জামায়াতের 'পলাতক' নেতারা KHALEDA'S CHARACTER IS TO PROTECT JAMAAT-SHIBIR !!!
খালেদার মঞ্চে বগুড়া অফিস
খালেদার মঞ্চে বগুড়া অফিস
হাজার হাজার মানুষের জমায়েতেই শুধু নয়, একেবারে মঞ্চে জামায়াত নেতাদের দেখা গেলেও সদর থানার ওসি কালের কণ্ঠকে বলেন, আসামিদের সমাবেশ করার বিষয়টি পুলিশের জানা নেই। আর পুলিশ সুপার বললেন, 'ভিআইপি প্রোগ্রাম' হওয়ায় তাঁরা আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি।
গতকাল রবিবার বগুড়ার মাটিডালি এলাকায় বিএনপি আয়োজিত শোক সমাবেশে গিয়ে দেখা যায়, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার মঞ্চে আসীন ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন এমন কয়েকজন নেতা, যাঁরা কি না সাম্প্রতিক সময়ের সহিংসতার ঘটনায় করা একাধিক মামলার আসামি। এই নেতারা হলেন বগুড়া জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন, শহর জামায়াতের সেক্রেটারি মাজেদুর রহমান জুয়েল ও ইসলামী ঐক্যজোট একাংশের আমির ইঞ্জিনিয়ার সামছুল হক। শুধু তাই নয়, ইসলামী ঐক্যজোট একাংশের আমির ইঞ্জিনিয়ার সামছুল হকের কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সমাবেশ।
গত ৩১ জানুয়ারি তারিখে জামায়াতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলাকালে বগুড়ায় পুলিশ ও সরকারদলীয় নেতা-কর্মীর সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। সদর থানা সূত্র মতে, ওই সংঘর্ষে শিবিরের দুজন ও একজন জামায়াতকর্মী নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়। ওই দিনই বিকেলে জামায়াত-শিবির সংগঠিত হয়ে শহরের সাতমাথা এলাকায় এলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের কারণে শহরের কেন্দ্রস্থল রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। রাতে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় যে মামলা করা হয় সেই মামলার অন্যতম আসামি হলেন জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন। এ ছাড়া ৩ মার্চ ভোর রাতে বগুড়া শহরে তাণ্ডব এবং সদর থানা ও পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার ঘটনার আসামি হলেন শহর জামায়াতের সেক্রেটারি মাজেদুর রহমান জুয়েল। আর ২২ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার জুমার নামাজের পর পুলিশের উপস্থিতিতে কথিত তৌহিদী জনতার ব্যানারে বগুড়া শহরের কেন্দ্রস্থল সাতমাথায় তাণ্ডব চালানো হয়। এ সময় ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে নির্মিত গণজাগরণ মঞ্চ। এ ঘটনায় করা মামলার অন্যতম আসামি হলেন ইসলামী ঐক্যজোট একাংশের আমির ইঞ্জিনিয়ার সামছুল হক। ঘটনার পর থেকে দলীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও তাঁদের সরব উপস্থিতি দেখা গেছে। কিন্তু তার পরও বগুড়া সদর থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলে আসছেন, অভিযুক্তরা পলাতক রয়েছে বলে অভিযান সত্ত্বেও গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না।
পুলিশের ভাষ্য : বগুড়া মাটিডালি এলাকায় বিএনপি আয়োজিত শোক সমাবেশটি দুপুর সোয়া ১২টায় শেষ হওয়ার পরই যোগাযোগ করা হয় বগুড়া সদর থানার ওসি সৈয়দ সহিদ আলমের সঙ্গে। ওসি কালের কণ্ঠকে বলেন, জামায়াতের অভিযুক্ত ওই আসামিরা প্রকাশ্যে বের হয়েছেন এমন কোনো তথ্য জানা নেই তাঁর। পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু পলাতক থাকার কারণে তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
সদর থানার ওসির সঙ্গে কথা বলার পর কালের কণ্ঠ যোগাযোগ করে বগুড়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মোজাম্মেল হকের সঙ্গে। মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে সমাবেশ করার পরও তাদের গ্রেপ্তার না করার কথা স্বীকার করে এসপি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'অভিযুক্ত জামায়াত নেতারা গতকালই প্রকাশ্যে সমাবেশে অংশ নিয়েছেন। যেহেতু একটি ভিআইপি প্রোগ্রামে তাঁরা ছিলেন, এ কারণে পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়নি। পরে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
অভিযুক্তরা জামিন নিয়েছেন কি না সে ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হয় জেলা জামায়াতের আইটি বিভাগের দায়িত্বে থাকা শহর ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তিনি কালের কণ্ঠকে জানান, তাঁদের দলের সিনিয়র এই নেতারা জামিনে নেই। তাঁরা যথাযথ নিয়মেই দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন।
'শিবির, শিবির' : শোক সমাবেশে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদলের চেয়ে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিই বেশি চোখে পড়ে। জেলার বিভিন্ন স্থান ছাড়াও পাশের জেলা থেকে শিবিরের তরুণ ও কিশোর নেতা-কর্মীরা এই শোক সমাবেশে অংশ নেয়। তারা নিজেদের দলের নামে এবং নেতাদের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিতে শুরু করলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এই পর্যায়ে উত্তেজিত নেতা-কর্মীদের স্লোগান ঠেকাতে মাইকে দাঁড়িয়ে শান্ত থাকার নির্দেশ দেন শহর জামায়াতের সেক্রেটারি মাজেদুর রহমান জুয়েল।
গতকাল ভোর থেকেই জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা সেখানে সমবেত হতে শুরু করেন। সমাবেশ মঞ্চের সম্মুখভাগসহ সভাস্থলের একটা বড় অংশজুড়ে মাথায় কালো কাপড়ের ফিতা বেঁধে অবস্থান নেয় শিবির। এ ছাড়া পেছনেও বেষ্টনীবদ্ধ ছিল তাদের নেতা-কর্মীদের অবস্থান। খালেদা জিয়া মঞ্চে আসার আগ থেকেই মঞ্চের সামনে ও পেছনে থেকে শিবিরের নেতা-কর্মীরা 'শিবির-শিবির' বলে স্লোগান দিতে শুরু করে। স্লোগান ঠেকাতে এক সময় সমাবেশের উপস্থাপক জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শেখ তাহা উদ্দিন নাহিন তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্লোগান দিতে নিষেধ করেন। কিন্তু তা উপেক্ষা করে স্লোগান চালাতে থাকলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেন। তাতেও কাজ না হওয়ায় মাইকে দাঁড়ান শহর জামায়াতের সেক্রেটারি মাজেদুর রহমান জুয়েল। তিনি দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, 'এরপর আর কেউ দলের নিজস্ব কোনো স্লোগান দেবেন না। শুধু বিরোধীদলীয় নেতা এবং ১৮ দলের দাবির বিষয়ে স্লোগান দেবেন। এটি আমাদের নির্দেশ। এটি মানা না হলে সেটি হবে শৃঙ্খলা ভঙ্গের শামিল। তাঁর নির্দেশের পর আর কোনো দলীয় স্লোগান দেয়নি জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা।'
মুক্তি চাইলেন খালেদা : বগুড়ার সমাবেশে খালেদা জিয়া আদালতের এজলাস ভাঙচুরের একটি মামলার আসামিদেরও মুক্তি দাবি করলেন। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি যুবদলের ছয় নেতার জামিন না দেওয়ায় এজলাস ভাঙচুর করা হয়েছিল। এ-সংক্রান্ত মামলার আসামিদের মুক্তি চেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের জেলে আটক রেখেছে।
গত বছর ১৩ ডিসেম্বর বগুড়ায় হরতালের দিন যুবদলের নেতা-কর্মীদের পিকেটিংয়ের সময় ককটেলের আঘাতে বগুড়া সরকারি আযিযুল হক কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক এ টি এম জগলুল পাশা মাথায় আঘাত পান। এ ঘটনায় দায়ের মামলায় যুবদলের ছয় নেতার জামিন নামঞ্জুর করা হয়েছিল।
__._,_.___