'ক্ষমতার জন্য এখন ভারতকে তেল' | ||||
|
বৃহস্পতিবার যশোরে আওয়ামী লীগের এক জনসভায় তিনি বলেন,"বিএনপি নেত্রী ক্ষমতায় থাকলে ভারতপ্রীতি বাড়ে, আর বিরোধী দলে গেলে ভারত বিরোধিতার নীতি গ্রহণ করে। "কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার লোভে অন্ধ হয়ে এবার তিনি আগেভাগেই তেল মারতে ভারতে গিয়েছিলেন।এ কারণে তিনি (খালেদা জিয়া) টিপাইমুখ বাঁধ ও সীমান্তে হত্যা বন্ধের দাবি করতেই ভুলে গেছেন।" বিএনপি চেয়ারপারসনের সাম্প্রতিক ভারত সফরকে ইঙ্গিত করে একথা বললেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। ওই সফরে খালেদা জিয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে আশ্বস্ত করেন যে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ভারতবিরোধী কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার হতে দেবেন না। টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে এগোনোর আগে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে যৌথ সমীক্ষার প্রস্তাবও দেন তিনি। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট রাখার পর বিএনপির নিজেদের মুক্তিযোদ্ধাদের দল দাবি করার সমালোচনাও করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, "তিনি একদিকে জামাত-শিবিরকে সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় হরতাল দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারছেন, অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনার আয়োজন করছেন।যুদ্ধাপরাধীদের দোসরের মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা শোভা পায় না।" বুধবার ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের দল। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে যাদের বিচার চলছে, তার অধিকাংশই বিএনপির জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর নেতা। বিএনপির দুই নেতাও এই বিচারের মুখোমুখি। আওয়ামী লীগ আয়োজিত ওই জনসভায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমালোচনাও করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন,"তিনি (খালেদা জিয়া) সরকারি কোষাগার থেকে দুই ছেলের লেখাপড়ার জন্য টাকা এনে তাদেরকে দুর্নীতির ডিগ্রি দিয়েছেন। তার এক ছেলের পাচার করা টাকা সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। "নিজে এতিমদের টাকা মেরেছেন। আবার তিনিই বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সবাই চোর। একেই বলে চোরের মায়ের বড় গলা।" প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রেখে ক্ষমতা থেকে সরে গিয়েছিল। আর বিএনপি যখন ক্ষমতা ছেড়েছে তখন দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হত ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। "বিদ্যুৎ না দিয়ে তার ছেলে মানুষকে খাম্বা দিয়েছে আর লুটপাট করেছে।" ক্ষমতায় গেলে দেশের চেহারা পাল্টে দেবেন বলে বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, "তারা কীভাবে দেশকে পাল্টাবেন? আওয়ামী লীগ যে ১০ ভাগ দারিদ্র্য কমিয়েছে, তাদেরকে কি আবার দরিদ্র বানিয়ে দেবেন? ৫ কোটি নিম্ন আয়ের মানুষ মধ্যবিত্ত হয়েছে, তাদেরকে কি আবার নিম্নবিত্তে পরিণত করবেন?" "৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ থেকে বাড়িয়ে বর্তমান সরকার ৬ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন করছে, আপনারা কি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দেশকে অন্ধকার করে পাল্টে দেবেন? না কি বিনামূল্যের বই দেয়া বন্ধ করে দেশের লাখ লাখ ছেলে মেয়েদের অশিক্ষিত করে রাখবেন?" ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময়ের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে যশোরসহ এ অঞ্চলে সংখ্যালঘু নির্যাতন ছাড়াও যে সন্ত্রাস ও অত্যাচারের রাজত্ব কায়েম করেছিল মানুষ তা ভুলে যায়নি।" বিকালে যশোর ঈদগাহ ময়দানে জনসভায় যশোরকে বাংলাদেশের প্রথম 'ডিজিটাল জেলা' ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী বলেন,এর মাধ্যমে ধাপে ধাপে আওয়ামী লীগ সরকার গোটা দেশকেই ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করবে। মোবাইল ফোনের মতো হাতে হাতে কম্পিউটার পৌঁছে দেয়া হবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে দেয়া প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করে এই অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সব সময়ই আন্তরিক বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। "এখানকার অন্যতম সঙ্কট ভবদহ জলাবদ্ধতা সমস্যা দূর করা হচ্ছে। কপোতাক্ষ নদ খননে আড়াইশ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যশোরে বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। বেনাপোল স্থল বন্দরের উন্নয়ন করে আমদানি রফতানি কার্যক্রমে গতি ফিরিয়ে আনা হয়েছে।" পরবর্তী মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে যশোরকে সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তর করার প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আবার আওয়ামী লীগকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী রেজা রাজুর সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ, শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, জাতীয় সংসদের হুইপ শেখ আব্দুল ওহাব, খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসক হারুন অর রশিদ, সংসদ সদস্য খালেদুর রহমান টিটো, খান টিপু সুলতান ও রণজিৎ রায়, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। জনসভার আগে প্রধানমন্ত্রী ন্যাশনাল ই সার্ভিস উদ্বোধন এবং শহরের বকুলতলায় নির্মিত বঙ্গবন্ধুর সর্ববৃহৎ ম্যুরাল উদ্বোধন করেন। এর আগে দুপুর সোয়া ১২টায় যশোরে বিমান বাহিনীর মতিউর রহমান ঘাঁটিতে ২৩তম শীতকালীন গ্রাজুয়েশন প্যারেড পরিদর্শন করে নবীন ক্যাডেটদের কুচকাওয়াজ ও সালাম গ্রহণ করেন তিনি। এসময় নবীন ক্যাডেটদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আজ থেকে দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব তোমাদের কাঁধে অর্পিত হল।" "সরকার ইতোমধ্যে বিমান বাহিনীর আধুনিকায়ন ও শক্তিশালীকরণে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিমান বাহিনীর সদস্যরা তাদের দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে দেশ ও বিদেশে সুনাম অর্জন করেছেন। এটিকে রক্ষা করার দায়িত্ব নবীন ক্যাডেটদের।" এবারের গ্রাজুয়েশনে মোট ২২ জন ক্যাডেট কমিশন লাভ করেছেন। এর মধ্যে সেরা কৃতিত্ব প্রদর্শনের জন্য ফ্লাইট ক্যাডেট সৌমিত্র কুমার বিশ্বাস সোর্ড অব অনার এবং ফ্লাইট ক্যাডেট সার্জেন্ট আলিমুর রহমানকে ট্রফি উপহার দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে তিনি কেক কেটে গ্রাজুয়েশন উৎসবের উদ্বোধন এবং নবীন ক্যাডেটদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এ সময় বিমানবাহিনীর প্রধানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/প্রতিনিধি/এইচএএইচ/এমআই/২১০৩ ঘ. | |
| |
| |
|
__._,_.___