বাংলাদেশকে বাঁচান
ভুমিকা ঃ
১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের জন্ম, আর লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণের, সন্মানের বিনিময়ে ঐ বৎসরের ১৬ই ডিসেম্বর এই দেশের মুক্তি । তারপর কেটে গেছে প্রায় বিয়াল্লিশ বৎসর । এই সময়কালে উল্লেখযোগ্য পরিমানে দেশের অবকাঠামোগত এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলেও, এবং কিছু মানুষ সৎ উপায়ে এবং বিপুল সংখ্যক বিপুল সংখ্যক মানুষ অসত উপায়ে অন্যদের ঠকিয়ে বিপুল অর্থ বিত্তের মালিক হলেও মানুষের মৌলিক সমস্যার সমাধান হয় নি । মানুষের শান্তিপূর্ণ জীবনের পূর্ব শর্ত পূরণ হয় নি, প্রতিষ্ঠিত হয়নি ন্যায়বিচার । ধনী গরীবের ব্যবধান বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে, যেখানে তা দিনে দিনে কমে আসার কথা । মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টী প্রতিষ্ঠিত হয় নি, বরং সাধারণভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দুর্বৃত্তের রাজত্ব । সৃষ্টি হয়েছে হাজারো সমস্যার । যাতায়াত সমস্যার কথাই যদি ধরি, একহিসাব মতে রাজধানী শহরে যাতায়াতে রাস্তায়ই কেটে যায় জীবনের সাতটি বৎসর । মানুষের নানাবিধ সমস্যা সমাধানে সরকার ব্যর্থ । অথচ আশ্চর্যের বিষয়, দেশে একনায়কতন্ত্র নয়, বরং চলছে জনগনের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শাসন বা গনতন্ত্র । এই গনতন্ত্র মাঝে মাঝে বিঘ্নিত হয়েছে সামরিক স্বৈরশাসকদের দ্বারা । সবচেয়ে দুঃখের বিষয় – (০১) এখন গনতান্ত্রিক শাসকেরাই কাজ করছে স্বৈর-শাসকের মত, (০২) দেশ বা দেশের মানুষের মঙ্গলের চেয়ে তারা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে তাদের আত্মীয়, বন্ধু এবং দলীয় লোকদের স্বার্থ রক্ষায়, (০৩) গনতান্ত্রিক নীতিতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাজ 'আইন প্রনয়ন' হলেও তাদেরকে দেয়া হচ্ছে আর্থিকভাবে লাভবান হবার কাজ এবং (০৪) যতই দিন যাচ্ছে ততই দেশে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে নিম্ন মানের সরকার । অর্থলোভে অনুরূপ মনের লোকেরা নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছে, কোটা প্রবর্তনের ফলে মেধাবীদের পরিবর্তে নিম্ন মেধার মানুষ প্রশাসনে চলে আসছে ।
এই ২০১৩ সালে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে । সুখের বিষয় এখনই আবার সরকার পরিবর্তনের সময় এসেছে এবং দুঃখের বিষয়, আগের চাইতে আরও নিম্নমানের সরকার ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে । ইতিমধ্যে রাজনৈতিক নেতাদের কর্মকান্ডে বিরক্ত হয়ে ভালো মানের মানুষ রাজনীতিতে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে, সেই স্থান পূরণ হচ্ছে নিম্ন মানের মানুষ দিয়ে । এ অবস্থায় কেবলমাত্র সুবিধাভোগী স্বার্থপর মানুষ ছাড়া সবারই মনের কথা - দেশকে বাঁচান, দেশের মানুষকে বাঁচান । কিন্তু প্রশ্ন হলো, দেশকে কে বাঁচাবে এবং কি ভাবে ?
কে বাঁচাবে ?
যদি বিশেষ কোন কিছু না করা হয় তাহলে আগামী নির্বাচনে দেশের তিনটি প্রধান দলের (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি) একটি ক্ষমতায় আসবে । জাতীয় পার্টি একক অথবা জোটবদ্ধ এই দুইভাবেই নির্বাচনের পথই খোলা রেখেছে । তবে যেহেতু এই দলের সব কিছু একজন ব্যক্তি দ্বারা নির্ধারিত হয়, এই প্রধান ব্যক্তির চরিত্র আমাদের জানা আছে, আর আলাদা দাঁড়ালে অনেক প্রার্থীর কাছ থেকে ভালো আয়ের সম্ভাবনা থাকে, তাই এই দলের একক ভাবে দাঁড়ানোর সম্ভাবনাই বেশী । এই দলের দুঃশাসন মানুষ ভুলে যায় নি । অন্য দুইটি দল এর আগে একাধিকবার দেশ পরিচালনা করেছে । সাধারণ ভাবে বলা যায়, তাদের প্রথম বার দেশ পরিচালনার তূলনায় পরের বার পরিচালনা অনেক খারাপ হয়েছে । যেহেতু এই নিয়ে তাদের কোন অনুশোচনা বা অপরাধবোধ নেই, নেই পরিবর্তনের কোন উদ্যোগ, তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, এরা নির্বাচিত হলে ভবিষ্যতে এদের দেশ পরিচালনা আরও খারাপ হবে এবং দেশের মানুষের কষ্ট বাড়বে । এমতাবস্থায় এই দেশকে কে একটু ভালোভাবে পরিচালিত করতে পারবে ? এক কথায় বলা যায়, এই তিন দলের বাইরে অন্য কোন দল । যেহেতু এমন কোন দল এখন দেশে নেই, তাই এমন দল পেতে হলে এই দল গড়তে হবে ।
কেমন করে হবে এই নতুন দল ?
এই সময়ে বাংলাদেশে উদ্দোগী হয়ে নতুন একটি ভালো দল যারা গড়তে পারে তারা হলেন – (১) অধ্যাপক ইউনুস, অধ্যাপক বদরুদ্দোজা – ইত্যাদি গ্রুপ, (২) জনাব মাহমুদুর রহমান মান্না, ডঃ কামাল হোসেন ইত্যাদি গ্রুপ । অধ্যাপক ইউনুস আন্তর্জাতিক ভাবে প্রসিদ্ধ হলেও দেশে তার দুর্বলতা, সুদ সঙ্ক্রান্ত বিষয় নিয়ে তার প্রসিদ্ধি, বিশাল আন্তর্জাতিক প্রচারনার অন্তরালে তার অর্থনীতি বিষয়ক চিন্তাধারার মৌলিক দূর্বলতা এবং কঠিন কঠিন বিষয়ে তার ভাববাদী সরলীকরন (যেমন - ব্যাংকের সকল ঋণ গ্রহীতা ব্যাঙ্কের মালিক, ক্ষুদ্র ঋনের মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি ), ইত্যাদি । তাছাড়া সুবিধা দেখলে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বি এন পির সাথে যুক্ত হবার সম্ভাবনা আছে ।
নির্বাচনে পরাজয়ের রেকর্ড থাকলেও জনাব মাহমুদুর রহমান মান্নার চিন্তা ও চেতনায় মৌলিকত্ব আছে । সুবিধা লাভের আশায় অন্ধ চামচাগিরি তার স্বভাব নয় । আর ডঃ কামাল হোসেন আন্তর্জাতিক ভাবে প্রসিদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের এবং স্বাধীন চেতনার মানুষ । তার অনেক বদনামই এসেছে তার দলীয় প্রধানের সব কথায় হুঁ হুঁ না করার কারনে । অনেকের জানা থাকতে পারে, একটি নির্বাচনে তাকে বলা হয়েছিল কয়েকটি বস্তীর সর্দারকে টাকা দিয়ে তার এলাকার ভোট ম্যানেজ করতে । তিনি তা করতে অরাজী হন এবং নির্বাচনে পরাজিত হন । বাংলাদেশের সব মানুষ যদি এমন পরাজয় মানতে রাজী থাকতো তাহলে দেশটি সোনার দেশে পরিনত হত । তার সম্বন্ধে বাইরে অনেক কাহিনী প্রচলিত আছে । কিছু দোষ ত্রুটী সবারই থাকতে পারে । কিন্তু সরাসরি যারা তাকে দেখেছেন তারা জানেন, এমন সৎ দ্বিতীয় একটি মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে ।
প্রধান উদ্দোক্তা ঃ
উদ্দোক্তা হিসেবে প্রাথমিক ভাবে জনাব মাহমুদুর রহমান মান্না ও ডঃ কামাল হোসেন এই দুইজনের কথা বলা হয়েছে । বর্তমান অবস্থায় এই দুই জন উদ্যোগ নিয়ে একটি নতুন দল গঠন করতে পারেন । তারা সমমনাদের খুঁজে নেবেন । এ উদ্দেশ্যে জনাব শাহরীয়ার কবির, ব্যারিস্টার রফিকুল হক, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, জনাব নাসির উদ্দীন ইউসুফ, জনাব এ বি এম মুসা, ডঃ আকবর আলী খান, ডা ইমরান, গনজাগরন মঞ্চ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের ( সব মানুষের কাছে গ্রহনীয় নিরপেক্ষ এবং প্রগতিশীল ব্যক্তিবর্গ, তাদের সকলের নাম বলা সম্ভব নয়) নিয়ে একটি কমিটি করতে হবে, দলের জন্য নাম ঠিক করতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের ব্যবস্থা করতে হবে । জামানত ও সাধারন ব্যয় নির্বাহের জন্য নতুন সদস্য ও সমমনাদের কাছ থেকে চাঁদা নিতে হবে । ধনী ব্যক্তিগন শুধুমাত্র এই শর্তে টাকা দিতে পারবেন যে, প্রতিষ্ঠিত হলে দল তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাবে এবং মূল টাকা ফেরত দেবে ।
প্রেক্ষিত ঃ
প্রেক্ষিত হিসেবে বলা যায় - (ক) দেশের দুর্দিনে নির্ভর করার মতো অনেক আদর্শ মানুষ আমাদের দেশে আছে, যদিও তারা প্রচলিত পদ্ধতির নির্বাচনে অংশ গ্রহন করবেন না, (খ) স্বার্থবাদী দলের অপশাসনে দেশের মানুষের পিঠ দেয়ালে থেকে গেছে, (গ) একটি ভালো দলকে ক্ষমতায় আনার ইচ্ছা উপযুক্ত কারনেই মানুষের মনে জেগেছে এবং (ঘ) দেশের কিছু কিছু নিয়ম এবং প্রেক্ষিত একটি ভালো ও নীতিবান দলের নির্বাচনে জয়লাভের সুযোগ তৈরী করেছে । বর্তমান অবস্থায় সঙ্গত কারণেই কিছু মানুষ ( যেমন, মুক্তিযোদ্ধা, নিরপেক্ষ মানুষ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃস্টান যারা একসময় মুক্তিযুদ্ধের দল বলতে অন্ধ ভাবে আওয়ামী লীগকে বুঝতো ইত্যাদি) এর চিন্তায় পরিবর্তন এসেছে এবং তারা নির্বাচনে সমর্থন দেবার জন্য বিকল্প খুঁজছে । সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্দোগী মানুষ এবং তরুন সমাজের একটা বিরাট অংশও বিকল্প নেতৃত্ব খুঁজছে ।
রাজনীতিকদের চিন্তার দৈন্য, চোখ খুলে প্রকাশ্যে এমন কি সংসদে দাঁড়িয়ে ডাহা মিথ্যা কথা বলা, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়া, ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলে জনগনকে প্রতারনা করার প্রবনতা, স্বার্থপরতা ইত্যাদি বর্তমান প্রজন্মের বিরাট অংশকে এই সব নেতাদের প্রতি বিতৃষ্ণ করে তুলেছে । সাম্প্রতিক সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তারা ক্ষমতাসীন দলকে একেবারে বর্জন করেছে । নেহায়েত অন্য বিকল্প না থাকায় এবং 'ঋনাত্মক ভোট' দেবার বহুল প্রচলন না থাকায় তাদের 'ঋনাত্মক সমর্থন' বিরোধীদের পক্ষে গেছে । দেশের সাধারণ মানুষের সাথে কথা বললেই জানা যায়, তাদের বিরাট অংশ সমর্থনের জন্য একটি ভালো বিকল্প খুজছে । এই প্রেক্ষাপটে দেশের এবং দেশের মানুষের স্বার্থে এদেশের ভালো মানুষদের নিয়ে একটি দল গঠন করা খুবই যৌক্তিক । তবে বাংলাদেশে বিরাট খরচ সাপেক্ষ যে নির্বাচন তাতে ভালো মানুষের (যাদের টাকার জোর সঙ্গত কারনে কম) দল করার জন্য কৌশলী হতে হবে ।
ক্ষমতাসীন দলের পরিকল্পনা ও চিন্তা ঃ
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মনে করে রেখেছে, স্বাধীনতার পক্ষের মানুষ যতই আওয়ামী লীগ বিরোধী কথা বলুক, নির্বাচনকালে তারা সমর্থন দেবার জন্য উপযুক্ত দল খুঁজে পাবে না এবং নিরুপায় হয়ে তাদেরকেই ভোট দেবে । তাদের এই ধারণা ভুল । তাদের জানা নাও জানতে পারে যে, এদেশের মানুষ ইতিমধ্যে ভোট না দেয়ার অন্য একটি ব্যবস্থার কথা জানে, তা হল ভোট নষ্ট করা । ভোট কেন্দ্রে না গেলে ভোট নষ্ট হয় । কিন্তু এটা অনেকের নজরে থাকে এবং পরে তাদেরকে নানা সমস্যায় পড়তে হয় । তাই বাধ্য হয়েই হিন্দু ভোটার সহ অনেক অনিচ্ছুক মানুষ কেন্দ্রে যায় এবং ভোট নষ্ট করে । আগে প্রধানতঃ দুই প্রার্থীর মাঝখানের স্থানে সিল দিয়ে ভোট নষ্ট করা হতো । বর্তমানে প্রার্থীদের চাপে স্কেল দিয়ে মেপে দেখা হয়, কোন প্রার্থীর ঘরে বেশী অংশ পড়েছে । এই কারনে তারা ব্যালট পেপারের বেশ কয়েকটি স্থানে সিল দিয়ে ভোট নষ্ট করে থাকে । আগামী নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের মানসিকতার অনেকে, যারা সঙ্গত কারনে আওয়ামী লীগের উপর রুষ্ট অথচ মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের ভোট দেবার কথা ভাবতে পারে না তারা তাদের ভোট এভাবে নষ্ট করবে । আর এই ভোট নষ্ট হবার সুবিধা যাবে অন্য দুই দলের ভাগে এবং কম ভোট পেয়েও তারা নির্বাচিত হবে । মুক্তিযুদ্ধের দল হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগের জন্য এটা খারাপ খবর।
আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সমস্যা ঃ
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নির্বাচিত না হলে এই দলের কর্মী, সমর্থক হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃস্টান, মুক্তিযুদ্ধের মানসিকতার মানুষ, গনজাগরণ মঞ্চের সমর্থক, সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা নানা ভাবে যারা বি এন পি'র বিরক্তি উৎপাদন করেছে তারা নানা সমস্যায় পড়বে । অনেকের এদেশে থাকাই মুস্কিল হবে । প্রস্তাবিত বিকল্প দলটি এই সমস্যার ভালো সমাধান দিতে পারে । আবার বিকল্প দল গঠন না করা হলেই যে আওয়ামী লীগ ভোট পারে তাও সত্য নয় । এক্ষেত্রে পাঁচটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কি ঘটেছে তা ভেবে দেখা যেতে পারে ।
দল পরিচালনা ঃ
নতুন এই দলটি অত্যন্ত কম খরচে চালাতে হবে । দলের কাজ হবে, বর্তমানে একটি দল থেকে মাত্র এক জনকে মনোয়নের নিয়ম করার কারনে যে সকল যোগ্য প্রার্থী বাদ পড়ে যাবেন, তাদের মধ্য থাকে সব থেকে ভালো মানের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া । শর্ত থাকবে, দল তাদের নির্বাচনের খরচ দেবে না বা তার কাছ থেকে কোন খরচও নেবে না, শুধুমাত্র মনোয়ন দেবে এই শর্তে যে তারা এই দলে থাকবে, দলের প্রয়োজনে কাজ করবে এবং দলের প্রয়োজনে পদত্যাগ করতে রাজী থাকবে । এই দলের পরিচালনায় এমন কিছু মানুষ থাকবেন যারা প্রচলিত পন্থায় নির্বাচনে যেতে পারবেন না, অথচ দলের জন্য কোন এক সময় যাদের নির্বাচিত হওয়ার প্রয়োজন হবে । ঠিক এই কারনেই শেষের শর্তটি রাখা হয়েছে ।
দলের মূল যে কমিটি তাতে থাকবেন দেশের সর্বোচ্চ মানের ব্যক্তিবর্গ । গাছের কান্ডের মতই তারা দলের মূল কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রন করবেন । সংসদ সদস্য হিসেবে সর্বোচ্চ মানের প্রার্থী খোঁজা হবে, তবে এই বিষয়ে বাস্তববাদী হতে হতে হবে । এই সময়ে শত (১০০) মানের প্রার্থী না পাওয়া না গেলে আশি (৮০) মানের প্রার্থী নেয়া যেতে পারে, তবে এর কম হলে কোন মনোনয়ন দেয়া হবে না । মনে রাখতে হবে এবং প্রার্থীদেরকেও জানাতে হবে যে গনতন্ত্রের নীতি অনুযায়ী তাদের কাজ হবে দেশের জন্য উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করা, পুরানো আইন সংস্কার করা ইত্যাদি। আর এই কাজের জন্যই তারা সন্মান ও সন্মানী পাবেন । অর্থনৈতিক ভাবে লাভজনক হবার মত কোন কাজের ভার তাদের উপর থাকবে না বা অন্য দলীয় সরকার দিলেও তারা তা নেবেন না । তাই শুধুমাত্র অনুরূপ যোগ্যতা ও মানসিকতার প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেয়া হবে ।
আগামী নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে হলে তবেই এই দল নির্বাচনে অংশ নেবে । কারণ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন যে ধরনের দলের অধীনে করা যায় সেই মানের বা মন মানসিকতার দল এখনও এদেশে গড়ে ওঠে নি ।
শেষ কথা ;
এই প্রস্তাবটি অনেকের কাছে খুবই সামান্য মনে হতে পারে । কিন্তু এই দেশে খুব সামান্য থেকেই অনেক বড় বড় ঘটনা ঘটে । কয়েকজন লোক উপযুক্ত কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে শাহবাগের মোড়ে দাঁড়িয়েছিলেন । দেখতে দেখতে তা বিশাল হয়ে গনজাগরণ মঞ্চে রূপ নেয় । আমরা জানি ঢাল, তলোয়ার ছাড়াই এই নিধিরাম সর্দারেরা এমন আন্দোলন গড়ে তোলে যার ফলে সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রকৃয়ায় যে ফাঁক রেখেছিল রাতারাতি তা সংশোধন করতে বাধ্য হয় । একটি গনমুখী ভাল দল গড়ার এখনই উপযুক্ত সময় । এধরনের একটি দলের সরব সমর্থক প্রচুর আছে, আর মৌন সমর্থক আছে বাংলার প্রায় প্রতিটি ঘরে । নির্বাচন নীতি মালার কিছু কিছু বিধান (যেমন, একটি দল মাত্র একজনকে মনোয়ন দিতে পারবে, 'ফ্লোর ক্রসিং' করা যাবে না, ইচ্ছে করলে ভোট কেন্দ্রে গিয়েও ভোট নষ্ট করা যায়), দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মানসিকতা, উদ্দেশ্য এবং কর্ম পদ্ধতি জানা থাকার কারনে বিরাট সংখ্যক মানুষের জীবন, সম্পদ ও জীবিকা নিয়ে উৎকন্ঠা ও নিরাপত্তাহীন বোধ, নিজের বিবেকের বিরুদ্ধে কোন দল বা প্রার্থীকে ভোট দেয়ার গ্লানি ইত্যাদি এখন দেশে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে তা এই ধরনের একটি দলের জন্মের জন্য একান্ত উপযুক্ত সময় । এমন একটি দল গড়া হলে প্রথম বারেই তা সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করবে তেমনটা আশা না করাই ভালো । কিন্তু ভালো কিছু করতে হলে কাউকে না কাউকে কোন এক সময় শুরু তো করতে হবে । পরের প্রজন্ম ধীরে ধীরে তা এগিয়ে নিয়ে যাবে । একটি দল যার চালকের আসনে থাকবে এদেশের সব চাইতে বেশি গ্রহনীয়, সন্মানিত ব্যক্তিবর্গ, তাদের সংসদরা মোটামুটি তাদের পরিচালনায় চলবে, এমন একটি দল প্রচলিত স্বার্থবাদী যে কোন রাজনৈতিক দলের চেয়ে ভালো হতে বাধ্য । আর এমন একটি দল প্রতিষ্ঠিত না হলে এদেশের সার্বিক মঙ্গল, এদেশের দুঃখী মানুষের আশা পুরন হবে না ।
( শেষ )
বিজন বিহারী শর্মা, প্রাক্তন অধ্যাপক, স্থাপত্য ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ।
(বর্তমান ঠিকানা – অধ্যাপক বিজন বিহারী শর্মা, স্থাপত্য বিভাগ, আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ।
__._,_.___