বিশেষ প্রতিনিধি ॥ অবশেষে বিএনপি সকলকে ভালবাসার ফতোয়া দিল। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে একটির পর একটি নাটক হচ্ছে। এই নাটকের প্রডিউসার বিএনপি, পরিচালক হলো জামায়াত, অভিনেতা শিবির আর পাবলিকেশনের ভূমিকায় রয়েছে আমাদের দেশ। বুধবার তথ্য অধিদফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু একথা বলেন। তিনি বলেন, শাহবাগে তরুণদের আন্দোলন নিয়ে আমার দেশ, সংগ্রাম, নয়া দিগন্ত জঙ্গী সাংবাদিকতা শুরু করেছে। ব্লগে প্রচারের নামে তারা মহানবীর (স) নামে যে কুৎসা প্রচার করছে মূলত তা ইসলাম পরিপন্থী। তাদের এই প্রচার ইসলামের বিরুদ্ধে। সমাজে দাঙ্গা লাগানোর জন্য তারা এ জাতীয় অপপ্রচার চালাচ্ছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, এ পত্রিকাগুলো মিথ্যা বানোয়াট তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে ধর্মপ্রাণ মানুষের মনে উন্মাদনা সৃষ্টির মাধ্যমে দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছে। এ সব পত্রিকা জাতিকে বিভক্ত করার কুটিল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। বাংলাদেশের সাংবাদিকতা একটি বস্তুনিষ্ঠ ঐতিহ্য তৈরি করেছে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, জাতির সব ক্রান্তিকালে সংবাদপত্র জাতির বিবেক ও জনগণের সম্মিলিত কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করেছে। কিন্তু আমরা ভয়াবহ উদ্বেগের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী তিনটি পত্রিকা সাংবাদিকতার নামে বেপরোয়া আচরণ দেখে স্তম্ভিত।
তিনি বলেন, সাধারণ পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা যাচ্ছে, এসব পত্রিকা সাংবাদিকতার নামে অপসাংবাদিকতা করছে। একজন সাংবাদিক হিসেবে আপনারা সাংবাদিকতার মূল নীতি, সংবাদ, গণিত, রসায়ন সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখেন। ওই সব পত্রিকা অপসাংবাদিকতার উদ্দেশ্যে যে, এসব করছে, তা আপনাদের স্পষ্ট ধারণা রয়েছে।
তিনি বলেন, দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চক্রান্ত নাটকের প্রযোজক হচ্ছে বিএনপি। আর পরিচালক হচ্ছে জামায়াত। এ নাটকে নায়ক-নায়িকারা হচ্ছেন সশস্ত্র জামায়ত-শিবির জঙ্গী। আর পরিবেশকের দায়িত্ব পালন করছে আমার দেশ পত্রিকা।
আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে গণমাধ্যমের যে আইন-কানুনগুলো আছে, সে আইনে কোনও সংবাদপত্র নিষিদ্ধ করা যাবে না। সংবাদপত্রের মুনাফা বাড়ানোর প্রতিযোগিতা থেকে হলুদ সাংবাদিকতার জন্ম হয়েছিল। এর ভয়াবহ রূপ ছিল, অবিভক্ত ভারতে ১৯৪৬ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। ওই দাঙ্গায় ৫ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তাই আমরা সবাই ধর্মকে পুঁজি করে ব্যবসা করার বিরুদ্ধে, সাংবাদিকতার নামে বিভ্রান্তিকর প্রচারণার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হবো। শাহবাগের গণআন্দোলন নিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শাহবাগে তরুণ প্রজন্মের গণআন্দোলন সমসাময়িক ইতিহাসের সবচেয়ে উজ্জ¦ল ঘটনা। জেগে উঠেছে দৃপ্ত বলিষ্ঠ তারুণ্য, জেগে উঠেছে সত্যিকারের সম্ভাবনার বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বীরত্ব, অঙ্গীকার আর স্বপ্নের পুনর্জাগরণ ঘটেছে। যুদ্ধাপরাধী, রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অভিযানে তাদের সাহসী উচ্চারণে সাড়া দিয়েছেন দেশের সব মানুষ। জনমানুষের চেতনা আর বিবেকের প্রতিনিধি হিসেবে দেশের প্রধান ধারার সকল গণমাধ্যম এ আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছে।
তিনি বলেন, এসব গণমাধ্যম বহুমাত্রিক ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণসহ সাধারণ দর্শক শ্রোতার কাছে পৌঁছে দিয়েছে, এ আন্দোলনের নতুন অর্থময়তা ও পথরেখা অনুসন্ধান করেছে। কেবল কাভার করা নয়, এ আন্দোলনে আমাদের প্রধান ধারার গণমাধ্যম অংশগ্রহণও করেছে। শুধু তাই নয়, এ আন্দোলনের আগে জনমনস্তত্ত্বে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও আবেগ পৌঁছে দেয়ার জন্য তারা নিরন্তর কাজ করে গেছে।
শাহবাগ আন্দোলন নিয়ে সাংবাদিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সাইবার পরিসর এবং সাইবারচারীদের সঙ্গে প্রধান ধারার গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকদের এ সংযোগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ বিনির্মাণের গতিকে ত্বরান্বিত করবে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রধান ধারার সব দৈনিক, সাপ্তাহিক, টেলিভিশন চ্যানেল এবং রেডিওকে এ ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের জন্য ধন্যবাদ জানাই।