জাফর ইকবাল, সুশীল শিরোমনি। আবারও লিখেছেন শিবির নিয়ে। এবার শিরোনামে শিবিরের ছাত্রদের প্রতি একধরনের আন্তরিকতা ফুটিয়ে তোলার চেষ্ঠা করেছেন। কিন্তু হতাশা লুকাতে পারেন নি। এত চেষ্ঠা করলো, এত কাহিনী শুনালো, কিন্তু এদেশের ছাত্রদের কাছে শিবিরকে অজনপ্রিয় করে তুলতে পারলো না! দারুণ হতাশার! এই ধরনের সংকীর্ণমনাদের কি শিক্ষকতা করা উচিত?! 'স্যার, আপনাকে এই বই দুটি দিতে এসেছি।' আমি বই দুটি নিলাম। বিজ্ঞানের ওপর চমৎকার দুটি বই, হাতে নিয়ে বললাম, 'থ্যাংকু। সুন্দর পাবলিকেশন্স।' তারপর বই দুটি খুললাম, ভেতরে লেখা ইসলামী ছাত্রশিবির। মুহূর্তে আমার সারা শরীর শক্ত হয়ে গেল। জাফর ইকবালেরই দু'জন ছাত্র তাকে দু'টি বই গিফট করেছেন। হাতে নিয়েই জাফর ইকবাল বুঝতে পারলেন বইগুলো চমৎকার। অর্থাৎ জাফর ইকবাল স্বীকার করে নিলেন, শিবির শিক্ষার্থীদের কল্যাণে সমসাময়িক বিষয়ের উপর এমনকি বিজ্ঞানের উপরও চমৎকার বই লিখার যোগ্যতা রাখে। বইগুলো যে চমৎকার ছিল সেটা প্রথম দেখাতেই স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু শিবিরের প্রকাশনা দেখে নাকি তার শরীর শক্ত হয়ে গেল! আশ্চর্য! শিবির প্রকাশ করেছে বলেই এই ধরনের চমৎকার বইও জাফর ইকবালের কাছে খারাপ হয়ে গেল? আর জাফর ইকবাল কি শিবিরের কাছে ছাত্রলীগের মতো রাম দা-চাপাতি আশা করেছিল? বই দেখলে শরীর শক্ত হওয়ার কি আছে? জাফর ইকবাল কি তাহলে রাম দা-চাপাতি অথবা টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির টাকার ভাগ দেখার আখাঙ্ক্ষায় ছিল? এর মাধ্যমে আসল বিষয়টি প্রকাশ করে দিয়েছেন। বাংলাদেশে শিবির-জামায়াত হাজারও ভাল কাজ করে যাচ্ছে, কিন্তু হিংসার কারণে জাফর ইকবালরা তা স্বীকার করতে চান না। তারই ছাত্রদের দ্বারা প্রকাশিত একটি চমৎকার বইকে শুধুমাত্র সংকীর্ণ দলীয় মানসিকতা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করে তিনি তা আবারও প্রমাণ করলেন। আর এই ধরনের সংকীর্ণ মানসিকতা যার আছে তার কি শিক্ষকতা করা উচিত? তার হওয়া উচিত আওয়ামী লীগ বা কমিউনিস্ট ক্যাডার, শিক্ষক নয়। জাফর ইকবাল এখনও কি জামায়াত নিয়ে কথা বলার অধিকার রাখে? বই দুটিতে শিবিরের নাম দেখে শরীর শক্ত হওয়া জাফর ইকবাল এবার বই দেয়ার প্রতিবাদ করা শুরু করলেন! কিভাবে? তিনি ১৯৭১ সালে নিজামী-মুজাহিদ-জামায়াত এই করেছে, সেই করেছে মর্মে ছাত্র দুটির কাছে দীর্ঘ বয়ান রাখলেন! তাকে দেয়া বিজ্ঞানের বই নিয়ে কথা না বলে তিনি চল্লিশ বছর পিছনে গিয়ে নাটকের স্ক্রীপ্ট পড়া শুরু করলেন! ঠিক এখানেই জাফর ইকবালের কপটতা ফুটে উঠে। নিজামী-মুজাহিদ-জামায়াতের কথিত অপরাধের কাহিনী তিনি তথাকথিত যুদ্ধাপরাধের বিচার নামের নাটকের আগে অনেকবার বলেছেন, তখন তার সামান্য গ্রহণযোগ্যতা বা বিশ্বাসযোগ্যতা কিছু মানুষের কাছে ছিল। কিন্তু সেই নাটকের পর কি তা আছে? নেই, কারণ তাকে সেই নিজামী, সেই মুজাহিদ, সেই সাঈদীর, সেই জামায়াতের ১৯৭১ সাল নিয়ে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য ডাকা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭১ নিয়ে সবজান্তা জাফর ইকবাল ট্রাইবুনালে গিয়ে কিছু বলার দুঃসাহস করেন নি। এত কিছু তিনি বলেন, লিখেন, জানেন, অথচ ট্রাইবুনালে যাওয়ার সাহস করেন নি, বলেন নি! কেন করেন নি? সহজ উত্তর। এতদিন তিনি যা বলেছেন, যা লিখেছেন তার সবকিছুই মিথ্যা। সেই মিথ্যুক চরিত্র ট্রাইবুনালে গেলে ফাঁস হয়ে যাবে, চরম ভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার ভয় ছিল। এতদিন অনেক কিছু জানেন বলে যে কাহিনী তিনি বা তার গোত্রের লোকেরা প্রচার করেছিল, তা বাস্তব কোন তথ্য বা সত্য নয়, নাটক-সিনেমার স্ক্রীপ্ট মাত্র। নাটক-সিনেমার স্ক্রীপ্ট ও ইতিহাস তো আর এক নয়। মি. ইকবাল, আপনি যদি সব কিছু জানেন তাহলে ট্রাইবুনালে যান নি কেন? ট্রাইবুনালে যাওয়ার জন্য আপনাকে ডাকা হয়েছিল, আপনি যান নি। শেষ পর্যন্ত আপনাকে নিঃখোজ/পলাতক ঘোষণা করা হয়েছিল। সবকিছুই যে জানে সে কোন ভয়ে ট্রাইবুনালে যাওয়ার সাহস করেনি? আইনী ভাবে জামায়াতের ভূমিকা প্রমাণ করার জন্য তো ট্রাইবুনালই আপনার সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম ছিল। আপনি প্রথম আলোতে জামায়াতের ১৯৭১ এর ভূমিকা নিয়ে লিখতে পারেন, অথচ ট্রাইবুনালে গিয়ে এক বাক্যেও বললেন না কেন? তার মানে নিজামী-মুজাহিদ-জামায়াতের কোন অপরাধের কথাই আপনি জানেন না। জানেন না, কারণ তারা ১৯৭১ সালে কোন অপরাধ করেনি। এরপরও আপনি কিভাবে নিজামী-মুজাহিদের কথিত অপরাধের কথা আবারও লিখেন? যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে নাটকের পর তো নিজামী-মুজাহিদ-জামায়াতের বিরুদ্ধে কিছু লিখা বা বলার অধিকার আপনি হারিয়েছেন। ডাকার পরও না গিয়ে আপনি নিজেই এটা প্রমাণিত করে দিয়েছেন, এতদিন যা বলেছেন তার সবই মিথ্যা। সেই মিথ্যা আবারও বলে কেন নিজেকে নূতন ভাবে হাস্যকর করতে যাচ্ছেন মি. জাফর ইকবাল? জামায়াত-শিবির নিয়ে আর যাই বলুন, ১৯৭১ নিয়ে বলা বন্ধ করুন। আপনি জামায়াতের ১৯৭১ সালের ভূমিকা নিয়ে এতদিন যা বলে এসেছেন তা আপনার সায়েন্স ফিকশন লেখার মতো কল্পকাহিনী, রূপকথার গল্প মাত্র এবং ট্রাইবুনালের আহবানে সাড়া না দিয়ে তা আপনি নিজেই প্রমাণ করেছেন। ক্রমশ... |