আন্দোলনের পর কেমন চলছে বুয়েট : ইমতিয়াজ আলম
গেলো বছরের এরকম সময় বুয়েটে ঘটে গেলো একটি নজিরবিহীন আন্দোলন ভিসি-প্রোভিসি হটাও আন্দোলন। শিক্ষকদের একটি অংশের নেতৃত্বে এই আন্দোলনে অংশ গ্রহন করে শিক্ষকদের একটি বড় অংশ, শিক্ষার্থীদের অনেকে এবং কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী। আন্দোলনের ভিত্তি হিসেবে সেই সময় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে মোট ১৬টি অভিযোগ তোলা হয়েছিল ভিসি-প্রোভিসির বিরুদ্ধে।
খতিয়ে দেখার জন্য শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনায় একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহবায়ক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের একজন সদস্য, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, বুয়েটের একজন সিনিয়র ডীন এবং বুয়েটের রেজিষ্ট্রার পদে দায়িত্ব পালনরত একজন অধ্যাপক।
তদন্ত কমিটি শিক্ষক সমিতির উত্থাপিত অভিযোগগুলোর কোন সত্যতা খুঁজে পাননি। শিক্ষক সমিতি সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করলে ভিসি এবং প্রোভিসি তাদের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার দাবী জানান গনমাধ্যমে । কিন্তু রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সেরকম কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
আন্দোলনকারী শিক্ষক নেতারা অবশ্য কোন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কখনো দাবী করেননি। তারা দেশবাসীকে সরাসরি তাদের রায় জানিয়ে দিয়েছিলেন এই বলে যে তারা সন্দেহাতীত ভাবেই জানেন যে ভিসি-প্রোভিসি ছাত্রের রেজাল্ট জালিয়াতি করেছেন, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম করেছেন, সিনিয়রিটি ভেঙ্গে বিভিন্ন কমিটিতে পছন্দসই শিক্ষকদেরকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়েছেন এবং কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে বানিজ্য করেছেন। এসব অভিযোগের মধ্যে শিক্ষার্থীরা জড়িত হয়ে পড়েছিল মূলতঃ রেজাল্ট জালিয়াতি ইস্যুতে। তাদের প্রানপ্রিয় বুয়েটে এরকম একটি ন্যাকারজনক ঘটনা ঘটেছে এটা তারা মেনে নিতে পারেনি।
আন্দোলনের এক পর্যায়ে বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তখন কারো কোন অপরাধ চিহ্নিত না করেই প্রোভিসিকে প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হল সরকারের পক্ষ থেকে। এরপর শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আন্দোলনকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কয়েক দফা আলোচনার পর বুয়েটে আবার ক্লাশ শুরু হলো এবং ভর্তি পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হলো। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত আপাতদৃষ্টিতে বুয়েটে সব ঠিকঠাক চলছে বলেই সাধারন ধারনা তৈরী হয়েছে। এর কারন, এখন বুয়েটে কোন প্রকাশ্য আন্দোলন নেই। সংশ্লিষ্টরা তাই অনেকটাই আত্মতৃপ্তিতে আছেন।
এবার দেখা যাক বুয়েটের আন্দোলনকারীদের অভিযোগগুলো কতটা যৌক্তিক ছিল এবং আন্দোলনের পর আসলে কি চলছে বুয়েটে।
এক. সবচেয়ে বড় অভিযোগ- রেজাল্ট জালিয়াতির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষক সমিতির দাবী অনুযায়ী এবং তাদেরই মনোনীত শিক্ষকদেরকে দিয়েই ভিসি মহোদয় আন্দোলনের বেশ আগেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্টে কোথাও প্রোভিসি শব্দটির উল্লেখ পর্যন্ত নেই। তার মানে প্রোভিসি কোনভাবেই রেজাল্ট জালিয়াতির সাথে জড়িত ছিলেন না।
রিপোর্টের কোথাও কোন সুপারিশে ভিসিকে অভিযুক্ত করে সুষ্পষ্ট একটি বাক্যও নেই। থাকার কথাও নয়। কারন, বিষয়টি ছিল মূলতঃ একটি ছাত্রের রেজিষ্ট্রেশন সংক্রান্ত। ছাত্র তার উপদেষ্টা শিক্ষক বা বিভাগীয় প্রধানের মাধ্যমে আবেদন না করে সরাসরি ভিসির কাছে আবেদন করে এবং ভিসি এ ব্যপারে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য রেজিষ্ট্রারকে নোটের মাধ্যমে নির্দেশ দেন। রেজিষ্ট্রার অফিস ছাত্রের আবেদন অনুযায়ী একটি বিষয়ে তার রেজিষ্ট্রেশন বাতিল করেন। যথাযথ মাধ্যমে আবেদনটি ভিসির কাছে না আসায় এখানে একটি প্রক্রিয়াগত ভুল হয়। এই ভুলটি ধরা পড়ার পর সেটি সংশোধনও করা হয়েছিল এবং তা আন্দোলনের আগেই করা হয়েছিল। তারপরও শিক্ষকদের একাংশ আন্দোলনের সবচে' মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে এই ইস্যুটিকেই জিইয়ে রাখলেন আন্দোলনপূর্ব সব কর্মসূচীতে। আরেকটি বিষয় হলো, রেজাল্ট সংক্রান্ত যাবতীয় কর্মকান্ড পালন করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস, রেজিষ্ট্রার অফিস বা ভিসি অফিস নয়। এই ছাত্রের আবেদন বা রেজিষ্ট্রারকে প্রদত্ত ভিসির নোট কখনই পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে প্রবেশ পর্যন্ত করেনি। কাজেই কোন ছাত্রের রেজাল্ট জালিয়াতির বিষয়টি একেবারেই অসম্ভব ।
দুই. অভিযুক্ত ভিসি-প্রোভিসির আমলে প্রায় শতাধিক শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল আন্দোলনকারী শিক্ষকরা। তাদের অভিযোগ, জিপিএ হিসেবে ঐ প্রার্থীর স্নাতক পর্যায়ে অবস্থান তৃতীয় এবং প্রথম দুই জনকে বাদ দিয়ে তাকে নিয়োগ দেয়ায় বুয়েটের রীতি-নীতি এবং ঐতিহ্য মারাত্মকভাবে ধ্বংসের মুখে পড়েছে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, বুয়েটে অতীতে মেধা ক্রমানূসারে শিক্ষক না নেয়ার প্রচুর উদাহরন রয়েছে। আন্দোলনকারী শিক্ষক নেতাদের মধ্যেও এরকম অনেকে রয়েছেন যারা মেধা ক্রমানূসারে তৃতীয় বা চতুর্থ ছিলেন। আর যে প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় তার ইউরোপীয় স্নাতকোত্তর ডিগ্রীও ছিল। এসব কিছু বিবেচনায় নিয়েই ভিসি-প্রোভিসি, সকল অনূষদের ডীনবৃন্দ এবং বহিরাগত বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত সিলেকশন বোর্ড সর্বসম্মতিক্রমে সেই সিদ্ধান্ত নেয়।
কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো আন্দোলনের সময় সেই ডীনরাও এই অভিযোগের পক্ষে অবস্থান নেন। ঐ নিয়োগের সিদ্ধান্তের বিষয়ে ভিসি-প্রোভিসি কাউকে বাধ্য করার চেষ্টা করে থাকলে অন্ততঃ ডীনরা সেখানেই তাঁদের লিখিত আপত্তি জানাতে পারতেন। কিন্তু এরকম কোন কিছুই তাঁরা কখনো করেননি।
তিন. ভিসি-প্রোভিসি সিনিয়রিটির ভিত্তিতে শিক্ষকদেরকে বিভিন্ন অতিরিক্ত দায়িত্ব দেননি বলে যে অভিযোগ তখন তোলা হয়েছিল সেটিকে আন্দোলনের পর শিক্ষক সমিতির নেতারাই হাস্যকর পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। আন্দোলনের পর, আগের রেজিষ্ট্রারকে (সিনিয়রিটি ৪৩) সরিয়ে সেখানে প্রায় ১০০ জন সিনিয়র শিক্ষককে ডিঙিয়ে রেজিষ্ট্রারের দায়িত্ব নিয়েছেন শিক্ষক সমিতির নির্বাহী কমিটির একজন সদস্য। বুয়েটে এই শিক্ষকের চাকুরীর বয়স মাত্র ১২ বছর। বুয়েটের অর্গানোগ্রাম কমিটির মত গুরুত্বপূর্ন কমিটির সদস্য হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন শিক্ষক সমিতির আরেক সদস্য, যার সিনিয়রিটি ১৮০ এর কাছাকাছি।
এছাড়াও শিক্ষক সমিতির নির্দেশনাতে, অনেক জুনিয়র হওয়া সত্ত্বেও, বিশেষ পছন্দের কিছু শিক্ষককে বেশ কিছু কমিটিতে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করায় আন্দোলনকারী অনেক সিনিয়ির শিক্ষকরাই এখন হতবাক। শিক্ষক সমিতির নির্বাহী কমিটির অন্য একজন সদস্য তারই বিভাগের দু'জন সিনিয়র অধ্যাপককে ডিঙিয়ে এখন একটি দপ্তরের পরিচালকের দায়িত্ব নিয়েছেন। আন্দোলনের সময় এবং আন্দোলনের পরে নেতাদের এরকম নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত ইউ-টার্ন কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না আন্দোলনকারী অন্যান্য শিক্ষকরা । এমনকি আন্দোলনের এই নেতারা এখন ভিসির বিরুদ্ধে তেমন কোন অভিযোগ নিয়ে সমিতির সভায় কোন আলোচনাও করতে চান না বলে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
শিক্ষক সমিতির বর্তমান সভাপতি এবং আন্দোলনের রূপকার এখন সমিতির কোন সাধারন সভায় ভিসির বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ পর্যন্ত তোলেন না বলে জানিয়েছেন অনেক শিক্ষক। উপাচার্যের কাছ থেকে তার পছন্দ মাফিক শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সুযোগ সুবিধা আদায় করে দিতে পারছেন বলে ঐ একই উপাচার্যের বিরুদ্ধে এখন তার নেতৃত্বের শিক্ষক সমিতি এখন আর তার অপসারন দাবীর কথা উচ্চারনও করছেন না।
ক্যাম্পাসে ঘুরে দেখা যায় শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং অন্য একটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দীর্ঘ লাইন থাকে প্রতিদিন। সবাই এখন এখানে এসে দাঁড়িয়ে থাকছে নানান তদ্বির নিয়ে। বিষয়টা এক ধরনের "সমান্তরাল প্রশাসন" চালানোর মতই মনে হচ্ছে সবার কাছে। বিশ্লেষনে প্রতীয়মান হয় যে, আন্দোলনকারীদের অভিযোগগুলোর তেমন কোন ভিত্তি ছিল না। সঙ্গত কারনেই প্রশ্ন আসে, এই আন্দোলন তবে কেন হয়েছিল? কার বা কাদের স্বার্থে এমন কী আঘাত লেগেছিল যে বুয়েটের মত একটি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাসের পর মাস সব গনমাধ্যমের শিরোনাম হলো?
বুয়েট শিক্ষকদের মধ্যে পরিষ্কার দুটি রাজনৈতিক বিভাজন রয়েছে;
· একটি স্বাধীনতার পক্ষের এবং প্রগতিশীল শক্তি (সংখ্যালঘু),
· অন্যটি স্বাধীনতার বিপক্ষের এবং প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি (সংখ্যাগরিষ্ঠ)।
এছাড়াও রয়েছে আরেকটি পক্ষ যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বা প্রোভিসি হবার মত যথেষ্ট সিনিয়রিটি বা যোগ্যতা রাখেন না কিন্তু ব্যক্তিগত কারিশমার বদৌলতে সমান্তরাল প্রশাসনের দায়িত্ব পালন করতে পছন্দ করেন। এরকমই একটি গোষ্ঠী চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন কিছু শিক্ষক। যোগ্যতা পূরন না হলেও বুয়েটের বহু শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পদোন্নতি সহ নানাবিধ সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন এই চক্র। প্রভাব খাটিয়ে নিয়ম পরিবর্তন করে নিজেদের জন্য সুবিধা নিতেও ভুল করেননি তারা।
বুয়েটে এই পর্যন্ত যে কয়জন ভিসি এসেছেন তারা কম বেশী এই শিক্ষক চক্রের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করেছেন। যারা করেননি, তাদের বিরুদ্ধেই আন্দোলন হয়েছে।
মজার ব্যপার হলো, এই চক্র নিজেদেরকে কঠিন আওয়ামীলীগ সমর্থক বলে দাবী করলেও বুয়েটে তাদের নেতৃত্বে প্রতিটি আন্দোলনই হয়েছে আওয়ামীলীগ সরকারের সময়।
শুধু তাই নয়, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ছাত্রদলের দুই গ্রুপের টেন্ডারবাজির জের হিসেবে বুয়েট ছাত্রী সাবেকুন্নাহার সনির করুন মৃত্যুর সময় এই শিক্ষক চক্র সুকৌশলে সনির খুনীদের শাস্তি মওকুফের ব্যপারে আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন বলে মত প্রকাশ করেছে অনেক প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীরা।
অনেক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে যে এই শিক্ষক চক্রের প্রভাবের কারনেই এখন পর্যন্ত বুয়েটের ছাত্রী হলের নাম "সাবেকুন্নাহার সনি হল" করা সম্ভব হয়নি। আর তাই বুয়েটের ছাত্রী হল এখনো নামহীন একটি হল হিসেবেই রয়ে গেছে।
মহাজোট সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত বুয়েটের বর্তমান ভিসি এবং প্রত্যাহারকৃত প্রোভিসি দুজনেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হন প্রথম থেকেই।
নিয়ম মাফিক এবং অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী বুয়েট চালাতে চেষ্টা করায় তারা অতীতের অনেক অনিয়ম খুঁজে পান এবং ঐ গোষ্ঠী চক্রের চেহারা তাদের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। এটি বুঝতে পেরে তারা কোনঠাসা হয়ে পড়েন এবং ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
আন্দোলনের উপাদান হিসেবে তারা প্রথমে প্রোভিসির সিনিয়রিটিকে এবং তারপর শিক্ষকদের চাকুরীর বয়সসীমা ৬৫ বছরে উন্নীত করার দাবীকে ইস্যু হিসেবে দাঁড় করায়।
মহাজোট সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্বপ্রাপ্ত হবার সময় বুয়েটের উপাচার্য ছিলেন জোট সরকারের আমলে নিয়োগ প্রাপ্ত অধ্যাপক ডঃ এ এম এম সফিউল্লাহ। তাঁর সিনিয়রিটি ছিল ১১।
অর্থাৎ ১০জনকে ডিঙিয়ে তিনি জোট সরকারের আমলে এই নিয়োগ পান।
মহাজোট সরকার অন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পরিবর্তন করলেও মেয়াদ উত্তীর্ন হবার আগে বুয়েটের ভিসি পরিবর্তন না করার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে বুয়েটের সিনিয়র শিক্ষকদের চেয়ে নীচের স্তরের শিক্ষকরা প্রোভিসি হবার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। উল্লেখ্য, এই দৌড়ঝাঁপ করা শিক্ষকদের মধ্যে ডঃ হাবিবুর রহমান ছাড়াও ঐ শিক্ষক চক্রের অনেকেই আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে প্রোভিসি হবার জন্য সচেষ্ট হন। কিন্তু মহাজোটের নেতৃত্বের কাছে ডঃ হাবিবুর রহমান অধিকতর পরিচিত ও আস্থাভাজন হবার কারনে শেষ পর্যন্ত প্রোভিসি হিসেবে তিনিই নিয়োগ পান ।
প্রোভিসি হিসেবে নিয়োগ না পাওয়ায় সেই শিক্ষক চক্রের স্বপ্ন ভঙ্গ হয় এবং তারাই প্রথম ডঃ হাবিবুর রহমানের প্রোভিসি হিসেবে নিয়োগ জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সঠিক হয়নি বলে সরব হন। শুধু তাই নয়, নিজেদের মনের ক্ষোভ মেটানোর জন্য তারা কারো কারো ব্যক্তিগত কারিশমাকে পুঁজি করে জীবনে প্রথম শিক্ষক সমিতির নির্বাচন করেন এবং স্বাধীনতার বিপক্ষের এবং প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির (সংখ্যাগরিষ্ঠ) আশীর্বাদ নিয়ে জয়ী হন। এটি তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য একটি শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে ওঠে।
আন্দোলনের শুরুতে মাঠে নেমে আন্দোলনকারী শিক্ষকরা বুঝতে পারেন যে শুধু মাত্র মানব বন্ধন, মৌন মিছিল এসব করে প্রশাসন বা সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করা যাবে না। তারা এক পর্যায়ে বুঝতে পারেন যে শিক্ষার্থীদেরও এর সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। অনেকটা এসাইনমেন্ট প্রাপ্ত রাজনৈতিক কর্মীর মত মরিয়া হয়ে এই শিক্ষক চক্র নজিরবিহীনভাবে শ্রেনী কক্ষে পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের অনেক কিছু বুঝাতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। কারন শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক বিষয়ে তাদের সম্পৃক্ত হবার মত কোন কারন খুঁজে পাচ্ছিল না।
তাদেরকে সম্পৃক্ত করার জন্য মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে তাই আন্দোলনলকারী শিক্ষক নেতারা এক ছাত্রের রেজিষ্ট্রেশন সংক্রান্ত বিষয়কে রেজাল্ট জালিয়াতি হিসেবে অপপ্রচার করে শিক্ষার্থীদেরকে বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করে এবং সক্ষম হয়।
অথচ বিষয়টি যে কতটা ভিত্তিহীন ছিল এর ব্যখ্যা আগেই দেয়া হয়েছে। ক্রমান্বয়ে শিক্ষার্থীরা সম্পৃক্ত হয়ে যাচ্ছে বুঝতে পেরে কতৃপক্ষ রমজান এবং ঈদুল ফিতরের ছুটি এগিয়ে নিয়ে আসে। এটি কতৃপক্ষের একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। কারন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদেরকে ভিসি-প্রোভিসির বিরুদ্ধে অপধারনা সৃষ্টি করতে যতটা বেগ পেতে হতো এখন তাদের আর কোন কষ্ট করতে হলো না। শিক্ষার্থীরা হঠাত করে ক্লাশ বন্ধ করার সিদ্ধান্তে স্বতঃস্ফুর্তভাবেই ভিসি-প্রোভিসির বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠলো। আন্দোলনকারী শিক্ষকদের পক্ষে এখন এই শিক্ষার্থীদেরকে সব কিছুই তাদের মত করে বুঝানো সহজ হয়ে গেলো।
এরপরের ঘটনা প্রবাহ দেশবাসীর সবারই জানা। বুয়েটের মত একটি শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন গনমাধ্যমগুলোর শিরোনাম হতে থাকলো। এই সরকারের আমলে ঘটনাটি ঘটেছে বলে বিরোধী শিবিরের নেতৃত্ব দুঃখিত হবার পরিবর্তে আনন্দিত হয়েছেন। সরকার সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে কোন জোরালো অবস্থান নেয়নি। ভেতর থেকে ঐক্য ফোরামের ব্যানারে ৫/৬ শত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চেষ্টা করেছিল। তাদের দাবী ছিল একটাই, বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে যদি ভিসি-প্রোভিসি দোষী সাব্যস্ত হন তাহলে তাদেরকে অপসারন করা হোক। কিন্তু আইনী প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে বিষয়টির সুরাহা করাটা দীর্ঘ মেয়াদে ভাল পরিনতি বয়ে আনবে না কারো জন্য এই ছিল তাদের অবস্থান। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে বিচার বিভাগীয় তদন্তের বিষয়ে কোন ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।
আসন্ন ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের জন্য তড়িঘড়ি প্রোভিসিকে প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আলোচনার পর আলোচনা হলো, বৈঠকের পর বৈঠক হলো শুধু আন্দোলনকারীদের সাথে। আপোষ হলো শুধু তাদের সাথেই। বিচারের বানী নিভৃতেই কাঁদলো।এখনো বুয়েটকে নিয়ে ভাববার সময় আছে সরকারের। বিচার বিভাগীয় তদন্ত এখনো হতে পারে। আইনের শাসনে বুয়েটকে এখনো ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। স্বার্থান্বেষী কোন গোষ্ঠী চক্রের কাছে যেন বুয়েটের সম্মান আর কখনো এভাবে বিলীন না হয়, দেশের মানুষের কাছে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বুয়েটকে যেন কেউ আন্দোলনের বুয়েট হিসেবে আখ্যায়িত করতে না পারে সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। "বুয়েট বাঁচাও" আন্দোলনের সমাপ্তি রেখা টানার দায়িত্ব এখন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের।
মহাজোট সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত বুয়েটের বর্তমান ভিসি এবং প্রত্যাহারকৃত প্রোভিসি দুজনেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হন প্রথম থেকেই। নিয়ম মাফিক এবং অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী বুয়েট চালাতে চেষ্টা করায় তারা অতীতের অনেক অনিয়ম খুঁজে পান এবং ঐ গোষ্ঠী চক্রের চেহারা তাদের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে।
এটি বুঝতে পেরে তারা কোনঠাসা হয়ে পড়েন এবং ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। আন্দোলনের উপাদান হিসেবে তারা প্রথমে প্রোভিসির সিনিয়রিটিকে এবং তারপর শিক্ষকদের চাকুরীর বয়সসীমা ৬৫ বছরে উন্নীত করার দাবীকে ইস্যু হিসেবে দাঁড় করায়।
এর কিছুদিন পর প্রধানমন্ত্রী সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ফেডারেশনের কাছে প্রতিশ্রুতি দেন যে শিক্ষকদের চাকুরীর বয়সসীমা ৬৫বছরে উন্নীত করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার তিন মাস যেতে না যেতেই এই শিক্ষক সমিতি বিনা কারনেই ৬৫ বছরের সিদ্ধান্ত অতি শীঘ্র বাস্তবায়িত করার জন্য চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে ক্লাশ বর্জন কর্মসূচী দিল। বুয়েটের সিন্ডিকেট এবং শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে জানানো হলো যে সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকুরীর বয়সসীমা ৬৫ বছরে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত এক যোগেই নেয়া হবে। বুয়েটকে আলাদা করে দেখাই কোন সুযোগ এখানে নেই। তবুও শিক্ষক সমিতি যেন নাছোড়বান্দা।
এই ইস্যুতে আস্তে আস্তে শিক্ষকদের মনোভাব যখন কিছুটা সরকারের বিরুদ্ধে গেলো, তখন বুয়েটে সংখ্যাগরিষ্ঠ জামাত-বিএনপি সমর্থক শিক্ষকরা তথাকথিত আওয়ামী লীগার এই শিক্ষক চক্রকে নেতৃত্বের নেপথ্যে রেখে ভিসি- প্রোভিসি হটানোর চূড়ান্ত আন্দোলনে নামে।
আন্দোলনের শুরুতে মাঠে নেমে আন্দোলনকারী শিক্ষকরা বুঝতে পারেন যে শুধু মাত্র মানব বন্ধন, মৌন মিছিল এসব করে প্রশাসন বা সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করা যাবে না। তারা এক পর্যায়ে বুঝতে পারেন যে শিক্ষার্থীদেরও এর সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। অনেকটা এসাইনমেন্ট প্রাপ্ত রাজনৈতিক কর্মীর মত মরিয়া হয়ে এই শিক্ষক চক্র নজিরবিহীনভাবে শ্রেনী কক্ষে পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের অনেক কিছু বুঝাতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। কারন শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক বিষয়ে তাদের সম্পৃক্ত হবার মত কোন কারন খুঁজে পাচ্ছিল না।
তাদেরকে সম্পৃক্ত করার জন্য মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে তাই আন্দোলনলকারী শিক্ষক নেতারা এক ছাত্রের রেজিষ্ট্রেশন সংক্রান্ত বিষয়কে রেজাল্ট জালিয়াতি হিসেবে অপপ্রচার করে শিক্ষার্থীদেরকে বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করে এবং সক্ষম হয়। অথচ বিষয়টি যে কতটা ভিত্তিহীন ছিল এর ব্যখ্যা আগেই দেয়া হয়েছে।
এরপরের ঘটনা প্রবাহ দেশবাসীর সবারই জানা। বুয়েটের মত একটি শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন গনমাধ্যমগুলোর শিরোনাম হতে থাকলো।
বিচারের বানী নিভৃতেই কাঁদলো।এখনো বুয়েটকে নিয়ে ভাববার সময় আছে সরকারের। বিচার বিভাগীয় তদন্ত এখনো হতে পারে। আইনের শাসনে বুয়েটকে এখনো ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। স্বার্থান্বেষী কোন গোষ্ঠী চক্রের কাছে যেন বুয়েটের সম্মান আর কখনো এভাবে বিলীন না হয়, দেশের মানুষের কাছে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বুয়েটকে যেন কেউ আন্দোলনের বুয়েট হিসেবে আখ্যায়িত করতে না পারে সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। "বুয়েট বাঁচাও" আন্দোলনের সমাপ্তি রেখা টানার দায়িত্ব এখন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের।
--
দেশে বিদেশে বাঙ্গালীরা এবং বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ গুনুমুগ্ধ ভক্ত গন
সুখে থাকুন, ভালো থাকুন এবং নিরাপদে থাকুন
জয় বাংলা , জয় বঙ্গবন্ধু
শুভেচ্ছান্তে
Engr. Shafiqur Rahman Anu
__._,_.___