Banner Advertiser

Wednesday, December 4, 2013

[mukto-mona] মেয়েরা যৌনবস্তু নয় -তসলিমা নাসরিন



প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৩ ০১:১৫:২৯
অ-অ+
printer
মেয়েরা যৌনবস্তু নয়
তসলিমা নাসরিন

ভারত এখন তরুণ তেজপাল নিয়ে ব্যস্ত। তরুণ তেজপাল তেহেলকার সম্পাদক, নামি-দামি বুদ্ধিজীবী। তার তেহেলকা হিন্দু মৌলবাদের বিরুদ্ধে খুব সরব। যেহেতু আমি মৌলবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘকাল সংগ্রাম করছি, তেহেলকার এই ভূমিকাকে শুরু থেকেই স্বাগত জানিয়েছি। মাঝে মাঝে তেহেলকায় খুঁজেছি মুসলিম মৌলবাদের বিরুদ্ধে একই রকম বলিষ্ঠ লেখা, খুঁজেছি ক্রিশ্চান মৌলবাদের বিরুদ্ধে লেখা। হয়তো কখনো কখনো কিছু লেখা হয়, তবে খুব বলিষ্ঠ নয়। বেশির ভাগ সময় মুসলিমদের পক্ষ নিতে গিয়ে ইসলামের গুণগানও গেয়ে ফেলে। এটিই দুর্ভাগ্যবশত ভারতীয় সেকুলার বা বামপন্থি নরমপন্থিদের সমস্যা। তারা সব ধর্মের সব মৌলবাদের বিরুদ্ধে ঠিক একইভাবে দাঁড়ান না। কোনো এক মৌলবাদী গোষ্ঠীর অন্যায় দেখলে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন, আবার আরেক মৌলবাদী গোষ্ঠীর অন্যায় দেখেও দেখছেন না ভাব দেখান।

তেহেলকা এদিকে গোয়ায় থিংক ফেস্ট করেছে। জমকালো অনুষ্ঠান। দেশ-বিদেশের নামি সব লোক, এমনকি হলিউডের বিখ্যাত সব অভিনেতাও এসেছেন আমন্ত্রিত হয়ে। আমার এক ফরাসি বন্ধুও দেখলাম থিংক ফেস্টে আমন্ত্রিত। অবশ্য খুব অবাক হয়েছিলাম তালেবান নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে দেখে। আমরা কি ইতোমধ্যে জানি না তালেবানরা কি চায়, তাদের মত এবং মতলব? তালেবান নেতাকে তার মতপ্রকাশের জন্য কি ভারতের সবচেয়ে প্রগতিশীল মঞ্চটি দেওয়া দরকার ছিল? গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে, নারীর অধিকারের বিরুদ্ধে, মানবতার বিরুদ্ধে, সারা পৃথিবীকে দারুল ইসলাম বা ইসলামের জগৎ বানানোর জেহাদি শপথ নেওয়া তালেবান নেতার বক্তব্য প্রচার খুব কি জরুরি ছিল তেহেলকার? সভ্য, শিক্ষিত, হিন্দুত্ববিরোধী বুদ্ধিজীবীদের আদর পেয়ে তালেবান নেতা নিশ্চয়ই মহাখুশি। থিংক ফেস্টে তালেবান নেতা অতিথি হিসেবে আসার পর মনে হলো, সমাজের সবরকম বিশ্বাসের লোককে মতপ্রকাশের সুযোগ দেওয়ার শুদ্ধ বৃহত্তর গণতন্ত্রের চর্চা করছে তেহেলকা। কিন্তু মনে খচখচ করা পুরনো প্রশ্নটি আবার করলাম, তাহলে কি তেহেলকা সেই দিকভ্রান্ত বাম বুদ্ধিজীবীদের মতো, যারা হিন্দু মৌলবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন, কিন্তু মুসলিম মৌলবাদকে নানা ছলছুতোয় সমর্থন করেন? 

ইউরোপীয় সংসদ থেকে মানবাধিকারের ওপর সপ্তাহ খানেকের একটা কনফারেন্স শেষ করে দিলি্ল ফিরেই শুনি তেহেলকার সম্পাদক তরুণ তেজপাল তেহেলকারই এক তরুণী সাংবাদিককে যৌন নিগ্রহ করেছে, খবরটি শুনে হতবাক বনেছিলাম। এই দিলি্লতে খুব বেশি দিন হয়নি একটি ঘৃণ্য ধর্ষণের বিরুদ্ধে বিরাট বিক্ষোভ হয়েছে। সারা পৃথিবীর মানুষ সমর্থন জানিয়েছে ভারতীয়দের বিক্ষোভকে। ধর্ষণের বিরুদ্ধে তেহেলকার ভূমিকাও ছিল বড়। আর এরই সম্পাদক কিনা সহকর্মী, তাও আবার কন্যার বান্ধবী, তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে। তরুণ তেজপাল অসম্ভব সব কাজ করেছেন সাংবাদিক হিসেবে। আবার বইও লিখেছেন, পুরস্কারও পেয়েছেন। এত বড় মানুষ হয়েও মেয়েদের যৌনবস্তু হিসেবে দেখছেন। মুখে বলছেন একরকম, লিখছেন একরকম, আর কাজ করছেন আরেক রকম! এর নামই তো হিপোক্রেসি! যারা অন্য লোকের হিপোক্রেসির নিন্দা করে, তারা নিজেরাই আজ হিপোক্রেট। 

তরুণ তেজপালের সঙ্গে আমার আলাপ নেই। ২০০৭-০৮ সালে আমি যখন ভারত সরকার দ্বারা গৃহবন্দী, আমার যখন সবচেয়ে বড় দুঃসময়, আমাকে গৃহবন্দী করার বিরুদ্ধে লেখক অরুন্ধতী রায়ের উদ্যোগে বুদ্ধিজীবীদের যে প্রতিবাদ সভা হয়েছিল দিলি্লর প্রেসক্লাবে, সেই সভায় যোগ দেওয়া বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে একজন ছিলেন তরুণ তেজপাল। কিন্তু তাই বলে তরুণ তেজপালের ধর্ষণকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখব, তা কখনোই নয়। অতটা স্বার্থান্ধ আমি কোনো দিনই নই। তবে এ কথা ঠিক যে, সেকুলার তেজপালকে আমি শ্রদ্ধা করি। কিন্তু যৌনহেনস্থাকারী তেজপালকে, সত্যি বলতে কী ঘৃণা করি। তরুণী সাংবাদিকটির তরুণ তেজপালের আর তত্ত্বাবধায়ক সম্পাদক সোমা চৌধুরীর যে ই-মেইলগুলো প্রচার হয়েছে, তা থেকেই ঘটনাগুলো সব স্পষ্ট এখন। ওগুলো পড়লেই দোষ কার, নির্দোষ কে, সব আমরা খুব সহজেই অনুমান করতে পারি। তরুণ তেজপাল নিজেই বলেছেন, তিনি অন্যায় করেছেন। ক্ষমা চেয়েছেন। এমনকি ছয় মাসের ছুটি-শাস্তিও নিয়েছেন নিজে। শেষ পর্যন্ত মিডিয়ায় খবরটা এলে থানা-পুলিশ হলো। তা না হলে এভাবেই হয়তো তেহেলকার তত্ত্বাবধায়ক সোমা চৌধুরী আর সম্পাদকীয় বিভাগের প্রধান তরুণ তেজপাল কিছু সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে পুরো ধর্ষণের ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়ে দিতেন। এরকম নিশ্চয়ই আরও অনেক কোম্পানিতে ঘটে। মেয়েরা ধর্ষণের বিনিময়ে চাকরি বাঁচায়। প্রতিবাদ করলে চাকরি চলে যায়। নয়তো চাকরি ছেড়ে দিয়ে পথে বসতে হয়। কাস্টিং কাউচের সমস্যা সারা ভারতে ভীষণ। যাদের প্রতিবাদ করার কথা এসবের বিরুদ্ধে, তারাই যদি একই চরিত্রের হয়, ধর্ষক হয়, তবে কারা আর সমাজ বদলাবে! তরুণ তেজপাল তার কন্যার বান্ধবীকে ধর্ষণ করতে গিয়ে বলেছিলেন, এটিই সবচেয়ে সহজ পন্থা যদি তার চাকরিটি সে বাঁচাতে চায়। কী ভয়ঙ্কর হুমকি! মৌলবাদীদের চরিত্র নষ্ট হলে, রাজনীতিকদের চরিত্র নষ্ট হলে সমাজ নষ্ট হয় না, কিন্তু বুদ্ধিজীবীদের চরিত্র নষ্ট হলে সমাজ নষ্ট হয়। বুদ্ধিজীবীরাই তো অন্যায়ের, অসত্যের, অত্যাচারের, অবিচারের প্রতিবাদ করে সমাজকে শুদ্ধ করে, বাঁচায়, প্রগতির পথে নিয়ে যায়। কিন্তু নিজেরাই অন্যায় করলে কোন অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ করবে? 

তরুণ তেজপাল মেয়েদের যৌনবস্তু হিসেবে দেখেন। বুদ্ধিজীবী-মুখোশের আড়ালে তিনি তার ধর্ষকের মুখটা আড়াল করে রেখেছিলেন। কিন্তু সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি নারীবাদী মুখোশের আড়ালে এতকালের নারীবিরোধী মুখটা যখন বেরিয়ে এসেছে। অন্য ধর্ষকদের বিরুদ্ধে তারা ভীষণ সরব, কিন্তু তেজপালের ধর্ষণের ঘটনায় খুব কায়দা করে ইনিয়ে-বিনিয়ে তাকে সমর্থন করেছেন। নিজের চোখ-কানকে বিশ্বাস করা যায় না। সোমা চৌধুরী নিজেকে বারবারই নারীবাদী হিসেবে পরিচয় দেন। কিন্তু ধর্ষিতা সাংবাদিকটির পক্ষে তিনি কিন্তু মূলত কিছুই করেননি, বরং ওর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। কেন ও দ্বিতীয়বার লিফটে চড়ল, যেন লিফটে চড়েছে বলেই ও দ্বিতীয়বার ধর্ষণের মুখে পড়েছে, যেন লিফটে চড়েছে, কারণ আগের দিনের যৌনতায় ওর সায় ছিল। শুধু সোমা চৌধুরী নন, তার মতো অনেকেই গলার স্বর পাল্টে ফেলেছেন, ধর্ষণ আর ধর্ষকদের বিরুদ্ধে তারা আগে যেমন গর্জে উঠতেন, তেমন আর উঠছেন না। অশিক্ষিত আর গরিবরা ধর্ষণ করলে সেই ধর্ষণকে 'জঘন্য অপরাধ' বলা হয় আর শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীরা ধর্ষণ করলে তাকে বলা হয়, 'মিসকনডাক্ট'। ভারতবর্ষ বিভক্ত জাত-ধর্মে ততটা নয়, যতটা শ্রেণীতে। আমার শ্রেণীর লোক, সুতরাং তাকে আমি সমর্থন করব, সে যত অন্যায়ই করুক না কেন। অনেকের মধ্যে এরকম শ্রেণী সমর্থন দেখেছি।কোনো একটা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হলে বিভিন্ন রাজনীতির লোকরা অন্যায়ের পক্ষে অথবা বিপক্ষে সটান দাঁড়িয়ে যান। মিথ্যের প্রয়োজন হলে অবলীলায় মিথ্যে বলেন। সৎ, নিরপেক্ষ বলতে প্রায় কিছুই নেই। আসারাম নামের এক ধর্মগুরু ধর্ষণ করছে অল্প বয়সী মেয়েদের, খবরটা প্রচার হওয়ার পর আসারামের ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে দেখি, একটি রাজনৈতিক দল বলছে, আসারাম কস্মিনকালেও ধর্ষণ করেনি, আবার আরেকটি দল বলছে, আলবৎ করেছে। তেজপালের ধর্ষণের বেলায়, আসারামের পাশে দাঁড়ানো দল বলছে, তেজপাল দোষী, আবার যে দলটি আসারামকে দোষ দিয়েছে, সেই দল বলছে, তেজপাল দোষী নয়, দোষী ধর্ষিতা মেয়েটিই। আর আমি যদি আসারাম আর তেজপালের দুজনের অন্যায়ের বিরুদ্ধেই একই রকম তীব্রকণ্ঠে প্রতিবাদ করি, আমি খুব একা হয়ে পড়ি। আমার পাশে শেষ পর্যন্ত কেউ থাকে না। সবাই আমাকে ক্ষণকালের জন্য বন্ধু মনে করলেও শেষে গিয়ে আমার নাম শত্রুর খাতায় লেখে। এই সমাজে কোনো দলের হয়ে কথা না বললে একা হয়ে যেতে হয়। একা হয়ে যাওয়ার আমার অভ্যেস আছে। চিরকালই আমি একা। যখন থেকে বৈষম্যের বিরুদ্ধে একা প্রতিবাদ করতে শুরু করেছি, তখন থেকেই। আমার আর কিসের ভয়! তেজপালের বিচার যদি সঠিক না হয়, তবে যেসব কোম্পানির উঁচু পদে বসে থাকা শত শত পুরুষ ঊধর্্বতন বা চাকরিদাতা হওয়ার সুবাদে অবাধে ধর্ষণ করে যাচ্ছে তরুণী সহকর্মীদের, তা মহাউৎসাহে, তা মহাআনন্দে, মহাবিজয়ের সঙ্গে করে তো যাবেই, এই সংখ্যাটা আরও বাড়বে। কাস্টিং কাউচ জমকালো হবে আরও। তরুণ তেজপাল নিশ্চয়ই স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি যে, ভারতবর্ষে তার পাশে দাঁড়ানোর লোকের কোনো অভাব নেই। যৌন অপরাধ করার পরও তার সমর্থক আর অনুরাগীর সংখ্যা কিছুমাত্র কমেনি। পুরুষ বলেই অবশ্য কমেনি। ধর্ষণের সঙ্গে পৌরুষের একটা নিবিড় সম্পর্ক আছে। ধর্ষণ আইনের চোখে হয়তো অপরাধ, নারীবিরোধী সমাজের চোখে এখনো এটি অপরাধ নয়, এটি এখনো পুরুষের অধিকার। সে কারণেই তেজপালের বিরুদ্ধে সমাজের বড় নেতারা, বড় রাজনৈতিক দল, নারীবাদী বা মানবাধিকার গোষ্ঠী একযোগে প্রতিবাদী হচ্ছে না। তেজপাল বড় সাংবাদিক, বড় বুদ্ধিজীবী_ এসব বলে বলে তার যৌন নির্যাতনের অপরাধকে একটু ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখার জন্য যেন একরকম আহ্বান জানানো হচ্ছে। কিন্তু কথা হলো, যে লোকেরা বিনা অনুমতিতে কোনো মেয়ের যৌনাঙ্গে আঙ্গুল ঢোকাতে পারে, তারা কিন্তু কোনো এক দিন জোর খাটিয়ে মেয়েদের যৌনাঙ্গে লোহার রডও ঢোকাতে পারে। কাকে বিশ্বাস করবে মেয়েরা? 

ধর্ষণের বিরুদ্ধে ধর্ষিতাকে দোষ দেওয়ার প্রবণতা এখনো যায়নি। এখনো ধর্ষিতা মেয়েটিকেই প্রশ্ন করা হচ্ছে, লিফটে একবার তেজপাল দ্বারা যৌন হেনস্থার শিকার হওয়ার পরও কেন ও তেজপালের সঙ্গেই দ্বিতীয়বার লিফটে চড়ল! এর কারণ তো খুব সহজ, মেয়েটা তার চাকরি বাঁচাতে চেয়েছে। ধর্ষিতা হয়ে নয়, ধর্ষিতা না হয়ে চাকরি বাঁচানোর চেষ্টা করছে। ধর্ষণের জন্য কোনো ধর্ষকের লিফটের দরকার হয় না। ধর্ষকরা সহজে ধরা পড়বে না_ এমন যে কোনো জায়গায় ধর্ষণ করে। যদি দ্বিতীয়বার মেয়েটি না চড়ত লিফটে, তাহলে কি তাকে দোষ দেওয়া হতো না? ঠিকই হতো, যারা তাকে আজ দোষ দিচ্ছে লিফটে চড়ার জন্য, তারাই বলত কী ব্যাপার তেহেলকার সম্পাদক তোমাকে যৌন হেনস্থা করার পরও তুমি তেহেলকায় দিব্যি চাকরি করে যাচ্ছ, নিশ্চয়ই তোমার সায় ছিল ওই যৌন হেনস্থায়। 

তেজপাল বেশ স্পষ্ট করেই তার ই-মেইলে লিখেছেন, মেয়েটির অসম্মতিতেই মেয়েটির যৌনাঙ্গে তিনি আঙ্গুল ঢুকিয়েছেন। ই-মেইল প্রচারিত হওয়ার পরও মেয়েটিকে দোষী বানানো হচ্ছে। সমাজ, সত্যি বলতে কী, ভীষণরকম নারীবিদ্বেষী। এই সমাজে সব শ্রেণীর পুরুষই সব শ্রেণীর মেয়ের যৌনাঙ্গে যা ইচ্ছে তাই ঢুকিয়ে বিকৃত আনন্দ পায়, মেয়েদের এতে সায় আছে কী নেই, তা অনেকেই মনে করে না, দেখা সবার আগে প্রয়োজন। দিলি্ল বাসের অসভ্য অশিক্ষিত সেই ধর্ষকদের সঙ্গে দিলি্লর সভ্য-শিক্ষিত তরুণ তেজপালের পার্থক্য খুব বেশি নেই। ওদের মতো তরুণ তেজপালও মেয়েদের যৌনবস্তু হিসেবে মনে করেন। ঘৃণা করতে হলে দিলি্ল বাসের ধর্ষকদের চেয়ে তরুণ তেজপালকেই বেশি করা উচিত। কারণ তিনি জেনে-বুঝে অপরাধটি করেছেন। দিলি্ল বাসের ধর্ষকরা নারীবাদের ওপর কোনো বই পড়েনি। নারীরা যে মানুষ, নারীরা যে যৌনবস্তু নয়, এটি তাদের কেউ শেখায়নি। কিন্তু তরুণ তেজপাল সব জেনেও নারী-পুরুষের বৈষম্য যে কোনো সভ্য সমাজে থাকা উচিত নয়, পুরুষের যে অধিকার নেই, নারীর বিনা অনুমতিতে নারীকে স্পর্শ করার, তা বুঝেও জোর করে এক নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে চেয়েছেন। তরুণ তেজপাল নিশ্চিতই এক জ্ঞানপাপী। 

এখনকার অফিস-আদালতে তথাকথিত সভ্য-শিক্ষিত ভদ্রলোকরা মেয়ে-সহকর্মীদের যৌন হেনস্থা করে চলেছে, এ সবাই জানে, এ থেকে মেয়েদের বাঁচানোর জন্যও তেজপালের শাস্তি জরুরি। তেজপালের মতো অগুনতি যৌন হেনস্থাকারীর টনক নড়বে। বুঝবে, এত নিশ্চিন্তে হেনস্থা চালিয়ে যাওয়া যাবে না, ধরা পড়লে সর্বনাশ। অবশ্য আমরা সবাই জানি যে শাস্তি বা মৃত্যুদণ্ড দিয়ে কখনো কোনো অপরাধকে কমানো যায়নি সমাজে। আসলে তরুণ তেজপাল যে চোখে মেয়েদের যৌনবস্তু হিসেবে দেখেন, পুরুষের সেই দেখার চোখটা যতদিন পাকাপাকিভাবে বন্ধ না হয় বা অন্ধ না হয়, ধর্ষণ, যৌন হেনস্থা ইত্যাদি কমবে না। 

আমার আত্দজীবনীতে লিখেছিলাম, বাংলাদেশের বয়স্ক এক নামি লেখক আমাকে ছলে-কৌশলে দূরের এক শহরে নিয়ে গিয়ে এক ঘরে ঘুমোবার ব্যবস্থা করেছিলেন। লেখকটি আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন, এই আশঙ্কায় সারা রাত আমি ঘুমোতে পারিনি। এই ঘটনা লেখার পর লোকে ওই লেখককে দোষ না দিয়ে আমাকে দিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের এক বড় লেখকের যৌন হেনস্থা করার খবর যেদিন বলি, ওখানেও একই অবস্থা হয়েছিল। লোকে যৌন হেনস্থাকারী লেখককে দোষ না দিয়ে আমাকে দোষ দিয়েছিল। ওদের ছি ছি না করে আমাকে ছি ছি করেছিল। যেন ওরা কেউ নন, অন্যায়টা বা অপরাধটা আমি করেছি। জানি সাধারণ লোকেরা বড় লেখক-বুদ্ধিজীবীদের দেবতা বলে মনে করে। তাদের পক্ষে যে কোনো দুঃসময়ে দাঁড়ায়। আমি নিজে কিন্তু বানের জলে ভেসে আসা মেয়ে নই, বা এঙ্-ওয়াই-জেড নই। দেশ-বিদেশের অনেক পুরস্কার পাওয়া জনপ্রিয় লেখক, কিন্তু যত বড় লেখকই আমি হই না কেন, আমি মেয়ে, আমি মেয়ে বলেই কেউ আমার পাশে দাঁড়ায়নি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বেশির ভাগ লোকই বিশ্বাস করে, যৌন হেনস্থা করার অধিকার পুরুষের আছে, এবং পুরুষের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ করার অধিকার কোনো মেয়ের নেই, বিশেষ করে সে পুরুষ যদি নামি-দামি কোনো পুরুষ হয়। সমাজটা আসলে শুধু পুরুষের নয়, সমাজটা নারীবিদ্বেষী, নারীবিরোধী পুরুষের। 

লেখক : নির্বাসিত লেখিকা   


- See more at: http://www.bd-pratidin.com/2013/12/05/30349#sthash.wo0nAuWa.dpuf







__._,_.___


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___