বেশ কিছুদিন থেকেই পত্রিকার পাতা কিংবা টিভি খুললেই যে শব্দটি বেশ শুনতে পাওয়া যাচ্ছে তা হল "ধর্ম অবমাননা"।
ব্লগ আর ফেসবুকেও এখন শব্দটির ব্যবহার সর্বোচ্চ।
কি এই ধর্ম অবমাননা???
মূলত "অন্য ধর্মের মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত লাগে এমন কিছু বলা বা করাই হল ধর্ম অবমাননা"।
অন্তত বাংলাদেশে ধর্ম অবমাননা বলতে যে শুধু ইসলাম ধর্ম অবমাননাই বোঝায় তা বুঝতে কেমব্রিজে যাওয়া লাগেনা। তখন মনে প্রশ্ন জাগে, তবে মুসলিমদের হাতে মন্দির, গির্জা ও বুদ্ধ মন্দিরে হামলা আর মূর্তি ও পবিত্র গ্রন্থে অগ্নিসংযোগ ও পদদলিত করা কি হিন্দু, বুদ্ধ ও খ্রিস্টানদের ধর্ম অবমাননা নয়???
ব্লগ আর ফেসবুকেও এখন শব্দটির ব্যবহার সর্বোচ্চ।
কি এই ধর্ম অবমাননা???
মূলত "অন্য ধর্মের মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত লাগে এমন কিছু বলা বা করাই হল ধর্ম অবমাননা"।
অন্তত বাংলাদেশে ধর্ম অবমাননা বলতে যে শুধু ইসলাম ধর্ম অবমাননাই বোঝায় তা বুঝতে কেমব্রিজে যাওয়া লাগেনা। তখন মনে প্রশ্ন জাগে, তবে মুসলিমদের হাতে মন্দির, গির্জা ও বুদ্ধ মন্দিরে হামলা আর মূর্তি ও পবিত্র গ্রন্থে অগ্নিসংযোগ ও পদদলিত করা কি হিন্দু, বুদ্ধ ও খ্রিস্টানদের ধর্ম অবমাননা নয়???
ওই চ্যাপটার বাদ দেই, কেননা ওই কথা বললে অনেকেই বলবে "উহা ইসলাম নহে, বিপদগামী নাফরমানদের আপনি মুসলিমদের স্ট্যান্ডার্ড ধরতে পারেন না"। ওকে, তবে প্রতি বছর উৎসব করে হিন্দুদের পূজার প্রাণী, যাকে তারা মা বলে ডাকে সেই গরুকে রাস্তায় জবাই দেয়া কি হিন্দুদের ধর্মানুভুতিতে আঘাত নয়???
এখন কল্পনা করুন, বাংলার হিন্দুরা যদি এখন রাস্তায় শূয়র জবাই দিয়ে অনুষ্ঠান পালন শুরু করে তবে কি বাংলার মুসলিমরা সেটাকে গরু জবাইয়ের উৎসবের মতন সাধারণ ভাবে নেবে ??? কিন্তু তুলনা করলে মুসলিমদের কাছে শুয়োরের মাংস যতটা ঘৃণার ততটাই হিন্দুদের কাছে গরুর মাংস ঘৃণার। ধর্মে আঘাত কি তবে শুধু মুসলিমদের একার লাগে ???
কিছুদিন আগে আমার ফেসবুকের এক পোষ্টে আমি বলেছিলাম "হিন্দুদের কাছে গঙ্গার পানি যতটা পবিত্র, জমজম কূপের পানি মুসলিমদের কাছে ঠিক ততটাই পবিত্র"। সেই পোষ্টে কিছু ইসলাম প্রেমী আমার এই কথার বিরোধিতা করেছিলেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন পিএইচডি স্টুডেন্ট তমা। সেই পোষ্টে তিনি পারলে আমাকে খুন করতেন। তার কথা হল "আপনি পবিত্র জমজমের পানির সাথে গঙ্গার গুয়ের পানির তুলনা করে জমজম, ইসলাম ও মুসলিমদের অপমান করেছেন"। আমি অনেক ভাবে বুঝিয়েও তাকে এটা বোঝাতে পারিনাই যে আমি যা বললাম তা অপেক্ষা আপনি যা বললেন তাতে ধর্ম অবমাননা ও বিশ্বাসে আঘাত বেশী দেয়া হয়েছে। আমি জমজম আর গঙ্গার পানির ধর্মীয় বিশ্বাসের দৃষ্টিতে সমতুল্য তুলনা করেছি মাত্র, আর আপনি হিন্দুদের পবিত্র গঙ্গাকে গুয়ের পানি বলেছেন।
সেদিন বেশ ভালভাবেই বুঝেছিলাম ধর্মানুভুতি নামক মূলো কেবল মুসলিমদের নাকের সামনেই ঝোলে। তাদের কাছে ইসলামের অপমানই শুধু অপমান, কিন্তু তারা টিনের চশমা পড়ে প্রতিনিয়ত অন্য ধর্মকে হেও করে যাচ্ছেন।
এখন কল্পনা করুন, বাংলার হিন্দুরা যদি এখন রাস্তায় শূয়র জবাই দিয়ে অনুষ্ঠান পালন শুরু করে তবে কি বাংলার মুসলিমরা সেটাকে গরু জবাইয়ের উৎসবের মতন সাধারণ ভাবে নেবে ??? কিন্তু তুলনা করলে মুসলিমদের কাছে শুয়োরের মাংস যতটা ঘৃণার ততটাই হিন্দুদের কাছে গরুর মাংস ঘৃণার। ধর্মে আঘাত কি তবে শুধু মুসলিমদের একার লাগে ???
কিছুদিন আগে আমার ফেসবুকের এক পোষ্টে আমি বলেছিলাম "হিন্দুদের কাছে গঙ্গার পানি যতটা পবিত্র, জমজম কূপের পানি মুসলিমদের কাছে ঠিক ততটাই পবিত্র"। সেই পোষ্টে কিছু ইসলাম প্রেমী আমার এই কথার বিরোধিতা করেছিলেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন পিএইচডি স্টুডেন্ট তমা। সেই পোষ্টে তিনি পারলে আমাকে খুন করতেন। তার কথা হল "আপনি পবিত্র জমজমের পানির সাথে গঙ্গার গুয়ের পানির তুলনা করে জমজম, ইসলাম ও মুসলিমদের অপমান করেছেন"। আমি অনেক ভাবে বুঝিয়েও তাকে এটা বোঝাতে পারিনাই যে আমি যা বললাম তা অপেক্ষা আপনি যা বললেন তাতে ধর্ম অবমাননা ও বিশ্বাসে আঘাত বেশী দেয়া হয়েছে। আমি জমজম আর গঙ্গার পানির ধর্মীয় বিশ্বাসের দৃষ্টিতে সমতুল্য তুলনা করেছি মাত্র, আর আপনি হিন্দুদের পবিত্র গঙ্গাকে গুয়ের পানি বলেছেন।
সেদিন বেশ ভালভাবেই বুঝেছিলাম ধর্মানুভুতি নামক মূলো কেবল মুসলিমদের নাকের সামনেই ঝোলে। তাদের কাছে ইসলামের অপমানই শুধু অপমান, কিন্তু তারা টিনের চশমা পড়ে প্রতিনিয়ত অন্য ধর্মকে হেও করে যাচ্ছেন।
তাহলে ধর্ম অবমাননা আসলে কি???
আমার নিজস্ব বক্তব্য হল "ধর্ম অবমাননার শিক্ষা আস্তিকরা জন্ম সুত্রেই পায় আর সে সারাজীবন নিজ ধর্ম পালনের সাথে সাথে অন্য ধর্ম গুলোকে প্রতিনিয়ত অবমাননা করে যায়। ধর্ম অবমাননা না করে নাস্তিক হওয়া যায় কিন্তু আস্তিক হওয়া যায় না। একটি ধর্মতে বিশ্বাস স্থাপন মানে অন্য সকল ধর্মকে মিথ্যা ও বানোয়াট হিসেবে বিশ্বাস করা। এটাই মূলত ধর্ম অবমাননার বীজ। কিন্তু ধর্মের কু শিক্ষা তাদের অন্ধ করে রাখে। বিবেককে করে রাখে স্তব্ধ। তাই তারা নিজ ধর্ম ছাড়া অন্য ধর্মের অসম্মানকে অসম্মান হিসেবেই গণ্য করেন না"।
নিজ ধর্মকে শ্রেষ্ঠ প্রমান করতে অন্য ধর্মগুলোকে ভুয়া প্রমান করতে হবে এটাই স্বাভাবিক। তাইতো খ্রিস্টানরা বলে মুহাম্মদ ভণ্ড নবী আর কোরআন তার নিজের লেখা, মুসলিমরা বলে বাইবেল বিকৃত হয়ে গিয়েছে। এটা তাদের তার মত প্রতিষ্ঠার স্বার্থেই বলতে হবে। এটা কি তবে ধর্ম অবমাননা হবে না? এখন তবে প্রশ্ন হল, উপরের কথা দুটো যদি ধর্ম অবমাননা না হয় তবে নাস্তিকরা তাদের মত প্রকাশ করলে অর্থাৎ "ঈশ্বর মানব সৃষ্টি করেননি, ঈশ্বরকে মানুষ সৃষ্টি করেছে এবং তাই সকল ধর্মই মানব সৃষ্ট" ধর্ম অবমাননা হবে কেন ??? সব তালগাছ আস্তিকদের কেন ???
আমাকে মাসে শতবার যে কথাটি শুনতে হয় তা হল "তুমি খ্রিস্টান, তুমি নিজ ধর্ম নিয়া থাকো। ইসলামের পিছে লাগো কেন???" তারা যদিও জানে আমি জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই মুক্তমনা, কিন্তু যুক্তি প্রমানে না পারলেই কেবল শেষ এই কথাটি বলে। তখন এমন একটা ভাব যেন যে যেই পরিবারে জন্মায় সে সেই ধর্মের বাইরে যেতে পারবে না। তখন আমি প্রশ্ন করি "তবে তো যীশু ইহুদী আর মুহাম্মদ হিন্দু, তারা কিভাবে খ্রিস্টান বা মুসলিম হলেন ??? তখন তারা বলে "মুহাম্মদ কোনদিন হিন্দু রীতি নীতি পালন করেন নাই, তাই হিন্দু ঘরে জন্মাইলেও সে হিন্দু ছিলেন না"। কিন্তু যখন আমি বলি, "আমিও কোনদিন খ্রিস্টান রীতি নীতি পালন করিনি; তবে আমাকে কেন খ্রিস্টান বলো"??? তখন উত্তর "এতো বাইড়ো না, নিজেকে নবীদের সাথে তুলনা করো না"।
শেষমেষ চিন্তা করলাম, আস্তিক হয়ে অন্য আস্তিকের বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন করলে সেটা ধর্ম অবমাননা হয় না। নাস্তিক হয়ে প্রশ্ন করলেই কেবল ধর্ম অবমাননা ও ধর্মানুভুতিতে আঘাত দেয়া হয়। কেননা নয়তো জাকির নায়েক অন্য ধর্মকে খোঁচানোর দায়ে উপমহাদেশের সবচাইতে বড় ধর্ম অবমাননাকারী সাব্যস্ত হতেন। এখন আস্তিকদের প্রশ্ন তাই আস্তিক হয়ে করাই ভালো।
ধরি আমি একজন খ্রিস্টান, এবং এই লেখায় খ্রিস্টানদের প্রতিনিধি। আমার ধর্মকে অবমাননার জন্য আমি এখানে মুসলিমদের কাছে প্রশ্ন করতে এসেছি।
আগে খ্রিস্টান ধর্মের মূল কিছু বিশ্বাস সম্পর্কে জেনে নেই যা ইসলাম সরাসরি বিরোধিতা করে।
# খ্রিস্টানরা বলে বাইবেল ঈশ্বরের বানী (২ তীমথিও ৩:১৬-১৭), যা পরিবর্তন কোনদিন হবেনা। ঈশ্বর এর রক্ষক (দানিয়েল ১২:৯)। আর ইসলাম বলে বাইবেল বিকৃত হয়ে গিয়েছে, উহা সাধারণ মানুষের লেখা (সূরা বাকারা-৭৫ ও ৭৯, সূরা মায়িদা-৪১)।
= কথাটা ততটাই খ্রিস্টানদের ধর্মানুভুতিতে আঘাত দেয় যতটা এই কথা বললে লাগবে "কোরআন মুহাম্মদ নিজে লিখেছেন"।
# খ্রিস্টানরা বলে যীশু ঈশ্বর পুত্র (যোহন ৩:১৬) ও ৩ ঈশ্বরের ১ ঈশ্বর যা মুসলিমরা শুনলেই নাউজুবিল্লাহ বলে ওঠেন (কোরআন ৪:১৭১)।
=মুসলিমদের যীশুকে ঈশ্বর পুত্র নয় বরং সাধারণ মানুষ বলা খ্রিস্টানদের ধর্মানুভুতিতে আঘাত।
# খ্রিস্টানদের প্রধার ধর্মীয় বিশ্বাস হল "খ্রিস্ট যদি উত্থাপিত না হইয়া থাকেন , তাহা হইলে তো আমাদের প্রচারও বৃথা, তোমাদের বিশ্বাসও বৃথা (১ করিন্থীয় ১৫:১৪)"। বাইবেলের ১ করিন্থীয় ১৫ তম অধ্যায় পড়লেই আপনি খ্রিস্ট ধর্মের মূল নীতি সম্পর্কে জানতে পারবেন (এখানে পড়ুন http://banglalibrary.evergreenbangla.com/banglabible/1075) । খ্রিস্টের মৃত্যু ও পুনুরুত্থানে বিশ্বাস এনে সকল পাপ হতে মুক্তিই হল মূলত খ্রিস্টধর্মের কলেমা।
=কিন্তু মুসলিমরা এই কথায় অবিশ্বাস করে (আন নেসা ১৫৭)। খ্রিস্টের মৃত্যু ও পুনুরুত্থানকে মিথ্যা বলা মানে হল সম্পূর্ণ খ্রিস্ট ধর্মকে মিথ্যা বলা। কথাটা ততটাই খারাপ যতটা খারাপ এই কথাটা বলা যে "মুহাম্মদ ভণ্ড নবী অর্থাৎ ইসলাম ভুয়া"।
এখন খ্রিস্টানরা যদি দিনে ৫ বার বলে "মুহাম্মদ ভণ্ড নবী, কোরআন মুহাম্মদ নিজে লিখেছেন" সেটা কি ইসলাম ধর্ম অবমাননা হবে ??? কেন হবে ??? মুসলিমরা বললে যদি খ্রিস্টানদের ধর্ম অবমাননা না হয় তবে খ্রিস্টানরা বললে কেন মুসলিমদের ধর্ম অবমাননা হবে ???
প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ নামাজ পড়ে। আর নামাজে উপরে উল্লেখিত আয়াত গুলো কোরআন থেকে পাঠ করে খ্রিস্টানদের ধর্মকে ভুয়া বলে গালি দেয় । ব্লগে যত মানুষ ধর্মকে (পড়ুন মুসলিমদের) নিয়ে কথা বলে ধর্ম অবমাননা (!!!) করে; তার থেকে শুধু আমাদের এই ঢাকাতেই হাজার গুন বেশী মুসলমান অন্য ধর্ম অবমাননা করে। তাহলে চিন্তা করুন সারা পৃথিবীতে খ্রিস্টান ধর্ম অবমাননাকারী মুসলিমের সংখ্যা কত হবে??? ধর্ম অবমাননার জন্য যদি কোন ব্লগকে নিষিদ্ধ করা হয় তবে হাজার বছর আগেই কোরআন নিষিদ্ধ করার দরকার ছিল। ব্লগারদের যদি ফাঁসি দাবী করা হয় তবে কোরআন যারা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়েছে তাদের কি করা উচিৎ ছিল ???
এতো কথার পরে যেটা আমার শেষ কথা সেটা হল "নাস্তিক ব্লগারদের সসম্মানে মুক্তি চাই। সকলের নিজ মতামত অন্যকে জানানোর অধিকার আছে। আপনার ভালো না লাগলে পরবেন না। নাস্তিকরা কোন বিশ্বাসে নয় বরং বিজ্ঞান ও যুক্তিতে আস্থাশীল। তাই আস্তিকদের অপেক্ষা নাস্তিকেরা উন্নত শ্রেণীর প্রানিদের মধ্যে গণ্য। ব্লগ ও ব্লগার নিষিদ্ধ করার আগে ধর্মগ্রন্থ নিষিদ্ধ বেশী জরুরী, কেননা ধর্ম অবমাননার বীজ ধর্মগ্রন্থেই নিহিত"। হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন "অন্যকে নিজের ধর্মের প্রতি সম্মান করতে বলার আগে ভেবে দেখা উচিৎ আসলে আপনার ধর্ম কতটা সম্মান পাওয়ার যোগ্য"।
শুধু নিজের বিশ্বাসকেই হেফাজত নয় বরং সকল বিশ্বাসকে হেফাজত করুন।
কাল নামাজে সূরা পাঠের সময় খেয়াল রাখবেন "কোন ধর্ম অবমাননা করছেন নাতো"।
__._,_.___