শনিবার, ৯ মার্চ ২০১৩, ২৫ ফাল্গুন ১৪১৯
জামায়াতের কিলিং মিশনের টার্গেট- তকি রাজীব সানিরা
মহিউদ্দিন আহমেদ ॥ শাহবাগের স্বাধীনতা প্রজন্ম চত্বরের গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের বিরুদ্ধে দেশ ও ধর্মদ্রোহী জামায়াত-শিবির মাসব্যাপী নানা চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র করে পরাস্ত হয়ে এবার অনলাইন নেটওয়ার্ক এ্যাক্টিভিস্ট ও তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যার মিশনে নেমেছে। ইতোমধ্যে প্রজন্মসেনা রাজীব, নারায়ণগঞ্জের গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোক্তা রফিউর রাব্বির ছেলে তানভির মুহাম্মদ ত্বকীকে হত্যা করেছে। প্রজন্মসেনা প্রকৌশলী সানিউরকে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়েছে। সর্বশেষ শুক্রবার নারী জাগরণী সমাবেশে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
যে প্রজন্মসেনাদের টার্গেট করে মাঠে নেমেছে জামায়াত-শিবির চক্র তাদের হুমকি ও হত্যা করে আন্দোলন নস্যাত করতে পারবে না বলে দৃঢ়তার সঙ্গে জানালেন শাহবাগের প্রজন্মযোদ্ধারা। যুদ্ধাপরাধীদের দলের ষড়যন্ত্র ও হত্যার মিশন বিষয়ে প্রজন্মসেনা আমিনুল হক পলাশ, তন্ময় আহমেদ তানভীর, এম আরাফাত জনকণ্ঠকে বলেন, দেশপ্রেম নিয়ে মৃত্যুকে ভালবেসে যুদ্ধে নেমেছি। '৭১-এর মতো বিজয়ী হয়ে ঘরে ফিরব। তাঁরা বলেন, গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরুর পর থেকে জামায়াত-শিবিরের সকল ষড়যন্ত্রকে যেভাবে নস্যাত করে সাধারণ মানুষের সমর্থন নিয়ে আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী করা হয়েছে। ঠিক একইভাবে বর্তমান পরিস্থিতিও সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিহত করে আন্দোলন অব্যাহত রাখা হবে। তাছাড়া জামায়াত-শিবিরের হায়েনাদের কোন ধরনের রক্তচক্ষুকে নবজাগরণ মঞ্চের প্রজন্মসেনারা ভয় করে না বলে আরও আগে ঘোষণা দিয়েছেন মঞ্চের আহ্বায়ক ডা. ইমরান এইচ সরকার। এক সমাবেশে তিনি জামায়াত-শিবিরের হায়েনাদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে যারা রাজপথে নেমেছে তারা শহীদদের উত্তরসূরি। তাই পরাজিত শক্তির কোন হুমকিকে প্রজন্মসেনারা ভয় করে না। তিনি বলেন, সকল যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধসহ গণজাগরণ মঞ্চের ঘোষিত ছয় দফা দাবি আদায় করে ঘরে ফিরবেন তাঁরা।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি আত্মস্বীকৃত খুনী 'মিরপুরের কসাই'খ্যাত জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে আদালত যুদ্ধাপরাধী সাব্যস্ত করলেও ফাঁসির রায় না দিয়ে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়ার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে প্রজন্মযোদ্ধারা। সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে যখন আন্দোলন সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে, ঠিক তখনই একাত্তরের স্টাইলে ধর্ম গেল, জাত গেলÑ ধরনের ধুয়া তুলে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র শুরু করে জামায়াত-শিবির চক্র। কিন্তু তাদের কোন ষড়যন্ত্র হালে পানি না পাওয়ায় তারা '৭১-এর মতো হত্যার পথই বেছে নেয়। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক, প্রজন্মসেনা রাজীব হায়দারকে ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। ইতোমধ্যে গোয়েন্দা পুলিশ হত্যার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে ৫ শিবির সন্ত্রাসীকে আটক করেছে। রিমান্ডে তারা হত্যার কথা স্বীকারও করেছে। হত্যার পরিকল্পনাকারী এবং নির্দেশদাতাও শিবির করে বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে ওরা। এছাড়া শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের আরও ১৯ প্রজন্মসেনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র নিয়ে একটি তালিকা তৈরি করে জামায়াত-শিবির। তালিকাটি গোয়েন্দারা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। রাজীবকে হত্যা করে আন্দোলন বন্ধ করতে পারেনি বরং তা আরও জোরদার হয়েছে, এমনটি দেখে তারা গত কয়েকদিন কৌশল পরিবর্তন করে তথাকথিত রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে রাস্তায় নেমে পুলিশ হত্যা, সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়িতে আগুন ও মন্দিরে আগুন, মূর্তি ভাংচুর করে। এতেও পিছু হটেনি গণজাগরণ মঞ্চ। বরং জামায়াত-শিবিরের ডাকা হরতাল প্রতিহত করে বাহাদুরশাহ পার্কে সমাবেশ করে। এমন পরিস্থিতিতে তারা আবারও হত্যার পথ বেছে নিয়েছে। নারায়ণগঞ্জে গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোক্তা রফিউর রাব্বির বড় ছেলে তানভির মুহাম্মদ ত্বকীকে জামায়াত-শিবিরের ঘাতকরা অপহরণ করে নিয়ে যায়। ৬ ফেব্রুয়ারি বুধবার বিকেল থেকে নিখোঁজ ছিল শহরের চাষাঢ়ায় অবস্থিত ইংরেজী মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবিসি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের 'এ' লেভেলের শিক্ষার্থী তানভির। শহরের চারারগোপ এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীসংলগ্ন খাল থেকে শুক্রবার পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। তানভিরের লাশ পাওয়ার খবর শহরে ছড়িয়ে পড়ার পর পরই জামায়াত-শিবির ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে ওই এলাকার সাধারণ মানুষ বলাবলি করতে থাকে। তার বাবা গণজাগরণ মঞ্চের প্রধান উদ্যোক্তা। যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবিতে মাঠে নামায় তার প্রিয় সন্তানকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। একইসঙ্গে শুক্রবার তানভির হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে দুপুরে শহরের চাষাঢ়া এলাকায় কালো পতাকা হাতে মিছিল করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতাকর্মীরা। মিছিল-পরবর্তী সমাবেশ থেকে জোটের সভাপতি প্রদীপ ঘোষ বাবু শনিবার নারায়ণগঞ্জে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ঘোষণা করেন। হরতালে জেলার বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শ্রমিক সংগঠন সমর্থন দিয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে ঢাকার পল্লবী পূরবী সিনেমা হলের পাশে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে প্রকৌশলী সানিউর রহমান নামের আরেক প্রজন্মসেনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করে ঘাতকরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুর্বৃত্তদের একজন সানিউরের মাথায় চাপাতি দিয়ে সজোরে কোপ দেয়। সানিউরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু দেবজৈতি রুদ্র হাসপতালে জনকণ্ঠকে বলেন, তার বন্ধুকে জামায়াত-শিবিরের ঘাতকরা হত্যার উদ্দেশ্যে কোপ দেয়। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সানিউরসহ তারা কয়েক বন্ধু মিলে রাজাকারের কীর্তি-কলাপ নামের একটি বই লেখেন। বইটিতে তুলে ধরা হয় রাজাকারের অতীত, বর্তমান অবস্থা। ১৯৭১ সালে তারা কে কি করেছে। নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা থেকে শুরু করে সকল কুকর্ম। বইটি গত মাসের ৭ তারিখে প্রকাশিত হয় কাঁটাবন বুক মেকার পাবলিকেশন থেকে।
শাহবাগ আন্দোলন শুরুর পর থেকেই সানিউলকে বিভিন্নভাবে প্রাণনাশসহ নানা ধরনের হুমকি দেয়া হচ্ছিল বলে জানান সানিউরের বন্ধু।
সর্বশেষ শুক্রবার শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চে নারী জাগরণী সমাবেশকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করে জামায়াত-শিবির। গণজাগরণ মঞ্চ থেকে বোমা নিক্ষেপের জন্য যুদ্ধাপরাধীদের দল ও তাদের ছাত্র সংগঠনকে অভিযুক্ত করা হয়।
একই সঙ্গে সমাবেশ থেকে নেতৃবৃন্দ আবারও ঘোষণা করেন কোন ধরনের হামলা, হত্যা ও হুমকি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তিকে পরাজিত করা যাবে না। যেমনটি '৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পারেনি বরং তরুণ প্রজন্ম এ যুদ্ধেও বিজয়ী হয়ে ঘরে ফেরার শপথ নিলেন শুক্রবারের সমাবেশেও।
এদিকে শাহবাগের প্রজন্মসেনা সানিউর রহমান সানিকে কুপিয়েছে পাঞ্জাবি পরা দুই যুবক। পুলিশ এই ঘটনার হামলাকারীদের শনাক্ত করতে পারেনি। পুলিশের ধারণা, জামায়াত-শিবিরের নির্দেশেই তাদের দুর্বৃত্তরা কুপিয়েছে সানিকে। রক্তাক্ত জখম অবস্থায় সানিকে প্রথমে স্থানীয় গ্যালাক্সি ক্লিনিকে ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। শুক্রবার দুপুরে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে গেছেন প্রকৌশলী সানিউর।
পল্লবী থানা পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম সানিউরের ওপর হামলাকারীদের পরিচয় শনাক্ত ও হামলার কারণ উদঘাটনের জন্য অনুসন্ধান শুরু করেছে। প্রাথমিক তদন্তে প্রতীয়মান হচ্ছে, এটা কোন মৌলবাদী বা জঙ্গী গোষ্ঠীর কিংবা জামায়াতÑশিবিরের হাতেই এই ঘটনা ঘটেছে।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় সানি সাংবাদিকদের বলেছেন, আগে থেকেই তাকে অনুসরণ করছিল পাঞ্জাবি পরা দুই যুবক। ফার্মগেট থেকে ইটিসি পরিবহনের বাসে ওঠার পর পাঞ্জাবি পরা ওই দুই যুবক তাকে অনুসরণ করতে থাকে। এতে তার সন্দেহের উদ্রেগ হয়। কিন্তু ততটা তাৎক্ষণিকভাবে গুরুত্ব দেয়নি। পূরবী সিনেমা হলের সামনে বাস থেকে নামার পর তার সঙ্গে বাস থেকে নেমে পড়ে হুজুর ধরনের যুবকরাও। বাস থেকে নেমে গলিতে ঢোকার পর পরই পেছন থেকে একজন বলে ওঠে, এখনই মার। এরপরই মাথায় কোপ মারে একজন। দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে দু'পায়ে এলোপাতাড়ি কোপায় তারা। লোকজন দ্রুত চলে আসায় অন্ধকারে মিলিয়ে যায় হামলাকারীরা।
যে প্রজন্মসেনাদের টার্গেট করে মাঠে নেমেছে জামায়াত-শিবির চক্র তাদের হুমকি ও হত্যা করে আন্দোলন নস্যাত করতে পারবে না বলে দৃঢ়তার সঙ্গে জানালেন শাহবাগের প্রজন্মযোদ্ধারা। যুদ্ধাপরাধীদের দলের ষড়যন্ত্র ও হত্যার মিশন বিষয়ে প্রজন্মসেনা আমিনুল হক পলাশ, তন্ময় আহমেদ তানভীর, এম আরাফাত জনকণ্ঠকে বলেন, দেশপ্রেম নিয়ে মৃত্যুকে ভালবেসে যুদ্ধে নেমেছি। '৭১-এর মতো বিজয়ী হয়ে ঘরে ফিরব। তাঁরা বলেন, গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরুর পর থেকে জামায়াত-শিবিরের সকল ষড়যন্ত্রকে যেভাবে নস্যাত করে সাধারণ মানুষের সমর্থন নিয়ে আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী করা হয়েছে। ঠিক একইভাবে বর্তমান পরিস্থিতিও সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিহত করে আন্দোলন অব্যাহত রাখা হবে। তাছাড়া জামায়াত-শিবিরের হায়েনাদের কোন ধরনের রক্তচক্ষুকে নবজাগরণ মঞ্চের প্রজন্মসেনারা ভয় করে না বলে আরও আগে ঘোষণা দিয়েছেন মঞ্চের আহ্বায়ক ডা. ইমরান এইচ সরকার। এক সমাবেশে তিনি জামায়াত-শিবিরের হায়েনাদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে যারা রাজপথে নেমেছে তারা শহীদদের উত্তরসূরি। তাই পরাজিত শক্তির কোন হুমকিকে প্রজন্মসেনারা ভয় করে না। তিনি বলেন, সকল যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধসহ গণজাগরণ মঞ্চের ঘোষিত ছয় দফা দাবি আদায় করে ঘরে ফিরবেন তাঁরা।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি আত্মস্বীকৃত খুনী 'মিরপুরের কসাই'খ্যাত জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে আদালত যুদ্ধাপরাধী সাব্যস্ত করলেও ফাঁসির রায় না দিয়ে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়ার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে প্রজন্মযোদ্ধারা। সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে যখন আন্দোলন সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে, ঠিক তখনই একাত্তরের স্টাইলে ধর্ম গেল, জাত গেলÑ ধরনের ধুয়া তুলে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র শুরু করে জামায়াত-শিবির চক্র। কিন্তু তাদের কোন ষড়যন্ত্র হালে পানি না পাওয়ায় তারা '৭১-এর মতো হত্যার পথই বেছে নেয়। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক, প্রজন্মসেনা রাজীব হায়দারকে ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। ইতোমধ্যে গোয়েন্দা পুলিশ হত্যার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে ৫ শিবির সন্ত্রাসীকে আটক করেছে। রিমান্ডে তারা হত্যার কথা স্বীকারও করেছে। হত্যার পরিকল্পনাকারী এবং নির্দেশদাতাও শিবির করে বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে ওরা। এছাড়া শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের আরও ১৯ প্রজন্মসেনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র নিয়ে একটি তালিকা তৈরি করে জামায়াত-শিবির। তালিকাটি গোয়েন্দারা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। রাজীবকে হত্যা করে আন্দোলন বন্ধ করতে পারেনি বরং তা আরও জোরদার হয়েছে, এমনটি দেখে তারা গত কয়েকদিন কৌশল পরিবর্তন করে তথাকথিত রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে রাস্তায় নেমে পুলিশ হত্যা, সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়িতে আগুন ও মন্দিরে আগুন, মূর্তি ভাংচুর করে। এতেও পিছু হটেনি গণজাগরণ মঞ্চ। বরং জামায়াত-শিবিরের ডাকা হরতাল প্রতিহত করে বাহাদুরশাহ পার্কে সমাবেশ করে। এমন পরিস্থিতিতে তারা আবারও হত্যার পথ বেছে নিয়েছে। নারায়ণগঞ্জে গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোক্তা রফিউর রাব্বির বড় ছেলে তানভির মুহাম্মদ ত্বকীকে জামায়াত-শিবিরের ঘাতকরা অপহরণ করে নিয়ে যায়। ৬ ফেব্রুয়ারি বুধবার বিকেল থেকে নিখোঁজ ছিল শহরের চাষাঢ়ায় অবস্থিত ইংরেজী মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবিসি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের 'এ' লেভেলের শিক্ষার্থী তানভির। শহরের চারারগোপ এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীসংলগ্ন খাল থেকে শুক্রবার পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। তানভিরের লাশ পাওয়ার খবর শহরে ছড়িয়ে পড়ার পর পরই জামায়াত-শিবির ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে ওই এলাকার সাধারণ মানুষ বলাবলি করতে থাকে। তার বাবা গণজাগরণ মঞ্চের প্রধান উদ্যোক্তা। যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবিতে মাঠে নামায় তার প্রিয় সন্তানকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। একইসঙ্গে শুক্রবার তানভির হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে দুপুরে শহরের চাষাঢ়া এলাকায় কালো পতাকা হাতে মিছিল করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতাকর্মীরা। মিছিল-পরবর্তী সমাবেশ থেকে জোটের সভাপতি প্রদীপ ঘোষ বাবু শনিবার নারায়ণগঞ্জে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ঘোষণা করেন। হরতালে জেলার বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শ্রমিক সংগঠন সমর্থন দিয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে ঢাকার পল্লবী পূরবী সিনেমা হলের পাশে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে প্রকৌশলী সানিউর রহমান নামের আরেক প্রজন্মসেনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করে ঘাতকরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুর্বৃত্তদের একজন সানিউরের মাথায় চাপাতি দিয়ে সজোরে কোপ দেয়। সানিউরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু দেবজৈতি রুদ্র হাসপতালে জনকণ্ঠকে বলেন, তার বন্ধুকে জামায়াত-শিবিরের ঘাতকরা হত্যার উদ্দেশ্যে কোপ দেয়। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সানিউরসহ তারা কয়েক বন্ধু মিলে রাজাকারের কীর্তি-কলাপ নামের একটি বই লেখেন। বইটিতে তুলে ধরা হয় রাজাকারের অতীত, বর্তমান অবস্থা। ১৯৭১ সালে তারা কে কি করেছে। নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা থেকে শুরু করে সকল কুকর্ম। বইটি গত মাসের ৭ তারিখে প্রকাশিত হয় কাঁটাবন বুক মেকার পাবলিকেশন থেকে।
শাহবাগ আন্দোলন শুরুর পর থেকেই সানিউলকে বিভিন্নভাবে প্রাণনাশসহ নানা ধরনের হুমকি দেয়া হচ্ছিল বলে জানান সানিউরের বন্ধু।
সর্বশেষ শুক্রবার শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চে নারী জাগরণী সমাবেশকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করে জামায়াত-শিবির। গণজাগরণ মঞ্চ থেকে বোমা নিক্ষেপের জন্য যুদ্ধাপরাধীদের দল ও তাদের ছাত্র সংগঠনকে অভিযুক্ত করা হয়।
একই সঙ্গে সমাবেশ থেকে নেতৃবৃন্দ আবারও ঘোষণা করেন কোন ধরনের হামলা, হত্যা ও হুমকি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তিকে পরাজিত করা যাবে না। যেমনটি '৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পারেনি বরং তরুণ প্রজন্ম এ যুদ্ধেও বিজয়ী হয়ে ঘরে ফেরার শপথ নিলেন শুক্রবারের সমাবেশেও।
এদিকে শাহবাগের প্রজন্মসেনা সানিউর রহমান সানিকে কুপিয়েছে পাঞ্জাবি পরা দুই যুবক। পুলিশ এই ঘটনার হামলাকারীদের শনাক্ত করতে পারেনি। পুলিশের ধারণা, জামায়াত-শিবিরের নির্দেশেই তাদের দুর্বৃত্তরা কুপিয়েছে সানিকে। রক্তাক্ত জখম অবস্থায় সানিকে প্রথমে স্থানীয় গ্যালাক্সি ক্লিনিকে ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। শুক্রবার দুপুরে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে গেছেন প্রকৌশলী সানিউর।
পল্লবী থানা পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম সানিউরের ওপর হামলাকারীদের পরিচয় শনাক্ত ও হামলার কারণ উদঘাটনের জন্য অনুসন্ধান শুরু করেছে। প্রাথমিক তদন্তে প্রতীয়মান হচ্ছে, এটা কোন মৌলবাদী বা জঙ্গী গোষ্ঠীর কিংবা জামায়াতÑশিবিরের হাতেই এই ঘটনা ঘটেছে।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় সানি সাংবাদিকদের বলেছেন, আগে থেকেই তাকে অনুসরণ করছিল পাঞ্জাবি পরা দুই যুবক। ফার্মগেট থেকে ইটিসি পরিবহনের বাসে ওঠার পর পাঞ্জাবি পরা ওই দুই যুবক তাকে অনুসরণ করতে থাকে। এতে তার সন্দেহের উদ্রেগ হয়। কিন্তু ততটা তাৎক্ষণিকভাবে গুরুত্ব দেয়নি। পূরবী সিনেমা হলের সামনে বাস থেকে নামার পর তার সঙ্গে বাস থেকে নেমে পড়ে হুজুর ধরনের যুবকরাও। বাস থেকে নেমে গলিতে ঢোকার পর পরই পেছন থেকে একজন বলে ওঠে, এখনই মার। এরপরই মাথায় কোপ মারে একজন। দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে দু'পায়ে এলোপাতাড়ি কোপায় তারা। লোকজন দ্রুত চলে আসায় অন্ধকারে মিলিয়ে যায় হামলাকারীরা।
শাহবাগে নারী জাগরণী সমাবেশ
মঞ্চের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ, আটক ১৫
প্রজন্ম চত্বরে নারী জাগরণী সমাবেশের কাছে আজ শুক্রবার কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়।
ছবি: মনিরুল আলম
ককটেল বিস্ফোরণের পর তাত্ক্ষণিক প্রতিবাদ মিছিল।
ছবি: মনিরুল আলম
ককটেল বিস্ফোরণের পর তাত্ক্ষণিক প্রতিবাদে সুলতানা কামাল।
ছবি: মনিরুল আলম
ককটেল বিস্ফোরণে আহত র্যাবের সদস্য।
ছবি: মনিরুল আলম
__._,_.___