স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ নগরীর শালবাগান এলাকায় সোমবার এসআই জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দেয় রেটিনা কোচিং সেন্টার রাজশাহীর ক্যাশিয়ার আতাউর রহমান। ওইদিন শিবির কর্মীরা ইট ও হেলমেট দিয়ে উপপরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলমের মাথা থেঁতলে দেয়। হামলায় জড়িতদের বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্রে প্রকাশিত ছবি দেখে পুলিশ চিহ্নিত করেছে। এদের মধ্যে শাহ মখদুম থানা শিবিরের সাবেক সেক্রেটারি জসিম পুলিশের অস্ত্রটি ছিনিয়ে নেয় বলে বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিয়াউর রহমান জানান। রাজশাহীতে বুধবার শিবিরের ডাকা হরতালে সাড়া মেলেনি। শহরে সব ধরনের যানবাহন চলাচল করেছে স্বাভাবিকভাবেই। জনজীবন ছিল স্বাভাবিক। সকালে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে সব ট্রেন ছেড়ে গেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকায় হরতাল চলাকালে সড়কে আগুন দিয়ে শিবিরের আবরোধের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে পুলিশ ও র্যাবের সদস্যরা। বেলা পৌনে একটার দিকে এ ঘটনার সময় র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে শিবির কর্মীদের ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি, রবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে শিবিরের তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে স্থানীয জামায়াত নেতারা দাবি করেছেন।
এদিকে নগরীর সপুরা মঠপুকুর এলাকার শিবির নিয়ন্ত্রিত কয়েকটি ছাত্রাবাস ও মেসে র্যাব-পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে একটি ছাত্রাবাসের মালিকসহ ২৬ জনকে আটক করেছে। আটককৃতরা শিবিরের সক্রিয় সদস্য বলে দাবি করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ সময় ১১টি অত্যাধুনিক চাইনিজ কুড়াল, শক্তিশালী বোমা তৈরির উপকরণ, ককটেল, ইসলামী ব্যাংকের ফাঁকা চেক ও লিফলেট উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১২টার পর এ অভিযান চালানো হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলায় অংশ নেয়া জামায়াত-শিবির ক্যাডারদের বেশিরভাগই শনাক্ত হয়েছে। এ মামলায় গ্রেফতারও করা হয়েছে কয়েকজনকে। গ্রেফতারকৃতরা পুলিশের কাছে এ বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। বুধবার রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার এ কথা জানিয়ে জামায়াত-শিবিরের নাশকতা ও সন্ত্রাসী তৎপরতা প্রতিরোধে সাধারণ নাগরিকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। আরএমপির সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি চলমান জামায়াত শিবিরের সন্ত্রাস ঠেকাতে সাধারণ জনগনের সহায়তা জরুরী।
মহানগর পুলিশ কমিশনার এসএম মনির উজ্জ জামান বলেন, গত সোমবার মহানগরীর শালবাগান এলাকায় পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলায় জড়িত ২৬ জনকে শনাক্ত করতে পেরেছেন তাঁরা। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারে মাঠে রয়েছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। গ্রেফতারকৃত শহিদুল ইসলাম নামের একজন হামলায় কারা অংশ নিয়েছিল এ সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে বলে জানান পুলিশ কমিশনার। সংবাদ সম্মেলনে কারো গতিবিধি সন্দেহজনক হলে তার ব্যাপারে নিকটস্থ থানায় খবর দেয়ার জন্য বিশেষভাবে নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ জানান পুলিশ কমিশনার।
বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিয়াউর রহমান জানান, শাহ মখদুম থানা শিবিরের সাবেক সেক্রেটারি জসিম প্রথমে এসআই জাহাঙ্গীর আলমকে লাথি দিয়ে রাস্তায় ফেলে দেয়। এরপর তার হেলমেট কেড়ে মারপিট করে। পুলিশের পোশাকের সঙ্গে থাকা বক্স থেকে পিস্তলটি প্রথমে বের করে শিবিরকর্মী জনি। তবে জনির বাড়ি সম্পর্কে পুলিশ এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে অস্ত্রটি নিচে পড়ে গেলে সেটি তুলে নিয়ে যায় শিবির নেতা জসিম। এছাড়া পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত রেটিনা কোচিং সেন্টারের ক্যাশিয়ার আতাউর, শাহ মখদুম এলাকার রাকিব ও রাসেল এবং শিবিরকর্মী জনিকে তারা চিহ্নিত করতে পেরেছেন। তবে এদের কেউ এখনও গ্রেফতার হয়নি। এরাই গত রবিবার বোমা মেরে শিক্ষানবিশ উপপরিদর্শক মোকবুল হোসেনের দুই হাতের কব্জি উড়িয়ে দেয়।
হামলাকারীরা চিহ্নিত হলেও গ্রেফতার না হওয়া প্রসঙ্গে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জানান, হামলার পর জামায়াত-শিবির কর্মীরা আত্মগোপনে চলে যায়। এ কারণে পুলিশকে বেগ পেতে হচ্ছে। তবে এ প্রসঙ্গে আরএমপি কমিশনারের জবাব, অনেকেই গ্রেফতার হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতের অভিযান সম্পর্কে ওসি জিয়াউর রহমান জিয়া জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে প্রথমে সপুরা মঠপুকুরের পাশের একটি ছাত্রাবাসে যৌথভাবে অভিযান চালায় র্যাব ও পুলিশ। ওই ছাত্রাবাসের বিভিন্ন কক্ষে তল্লাশি করে পাওয়া যায় ১১টি অত্যাধুনিক নতুন চাইনিজ কুড়াল, কিছু ককটেল, ইসলামী ব্যাংকের ফাঁকা চেক, চেকবুক ও জামায়াত-শিবিরের কিছু লিফলেট। ওই ছাত্রাবাসে তল্লাশির খবর পেয়ে শিবিরকর্মীরা পালিয়ে যায়। তবে সহযোগিতার অভিযোগে ছাত্রাবাসের মালিক শাহাবুদ্দিন বাপ্পিকে আটক করা হয়েছে। পরে আরও কয়েকটি ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়ে ২৫ জনকে আটক করা হয়।
অভিযানে আটককৃতরা বেশির ভাগই গত রবিবার ও সোমবার পুলিশ কর্মকর্তা মোকবুল হোসেনকে বোমা মেরে কব্জি উড়িয়ে দেয়া ও জাহাঙ্গীর আলমের ওপর বর্বর হামলা চালানোর ঘটনায় জড়িত। এদের কয়েকজন পর পর দু'দিন পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
রাবিতে তিন শিবিরকর্মীকে ধরে পুলিশে সোপর্দ ॥ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর আলী হল থেকে তিন শিবিরকর্মীকে আটকের পর পুলিশে সোপর্দ করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
আটককৃতরা হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী বাহারুল ইসলাম, তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আসলাম এবং ইনফরমেশন এ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্র্থী শাকিল।