হোমলেস অ্যান্ড হাংরি
হা সা ন হা ফি জ |
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুকে বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে। জোর গলায় বলা হচ্ছে : বিলিতি কায়দায় নির্বাচন হবে। কোথায় আগরতলা কোথায় চকিরতলা! পঞ্চ সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের আম ছালা দুটাই 'গন' হয়েছে। জোর গলার তাকত এখন মিইয়ে আসছে ক্রমশ। বাঙাল মুলুকের কালা কুচ্ছিত ও বিলেতের সাহেবসুবো ভিখিরির তুলনামূলক একটি চিত্র পাঠকসমীপে হাজির করবার কোশেশ থাকবে এই রচনায়। সাফল্য যে কচু মার্কা হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নাই। সেই চিত্র প্রাণভরে অবলোকনের পর পাঠক নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবেন। দুই দেশের সিস্টেমে তফারেন্স যে কাঁহাতক, সেটা তারা খুব সহজেই মালুম করতে পারবেন।
পবিত্র রমজান মাস চলছে এখন। সামনে ঈদ। ব্যবসা-বাণিজ্যির, মুনাফা লোটার চমত্কার মওকা। নিত্যপণ্যের যারা ব্যবসাদার, তেনারা রমজান মাসের জন্য উন্মুখ হয়ে থাকেন। চাতক পাখির মতন সেই প্রতীক্ষা। তাদের মুখিয়ে থাকা সাফল্যের মুখ দেখে তখনই, যখন তারা দু'হাতে কামাই করতে পারেন। ক্রেতা নামের বেকুবদের চুষে নিংড়ে ছিবড়ে করে ফেলার কাজটা সহিসালামতেই সমাধা হয়। ফি বছর ভিক্ষুক-ব্যবসায়ীরাও এই 'মহান' মৌসুমের জন্যে তক্কে তক্কে থাকেন। না জনাব, ভিক্ষা 'ব্যবসা' হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি আজও। কিছু লোক আছেন, যারা ভিখিরিদের নিয়ে ব্যবসাপাতি করেন। এই 'খাতে' তেনারা পুঁজি লগ্নি করে থাকেন। রোজার সময় ভিক্ষুকদের আনাগোনা বহুত বেড়ে যায় রাজধানীতে।
জানা গেল, এবার মেট্রো ঢাকায় ভিখিরির 'আমদানি' অন্যান্য বারের চেয়ে বেশি। তাদের জন্য অবশ্য কোনো চত্বর নির্দিষ্ট করা নাই। তিন স্তরের নিরাপত্তা, বিরিয়ানির প্যাকেট প্রদান, ব্যাপক প্রচার সম্প্রচারের বিধি বন্দোবস্ত নাই। এমনকি নিশুত রাইতে বিদ্যুত্ বন করে, সাউন্ড গ্রেনেড ফাটিয়ে, গুলিগালা করে ব্যাপক খতম করণের সিস্টেমও নাই। ক্ষতি কী! কুছ পরোয়া নেহি। ভিক্ষুক ব্যবসায়ীরা গতবারের চাইতে বেশি টাকা রোজগারের নির্দেশ দিয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়তো হয়েই যাবে শেষতক। ভিখিরিরা আসছে রাজধানী ঢাকা অভিমুখে। আসবার বিরাম নাই। ঢাকায় টাকা ওড়ে—এই বিশ্বাসে তারা বলীয়ান। ট্যাকা রোজগারের পাশাপাশি মুফতে ঢাকা শহর দেখা— আকর্ষণ ডাবল। চলো চলো ঢাকা চলো।
রাজধানীর যারা ভিক্ষুক ব্যবসায়ী, তাদের নজর মঙ্গাপীড়িত এলাকার হতদরিদ্র মানুষের দিকে। এসব লোককে তারা ভাড়া করে নিয়ে আসছেন। এক মাসের জন্য। মাথাপিছু খরচা পড়ছে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা। রমজানে যেসব ভিখিরি রাজধানীতে 'পায়ের ধুলো' দিচ্ছে, তাদের সক্কলে অবশ্য ভাড়াটে নয়। এই সিন্ডিকেট বা প্যাকেজের বাইরেও আছে অনেকে। অভাব-অনটনের ছোবল সহ্য করতে না পেরে অনেকে ঢাকায় ভিড় জমাতে বাধ্য হচ্ছে। ভিক্ষা মিলবে, জাকাত-ফিতরার টাকা বা কাপড়-চোপড় পাওয়া যাবে। ব্যক্তি উদ্যোগে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় যাদের আগমন, তাদের এই বয়ানের বাইরে রাখছি। চাইলেও পুরাপুরি সফল হতে পারব না এতে। কারণ ভিক্ষুক-ব্যবসায়ীদের দাপট-দৌরাত্ম্য, প্রভাব-চোটপাটের কারণে হার মানতে হচ্ছে অনেককে। বাধ্য হয়ে তারাও হয়ে যাচ্ছে ভাড়াটে। সেই যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায় আছে না, 'বাবু বলিলেন বুঝেছ উপেন এ জমি লইব কিনে'। প্রতি বছর কয়েক হাজার অতি গরিব মানুষকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। ঈদ উত্সব সম্পন্ন হয়ে গেলেই ব্যস। খেল খতম, পয়সা হজম। ব্যাক টু দ্য প্যাভিলিয়ন।
ভিক্ষুক ব্যবসার হাল হকিকত কেমন ভাইজান? বড়ই ভালো। এরা শেয়ার বাজারের মতো ধরা খায় না। রমজান মাসে এক একজন ভিক্ষুক ব্যবসায়ী আয় করে মিনিমাম ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা। একেক জনের প্রকল্পের আওতায় ভিখিরির সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ জন।
একটা কেস স্টাডি এরকম—মর্জিনা বেগম, এসেছেন রংপুরের মিঠাপুকুর থেকে। টানাটানির সংসার। স্বামী বেঁচে নাই। যখন বেঁচে ছিলেন, তখনও সুদিন ছিল না। অভাব-অনটন লেগেই থাকত। বিধবা হয়ে অকূল পাথারে পড়লেন। তিন তিনটা মেয়ে। ভালো করে খাবার জুটত না একবেলাও। বছর দুয়েক আগে তার পরিচয় হয় ঢাকার মনিরের সঙ্গে। ইনি ভিক্ষুক ব্যবসায়ী। মনিরের সঙ্গে তার চুক্তি হয়। রমজানে মাসিক চুক্তি। ১৫ হাজার টাকা। গত বছর এই চুক্তি ছিল ১০ হাজার টাকার। মর্জিনা মনিরকে পুষিয়ে দিয়েছে। যেনতেন প্রকারে পুষিয়ে দেয়া নয়, ওই এক মাসে মর্জিনার কামাই ছিল ৬০ হাজার টাকা। মানে হলো স্ট্রেইট ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মনির। ডিজিটাল মুনাফা! উ, মাগো অর্ধ লক্ষ টাকা, মাত্তর এক জনের উছিলায়!!
জানালেন মর্জিনা, ঈদের পর মনির তাকে বাড়িতে দিয়ে আসবে। ভিক্ষাবৃত্তি সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা বয়ান করলেন এইভাবে—কিছু লোক আছেন, যারা ভিক্ষা চাইলে বকাঝকা করেন। আবার অনেক দয়ালু মানুষ আছেন, যারা টাকা-পয়সা দেন। ভিক্ষা করা খারাপ কাজ। সেটা আমি জানি রে ভাই। কিন্তু করব কী! অভাবের সংসার, ঘানি তো টানা লাগে।
বাংলার মাটি থেকে এবার আমরা উড়াল দেব সুদূর ইউরোপ মহাদেশে। নন স্টপ ফ্লাইটে পৌঁছে যাব—সোজা লন্ডনে। পুলিশ পাকড়াও করেছে এক পেশাদার ভিক্ষুককে। নাম সিমন রাইট। বয়স ৩৭ বছর। মানুষের কাছে হাত পেতে সে বছরে পায় প্রায় ৫০ হাজার পাউন্ড। বাংলাদেশী টাকায় যা প্রায় ৫৮ লাখ টাকা। ওহ, মাই গড!! সারা দিন সে ভিক্ষা করে। রাতে যে বাড়িতে ঘুমায়, তার দাম তিন কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এগেইন, ওহ, মাই গড!! হাই স্ট্রিটে ছেঁড়া-খোঁড়া জামা-কাপড় পরে নাগরিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তার হাতে যে সাইনবোর্ড শোভা পায়, সেটাতে তিনটা মাত্র শব্দ লেখা। হোমলেস অ্যান্ড হাংরি। বাংলা করলে দাঁড়ায় 'ঘরহারা এবং ক্ষুধার্ত'। রাস্তায় বসে থেকে সে পথচারীদের কাছ থেকে ২০০ পাউন্ডের সমপরিমাণ উপহার সামগ্রী পেত। এখন আর পাচ্ছে না। কারণ বাগড়া দিয়েছে লন্ডনী পুলিশ। যেমন-তেমন বাগড়া না, রীতিমত বাড়া ভাতে ছাই দেয়া যাকে বলে। পুলিশের লোকদের মধ্যে কোনো রস-কষ নাইরে ব্রাদার। ডিজগাস্টিং!!
বিলিতি গণতন্ত্রের কথা চেঁচিয়ে বলি আমরা। নিজ দেশের গণতন্ত্রকে 'ল্যাংড়া' বানিয়ে রেখে আনন্দ পাই। দুই দেশের ভিখিরিদের জীবনমানের ফারাক বিস্তর। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, কারা কোন্ অবস্থানে। ভিক্ষাকে 'অতীব লাভজনক পেশা' হিসেবে বিশ্বস্বীকৃতি দেয়ার জোর দাবি তুলব আমরা। ঘরে ঘরে চাকরি—এই স্লোগান ডাহা ফেল। সামনের ইলেকশনে লোকে ঝাড়ুপেটা করবে! উপসংহারে দেখা যাচ্ছে ভিখিরি-বিনিয়োগ প্রকল্প যথেষ্টই চটকদার, লাভজনক। ফরমালিনমুক্তও কি নয়? একেই বলে অল্প পুঁজি বেশি রুজি।
লেখক : কবি ও সাংবাদিক
hasanhafiz51@gmail.com
পবিত্র রমজান মাস চলছে এখন। সামনে ঈদ। ব্যবসা-বাণিজ্যির, মুনাফা লোটার চমত্কার মওকা। নিত্যপণ্যের যারা ব্যবসাদার, তেনারা রমজান মাসের জন্য উন্মুখ হয়ে থাকেন। চাতক পাখির মতন সেই প্রতীক্ষা। তাদের মুখিয়ে থাকা সাফল্যের মুখ দেখে তখনই, যখন তারা দু'হাতে কামাই করতে পারেন। ক্রেতা নামের বেকুবদের চুষে নিংড়ে ছিবড়ে করে ফেলার কাজটা সহিসালামতেই সমাধা হয়। ফি বছর ভিক্ষুক-ব্যবসায়ীরাও এই 'মহান' মৌসুমের জন্যে তক্কে তক্কে থাকেন। না জনাব, ভিক্ষা 'ব্যবসা' হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি আজও। কিছু লোক আছেন, যারা ভিখিরিদের নিয়ে ব্যবসাপাতি করেন। এই 'খাতে' তেনারা পুঁজি লগ্নি করে থাকেন। রোজার সময় ভিক্ষুকদের আনাগোনা বহুত বেড়ে যায় রাজধানীতে।
জানা গেল, এবার মেট্রো ঢাকায় ভিখিরির 'আমদানি' অন্যান্য বারের চেয়ে বেশি। তাদের জন্য অবশ্য কোনো চত্বর নির্দিষ্ট করা নাই। তিন স্তরের নিরাপত্তা, বিরিয়ানির প্যাকেট প্রদান, ব্যাপক প্রচার সম্প্রচারের বিধি বন্দোবস্ত নাই। এমনকি নিশুত রাইতে বিদ্যুত্ বন করে, সাউন্ড গ্রেনেড ফাটিয়ে, গুলিগালা করে ব্যাপক খতম করণের সিস্টেমও নাই। ক্ষতি কী! কুছ পরোয়া নেহি। ভিক্ষুক ব্যবসায়ীরা গতবারের চাইতে বেশি টাকা রোজগারের নির্দেশ দিয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়তো হয়েই যাবে শেষতক। ভিখিরিরা আসছে রাজধানী ঢাকা অভিমুখে। আসবার বিরাম নাই। ঢাকায় টাকা ওড়ে—এই বিশ্বাসে তারা বলীয়ান। ট্যাকা রোজগারের পাশাপাশি মুফতে ঢাকা শহর দেখা— আকর্ষণ ডাবল। চলো চলো ঢাকা চলো।
রাজধানীর যারা ভিক্ষুক ব্যবসায়ী, তাদের নজর মঙ্গাপীড়িত এলাকার হতদরিদ্র মানুষের দিকে। এসব লোককে তারা ভাড়া করে নিয়ে আসছেন। এক মাসের জন্য। মাথাপিছু খরচা পড়ছে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা। রমজানে যেসব ভিখিরি রাজধানীতে 'পায়ের ধুলো' দিচ্ছে, তাদের সক্কলে অবশ্য ভাড়াটে নয়। এই সিন্ডিকেট বা প্যাকেজের বাইরেও আছে অনেকে। অভাব-অনটনের ছোবল সহ্য করতে না পেরে অনেকে ঢাকায় ভিড় জমাতে বাধ্য হচ্ছে। ভিক্ষা মিলবে, জাকাত-ফিতরার টাকা বা কাপড়-চোপড় পাওয়া যাবে। ব্যক্তি উদ্যোগে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় যাদের আগমন, তাদের এই বয়ানের বাইরে রাখছি। চাইলেও পুরাপুরি সফল হতে পারব না এতে। কারণ ভিক্ষুক-ব্যবসায়ীদের দাপট-দৌরাত্ম্য, প্রভাব-চোটপাটের কারণে হার মানতে হচ্ছে অনেককে। বাধ্য হয়ে তারাও হয়ে যাচ্ছে ভাড়াটে। সেই যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায় আছে না, 'বাবু বলিলেন বুঝেছ উপেন এ জমি লইব কিনে'। প্রতি বছর কয়েক হাজার অতি গরিব মানুষকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। ঈদ উত্সব সম্পন্ন হয়ে গেলেই ব্যস। খেল খতম, পয়সা হজম। ব্যাক টু দ্য প্যাভিলিয়ন।
ভিক্ষুক ব্যবসার হাল হকিকত কেমন ভাইজান? বড়ই ভালো। এরা শেয়ার বাজারের মতো ধরা খায় না। রমজান মাসে এক একজন ভিক্ষুক ব্যবসায়ী আয় করে মিনিমাম ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা। একেক জনের প্রকল্পের আওতায় ভিখিরির সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ জন।
একটা কেস স্টাডি এরকম—মর্জিনা বেগম, এসেছেন রংপুরের মিঠাপুকুর থেকে। টানাটানির সংসার। স্বামী বেঁচে নাই। যখন বেঁচে ছিলেন, তখনও সুদিন ছিল না। অভাব-অনটন লেগেই থাকত। বিধবা হয়ে অকূল পাথারে পড়লেন। তিন তিনটা মেয়ে। ভালো করে খাবার জুটত না একবেলাও। বছর দুয়েক আগে তার পরিচয় হয় ঢাকার মনিরের সঙ্গে। ইনি ভিক্ষুক ব্যবসায়ী। মনিরের সঙ্গে তার চুক্তি হয়। রমজানে মাসিক চুক্তি। ১৫ হাজার টাকা। গত বছর এই চুক্তি ছিল ১০ হাজার টাকার। মর্জিনা মনিরকে পুষিয়ে দিয়েছে। যেনতেন প্রকারে পুষিয়ে দেয়া নয়, ওই এক মাসে মর্জিনার কামাই ছিল ৬০ হাজার টাকা। মানে হলো স্ট্রেইট ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মনির। ডিজিটাল মুনাফা! উ, মাগো অর্ধ লক্ষ টাকা, মাত্তর এক জনের উছিলায়!!
জানালেন মর্জিনা, ঈদের পর মনির তাকে বাড়িতে দিয়ে আসবে। ভিক্ষাবৃত্তি সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা বয়ান করলেন এইভাবে—কিছু লোক আছেন, যারা ভিক্ষা চাইলে বকাঝকা করেন। আবার অনেক দয়ালু মানুষ আছেন, যারা টাকা-পয়সা দেন। ভিক্ষা করা খারাপ কাজ। সেটা আমি জানি রে ভাই। কিন্তু করব কী! অভাবের সংসার, ঘানি তো টানা লাগে।
বাংলার মাটি থেকে এবার আমরা উড়াল দেব সুদূর ইউরোপ মহাদেশে। নন স্টপ ফ্লাইটে পৌঁছে যাব—সোজা লন্ডনে। পুলিশ পাকড়াও করেছে এক পেশাদার ভিক্ষুককে। নাম সিমন রাইট। বয়স ৩৭ বছর। মানুষের কাছে হাত পেতে সে বছরে পায় প্রায় ৫০ হাজার পাউন্ড। বাংলাদেশী টাকায় যা প্রায় ৫৮ লাখ টাকা। ওহ, মাই গড!! সারা দিন সে ভিক্ষা করে। রাতে যে বাড়িতে ঘুমায়, তার দাম তিন কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এগেইন, ওহ, মাই গড!! হাই স্ট্রিটে ছেঁড়া-খোঁড়া জামা-কাপড় পরে নাগরিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তার হাতে যে সাইনবোর্ড শোভা পায়, সেটাতে তিনটা মাত্র শব্দ লেখা। হোমলেস অ্যান্ড হাংরি। বাংলা করলে দাঁড়ায় 'ঘরহারা এবং ক্ষুধার্ত'। রাস্তায় বসে থেকে সে পথচারীদের কাছ থেকে ২০০ পাউন্ডের সমপরিমাণ উপহার সামগ্রী পেত। এখন আর পাচ্ছে না। কারণ বাগড়া দিয়েছে লন্ডনী পুলিশ। যেমন-তেমন বাগড়া না, রীতিমত বাড়া ভাতে ছাই দেয়া যাকে বলে। পুলিশের লোকদের মধ্যে কোনো রস-কষ নাইরে ব্রাদার। ডিজগাস্টিং!!
বিলিতি গণতন্ত্রের কথা চেঁচিয়ে বলি আমরা। নিজ দেশের গণতন্ত্রকে 'ল্যাংড়া' বানিয়ে রেখে আনন্দ পাই। দুই দেশের ভিখিরিদের জীবনমানের ফারাক বিস্তর। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, কারা কোন্ অবস্থানে। ভিক্ষাকে 'অতীব লাভজনক পেশা' হিসেবে বিশ্বস্বীকৃতি দেয়ার জোর দাবি তুলব আমরা। ঘরে ঘরে চাকরি—এই স্লোগান ডাহা ফেল। সামনের ইলেকশনে লোকে ঝাড়ুপেটা করবে! উপসংহারে দেখা যাচ্ছে ভিখিরি-বিনিয়োগ প্রকল্প যথেষ্টই চটকদার, লাভজনক। ফরমালিনমুক্তও কি নয়? একেই বলে অল্প পুঁজি বেশি রুজি।
লেখক : কবি ও সাংবাদিক
hasanhafiz51@gmail.com
__._,_.___