Banner Advertiser

Wednesday, November 13, 2013

[mukto-mona] হেফাজতের আড়ালে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র ছিল জামায়াত-বিএনপির - ৩



হেফাজতের আড়ালে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র ছিল জামায়াত-বিএনপির - 
হেফাজতের আড়ালে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র ছিল জামায়াত-বিএনপির  -২
হেফাজতের আড়ালে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র ছিল জামায়াত-বিএনপির - ৩
নির্মূল কমিটির গণকমিশনের শ্বেতপত্রের সারাংশ ও সুপারিশ
(পূর্বপ্রকাশের পর)
শাপলা চত্বরে অবস্থান ধরে রাখতে পারলে পরদিন সকালে ২০০ গরু জবাই করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল ১৮ দল। জামায়াতের টাকায় পুরান ঢাকার এক শীর্ষস্থানীয় বিএনপি নেতা হাজার হাজার মানুষের জন্য রান্নার আগাম আয়োজনও করে রেখেছিলেন। বেশ কয়েকটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। তবে হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী এসব পরিকল্পনার অনেক কিছুই জানতেন না। পুলিশ হেফাজতে জুনায়েদ বাবুনগরী এসব তথ্য দিয়েছেন। পুলিশ জুনায়েদ বাবুনগরীর মুঠোফোনের কললিস্ট যাচাই করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতা ও ব্যবসায়ীর কল রেকর্ড পেয়েছে।...
'পুলিশ সূত্র জানায়, হেফাজতী তা-বের ঘটনায় গ্রেফতার করা আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও পুলিশ জানতে পেরেছে, গত ৫ মে ঢাকায় যে তা-ব হয়েছিল, তাতে হেফাজতের পাশাপাশি অংশ নিয়েছিল জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। এছাড়া হিযবুত তাহ্রীর, হরকাতুল জিহাদসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত আরও কয়েকটি জঙ্গী সংগঠনের কর্মীরাও অংশ নিয়েছিল।
'ডিবি সূত্র জানায়, জুনায়েদ বাবুনগরী জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, ১৮ দল হেফাজতকে ব্যবহার করে সরকারের পতন ঘটাতে চেয়েছিল। আর তা করতে সফল না হওয়ায় এখন পরিস্থিতি অন্যদিকে ধাবিত করার চেষ্টা করছে তারা। এখন লাশ নিয়েও তারা রাজনীতি করছে।
মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, হেফাজতের অবরোধ ও সমাবেশ ঘিরে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে। সমাবেশের আগেই ঢাকার বাইরে থেকে পরিবহনে করে হেফাজত ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের আনা হয়েছে। তাদের থাকা-খাওয়াসহ নানা কাজে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে। এই অর্থায়নের উৎস খুঁজে বের করা হচ্ছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ৬ মে পর্যন্ত শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের অবস্থান ধরে রাখতে সকালের নাশতার জন্য বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে অর্ডারও দেয়া হয়েছিল। অনেক ব্যবসায়ী জেনারেটরের ব্যবস্থা করেছিলেন। এছাড়া একটি বেসরকারী ব্যাংক আড়াই শ' মোবাইল টয়লেট হেফাজতের সমাবেশস্থলে পাঠানোর জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল।'১৯
১৯. কালের কণ্ঠ, ১২ মে ২০১৩

হেফাজতের মহাসমাবেশকে মিসরের তাহরির স্কয়ারের মতো গণঅভ্যুত্থানে রূপান্তরের পরিকল্পনা করেছিল জামায়াতে ইসলামী। কায়রোর এই অভ্যুত্থানে জামায়াতের সহযোগী 'মুসলিম ব্রাদারহুড' যে ভূমিকা পালন করেছিল, ঢাকার শাপলা চত্বরে তার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চেয়েছিল জামায়াত। এ বিষয়ে 'প্রথম আলো'র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, '৫ মের 'ঢাকা অবরোধ' কর্মসূচি পালনে হেফাজতে ইসলামকে অর্থসহায়তা দিয়েছেন ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের শতাধিক নেতা। এছাড়া ৪০টির মতো আর্থিক ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান অর্থ, খাদ্য ও পরিবহন সুবিধা দিয়ে কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক এই সংগঠনটিকে সহায়তা করেছে।
সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছিল অবরোধ কর্মসূচীর ঠিক আগে। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আওয়ামী লীগের ঢাকার বাইরের পাঁচ নেতা, বিএনপির ৩৪, জামায়াতে ইসলামীর ৪১, জাতীয় পার্টির দুজন, চার পরিবহন ব্যবসায়ী ও একজন শিক্ষক এবং ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন দলের ২৫ নেতা হেফাজতে ইসলামকে সহায়তা করেছেন।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগের ওই পাঁচ নেতার বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেয়ারও সুপারিশ করা হয়েছিল। তবে হেফাজতকে অর্থ দেয়ার বিষয়টি 'প্রথম আলো'র কাছে অস্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো।...
'হেফাজতকে অর্থসহায়তা দেয়া উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলো হচ্ছে ইসলামী ব্যাংক, রাবেতা আল ইসলামী, ইবনে সিনা ট্রাস্ট, কেয়ারি গ্রুপ, মাকান গ্রুপ, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, চট্টগ্রামের আল আমিন ফাউন্ডেশন, কেয়ারি বাংলাদেশ, খুলনার হ্যামকো ব্যাটারি, আল আমিন জুয়েলার্স, তামান্না ট্রেডিং, মৌ-মার্কেট, রেটিনা, যশোরের এস এহসান মাল্টিপারপাস কোম্পানি সোসাইটি লিমিটেড, হাজী শরীয়তউল্লাহ ফাউন্ডেশন, আটকাবা ফাউন্ডেশন এবং জেলা ইত্তেফাকুল উলামা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট, এমদাদুল উলুম মাদ্রাসা।...
'ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপি ও জামায়াত-শিবির হেফাজতের সঙ্গে সংঘবদ্ধভাবে মতিঝিল, বায়তুল মোকাররম, পল্টন, প্রেসক্লাব, সচিবালয় ও শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দাবি না মানা পর্যন্ত অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করবে। এছাড়া বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের তিন থেকে চার হাজার সশস্ত্র কর্মী অবরোধের দিন পরিকল্পিতভাবে হেফাজতের নেতাকর্মীদের লাশ ফেলে এর দায়ভার সরকারের ওপর চাপিয়ে ঢাকা মহানগরে ব্যাপক ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালাতে পারে।
অবরোধ কর্মসূচিতে বাধা পেলে হেফাজতের ব্যানারে বিএনপি-জামায়াতের কর্মী-সমর্থকরা সরকারী গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আক্রমণ, যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের আশঙ্কা করা হয় প্রতিবেদনে।
প্রসঙ্গত, ৫ মে রাজধানীতে হেফাজতে ইসলামের সন্ত্রাসী তা-ব সেই আশঙ্কাকে বাস্তবে প্রমাণ করেছে। অন্যদিকে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের রাতে অবস্থান ও এদের প্রতি বিএনপির প্রকাশ্য সমর্থনও সে তথ্য প্রমাণ করে। এছাড়া নানা সূত্রে এটিও নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, জামায়াত-শিবিরের কর্মীরাও ওই ধ্বংসযজ্ঞে অংশ নিয়েছিলেন।২০
২০. প্রথম আলো, ১২ মে ২০১৩

হেফাজতের ঢাকা অবরোধের আগের দিন ৪ মে সরকারের গোয়েন্দা বিভাগের এই প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে তার প্রমাণ ঘটনার দিন পাওয়া গেছে। অর্থ লেনদেনের বিষয়টি নির্দিষ্টভাবে প্রমাণ করা না গেলেও কমিশনের তদন্তে স্পষ্ট হয়ে গেছে ৫ মের মহাসমাবেশের প্রস্তুতি, দেশব্যাপী হেফাজত নেতাদের বিশাল সব সমাবেশের আয়োজন, হেলিকপ্টার ভাড়া করে সমাবেশে আহমদ শফীর অংশগ্রহণ এবং ৫ মে হেফাজতের ব্যানারে প্রায় দুই লাখ মানুষের ঢাকা আগমন, অবস্থান প্রভৃতির জন্য এক শ' কোটিরও বেশি টাকা ব্যয় হয়েছে।
৫ তারিখের মহাসমাবেশে আসার জন্য হেফাজত নিয়ন্ত্রিত সহস্রাধিক মাদ্রাসায় আমরা ছাত্র ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। ছাত্রদের মাথাপিছু এক হাজার এবং শিক্ষকদের তিন হাজার টাকা প্রদানের কথা বলা হলেও আমরা যে চার হাজার ছাত্র-শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছি তারা কেউ প্রতিশ্রুত অর্থ পাননি। এমনকি নিহতদের পরিবারও হেফাজতের কাছ থেকে কোন অর্থসাহায্য পায়নি, যদিও অধিকাংশ নিহত হেফাজত কর্মী ছিলেন পরিবারের একমাত্র অথবা প্রধান উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের সময় এবং পরে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছেন সেখানে দাবি করেছেন, আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে জড়িত ছিলেন ঢাকার লালবাগ মাদ্রাসার নেতারা, তিনি নিজে এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। ৫ মের তা-ব এবং অর্থ লেনদেন প্রসঙ্গে বাবুনগরী তার জবানবন্দীতে বলেছেন- 'গত ৫/৫/১৩ ইং তারিখে আমাদের ১৩ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে ঢাকা অবরোধ ও শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ কর্মসূচী ছিল। রাজধানী ঢাকার ৬টি প্রবেশপথে ভোর হইতে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচী পালন করার কথা ছিল। পরে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে রাজধানী ঢাকার শাপলা চত্বরে আমাদের ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কিন্তু আমি লালবাগ মাদ্রাসায় অবস্থানকালীনই জানতে পারি যে, কিছু সংখ্যক উচ্ছৃঙ্খল জনতার সঙ্গে আমাদের কিছু ছেলে সকাল হইতে বায়তুল মোকাররম, পুরানা পল্টন, বিজয় নগরসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, বোমাবাজি, পুলিশের ওপর হামলা, লুটতরাজসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। এই খবর শোনার পর আমি উহা হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহ্মদ শফীকে অবহিত করি। তিনি আমাকে কারা এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে তাহা জানার জন্য বলেন এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উহা বন্ধ করার জন্য বলেন। আমি সমাবেশে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে জানতে পারি যে, আমাদের কিছু কর্মী ছাড়াও মতিঝিল, পল্টন, বাইতুল মোকাররম এলাকায় জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মী এবং ছাত্রদল-যুবদলের কিছু প্যান্ট-শার্ট পরিহিত দাড়ি নাই এমন ছেলেরা এরূপ সহিংসতা ও লুটতরাজ করিতেছে। আমাদের কিছু ছেলেরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই এমনকি অনেকে না বুঝেও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক লোকজন তাদের ঠেকানোর চেষ্টা করছে।
'এক পর্যায়ে খবর আসে যে, ঐ সকল উচ্ছৃঙ্খল লোকজন বইয়ের দোকানসহ কোরআন শরীফ পোড়াইতেছে। এমন সংবাদ শুনে আমরা বিচলিত হইয়া যাই। তখন ১. মাওলানা নূর হোসেন কাসেমী, ২. মাওলানা মুফতি ফয়জুল্লাহ্, ৩. আবুল হাসনাত আমিনী, ৪. মোস্তফা আসাদ, ৫. মাওলানা শাখাওয়াত হোসেন, ৬. মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, ৭. মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, ৮. মাওলানা গোলাম মহিউদ্দীন একরাম, ৯. শেখ লোকমান হোসেন, ১০. মাওলানা মাইনুদ্দীন রুহী, ১১. শামসুল আলম, ১২. আজিজুল হক ইসলামাবাদী, ১৩. আমানুল ক্বারী ফজলুল ক্বারী জিহাদী, ১৪. মুফতী হারুন ইজাহারদের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং ওইসব বন্ধ করার জন্য বলি। ওইসকল নেতা সহিংসতা বন্ধ না করে চুপ থাকার কথা বলে এবং এমন কথাও বলে যে, 'আমাদের আন্দোলন এখন আর শুধু ১৩ দফার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এখন এটা হবে সরকারের পতনের আন্দোলন। এখন আমাদের ১৮ দলের লোকজন সব ধরনের সহায়তা করবে- অর্থ দেবে- খাবার ও পানি দেবে। ১৮ দলের নেতাদের সঙ্গে আমাদের কথা হইয়াছে।'
'আমি মাগরিবের নামাজের কিছুক্ষণ পর লালবাগ মাদ্রাসা হইতে সমাবেশস্থলে যাই। ওই সময় শাপলা চত্বরের সমাবেশস্থলে ১. মাওলানা নূর হোসেন কাসেমী, ২. মাওলানা মুফতি ফয়জুল্লাহ, ৩. আবুল হাসনাত আমিনী, ৪. মোস্তফা আযাদ, ৫. মাওলানা শাখাওয়াৎ হোসেন, ৬. মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, ৭. মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, ৮. মাওলানা গোলাম মহিউদ্দিন একরাম, ৯. শেখ লোকমান হোসেন, ১০. মাওলানা মাঈনুদ্দীন রুহী, ১১. শামসুল আলম, ১২. আজিজুল হক ইসলামাবাদী, ১৩. আমানুল ক্বারী ফজলুল ক্বারী জিহাদী, ১৪. মুফতি হারুন ইজাহারসহ অন্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
'উল্লিখিত নেতাকর্মীরা ১৩ দফা দাবি না মানা পর্যন্ত এবং সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত শাপলা চত্বরে অবস্থান করিতে থাকিবেন বলিয়া উল্লেখ করেন। আমি তাহাদের উল্লিখিত বক্তব্য না দেয়ার জন্য বার বার নিষেধ করি। কিন্তু তারা আমাদের অনুরোধ শুনে নাই। সমাবেশস্থলে উপস্থিত উল্লিখিত নেতারা হয়ত বিভিন্ন উৎস হইতে অর্থ পেয়ে থাকতে পারে। এমন ধারণা করিয়া আমি তাহাদের জিজ্ঞাসা করলে তাহারা জানান যে, ১৮ দলীয় জোট অর্থ দিয়েছে। প্রয়োজন হইলে আরও অর্থ দেয়া হইবে। (চলবে)

ওই নেতারা আরও জানান, 'আগামীকাল অর্থাৎ ৬/৫/১৩ ইং আমরা শাপলা চত্বরে অবস্থানকালে ১৮ দলীয় জোটের নেতা ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা সাহেব আমাদের সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবার সরবরাহ করিবেন- আপনারা কোন চিন্তা করিবেন না। সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা শাপলা চত্বরে অবস্থান করব ইনশ্াআল্লাহ্।'
'আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশস্থলে হেফাজতকর্মীরা প্ল্যাকার্ড ও কাপড়-চোপড় নিয়া আসছিল। জামায়াত-শিবির এবং ছাত্রদল-যুবদলের উচ্ছৃঙ্খল লোকজন করাত দিয়া গাছ কাটিয়া রাস্তায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। তাহারা অগ্নিসংযোগ করিয়া পবিত্র কোরান শরীফ পোড়ায়। রাত্র ১০টার দিকে আমি সমাবেশস্থলের আশপাশের অগ্নিসংযোগের ফলে আগুনের লেলিহান শিখা দেখিয়া বিচলিত হইয়া পড়ি। জামায়াত-শিবির অগ্নিসংযোগ, গাড়ি ভাংচুরসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালাইয়াছে বলিয়া আমার কাছে সংবাদ আসে। সমাবেশস্থলের উল্লিখিত নেতাদের উস্কানিমূলক বক্তব্যে আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ অশান্ত হইয়া ওঠে।
'ঐদিন দিবাগত রাত্র আনুমানিক ২.০০টা থেকে আড়াইটার দিকে অর্থাৎ গত ৬/৫/১৩ ইং তারিখ রাত্র আনুমানিক ২.০০-২.৩০টার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাইকে সভাস্থলে অবস্থানকারী নেতাকর্মীদের সভাস্থল ত্যাগ করার অনুরোধ জানান। পরবর্তীতে তাহারা ফাঁকা আওয়াজ করিলে সবাই শাপলা চত্বর হইতে পালাইয়া যায়। আমি পড়ে গেছিলাম। আমার ছাত্ররা আমাকে ধরে লালবাগ মসজিদে নিয়া আসছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোন প্রাণহানী ঘটায় নাই বা কেহ আহত হইয়াছে বলিয়াও আমি শুনি নাই। হেফাজতে ইসলামের লোকজন ও জামায়াত শিবিরের সদস্যদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে পুলিশের একজন সাব-ইন্সপেক্টর নিহত হইয়াছে এবং তাহার অস্ত্র লুট হইয়াছে মর্মে আমি সকালবেলা লালবাগ মাদ্রাসায় আসিয়া জানতে পারি।'
হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী তার জবানবন্দীর শেষে উল্লেখ করেছেন, 'আমি ওই ঘটনার জন্য অনুতপ্ত। ওই নারকীয় ঘটনা আমার কাম্য ছিল না। এই আমার দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী। আমার প্রদত্ত উপরিউক্ত দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী আমাকে পড়িয়া শুনাইলে আমি উহার মর্ম অবগত হইয়া আমি নিম্নোক্ত স্বাক্ষর করিলাম।'১০১০. সূত্রঃ মতিঝিল থানার মামলা নং-১৩, তাং-৬-৫-১৩। ২১ মে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট প্রদত্ত মোহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরীর জবানবন্দি।

১৬৪ ধারায় প্রদত্ত জবানবন্দী অনেক সময় আসামিরা আদালতে অস্বীকার করেন। বলেন, পুলিশ তাদের ভয় দেখিয়ে মিথ্যা জবানবন্দী প্রদানে বাধ্য করেছে। সাধারণ আসামিদের ক্ষেত্রে মিথ্যা জবানবন্দী প্রদানের অজুহাত মানা যেতে পারে, কিন্তু আমরা জানি কোন মুমিন মুসলমান কখনও মিথ্যা বলেন না। ইসলাম ধর্মে তিনটি নিকৃষ্টতম গুণাহ্র একটি হচ্ছে সজ্ঞানে সুস্থমস্তিষ্কে মিথ্যা বলা। জুনায়েদ বাবুনগরী নিজেকে মুমিন মুসলমান মনে করলে আমরা ধরে নিতে পারি তিনি পুলিশের ভয়ে কখনও মিথ্যা বলবেন না। তবে যে ঘটনার জন্য তিনি অনুতাপ প্রকাশ করেছেন, জামিনে জেল থেকে বেরিয়ে এসে একই ধরনের কাছে লিপ্ত হয়েছেন, যা ফৌজদারি আইনে দ-নীয় অপরাধ।

ছয়

২০০১ সালে বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর যে নজিরবিহীন নির্যাতন আরম্ভ হয়েছিল বর্তমানে তা কমলেও বন্ধ হয়নি। একইভাবে জোট সরকারের আমলের হরকাতুল জিহাদের জঙ্গীরা তখন হেফাজতে ইসলামের নামে নবরূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। মৌলবাদের আশঙ্কাজনক উত্থান ও সন্ত্রাসী কর্মকা- সংখ্যালঘু ধর্মীয় ও এথনিক সম্প্রদায়ের পাশাপাশি সেক্যুলার গণতন্ত্রীদের অস্তিত্ব ক্রমশ বিপন্ন করে তুলছে। 
খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট এবং অপরাপর জঙ্গী মৌলবাদী সংগঠনগুলোর লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশের সেক্যুলার ও বহুত্ববাদী সমাজ ধ্বংস করে মনোলিথিক ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র কায়েম করা, যা পরিচালিত হবে তাদের নিজস্ব ব্যাখ্যা অনুযায়ী কোরান ও হাদিসের নির্দেশে। বাংলাদেশকে মনোলিথিক মুসলিম রাষ্ট্র বানাবার জন্য মৌলবাদীরা তাদের আক্রমণের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছে এদেশের সংখ্যালঘু ধর্মীয় ও এথনিক সম্প্রদায়কে, নারী সমাজকে, সেক্যুলার গণতন্ত্রে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলসমূহের নেতাকর্মীদের, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী ও এনজিওদের।
অনেক সমাজবিজ্ঞানী মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাকে স্বতন্ত্র সত্তা এবং মৌলবাদকে তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিকর মনে করেন। আবার অনেকে মনে করেন সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে এতদঞ্চলে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তি লুপ্ত হয়ে গেছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার কোন অবকাশ নেই। অতীতে সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের ঘটনায় এককভাবে মৌলবাদী দলগুলোকে দায়ী করা না গেলেও চার দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে মৌলবাদীরা সংখ্যালঘু নির্যাতনের ক্ষেত্রে কোন ছাড় দেয়নি। বিশেষভাবে সংখ্যালঘু আহমদীয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের ক্ষেত্রে তারা এক এবং অনন্য।
বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থান কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। যদিও এই দেশটি স্বাধীন হয়েছিল একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের লক্ষ্যে, ধর্ম, বর্ণ ও জাতিসত্তা নির্বিশেষে যারা স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন তারাও তেমনটি প্রত্যাশা করেছিলেন; কিন্তু অচিরেই সেসব আশা ধূলিসাত হয়ে যায়। সাংবিধানিকভাবে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল যে দেশে- সে দেশের সংবিধান বার বার ধর্ষিত হয়েছে ধর্মব্যবসায়ী রাজনীতিক ও সামরিক ব্যক্তিদের দ্বারা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠীর রাজনৈতিক পুনরুত্থানের পথ সুগম করে দেয়। কালক্রমে এই মৌলবাদীরা ক্ষমতার অংশীদার হয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে আক্রমণের প্রধান লক্ষ্যে পরিণত করেছে।
বাংলাদেশে মৌলবাদী শক্তির উত্থান একই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী ইসলামী মৌলবাদের সাম্প্রতিক উত্থানের সঙ্গে সম্পর্কিত। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক শিবিরের পতনের পর যে আদর্শগত শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে সেই সুযোগে এশিয়ায় মুসলিম মৌলবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আফগানিস্তানে সেভিয়েতপন্থী সরকারের বিরোধিতার জন্য আমেরিকা পাকিস্তানের সহযোগিতায় মৌলবাদী তালেবান সৃষ্টি করেছিল। আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত সৈন্য প্রত্যাহার এবং সমাজতন্ত্রী প্রেসিডেন্ট নজিবুল্লাকে হত্যা করে তালেবানী শাসন কায়েমের পর জঙ্গী মৌলবাদ এক নতুন চেহারায় আবির্ভূত হয়। কাশ্মীর, চেচনিয়া ও বসনিয়া থেকে শুরু করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্য এশিয়া ও চীনের শিনঝিয়াং অঞ্চলজুড়ে জঙ্গী মৌলবাদ এক প্যানইসলামিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তান জঙ্গী মৌলবাদের প্রধান দুর্গ হলেও ২০০১ সালে বাংলাদেশে তালেবানপন্থী মৌলবাদীদের সমন্বয়ে গঠিত চার দলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে জঙ্গী মৌলবাদের ভয়াবহ উত্থান ঘটেছে। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট এবং তাদের ফ্রন্ট সংগঠনসমূহ ছাড়াও বাংলাদেশে শতাধিক জঙ্গী মৌলবাদী সংগঠন রয়েছে, যাদের ভেতর কয়েকটি সংগঠন সরাসরি মৌলবাদীদের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। 
মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের ৪২ বছরের অধিকাংশ সময় ক্ষমতায় ছিল পাকিস্তানপন্থী ও স্বাধীনতাবিরোধীরা মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি। বাংলাদেশের বহুত্ববাদী সমাজ ও সংস্কৃতি ধ্বংস করে একটি মনোলিথিক মুসলিম রাষ্ট্র বানাবার জন্য পাকিস্তানী ভাবধারার অনুসারী শাসকরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং অমুসলিমদের প্রতি নির্যাতন ও বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে। 
বাংলাদেশের মৌলবাদীরা সব সময় বলে ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ হচ্ছে ধর্মহীনতা, যারা ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে তারা ধর্মবিরোধী। অথচ সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা সংযোজনের পর স্বাধীন বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সহযোগীরা, যাঁদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরিচালিত হয়েছিল- সব সময় বলেছেন ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ ধর্মহীনতা নয়। ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ হচ্ছে ব্যক্তিজীবনে প্রত্যেক নাগরিক নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারবেন, তবে রাষ্ট্র ও সরকার ধর্মের ব্যাপার নিরপেক্ষ থাকবে, ধর্মীয় কর্মকাণ্ড থেকে রাষ্ট্র ও রাজনীতি বিযুক্ত থাকবে। '৭২-এর সংবিধানে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল গঠনের ওপর সুনির্দিষ্টভাবে নিষেধাজ্ঞা ছিল। বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী চায় ইসলামী হুকুমত কায়েম করতে, কিন্তু ভারতে তারা আন্দোলন করে ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য। তারা মুসলিমপ্রধান দেশে অমুসলিমদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করতে চায় কিন্তু অমুসলিমপ্রধান দেশে তারা সংখ্যালঘু মুসলমানদের জন্য সমান অধিকার চায়, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র চায়। এটাই হচ্ছে মৌলবাদীদের রাজনৈতিক শঠতার নজির।
জঙ্গী মৌলবাদ যে ধর্মেরই হোক না কেন এর লক্ষ্য হচ্ছে যা কিছু ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সমার্থক তা ধ্বংস করা। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে মুসলিম মৌলবাদের উত্থান ও বিস্তার ভারতে হিন্দু মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিকাশের পথ সুগম করছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কতিপয় জঙ্গী মুসলিম মৌলবাদীর সন্ত্রাসী ও জিহাদী উন্মাদনার কারণে পশ্চিমের অনেকে সন্ত্রাস ও ইসলামকে সমার্থক মনে করছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান ও ইরাকের পর এখন সিরিয়ার বিরুদ্ধে এক ধরনের ক্রুসেড ঘোষণা করেছে। কোন মুসলমানের আরবী নাম হলেই তাকে সন্ত্রাসী ভাবা হচ্ছে- বাংলাদেশে যেমন হিন্দুদের ভাবা হয় ভারতের এজেন্ট, প্রতিনিয়ত যাদের দেশপ্রেম হয় প্রশ্নবিদ্ধ। এর ফলে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্প্রীতি ও সৌহার্দের সম্পর্ক ও মানবিক মূল্যবোধ বিনষ্ট হচ্ছে। মানুষের ভেতর সন্দেহ, ভয়, অবিশ্বাস ও ঘৃণা বাড়ছে।
জঙ্গী মৌলবাদ নিঃসন্দেহে মানবতা, মানব সভ্যতা ও বিশ্বশান্তির জন্য মারাত্মক হুমকি। এ কারণেই বাংলাদেশে বা যে কোন দেশে ফ্যাসিবাদ ও মৌলবাদের উত্থান জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানবতাবাদীর জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং মানব সভ্যতার যাবতীয় অর্জন সংরক্ষণ করতে হলে বিশ্বের বিবেকসম্পন্ন মানুষদের অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে। এমন কর্মসূচী আমাদের গ্রহণ করতে হবে যা মানবিক মূল্যবোধ বিকশিত করবার পাশাপাশি সমাজের কল্যাণ, প্রগতি ও বিশ্বশান্তির সহায়ক হয়।

সাত
বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনা অনুযায়ী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন একটি শোষণমুক্ত ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হবে। হেফাজতে ইসলামের কর্মকা- নিঃসন্দেহে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অন্তরায়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত থাকা অত্যন্ত জরুরী। কিন্তু হেফাজতে ইসলামের সার্বিক কর্মকা- পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, এই সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, উস্কানিমূলক বক্তব্য, সন্ত্রাসী কর্মকা- আইনের শাসন তথা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি হুমকিস্বরূপ। 
বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। একই অনুচ্ছেদে প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারও নিশ্চিত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে বাক্ স্বাধীনতা বা ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সংবিধানেই কিছু যুক্তিসঙ্গত শর্ত আরোপ করা হয়েছে, যেমন- বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা বা নৈতিকতার ওপর হুমকিস্বরূপ হতে পারবে না; আবার বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা অন্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য মানহানিকর হতে পারবে না। এছাড়া কোনমতেই বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার নামে অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা দেয়া যাবে না।
আমরা দেখেছি, হেফাজতের বিভিন্ন সভা সমাবেশের ভাষণ ও বিবৃতিতে বার বার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বরেণ্য বুদ্ধিজীবী ও গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে বক্তব্য প্রদান করা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। হেফাজতে ইসলামের মঞ্চ থেকে বার বার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার এবং বাংলাদেশের সংবিধানের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দিয়ে দেশে গৃহযুদ্ধ বাধাবার হুমকি ও প্ররোচনা দেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। নারীদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত অবমাননাকর বক্তব্য প্রদান করা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। এছাড়া হেফাজতে ইসলামের বক্তব্যের ভাষা প্রায়ই অশালীন এবং অনৈতিক ইঙ্গিতপূর্ণ।
হেফাজতে ইসলাম নিজেদের ইসলামের রক্ষাকারী হিসেবে দাবি করে। বাংলাদেশ সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদ প্রত্যেক নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রয়েছে। কিন্তু এই ধর্মীয় স্বাধীনতা শুধু আইন জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা সাপেক্ষেই বলবত করা সম্ভব। হেফাজতে ইসলাম সরকার ও রাজনীতি নিয়ে যেসব বক্তব্য দিয়ে থাকে তা মোটেও ইসলাম ধর্ম পালন ও প্রচারের অংশ হতে পারে না। যদি মনে করা হয় হেফাজতে ইসলামের আপত্তিকর বক্তব্যসমূহ ধর্মীয় স্বাধীনতার অংশ অথবা ইসলামে ধর্ম পালন ও প্রচারের উদ্দেশ্যে প্রদান করা হয়েছে, তারপরও দেখা যাবে যে, ওই সকল বক্তব্য জনজীবনে শৃঙ্খলা বিনষ্ট করছে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা নৈতিকতা বর্জিত।
সংবিধান অনুসারে হেফাজতে ইসলামের যে দর্শন, তা বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে ধর্মীয়, সামাজিক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে বাধ্য। ইসলাম ধর্মের বিকৃত ব্যাখ্যাসহ যে ধরনের বক্তব্য হেফাজতে ইসলাম প্রচার করে আসছে তাতে ইসলাম ধর্মাবলম্বনকারীদেরও ধর্মীয় অনুভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হতে বাধ্য। হেফাজতের নারীবিদ্বেষী অশালীন বক্তব্যসমূহ মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন এবং তা সমাজে অস্থিরতার সৃষ্টি করছে। এছাড়া অন্য ধর্ম নিয়ে যেসব আপত্তিকর বা বিভ্রান্তিমূলক বা উস্কানিমূলক বক্তব্য হেফাজতে ইসলাম দিয়ে থাকে তা বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। অতএব, বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৮ (ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হেফাজতে ইসলামের সংগঠন হিসেবে অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং কার্যক্রম পরিচালনা করবার যোগ্যতা নেই।
হেফাজতে ইসলামের বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের কারণে সংগঠনটিকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করা উচিত। এর ফলে বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৮, ৩৯ এবং ৪১ অনুচ্ছেদসমূহ লঙ্ঘনের কোন প্রশ্নও আসবে না।
বিএনপি-জামায়াত ও হেফাজত ইসলাম দাবি করেছে- ৫ মে রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর 'শাপলা চত্বর মুক্ত' করবার অভিযানে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। সেই রাতে মানুষ হত্যা হয়েছে কি হয়নি সেটি সাক্ষ্য প্রমাণের বিষয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো ৫ মে রাতে হেফাজতে ইসলামের লাখো কর্মী শাপলা চত্বরে কী এমন করছিল যে, যার কারণে 'শাপলা চত্বর মুক্ত' অভিযান অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল?
বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদে সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, জনশৃঙ্খলা বা জনস্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হওয়ার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের রয়েছে।
৫ মে হেফাজতে ইসলামকে শাপলা চত্বরে সমাবেশ করবার অনুমতি দেয়া হয়েছিল কতিপয় শর্তসাপেক্ষে। সমাবেশের নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হওয়া মাত্রই শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের অবস্থান বেআইনী হয়ে পড়ে। হেফাজতে ইসলাম আইনের তোয়াক্কা না করে সময় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও শাপলা চত্বরে অবস্থান নিলে তারা সমাবেশ করার অধিকার হারিয়ে ফেলে। উপরন্তু, যে ধরনের সন্ত্রাসী জঙ্গী কর্মকা- হেফাজতে ইসলাম সেই রাতে শাপলা চত্বরে সংঘটিত করে তা দেশে বা বিদেশে কারও অজানা নয়। সরকারী ও বেসরকারী সম্পত্তিতে আগুন লাগিয়ে, পুলিশের ওপর আক্রমণ করে, সাংবাদিকদের লাঞ্ছিত করে, পবিত্র কোরান পুড়িয়ে, মহাসড়কের গাছ কেটে যে মহাতা-ব সেই রাতে হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াত ইসলামীর সন্ত্রাসীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা করেছে যেভাবে তারা অবস্থান অব্যাহত রেখে শেষরাতে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে হামলা এবং প্রত্যুষে সচিবালয় দখলের ষড়যন্ত্র করেছিল- এসবের প্রেক্ষিতে জননিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রয়োজনে 'শাপলা চত্বর মুক্ত' অভিযানের আর কোন বিকল্প ছিল না। কোন রকম প্রাণহানি ছাড়া এই অপারেশন সফল করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জাতির পক্ষ থেকে নিঃসন্দেহে ধন্যবাদ প্রত্যাশা করে। 
বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যেহেতু হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ জনশৃঙ্খলা বিনষ্টকারী পরিবেশ তথা জনস্বাস্থ্যের পরিপন্থী, সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ অতএব, ভবিষ্যতে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ করবার কোন অধিকার থাকতে পারে না।
এছাড়া বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৮(গ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশে এমন কোন সংগঠন থাকতে পারবে না যা বাংলাদেশ রাষ্ট্র বা বাংলাদেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বা জঙ্গী কার্য পরিচালনা করে থাকে।
হেফাজতে ইসলামের সন্ত্রাসী ও জঙ্গী কর্মকা-ের কারণে সংগঠনটিকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করা উচিত। এর ফলে বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘনের কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না। বিকল্প হিসেবে সন্ত্রাস দমন আইনের অধীনে হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে জরুরী আইনী পদক্ষেপও গ্রহণ করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশে প্রায় ৪০ হাজার কওমী মাদ্রাসা রয়েছে। ৫০ লাখেরও অধিক শিক্ষার্থী এ সকল কওমী মাদ্রাসায় শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। শিক্ষার্থীদের অধিকাশংই আসে আর্থিকভাবে অসচ্ছল পরিবারসমূহ থেকে।
কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের অর্থের অভাবে বিকল্প শিক্ষা লাভের সুযোগ নেই। এর ফলে এই সকল শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াতের মতো সংগঠনগুলো তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে। কোমলমতি শিশুদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে বোমা বানানোর সরঞ্জাম; হৃদয়ে বপন করা হচ্ছে জঙ্গী সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতার বীজ। শিক্ষাজীবনে বছরের পর বছর ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা শিখিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহী করে তোলা হচ্ছে, জিহাদের নামে তাদের বানানো হচ্ছে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক জঙ্গী এবং সন্ত্রাসীতে।
প্রকৃতপক্ষে কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত নেয়ার কোন অধিকার নেই। অভাবের কারণে যেহেতু তারা বিকল্পধারার শিক্ষা গ্রহণে বঞ্চিত, সেহেতু সনদ লাভের জন্য তারা কওমী প্রতিষ্ঠানসমূহের যে কোন অন্যায় নির্দেশনা মেনে চলতে বাধ্য।
৫ ও ৬ মে তারিখের হেফাজত ইসলামের হামলা, সন্ত্রাস ও সংঘর্ষে যে সকল কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে তাদের অধিকাংশই কওমী শিক্ষকদের নির্দেশে বাধ্য হয়ে করেছে। নতুবা অপ্রাপ্তবয়স্ক কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা কিভাবে রাজনৈতিক সহিংসতায় অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে পারে? শিশুদেরকে সন্ত্রাস ও সহিংসতা থেকে দূরে রাখা আমাদের সকলের কর্তব্য। কওমী মাদ্রাসাগুলো আর্থিক দীনতার সুযোগ নিয়ে এই শিশুদের ঠেলে দিচ্ছে জঙ্গীবাদ সহিংসতার মুখে।
এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে বাংলাদেশে কওমী মাদ্রাসার ওপর সরকারের কোন তদারকি বা নিয়ন্ত্রণ নেই। অথচ বাংলাদেশ সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একই পদ্ধতির গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো বাংলাদেশ রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও কর্তব্য। 
কওমী মাদ্রাসাগুলো শিক্ষা প্রদানের নামে নানা রকম অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। সুনাগরিক তৈরি না করে তারা তৈরি করছে জঙ্গীবাদের আবাদ। কওমী মাদ্রাসার শিক্ষাপদ্ধতি যুগোপযোগী না করে মধ্যযুগীয় ধ্যান-ধারণায় বিভ্রান্ত করে তুলছে শিশুদের মন-মানসিকতা। শারীরিক ও যৌন নিপীড়নের শিকারও হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুদের যৌনতার বিবরণ শুনিয়ে বিকৃত করে তুলছে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে। অধ্যাপক আবুল বারকাতের গবেষণা এবং আমাদের অনুসন্ধানেও দেখে�

Also Read:


হেফাজতের আড়ালে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র ছিল জামায়াত-বিএনপির - 
নির্মূল কমিটির গণকমিশনের শ্বেতপত্রের সারাংশ ও সুপারিশ
২০১৩-এর ৬ এপ্রিল ও ৫ মে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার শাপলা চত্বরে '
শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০১৩, ২৫ কার্তিক ১৪২

হেফাজতের আড়ালে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র ছিল জামায়াত-বিএনপির  -২
নির্মূল কমিটির গণকমিশনের শ্বেতপত্রের সারাংশ ও সুপারিশ
(পূর্বপ্রকাশের পর)
রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০১৩, ২৬ কার্তিক ১৪২





__._,_.___


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___