http://www.dailysangram.com/news_details.php?news_id=103081
পুলিশ-ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলা গুলী বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ অগ্নিসংযোগ ভাংচুর
জামায়াতের ডাকে সর্বাত্মক হরতালে অচল দেশ
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ডাকা হরতাল চলাকালীন সময় ছাত্রলীগ যুবলীগ ও পুলিশের হামলায় আহতদের পল্লবী থানায় মেঝেতে ফেলে রাখা হয়। সকাল-সন্ধ্যা হরতালের সমর্থনে গতকাল মঙ্গলবার মতিঝিল এলাকায় ঢাকা মহানগরী জামায়াতের নিরস্ত্র মিছিল। চট্টগ্রামে হরতাল চলাকালে হরতাল বিরোধীদের সশস্ত্র এ্যাকশন। গতকাল মঙ্গলবার জামায়াতে ইসলামীর ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের সামনে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সশস্ত্র মহড়া -সংগ্রাম
গ্রেফতার ৩ শতাধিক \ আহত ৪ শতাধিক \ গুলীবিদ্ধ ১০ জন আশঙ্কাজনক
স্টাফ রিপোর্টার : জামায়াতের ডাকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়েছে। নজিরবিহীন এই হরতালে গোটা দেশ ছিল অচল। হরতাল চলাকালে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে মিছিলে গুলী চালিয়েছে। রাজধানীতে হরতালের সমর্থনে মিছিলে ছাত্রলীগ-যুবলীগ সন্ত্রাসী ও পুলিশের হামলা গুলী, আহত অর্ধশতাধিক, গুলীবিদ্ধ ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মতিঝিল থানা আমীরসহ গ্রেফতার হয়েছে ৬০ জন। এছাড়া সারা দেশে আহত হয়েছে ৩ শতাধিক, গ্রেফতার হয়েছে ৪ শতাধিক। খুলনায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ২৪ জন গ্রেফতার, টঙ্গীতে আটক ২, আহত ১৫, বগুড়ায় গ্রেফতার ১৮, দিনাজপুরে আটক ১৮, চাঁদপুরে ২ শিক্ষকসহ গ্রেফতার ৪ জন, হবিগঞ্জে জেলা আমীরসহ গ্রেফতার ৫ জন, কক্সবাজারে সাংবাদিকসহ গ্রেফতার ১০, চট্টগ্রামে গ্রেফতার ২৮, এছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানে আহত ৩৮, গ্রেফতার ১১৩ জন। হরতাল চলাকালে রাজধানীতে মহড়া দিয়েছে ছাত্রলীগ-যুবলীগ। এ সময় তারা হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করে।
জামায়াতে ইসলামীর ডাকে এই সরকারের সময়ে দেশব্যাপী এটাই ছিল প্রথম হরতাল। জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তি প্রদান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান, সারা দেশে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তি প্রদান, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধের দাবিতে এবং আইনশৃক্মখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি, সরকারের দুঃশাসন, সীমাহীন দুর্নীতি ও ইসলামী মূল্যবোধের ওপর আঘাতের প্রতিবাদ, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটের বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করতে না দেয়ায় জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান গত রোববার হরতালের ডাক দেন। বিএনপিসহ অন্য শরিকরাও এই হরতালে নৈতিক সমর্থন দিয়েছে।
হরতালে রাজধানীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচার কাজ চলেনি। বিচার কাজ না চলায় কার্যত সুপ্রিম কোর্ট ছিল অচল। সকাল সাড়ে ৯টায় প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ আপিল বিভাগের এক নম্বর আদালতে বসলেও কার্যতালিকার সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা না থাকায় কিছুক্ষণ পর এজলাস ছেড়ে যান।
অফিস-আদালতে উপস্থিতি ছিল কম। ব্যাংক-বীমাসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানেও উপস্থিতি ছিল না। সচিবালয়ও ছিল প্রায় জনশূন্য। হরতাল ঘিরে সচিবালয় ও এর আশপাশের এলাকায় নেয়া হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
হরতালের কারণে রাজধানীর ব্যাংকপাড়া খ্যাত মতিঝিলে মানুষের তেমন ভিড় কিংবা ব্যস্ততা নেই। অন্যদিনের তুলনায় এ দিন মতিঝিলের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। এছাড়া হরতালের কারণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে লেনদেনের পরিমাণ অনেক কম। এ দিন মতিঝিলের রাস্তায় গাড়ির তেমন কোন চাপ লক্ষ্য করা যায়নি।
গতকাল মঙ্গলবার মতিঝিলে আসা মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি লক্ষ্য করা গেছে। তাদের অনেকেই জানান, রাজধানীর প্রতিটি রাস্তা কিংবা এলাকার অবস্থা যদি এমন হতো তবে কতই না ভালো হতো। সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার হরতালের কারণে মতিঝিলের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে অন্যান্য দিনের চেয়ে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল কম। ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। মতিঝিল ব্যাংকপাড়া ঘুরে দেখা গেছে- ব্যাংকে গ্রাহকদের উপস্থিতির পাশাপাশি কর্মকর্তাদের উপস্থিতিও ছিল অনেক কম।
ঢাকা ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, হরতাল হওয়ার কারণে রাস্তায় যানবাহনের সংকট রয়েছে। যারা অনেক দূর থেকে আসেন তারা যানবাহন না পেয়ে অফিসে আসতে পারেননি। তাই ব্যাংকে কর্মকর্তাদের উপস্থিতি ছিল কম। হরতালের দিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ
হরতালে রাজধানীতে স্বল্পপাল্লা বা দূরপাল্লার কোন যান চলাচল করেনি। গাবতলী ও সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে কোন বাস ছেড়ে যায়নি, কোন গাড়িও আসেনি। দোকানপাট, বিপণী বিতান ছিল বন্ধ। রাজধানীর বেশ কয়েকটি স্থানে গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
দিনভর ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীদের গাড়ি ও মোটরসাইকেল মহড়া ছিল রাজধানীতে। তারা এ সময় হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করে। অনেক স্থানে পুলিশকে সাথে নিয়ে মিছিলকারীদের হামলা চালায় ছাত্রলীগ-যুবলীগ। হরতালকে কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়ে আইনশৃক্মখলা বাহিনী মোতায়েন ছিল। ভোর থেকেই প্রতিটি সড়কে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও র্যাব সদস্য মোতায়েন থাকতে দেখা যায়। পাশাপাশি সাদা পোশাকে মাঠে ছিল বিপুলসংখ্যক পুলিশ।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট এলাকায় সকাল পৌনে ৭টার দিকে হঠাৎ রাস্তার ওপর টায়ার জ্বালিয়ে দিলে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় অন্তত চারটি গাড়ি ভাংচুর হয়। সকাল পৌনে ৭টার দিকে রূপসী বাংলা হোটেলের সামনে তিনটি গাড়ি ভাংচুর হয়। বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করা হয় কাজীপাড়া ও শ্যাওড়াপাড়া এলাকায় রোকেয়া স্মরণীতেও। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে সাভারে বিশ্বাস পরিবহনের একটি গাড়িতে আগুন দেয়া হয় বলে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা ব্রজেন কুমার সরকার জানান। সকাল ১০টার দিকে মিরপুরের আনসার ক্যাম্প এলাকায় একটি বাসে আগুন ও তিনটি গাড়ি ভাংচুর হয়।
মগবাজার
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয় মগবাজার ওয়্যারলেস রেলগেট এলাকায় হওয়ায় এখানে বাড়তি পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন ছিলো। পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পুলিশ মোতায়েন ছিলো। আগের দিন সন্ধ্যা থেকে গতকাল হরতাল শেষ হওয়া পর্যন্ত বিশেষ করে ওয়্যারলেস এলাকায় আইন-শৃক্মখলা বাহিনীর তৎপরতা ছিলো চোখে পড়ার মতো। পুলিশের বিশেষ সাঁজোয়া যানে করে যুদ্ধংদেহী মহড়া দেয় তারা। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, হরতালকে কেন্দ্র করে জামায়াত যাতে কোনো মিছিল, পিকেটিং বা বিশৃক্মখলা করতে না পারে সে জন্য উপরের নির্দেশে এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়।
হরতালের সমর্থনে জামায়াত বা সমমনা সংগঠনগুলো আইন-শৃক্মখলা বাহিনীর রণপ্রস্তুতিতে রাস্তায় নামার সুযোগ না পেলেও আওয়ামী যুবলীগ-ছাত্রলীগের ক্যাডাররা কথিত হরতালবিরোধী শান্তি মিছিলের নামে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। হরতাল চলাকালে 'জয়বাংলা
হাসপাতালের এক্সিকিউটিভ সেলস সালাহউদ্দিন ও পাবলিক রিলেশন এক্সিকিউটিভ মোঃ আজিজুল ইসলাম বিকেলে জানান, সোহরাবসহ অন্যদের রমনা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যুবলীগের তান্ডবের পর পুলিশ হাসপাতালের প্রবেশ দ্বারে অবস্থান নেয়। ভাংচুরের সময় পুলিশ দূরে অবস্থান করছিলো।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, এ ঘটনার পরপরই রমনা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল বাশারের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হরতাল বিরোধী মিছিল বের করে এলাকার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এদিকে হরতাল চলাকালে বিশাল সেন্টার, মঈন মটরসসহ মগবাজার এলাকার প্রায় সকল বিপণী বিতান, পেট্রোল পাম্প বন্ধ ছিলো। যদিও এ এলাকার বিপণী কেন্দ্রগুলোর জন্য সাপ্তাহিক বন্ধ বৃহস্পতিবার। তবে বিকেল ৪টা থেকে আড়ংসহ কিছু দোকানপাট খুলতে থাকে। অন্যদিকে এ এলাকার সড়কগুলোতে রিকশা ও সামান্য কিছু হিউম্যান হলার চলাচল করেছে। ট্রাফিক সিগন্যালে কোনো ট্রাফিক পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে হয়নি বা দেখা যায়নি।
মালিবাগ
নগরীর অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা মালিবাগেও হরতাল চলাকালে যান চলাচল ও পথচারীর আনাগোনা ছিলো যে কোনো দিনের চেয়ে কম। সর্বাত্মক ও স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল চলাকালে নগরীর অন্যান্য এলাকার মতো এখানেও পুলিশ-র্যাবের মহড়া ছিলো চোখে পড়ার মতো। মালিবাগ মোড়, মৌচাক, মালিবাগ রেলগেট থেকে আবুল হোটেলের সামনের রাস্তায় হরতালে কোন কাউন্টার বাস সার্ভিস চলেনি। স্বল্পসংখ্যক সদরঘাট-টঙ্গীর সুপ্রভাত বাস চলাচল করলেও যাত্রী তেমন ছিলো না। স্বাভাবিক দিনে এ এলাকায় অফিসগামী মানুষের যেমন আনাগোনা থাকে। গতকাল এর ছেদ ঘটে। যেন নাগরিকরা হরতালের সমর্থনে ঘর থেকেও বের হননি। পুলিশ ও র্যাবের গাড়ি দাপিয়ে বেড়ায় রাজপথ। হরতালের সমর্থনে কোনো পিকেটিং না হলেও আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ক্যাডাররা লাঠিসোটা নিয়ে রাস্তার ধারে ধারে পুলিশের পাশাপাশি অবস্থান করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। পুলিশ ও ক্ষমাতসীন দলের ক্যাডারদের সশস্ত্র মহড়ায় মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
এদিকে মালিবাগ চৌধুরীপাড়া এলাকার আবুল হোটেলের সামনে থেকে জামায়াত-শিবির কর্মী সন্দেহে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আটক করার পর তাদের রামপুরা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আটককৃতরা হলেন জয়নাল আবেদিন, মারুফ। আরেকজনের নাম জানা যায়নি।
রামপুরা-কুড়িল
রামপুরা থেকে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত পুরো রাজপথে কোথাও গতকাল এক সাথে দু
যাত্রাবাড়ী ঃ সারাদেশের মত গতকাল রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়েছে। সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে যাত্রাবাড়ীর কাজলা ব্রীজ থেকে হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় এসে শেষ হয়। এর পরে কুতুবখালী থেকে হরতাল সমর্থনে একটি মিছিল বের করে জামায়াত কর্মীরা। এ সময় পুলিশ তাদের মিছিলে হামলা করলে কয়েকটি গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
সকাল ৭টার দিকে শিবির কর্মীরা যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে একটি মিছিল বের করে। মিছিল সায়দাবাদ ব্রীজের ঢালে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় পুলিশ তাদের ধাওয়া করলে এখানেও কয়েকটি গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এদিকে ধলপুর এবং ভাঙ্গা প্রেস থেকে সকাল দুটি মিছিল বের হয়। ধোলাইপাড় এলাকা থেকে সকাল ৭টার দিকে হরতাল সমর্থনে একটি মিছিল বেরকরে জামায়াত শিবিরের কর্মীরা। এ সময় পুলিশ তাদের ওপর হামলা করলে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। হরতালের সমর্থনে তারা আধঘণ্টা রাস্তা আটকে রাখে। পরে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার গুলী ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে পুলিশ যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে ৮জনকে আটক করে। তবে তারা কেউ জামায়াত শিবিরের কর্মী নয়। অন্যদিকে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মাতুয়াইল মেডিকেলে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি মিছিল বের করে হরতাল সমর্থকরা। এ সময় তারা টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তায় অবরোধ সৃষ্টি কর। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শিবির সন্দেহে দু
সায়েদাবাদ ঃ জামায়াতের ডাকে সকাল সন্ধ্যা হরতালের অংশ হিসেবে সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে কোন বাস ছেড়ে যায়নি। এখানে সারিসারি বাস দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এখান থেকে দুরপাল্লার কোন বাস ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি। একইভাবে দুরপাল্লার কোন বাস ঢাকায় প্রবেশ করতে দেখা যায়নি। এখানে হরতালের পক্ষে-বিপক্ষে কোন মিছিলও হয়নি।
কাওরানবাজার, ফার্মগেট, মহাখালি
এসব এলাকায় স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত হয়েছে। সকাল থেকেই সকল প্রকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস, স্কুল-কলেজ, দোকানপাট ও যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। মহাখালি আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো পরিবহন ঢাকা ছেড়ে যায়নি। একইভাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও রাজধানীতে কোনো পরিবহণ প্রবেশ করেনি। সকাল পৌনে ৭টার দিকে কাওরানবাজার ও ফার্মগেটের মধ্যবর্তী এলাকায় হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল বের হয়। এ সময় পুলিশ অতর্কিত মিছিলের ওপর হামলা চালায়। দু
শান্তিনগর
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জামায়াত-শিবির কর্মীরা শান্তিনগর এলাকায় মিছিল বের করে। এ সময় পুলিশ মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুলিশের লাঠিচার্জে কয়েকজন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। সেখান থেকে তিনজনকে আটক করে পুলিশ। মিছিলকারীরা ধাওয়া খেয়ে রাজারবাগ এলাকার দিকে চলে যায়। এখানে রাস্তার দু
কাকরাইল ও নয়াপল্টন
কাকরাইল ও নয়াপল্টন এলাকা ছিল অন্যদিনের তুলনায় ভিন্ন। রাজধানীর ব্যস্ততম এই এলাকাটিতে পুলিশ ও র্যাবের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। কাকরাইল মোড়, বিজয়নগর মোড় এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের উভয় পাশে র্যাব ও পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়। এখানকার প্রত্যেকটা গলির মুখে অবস্থান নেয় পুলিশ। সকাল থেকেই বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছিল বন্ধ। সাংবাদিকদের অনুরোধে দুপুর ১২টার দিকে অফিসের গেট খুলে দিলেও কোনো নেতাকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত দেখা যায়নি। হরতালকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের উপস্থিতি অন্য এলাকার চেয়েও এখানে ছিল বেশি। সন্ধ্যার পর বিএনপির কয়েকজন নেতা অফিসে আসেন। এছাড়া ফকিরাপুল মোড়ে পুলিশ রাস্তায় অবস্থান করে পথচারীদের তল্লাশি চালায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করে।
মতিঝিল
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলের চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। ব্যাংকপাড়া হিসেবে পরিচিত এই বাণিজ্যিক এলাকায় আগের সবক
খিলগাঁও
সকাল ৯টার দিকে হরতালের সমর্থনে জামায়াত-শিবির মিছিল বের করে। পুলিশ মিছিল দেখেই ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে পুলিশ মিছিলকারীদের ওপর লাঠিচার্জ ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এতে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানায়, পুলিশের ধাওয়া খেয়েও হরতালের সমর্থনে মিছিল চলতে থাকলে খিলগাঁওয়ে পুলিশ-পিকেটারদের লক্ষ্য করে গুলী চালায়। এতে কয়েকজন আহত হয়েছে। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পুলিশ সাংবাদিকদের জানায়, সংঘর্ষের একপর্যায়ে আত্মরক্ষার্থে তারা গুলী ছোঁড়ে। তখন দ্রুত স্থান ত্যাগ করে জামায়াত-শিবিরের পিকেটাররা। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পুলিশই পিকেটারদের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ গুলী ছোঁড়া শুরু করলে মিছিলকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে এলাকা ত্যাগ করে।
অন্যদিকে, পুলিশ দাবি করেছে, পিকেটারদের হামলায় একজন কনস্টেবল আহত হয়েছেন।
মিরপুর-গাবতলী
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মিরপুর ১১ নাম্বারের মেইন রোড এলাকায় মিছিলচলাকালীন সময়ে জামায়াত শিবিরের কর্মীদের ওপর হামলা চালায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের ক্যাডাররা। গুরুতর আহত অবস্থায় ১১জন কর্মীকে পুলিশ আটক করে। পরে তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়। হরতাল চলাকালীন সময়ে মিরপুর এলাকার দোকান-পাট বন্ধ ছিল। দু
গাবতলী এলাকায় হরতাল পালিত হয়েছে। কোনো যানবাহন গাবতলী ছেড়ে যায়নি এবং কোনো যানবাহন টার্মিনালে পৌঁছেনি। দোকান-পাটও ছিল বন্ধ। মোহাম্মদপুর এলাকায়ও হরতাল পালিত হয়েছে। এ এলাকার দোকান-পাট ছিল বন্ধ এবং যানবাহন চলাচল করেনি।
গুলিস্তান - পুরান ঢাকা
রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন, পুরোনো ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়েছে। সকাল থেকে গুলিস্তান এলাকায় যানবাহন চলাচল ছিল খুবই কম। যাত্রীবাহী কয়েকটি বাস পুলিশের পাহারায় চলাচল করলেও অনেক বাসে কোনো যাত্রী ছিল না। ব্যস্ততম এ এলাকা গতকাল ছিল প্রায় পথচারীশূন্য। বেলা বাড়তে থাকলে রাস্তায় বাসও কমতে থাকে। তবে পুলিশ ও র্যাব তাদের টহল জোরদার করে। সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকায় দোকান-পাট ছিল বন্ধ। এছাড়া পুরান ঢাকার নয়াবাজার শ্যামবাজার, মৌলবীবাজার, বাদামতলীসহ বাণিজ্যিক এলাকায় বেচা-কেনা ছিল বন্ধ। সকাল সাড়ে ৬টায় বাবুবাজার এবং সকাল ৯টায় রায়সাহেববাজার এলাকায় হরতালের পক্ষে জামায়াত ও শিবিরের নেতা-কর্মীরা মিছিল বের করে। এদিকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কবি নজরুল কলেজ শাখা ছাত্রলীগ কলেজের সামনে থেকে হরতালবিরোধী একটি মিছিল বের করে। সকাল ১১টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ বিক্ষোভ মিছিল করে। সোয়া ১১টার দিকে ঘাট শ্রমিকলীগ ও বিআইডব্লিউটিএ-এর শ্রমিকলীগ আলাদা-আলাদা ব্যানারে টার্মিনাল এলাকা থেকে একটি মিছিল বের করে বাংলাবাজার, পাটুয়াটলি, ইসলামপুরসহ সদরঘাটের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী কয়েকটি সংগঠন সকালে হরতালবিরোধী মিছিল বের করে।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, হরতাল চলাকালে পুরোনো ঢাকার কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এদিকে পুরোনো ঢাকার বিক্রমপুর সুপার মার্কেট, গ্রেটওয়াল মার্কেট, গুলশান আরা সিটিসহ কয়েকটি মার্কেট সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে। সদরঘাটে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও যাত্রা ও গন্তব্য প্রান্তে হরতালের কারণে যাত্রীসাধারণকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
হরতালে রাজধানীতে জামায়াতের মিছিল :
মতিঝিল থানার উদ্যোগে একটি মিছিল বের হয়। রাজধানীর মানিক নগরে মিছিলটি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়ে ফেরার পথে পুলিশ সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে মতিঝিল থানা আমীর কামাল হোসাইনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।
হরতালের সমর্থনে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগীর পল্টন থানার উদ্যোগে শান্তিনগর, কালভার্ট রোড, নয়াপল্টন, বিজয়নগর, কাকরাইল ও পল্টন এলাকায় মিছিল ও পিকেটিং করে। হরতালের সমর্থনে খিলগাঁও থানার উদ্যোগে খিলগাঁও বিশ্ব রোডে মিছিল ও পিকেটিং করে। হরতালের সমর্থনে লালবাগ থানার উদ্যোগে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন লালবাগ থানা আমীর এডভোকেট রেজাউল করিম, সেক্রেটারি আবুল কাসেম ও জামায়াত নেতা জি এম সেলিম, শামীমুল বারী ও লালবাগ থানা শিবির সভাপতি জাকির হোসাইন প্রমুখ। মিছিলটি নিউ পল্টন লাইন থেকে শুরু হয়ে আজিমপুর চৌরাস্তা গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
বংশাল থানার উদ্যোগে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন থানা আমীর এস এম রুহুল আমীন, সেক্রেটারি মাহবুবুল হক ভূঁইয়া, জামায়াত নেতা এডভোকেট আবু নাসের ও এডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ। মিছিলটি মোকিম বাজার থেকে শুরু হয়ে বংশাল চৌরাস্তা গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
লালবাগ থানার উদ্যোগে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন থানা আমীর এস এম আহসান উল্লাহ, সেক্রেটারি খ ম আল-আমীন, জামায়াত নেতা গিয়াস উদ্দিন, কামরুল ইসলাম ও শফিকুল ইসলাম প্রমুখ। মিছিলটি নবাব বাড়ি থেকে শুরু হয়ে ইসলামপুর হয়ে বাবুবাজার গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
লালবাগ থানার উদ্যোগে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন চকবাজার থানা সেক্রেটারি জহির উদ্দীন ইয়ামিন, জামায়াত নেতা লূৎফর রহমান, শিবির নেতা ইমাম ও বাহার প্রমুখ। মিছিলটি চকবাজার থেকে শুরু হয়ে ঈমানগঞ্জে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
মহানগীর শেরেবাংলা নগর, তেজগাঁও ও শিল্পাঞ্চল থানার উদ্যোগে একটি মিছিল বের হয় এবং হরতালের সমর্থনে পিকেটিং করা হয়। যাত্রাবাড়ী থানার উদ্যোগে একটি মিছিল বের হয়। হরতাল সমর্থনকারীরা এ সময় যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা মোড়ে পিকেটিং করে।
বাড্ডা থানার উদ্যোগে মধ্য বাড্ডায় একটি মিছিল ও পিকেটিং করে। ভাটারা থানার উদ্যোগে শাহজাদপুর ও উত্তর বাড্ডায় মিছিল ও পিকেটিং করে। খিলক্ষেত থানার উদ্যোগে বিশ্বরোড এলাকায় মিছিল ও পিকেটিং করে। এছাড়া রাজধানীর শ্যামপুর, গেন্ডারিয়া, ওয়ারী ও সূত্রাপুর থানায় হরতালের সমর্থনে মিছিল ও পিকেটিং করা হয়।
__._,_.___