নামে পরিচিত। এই প্রদেশে মুসলমানের সংখ্যা আট লক্ষাধিক। অভ্যন্তরীণ জাতিগত দাঙ্গায় গত শতকের ষাটের দশকে তাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ শুরু হয়। বহু রোহিঙ্গা বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বিভিন্ন সরকারের সময়ে অনেক রোহিঙ্গাকে স্বদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে। কিন্তু বাংলাদেশে আগত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়েই রয়ে গেছে। দৈনিক জনকণ্ঠে সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, সাড়ে ৪ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বর্তমানে এ দেশে রয়েছে। মিয়ানমার সীমান্তবর্তী কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে এবং অন্যান্য স্থানে তারা বসবাস করছে। শুধু বসবাস নয়, সীমান্তবর্তী কক্সবাজার জেলা এখন তাদের নানা অপকর্মের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এ বিষয়ে জনকণ্ঠ যে নিবিড় অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। নিজ দেশে দাঙ্গার শিকার হয়ে তারা বাংলাদেশে এলেও এখানে তারা দাঙ্গা-হাঙ্গামা, মাদক ব্যবসা, চোরাচালান ইত্যাদি এমন কোন কর্ম নেই যা করে না। মৌলবাদী একটি রাজনৈতিক দলসহ দক্ষিণপন্থী একটি বড় রাজনৈতিক দলের প্রচ্ছন্ন সমর্থন ও মদদ যেমন তাদের পেছনে রয়েছে, তেমনি মুসলিম এইড, ইসলামিক রিলিফ, এসিএফ, হ্যাডিক্রাফট সলিডারিটিজ, টাই, এসএসএফ হল্যান্ড প্রভৃতি বিদেশী এনজিও এখানে সক্রিয়। মূলত এদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে রোহিঙ্গারা যেন এখন অনেকটা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি কক্সবাজারের রামু, উখিয়া ও চট্টগ্রামের একটি উপজেলায় সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্থানে ধ্বংস যজ্ঞ সেই বাস্তবতাকেই সামনে নিয়ে এসেছে। যে রোহিঙ্গাদের একদিন মনে করা হতো স্বদেশ থেকে বিতাড়িত অসহায় শরণার্থী, তারা এখন যেন বাংলাদেশের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিচ্ছে যেন অপেক্ষা করছে বিস্ফোরণের। বাংলাদেশের মৌলবাদী ঘরানার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের যোগাযোগ ও সৌহার্দ্য বেশ পুরনো। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর অনেক রাজাকার আলবদর পালিয়ে মিয়ানমারে চলে গিয়েছিল এবং সেখানে তারা রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গাদের আতিথ্য লাভ করেছিল। তাদের সাহায্যেই অনেক যুদ্ধাপরাধী ঘাতক আলবদর পাকিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে আশ্রয় লাভ করার সুযোগ পায়। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আগমন, অবস্থান এবং তাদের কাজকর্ম ইত্যাদির তথ্য সরকারের অগোচরে থাকার কথা নয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় প্রশাসনসহ সরকারের গোয়েন্দা বিভাগের কাছে এ বিষয়ে হালনাগাদ তথ্যাবলী অবশ্যই আছে। বিশেষ করে রামু, উখিয়ায় মৌলবাদীদের প্রশ্রয়ে তারা যেভাবে দানবীয় থাবা বিস্তার করা হয়, সে প্রেক্ষিতে সরকারকে ত্বরিত হার্ডলাইনে যাওয়া উচিত। শরণার্থী হয়ে ঢুকে দেশের মানুষের সংহতি নষ্টের যারা চেষ্টা করে তাদেরকে সহজভাবে দেখার কোনো অবকাশ নেই। পাশাপাশি এদের ঘাড়ে মই রেখে যারা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করতে চায়। তাদেরও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। |