Hello
I write as guest writer in Mukto-mona. Now I am sending another essay to be published.
Thanks.
Rawshan Ara
আত্মপ্রায়শ্চিত্ত
ধন-সম্পদ জড় করে তার থেকে আত্মতুষ্টি মানুষের স্বভাবজাত। এই স্বভাব তার জৈবিক অস্তিত্বের ধারাবাহিক বিবর্তনগত চিরন্তন পটভুমির অংশ। আধিপত্য, দম্ভ, আত্মপ্রতিষ্ঠার অহম তাকে এই স্বভাবের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে সাহায্য করে। নিজ গুনে মানুষকে এই কুহক ছেড়ে বেরিয়ে আসতে হয়। এসবই তত্ত্বকথা। একজন পাড় ঘুষখোর বিশেষ কোন আকষ্মিক পরিবেশগত বিপর্যয় বা ক্রান্তিকালের কবলে পড়ে আত্মপ্রায়শ্চিত্তে নিমগ্ন হতে পারে, যদিও তা কদাচিত ঘটে। তবুও তো ঘটে। সেই সম্ভাবনার হাত ধরে একজন পরিবেশের চাপে বিপর্যস্থ পাড় ঘুষখোরের আত্মজীবনির মাঝ থেকে প্রায়শ্চিত্তের অংশটুকু লেখার প্রয়াস পেয়েছিলাম। 'যদি এমন হোত'-গোছের কল্পনাটা করতে দোষ কি?
আমার জন্ম হয়েছিল এক বদ্ধ অচলায়াতনে। সুস্বাস্থ্যের জন্য আমার যতটুকু বিশুদ্ধ বাতাসের দরকার ছিল তার থেকে আমি বঞ্চিত হয়েছি। তাই আজ আমি স্বাস্থ্যহীন। বেঁচে থাকার ন্যুনতম অধিকার থেকে বঞ্চিত অসহায় এক শিশু যার ছোট ছোট অনেক ইচ্ছা অঙ্কুরেই গলা টিপে হত্যা করা হয়েছিল সেই কবে তা আজ আর স্মরন নেই। শুধু এইটুকু মনে আছে, বাবা-মার কাছ থেকে শেখা বুলি- তোমার খেলার বয়স নেই। খেলার জন্যে যে একটা বয়স থাকতে হয় সেই বোধই তখন হয়নি। তাই আমি আর কখনো খেলার সময় পাইনি। সাথিহীন, বন্ধুহীন, ভারসাম্যহীন চরাচরে আমার ঠিকানা হয় অসম্পূর্ণ এক বিকল জগতে, যা আমি বহন করে চলেছি আজও। যখন আমার স্কুল শুরু হলো তখন আমাকে শেখানো হলো- তোমাকে কিন্তু বড় চাকরী পেতে হবে- সেটাই তোমার একমাত্র গন্তব্য। আজ আমি অনেক বড় চাকুরে। এই চাকরী পেতে যা যা দরকার সবই আমি করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে কিভাবে চাদাবাজী করতে হয়, ক্ষমতাসীন পার্টীর কিভাবে মন জুগিয়ে চলতে হয় সবই আমার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ থেকে শেখা। তাইতো আমি বড় বেতনভুক চাকুরীজীবি। পরিবারের সবার মন জুগিয়েছি টাকা বিলিয়ে। আর তাই আমি টাকার পাগল- ন্যায় নীতি বিবর্জিত এমনি এক মানব সন্তান আমি যাকে দেখে শুধু নিরবতাই তৈরী হয় লজ্জায় আর অপমানে।
বসন্তের কোকিল আর কাকের ডাক আমার কাছে সবই সমান। তাই আমি বন বিভাগের দায়িত্বে থেকে বন উজাড় করে মরুভূমি বানিয়ে দিয়েছি। আমি আমার জন্মদাতার বিচার চাই, যে আমাকে জন্ম দিয়েই আমার বাল্য-চপলতাকে পায়ে পিষে মেরে আমার উপর চাপিয়ে দিয়েছিল অসুস্থ্য এক দৌড় প্রতিযোগীতা। অতঃপর আমি বিচার চাই আমার শিক্ষকের, যে আমাকে শিখিয়েছে- জীবনে ভাল একটা চাকরী ছাড়া আর কোন নিশানা থাকতে পারে না। তারা আমার চিত্ত বিকাশের সমস্ত অধীকার কেড়ে নিয়ে এই পৃথিবীর বহুমাত্রীক স্বাদ-বর্ন-গন্ধ থেকে আমাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। আমার স্বাধীন সত্তাকে কেড়ে নিয়ে তারা আমার উপর নিজেদের খেয়ালী বানিজ্য বলবত করেছে- এদের সবার আমি বিচার চাই।
জীবনের রুপ-রস-গন্ধ কিছুই আমি আর পাই না, তাই আমি মানুষের আদলে এক অমানুষ। আমি আজ আমারও বিচার চাই। বিচারের শুদ্ধ বারীতে সিঞ্চিত হয়ে আমি শুচি হতে চাই। আমি শুধু বাবা-মা আর শিক্ষকের তৈরী করা পণ্য নই। আমি রাজনীতিরও উপজাত। তাই আমি অধিকার-বঞ্চিত নাগরীকের পাশে দাড়িয়ে ভন্ড শাসকের পতন চাই। আমি কৈফিয়ত চাই এই সমাজের কাছে- কি অপরাধে আমার শিশুবয়সের সব আকাঙ্খাকে অঙ্কুরে বিনাশ করা হয়েছিল? তাই আমি মানব শিশুর অধিকার হরনকারীদের কালাপানি দিয়েই তবে ক্ষান্ত হতে চাই।
কী ছিলাম না আমি- আমি ছিলাম আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্থ এক আমলা, একের বিরুদ্ধে অন্যকে লেলিয়ে দিয়ে পিছে বসে ফায়দা লোটা কুট-কৌশলী, অন্যের অধিকার হরন করা প্রকৃতি বিধ্বংসী বন-রক্ষক, চকচকে স্যুট-বুটের মোড়কে বিকারগ্রস্থ এক দানব। স্বার্থান্ধ হয়ে শুধুই পিছন হেটেছি ভুতের মতন। বঞ্চিত মানুষকেও বাধ্য করেছি পিছু হাটতে নিজের ক্ষমতা যতটুকু আছে তাই দিয়ে। আমার এক অংগের এত রূপ উন্মোচন করে এমন কেউ ছিল না এই ক্ষয়িষ্ণু জনপদে, তাই আমিই তা করেছি- করেছি অন্তরের তাগিদে। আমার অন্তরাত্তা আমাকে ঘুনপোকার মত করে খেতো। আহ! মৃত্যু যন্ত্রনা এর থেকে অনেক ভাল। সেই যন্ত্রনার লাঘবের জন্য আমি আমার মুখোশ টান মেরে খুলে ফেলেছি। আমি বাঁচতে চাই- এবার আমি ঠিকই বাচবো। হে বিধাতা, তুমি আমাকে একটুখানি পরমায়ু ঋন দিও যেন আমি বাকী জীবনটা আত্মপ্রায়শ্চিত্তে কাটিয়ে যেতে পারি। আর যদি আয়ু দিতে না পারো তবে যেন পরজনমে বাবা-মা-গুরুহীন একখন্ড মেঘ করে দিও- হ্যা তাইই করো। তাহলে কেঁদে কেঁদে মনের জ্বালা মেটাতে পারবো। অরন্য বনানী ধ্বংস করে যে সর্বগ্রাসী মরুভূমি বানিয়েছি তা যেন আবার ফিরিয়ে দিতে পারি এই ক্ষয়িষ্ণু জনপদের বঞ্চিত মানুষদের। হে ঈশ্বর তোমার কাছে করজোড়ে প্রার্থনা করি- তুমি আমায় মেঘই করে দিও।
-রওশন আরা
__._,_.___