সৈন্যদের ব্যাংকারগুলিতে এসব মেয়েকে সারাক্ষণই নগ্ন অবস্থায় রাখা হতো। ডিসেম্বর মাসের ১৬ তারিখে পাকিস্তানী সেনারা আত্মসমর্পণের পর এসব নারীর অধিকাংশেরই ছিন্নভিন্ন দেহাবশেষ আবিষ্কৃত হয়।'
জন হেস্টিংস নামে এক মিশনারি বলেছিলেন, 'পাকিস্তানী সৈন্যরা... মেয়েদের যোনিপথে বেয়নেট ঢুকিয়ে তাদের হত্যা করেছে।' মেয়েদের মসজিদে আটকে রেখেও ধর্ষণ করা হয়েছে। সাতক্ষীরার একটি গ্রামের মসজিদ থেকে বেশ কিছু নগ্ন নারী উদ্ধারের পর এ ধরনের ঘটনা নজরে আসে। এ সমস্ত বিবেচনায় নিয়ে বলা যেতে পারে, ধর্ষিত নারীর সংখ্যা ছয় লাখের কাছাকাছি হতে পারে বা তার চেয়েও কিছু বেশি, কম নয়। ১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়া, কোরিয়া, চীন, ফিলিপিন্স জাপানীদের অধীনে ছিল। সেখানে পাঁচ বছরে তারা প্রায় দুই লাখ নারী ধর্ষণ করে। এসব দেশের আয়তনও জনসংখ্যার সঙ্গে বাংলাদেশের আয়তন ও জনসংখ্যার তুলনা করলে বাংলাদেশে নারী নির্যাতন, ধর্ষণের ব্যাপকতা ও তীব্রতা বোঝা যাবে। বিশ্বের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। আট মাসে রক্ষণশীল হিসেবে সাড়ে চার লাখের ওপর ধর্ষণ। আরেকটি হিসাবে জানা যায়, ছয় বছরব্যাপী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে 'গোটা ইউরোপে নাৎসি ও ফ্যাসিস্ট বাহিনী সম্মিলিতভাবেও এত বেশি নারীকে ধর্ষণ করেনি।'
নারীদের নির্যাতনের/ ধর্ষণের বিষয়টিকে ডা. হাসান চার ভাগে ভাগ করেছেন- স্পট রেপ, মাস বা গ্যাঙ রেপ, রেপ ইন কাস্টোডি ও সেক্সুয়াল সেøভারি।
অবশ্য, একদিক থেকে বিচার করলে এই বিভাজনে তেমন কিছু আসে যায় না। এ্যাকাডেমিক আলোচনা ছাড়া স্থানিক বা গণধর্ষণ যাই হোক না কেন অন্তিমে তা ধর্ষণই। আবার স্থানিক ধর্ষণও অনেক সময় পরিণত হয়েছে গণধর্ষণে। গণধর্ষণের পর আবার যৌন দাসত্বে।
স্পট রেপ বা স্থানিক ধর্ষণ মার্চ থেকে শুরু করে পাকিস্তানীদের পরাজয় পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। গ্রামে গ্রামে বাড়িতে বাড়িতে ঢুকে এমনকি শহরাঞ্চলেও বাড়িতে ঢুকে ধর্ষণ। অনেক সময় দুই-তিন জন সৈন্য এসে একই নারীকে ধর্ষণ করে চলে গেছে। এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটেছে। আমাদের সংগৃহীত কেস স্টাডিগুলোর অধিকাংশ স্থানিক ধর্ষণ।
একই নারীকে একই জায়গায় আবার কয়েকজন মিলে ধর্ষণ করেছে সেটিকে গণধর্ষণ আখ্যায়িত করেছেন ডা. হাসান। এই ধরনের কেস স্টাডি আছে এই গ্রন্থে। আবার একই সঙ্গে অনেককে ধর্ষণ ও গণধর্ষণ করা হয়েছে। তিনি নাটোরের ছাতনী গ্রামের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন। হানাদাররা আসছে এ খবর পেয়ে পুরুষরা একটি ঘরে মেয়েদের ঢুকিয়ে দরজায় শিকল এঁটে পালাবার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু পারেননি। তাদের হত্যা করা হয়। তারপর সৈন্য ও বিহারিরা ওই ঘরে উপস্থিত হয়। সেখানে ১৫০ জন মহিলা ছিলেন। মেয়েদের গয়নাগাটি লুট করার পর তাদের বাইরে নিয়ে লাইনে দাঁড় করানো হয়। জোহরা নামে একজন বীরাঙ্গনা জানিয়েছেন, 'পাকিরা সেই সময় আমাদের কু প্রস্তাব দিল। কিন্তু আমরা তাদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তারা আমাদের বুকে বন্দুক তাক করল। ভয় দেখালো তাদের প্রস্তাবে রাজি না হলে বাচ্চাদের পা ছিঁড়ে ফেলবে। তখন বাধ্য হলাম আমরা তাদের কথামতো কাজ করতে। এরপর বাইরে দাঁড়ানো মেয়েদের পাকিরা এক এক করে ঘরের মধ্যে নিয়ে যাচ্ছিল আবার বের করে নিয়ে আসছিল। ... অনেক মেয়েকে বাড়ির বাইরেও নিয়ে যাচ্ছিল। আমার জাকেও তারা ধরে নিয়ে গিয়েছিল। আমি নিজেও পাকিদের গণধর্ষণের শিকার হলাম।'
সেনা ঘাঁটিতে বন্দী করে রেখে ধর্ষণকে ডা, হাসান 'রেপ ইন কাস্টোডি' বলে উল্লেখ করেছেন। এ ধরনের ঘটনা সারা দেশেই ঘটেছে। যেখানেই ঘাঁটি ছিল সেখানেই মেয়েদের নিয়ে বন্দী করে রাখা হয়েছে। ডা. হাসান উল্লিখিত যৌন দাসত্বও এই পর্যায়ে পড়ে। এমনকি বাংকারেও মেয়েদের নিয়ে রাখা হতো। দিনাজপুরের একটি এলাকায় হানাদার পরাজিত হয়ে পালিয়ে যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা উল্লেখ করেছেন, 'এরপর আমরা সেখানে গিয়ে বাংকারের ওপরে কিছু রক্তমাখা কাপড়-চোপড় পড়ে থাকতে দেখলাম।.... ভেতরে তাকিয়ে দেখলাম দুটি মেয়ে বাংকারের ভেতরে একটি চৌকির ওপর উলঙ্গ অবস্থায় বসে আছেন। তারা বাংকার থেকে উঠে আসতে পারছিলেন না। এই অবস্থায় আমরা বাংকারে না ঢুকে পাশের গ্রাম থেকে কিছু কাপড়চোপড়সহ কয়েকজন মহিলাকে নিয়ে আসি। তারপর একটি বাঁশের মইয়ের সাহায্যে গ্রামের মহিলাদের বাংকারের ভেতরে নামিয়ে কাপড় পরিয়ে ঐ দুটি মেয়েকে ওপরে উঠিয়ে আনি। মেয়ে দুটির নাম ছিল আসমা খাতুন ও মরিয়ম বেগম। এদের একজন ছিলেন আইএ পাস, অন্যজন ছিলেন মেট্রিক পরীক্ষার্থী। মা-বাবার সঙ্গে ভারতে পালিয়ে যাবার সময় এরা ধরা পড়েন।'
চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে খ- যুদ্ধের পর পাকিরা পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা খবর পেয়েছিলেন, ওই ক্যাম্পে পাকিস্তানী ও রাজাকাররা কিছু মেয়েকে আটকে রেখেছে। তাদের উদ্ধারের জন্যই মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানীদের আক্রমণ করে। ডা. বদরুন নাহার ছিলেন তাঁদের সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন, 'স্কুলের ভেতরে গোপন একটি বাংকার থেকে উলঙ্গ ও অর্ধমৃত অবস্থায় ১২টি মেয়েকে উদ্ধার করলাম। পরে সেখান থেকে তাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসা হলো। আমি সেবা দিয়ে তাদের সুস্থ করে তুললাম। পরে যুদ্ধের তিন মাস ধরে তারা আমরা কাছেই ছিল। দেশ স্বাধীন হলে আমরা তাদের গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দিতে সাহায্য করি...। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শরীয়তপুর থেকে চাঁদপুর হয়ে কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে তারা ভারত যাচ্ছিল। পথে শাহরাস্তির সুলতান ভুঁইয়া নামের এক রাজাকার কমান্ডার তাদের আটক করে। এ সময় রাজাকাররা পরিবারে অন্য সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করে।' বাংলাদেশ জুড়ে পাকিস্তানী সৈন্যরা এ কাজ করেছে। আমাদের সংগৃহীত কেস স্টাডিগুলোতে ক্যাম্পে নিয়ে আটক রাখা বা যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করার কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ হয়েছে।
ডা. হাসান আরেকটি দিকের কথা তুলে ধরেছেন যা ছিল আমাদের অনেকের অজানা। তাহলো কারাগারে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ। বিভিন্ন কারণে নারীদের জেলে এনে রাখা হতো এবং তাদের ধর্ষণ করা হতো। যেমন বরগুনার ক্লাস সেভেন পড়া মালতী রানী রায় জানিয়েছেন, 'বর্বর পাকিরা কারাগারের অভ্যন্তরে আটক সকল মহিলাকে পালাক্রমে বীভৎসভাবে ধর্ষণ করেছে। প্রতিরাতে আটক মহিলাদের মধ্য থেকে বেছে বেছে কয়েকজনকে বের করে পাকিদের প্রমোদ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত পার্শ্ববর্তী ডাক বাংলাতে নিয়ে যেত।
একই জেলে আটক পুষ্পরাণী জানিয়েছেন, তাদের জেলখানায় রাখা হয়েছিল। গ্রামের কিছু পরুষদের সঙ্গে তাদের বন্দী করা হয়। পাকিরা মহিলাদের ডাকবাংলায় নিয়ে সারা রাত নির্যাতন করে ভোর বেলায় লাল কাপড় পরিয়ে আবার জেলখানায় পাঠিয়ে দিত।' বর্বর পাকি সৈন্যদের পাশবিক নির্যাতনের চিহ্ন সেসব হতভাগ্য নারীর শরীরে এতটাই স্পষ্ট থাকত যে, তাদের দিকে তাকানো যেত না।' (চলবে)
॥ দুই ॥
► নীলিমা ইব্রাহীম আর একাত্তরের বীরাঙ্গনা: বাঙালির নিভৃত নিরঞ্জনা - শনিবারের চি
***
"একাত্তরে মা-বোনদের সম্ভ্রম নষ্টকারী, হত্যাকারী সেইসব ঘৃণিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই"
***
http://blog.bdnews24.com/laboni/12415
সূত্র : জেনোসাইড বাংলাদেশ
Proven charges against Bachchu Razakar
Dhaka: Seven of eight charges of crimes against humanity committed during the 1971 Liberation War were "proved beyond doubt" leading to death penalty for Abul Kalam Azad alias Bachchu Razakar.
The International Crimes Tribunal-2 handed him down the capital punishment finding him guilty of six charges under Section 3(2) (a) and under Section 3(2) (c.i) of the International Crimes Tribunal Act.
The tribunal, however, acquitted him of one specific charge of abduction, confinement and torture as it could not be proved beyond doubts.
The proven charges are-
1. Abduction, confinement and torture of Ranjit Nath.
2. Murder of Sudhangshu Mohan Roy.
3. Murder of Madhab Chandra Biswas.
4. Murder of Chitta Ranjan Das.
5. Rape of three women.
6. Murder of Haripada Saha and Prabir Kumar Saha.
7. Genocide in Hasamdia village of Boalmari in Faridpur.
"He (Bacchu) is found guilty of the offences of crimes against humanity listed in charge number three, four and six and for the offence of genocide listed in charge number seven and he be convicted and sentenced to death and be hanged by the neck till he is dead," Chairman of the three-member tribunal Justice Obaidul Hassan Shaheen pronounced the verdict in the crowded courtroom on Monday noon.
__._,_.___