আনিস রায়হান যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম সরকারের শেষ পর্যায়ে এসে ব্যাপক গতি পেয়েছে বলে মনে হচ্ছে। যদিও ট্রাইব্যুনালে রায় হওয়া মামলাগুলো আপিল বিভাগে গিয়ে এগুচ্ছে শ্লথ গতিতে। ট্রাইব্যুনালে বিচার প্রক্রিয়ার বর্তমান গতিকে অনেকেই আশাব্যঞ্জক মনে করছেন। এই গতি প্রথম থেকে দেখা গেলে ইতোমধ্যে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ শেষ হয়ে যেত। তবে বিচার কাজে বর্তমান জোর গতির মধ্যেও জামায়াত নিষিদ্ধের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। '৭১ এ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির সঙ্গে সাধারণ মানুষ, যারা জামায়াতের সন্ত্রাসী তৎপরতা দেখে স্তম্ভিত, তারা এখন দ্রুত জামায়াতকে নিষিদ্ধ দেখতে চাইছেন। কিন্তু নির্বাচনী রাজনীতিকে কেন্দ্র করে এখানে সিদ্ধান্ত নিতে ইতস্তত করছে সরকার। যদিও জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলে বিচারকাজে এতদিনে পিছিয়ে পড়ায় মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভ, অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে তার অনেকটা প্রশমিত হতো। কিন্তু সরকার এ নিয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করছে না। আগামীতে এগিয়ে আসা রায়গুলো নিয়ে দেশে যেন কোনো অস্থিরতা তৈরি না হয় সেজন্যই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা জরুরি। দ্রুতই এদের নিষিদ্ধ না করাটা আগামীতে বড় ধরনের সহিংসতার পথ খুলে দিতে পারে। পাশাপাশি আপিল বিভাগে যাওয়া মামলাগুলোর গতিবৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন অনেকেই। আপিল বিভাগ আবার কবে ছুটিতে যাবে এ নিয়েও রয়েছে উদ্বেগ। আদালতের স্বাধীনতা ক্ষুণœ না করেই কিভাবে গতি সঞ্চারের বিষয়টি কার্যকর করা যায় সরকারকে সেই পথ খুঁজতে পরামর্শ দিচ্ছেন আইনজ্ঞরা। সব মিলিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরতেই এবারের আয়োজন। গোলাম আযম ৫ ধরনের ৬১ অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে তাও মাসাধিককাল। যে কোনো দিন মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করবেন ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউটররা আশা করছেন এ সপ্তাহেই আসতে পারে গোলাম আযমের রায়। আলী আহসান মুজাহিদ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেকটি মামলার রায় আসছে। জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে যে কোনো দিন। এ মামলার কার্যক্রম শেষে রায় অপেক্ষাধীন (সিএভি) রেখেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এর মধ্য দিয়ে এ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন চারটি মামলার কার্যক্রম শেষ হলো। এগুলোর তিনটির রায় ইতোমধ্যে ঘোষিত হয়েছে। দ্রুত রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল-২ কে সবাই গতিশীল ট্রাইব্যুনাল দাবি করছেন। গত বছরের ২১ জুন মুজাহিদের বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল-২। এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তাসহ রাষ্ট্রপক্ষে ১৭ জন সাক্ষ্য দেন, আসামিপক্ষে সাক্ষ্য দেন মুজাহিদের ছেলে। ৭ মে যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়। কাদের মোল্লা আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজার পক্ষে-বিপক্ষে আপিলের ৬০ দিন গত ৫ মে অতিবাহিত হয়েছে। মামলার অগ্রগতি দেরিতে হলেও সন্তোষজনক। আপিলের শুনানি শেষ হয়েছে। প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ শুনানি গ্রহণ করেন। শুনানি শেষে আদালতে এখন এ মামলার যুক্তিতর্কও শেষ পর্যায়ে। ট্রাইব্যুনালের কয়েকজন বিজ্ঞ প্রসিকিউটর, যারা আপিল বিভাগে চলা এ মামলার কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন, তাদের মতে আগামী ২১ জুনের মধ্যেই আসতে পারে আলোচিত এ মামলার রায়। কারণ হিসেবে তারা বলছেন ২১ জুন আপিল বিভাগ অবকাশে যাবে। তার আগে মামলা শেষ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল আবেদনের ৬০ দিন অতিবাহিত হয়েছে। এখনও আপিল শুনানি শুরু হয়নি। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এক রায়ে সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেন। রায়ের কপি হাতে পাওয়ার এক মাসের মধ্যে আপিল দাখিল করার বিধান রয়েছে। আপিল দাখিলের ৫২ দিন পর ২২ মে আপিল বিভাগের দৈনন্দিন কার্যতালিকায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলা এক নম্বরে থাকলেও শুনানি হয়নি। ২৮ মে আপিল দাখিলের ৬০ দিন সময় পার হয়েছে। আপিল বিভাগে সাঈদীর মামলার শ্লথ গতি অনেকের মধ্যে হতাশার জন্ম দিয়েছে। আপিল বিভাগ ছুটিতে যাওয়ার আগে এ মামলার বিচারকাজ শুরু হবে কি না তাও কেউ বলতে পারছে না। কামারুজ্জামান একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। আপিলে ওই সাজা বাতিল চেয়ে তাকে খালাস দেয়ার আরজি জানানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ে গত ৯ মে তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। রায়ের ২৭ দিনের মাথায় আসামিপক্ষ আপিল করে। ট্রাইব্যুনালের ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করবে না বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান সমন্বয়ক ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান। প্রসিকিউশন মনে করছেন, এখানে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হয়েছে। ফলে আপিল না করার সিদ্ধান্তই সঠিক। তবে বক্তব্য উপস্থাপন করা হবে। যাতে সাজাটা বহাল থাকে। আব্দুল আলীম ট্রাইব্যুনাল-২ এ চলছে বিএনপি নেতা আব্দুল আলীমের বিচার। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণের কাজ অনেকটা এগিয়ে এসেছে। যদিও বিপত্তি কম না। কিছুদিন আগে প্রসিকিউশনের ১৯তম সাক্ষী আবেদ হোসেনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামিপক্ষ তাকে জেরা করার আগেই প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত তাকে বৈরী ঘোষণা করে জেরা করার অনুমতি প্রার্থনা করেন। সাক্ষী তার সাক্ষ্যে আলীমের নাম উল্লেখ না করে বলেন, একাত্তরে আমাদের নির্যাতনের সময় পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সঙ্গে কোনো বাঙালি ছিল না। এ সময় প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত ট্রাইব্যুনালকে বলেন, আমাদের এ সাক্ষীকে বৈরী ঘোষণা করে কয়েকটি প্রশ্ন করতে চাই। যদিও প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত'র মতে, সাক্ষীকে বৈরী ঘোষণা করায় মামলায় কোনো প্রভাব পড়বে না। বরং ট্রাইব্যুনাল যদি মনে করেন সাক্ষীকে 'বৈরী' ঘোষণা করার যৌক্তিক কারণ আছে, তবে তা ইতিবাচকও হতে পারে। বিএনপি নেতা আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে এর আগে ১৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। আসামিপক্ষ তাদের জেরাও করেছেন। গত বছরের ১১ জুন ৭ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট ১৭টি অভিযোগে আব্দুল আলীমকে অভিযুক্ত করেন ট্রাইব্যুনাল। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ প্রায় ৯০ ভাগ শেষ। এই মামলাটি স্বাভাবিকভাবে চললে সরকারের মেয়াদের মধ্যেই রায় আসতে পারে। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ চলছে এ মামলাটি। ২০১০ সালের ২৬ জুন হরতালের আগের রাতে রাজধানীর মগবাজার এলাকায় গাড়ি ভাঙচুর ও গাড়ি পোড়ানোর মামলায় সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায়ই সে বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের প্রত্যুষে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। এর আগের দিন ১৫ ডিসেম্বর একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাকা চৌধুরীকে গ্রেফতারের জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করে তদন্ত সংস্থা। ১৯ ডিসেম্বর একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় তাকে। পরে ৩০ ডিসেম্বর আদালতের নির্দেশে প্রথমবারের মতো সাকা চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। ২০১১ সালের ১৮ নভেম্বর সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এতে তার বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ২৩টি মানবতাবিরোধী অপরাধের উল্লেখ করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ করে গুডস হিলে নির্যাতন, দেশান্তরে বাধ্য করা, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন অপরাধ। সরকারের মেয়াদের একেবারে শেষ পর্যায়ে এই মামলার রায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি মামলার বিচার কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে চলে। মতিউর রহমান নিজামী মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর মামলার কার্যক্রম চলছে ধীরগতিতে। অনুসন্ধান কার্যক্রম থেকে শুরু করে ট্রাইব্যুনালে তদন্ত প্রতিবেদন জমা, অভিযোগ গঠনসহ এই মামলার প্রত্যেকটি কার্যক্রমে এক ধরনের ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। এ বিষয়ে নিজামীর মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর দাবি অন্য মামলাগুলোকে গুরুত্ব দেয়ার কারণে এই মামলাটির কার্যক্রম পিছিয়ে পড়েছে। তবে একাত্তর সালের ঘটনা প্রবাহের গুরুত্ব বিবেচনায় নিজামীর মামলাটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্টরা। সর্বশেষ এই মামলায় মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের দশম সাক্ষী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন মাস্টার সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি সাবেক শিক্ষক এবং নিজামীরই স্কুলজীবনের সহপাঠী। দেখা যায় এই মামলায় একটি ধার্য তারিখে শুনানির পর আরেকটি তারিখ ধার্য করা হয় অনেক দিন পর। যে কারণে মামলাটির কার্যক্রম দ্রুত এগুচ্ছে না। এজন্য কেউ কেউ এই মামলাটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বলেছেন, একাত্তর সালে নিজামীর ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে অনুযায়ী তার মামলাটি অতটা গুরুত্ব পাচ্ছে না। গত বছরের ২৬ আগস্ট নিজামীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য নেয়া শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৬টি অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিচার চলছে। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, লুট, ধর্ষণ, উস্কানি ও সহায়তা, পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। বর্তমান সরকারের মেয়াদে এ মামলার রায় আসার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না অনেকেই। তবে বিশেষ গুরুত্ব দিলে মামলার রায় আসতে পারে বলে মনে করেন কোনো কোনো প্রসিকিউটর। মীর কাসেম আলী জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ২৭ জুন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ১৬ মে রাষ্ট্রপক্ষ মীর কাসেমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৪টি অভিযোগ এনে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। এসব অভিযোগের মধ্যে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে আটজনকে নির্যাতনের পর হত্যা ও লাশ গুম এবং ৩৪ জনকে অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের ১৭ জুন রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল-১ মীর কাসেমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করে। তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রয়েছেন। সরকারের মেয়াদের মধ্যে এ মামলার রায় আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। এটিএম আজহারুল ও আবদুস সোবহান জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে আগামী ২০ জুনের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠন করা হবে। তার বিরুদ্ধে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন খুন, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও দেশত্যাগে বাধ্য করাসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। মামলার তদন্তে তা প্রমাণিত হয়েছে। জামায়াতের এই নেতা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের ছাত্র সংগঠনের পক্ষে রাজাকার, আলবদর ও আলশামসসহ বিভিন্ন বাহিনী গঠন করেন। তিনি নিজে সম্পৃক্ত থেকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তিকে সহায়তা করেন। এছাড়া রংপুর কারমাইকেল কলেজের ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মচারী হত্যা করাসহ বদরগঞ্জের ঝাড়ুয়ারবিল হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দেন। জামায়াতের নায়েবে আমির সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস সুবহানের বিরুদ্ধে চলমান তদন্ত শেষ করে আগামী ১৩ জুন ফর্মাল চার্জ দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-১। আবদুস সোবহান ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার শান্তি কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন। অনর্গল উর্দু বলতে পারার কারণে তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন এবং স্থানীয় রাজাকার-আলবদর বাহিনী পরিচালনায় নীতিনির্ধারকের ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাবনায় জামায়াতের বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামী ও আবদুস সোবহানের নেতৃত্বে রাজাকার আলবদর বাহিনীর কার্যক্রম এগিয়ে চলে। এদের সহযোগিতায় বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি বাহিনী নির্মম গণহত্যা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো- ডেমরার গণহত্যা। এখানে অন্তত ৮শ' মানুষকে হত্যা করে মাটিচাপা দিয়ে রাখা হয়। ১৯৭১ সালের ১৪ মে শুক্রবার ডেমরা গণহত্যা চালানো হয়। এ হত্যাকাণ্ডে মতিউর রহমান নিজামী ও মাওলানা সোবহান সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ আছে। ৭১ সালের ২৭ নভেম্বর ধুলাউড়িতে ২১ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ অনেক লোককে হত্যা করা হয়। সেদিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া আহত মুক্তিযোদ্ধা শাহাজান সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, নিজামীর নির্দেশে যারা তাকে হত্যার চেষ্টা করেছেন তাদের সঙ্গেই ছিলেন সোবহান। মুক্তিযোদ্ধা কাজী আযম ও আবু বক্কর সিদ্দিক সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন, '৭১ এর ২১ এপ্রিল বেড়ার ডাব বাগানে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক যুদ্ধ হয়। এতে ২৩ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ ৪০ জন মারা যান। ওই এলাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও রাজাকার আলবদররা একটি ক্যাম্প করে। ঘরবাড়ি পোড়ানোসহ তারা অনেক মেয়েকে ধরে এনে সেখানে পাশবিক নির্যাতন চালায়। পাবনার ওয়াপদার কাছে শত শত লোককে হত্যা করে পদ্মা নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার ঘটনায়ও নিজামী ও সোবহান অন্যতম নির্দেশদাতা ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আশরাফুজ্জামান ও মঈন উদ্দিন এই দুই প্রবাসীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি হবে শিগগিরই। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এই মামলার বিচারকাজ চালাচ্ছে। গত ২৭ মে পলাতক দুই আসামির পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে দুইজন আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে তাদের অনুপস্থিতিতে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। নিয়োগ পাওয়া আইনজীবীরা হচ্ছেনÑ আব্দুস শুক্কুর খান ও সালমা হাই (টুনী)। এর আগে গত ২৫ এপ্রিল চৌধুরী মঈন উদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ ১৬টি অভিযোগে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। বর্তমানে আশরাফুজ্জামান খান আমেরিকায় ও চৌধুরী মঈন উদ্দিন ইংল্যান্ডে অবস্থান করছেন বলে সবাই জানেন। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি উঠলেও সরকারের মধ্যে এ নিয়ে কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। ট্রাইব্যুনাল পর্যবেক্ষকদের দাবি, আসামিপক্ষের ইচ্ছাকৃত বিচার কাজ বিলম্বিত করার প্রক্রিয়া না থাকায় এ মামলা দ্রুতই শেষ হয়ে যাবে। জাহিদ হোসেন খোকন ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌর মেয়র বিএনপি নেতা জাহিদ হোসেন খোকনের বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৩ অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। জাহিদ হোসেন খোকন একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী হয়ে বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা এলাকায় হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ধর্মান্তরে বাধ্য করাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত ছিলেন। এই বিএনপি নেতা বর্তমানে পলাতক। তদন্ত সংস্থা বলছে, ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে খোকন জামায়াতের প্রার্থীর পক্ষে বৃহত্তর ফরিদপুর এলাকায় প্রচার চালান। পরে তিনি বিএনপির রাজনীতিতে জড়ান এবং নগরকান্দা পৌর কমিটির সহ-সভাপতি হন। ২০১১ সালে তিনি নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। মেয়র হিসেবে শপথ নেয়ার পর থেকেই তিনি পলাতক রয়েছেন। ২০১২ সালের ১৬ এপ্রিল জাহিদ হোসেন খোকনের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়। তদন্তকালে ৭৮ জনের জবানবন্দী নেয়া হয়েছে। এ মামলায় মোট ৫০ জনকে সাক্ষী করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। আসামিপক্ষের অনুপস্থিতির কারণে এ মামলাও দ্রুত শেষ হবে বলে আশাবাদ রাষ্ট্রপক্ষের। http://www.shaptahik.com/v2/?DetailsId=8227
|