Banner Advertiser

Friday, December 13, 2013

[mukto-mona] কাদের মোল্লার ফাঁসি : মুক্তিযুদ্ধের ৪২ বছর পর মানবতা বিরোধী অপরাধের প্রথম দ- যেভাবে কার্যকর হলো



কাদের মোল্লার ফাঁসি : মুক্তিযুদ্ধের ৪২ বছর পর মানবতা বিরোধী অপরাধের প্রথম দ- যেভাবে কার্যকর হলো
রাশেদুল আলম আপন
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লার মৃত্যুদ- অবশেষে কার্যকর করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ১ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কাদের মোল্লাকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের ৪২ বছর পর মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদ- পাওয়া আসামিদের মধ্যে কাদের মোল্লার শাস্তিই প্রথম কার্যকর করা হলো। গ্রেফতার হওয়ার ৩ বছর ৫ মাস পর ৬৫ বছর বয়সী কাদের মোল্লার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সর্বোচ্চ দ- কার্যকর করা হলো।

যেভাবে ফাঁসি দেয়া হয়

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আবদুল কাদের মোল্লার সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় আবার দেখা করেন তার পরিবারের সদস্যরা। কাদের মোল্লার সঙ্গে দেখা করতে পরিবারের সদস্যরা সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটের দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে যান। সন্ধ্যা সাতটার পরে তারা বের হয়ে আসেন। ভিআইপি ওই সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে আবার কনডেম সেলে ফিরে যান কাদের মোল্লা। সন্ধ্যার পর থেকেই ফাঁসির মঞ্চ ঘিরে চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলে। লাল কাপড়ে ঘিরে দেয়া হয় মঞ্চের চারপাশ। নতুন আলোর বিচ্ছুরণ হয় মঞ্চের চারদিকে। সাবান, মোমবাতি, কর্পূর, আগরবাতি, গোলাপজল, কাফনের কাপড় রাখা হয় সেখানে। মঞ্চের ঠিক পাশেই রাখা হয় নতুন একটি কাঠের কফিন। এর আগে রাত সোয়া ৯টার দিকে কারাগারে প্রবেশ করেন অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল ইফতেখার আলম, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) একে এম শহীদুল হক, ডিআইজি প্রিজন গোলাম হায়দার, ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ডা. আবদুল মালেক মৃধা ও কারা মসজিদের ইমাম মাওলানা আবদুল হাই। রাত ৯টা ২০ মিনিটে প্রবেশ করেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের প্রতিনিধি উপ-কমিশনার (অর্থ) ইমাম হোসেন। 

রাত ৯টা ৩০ মিনিট। কারা মসজিদের ইমাম মাওলানা আবদুল হাই কনডেম সেলে কাদের মোল্লাকে তওবা পড়ান। তওবা শেষে মোনাজাতে হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন কাদের মোল্লা। তার কান্না দেখে কেঁদে ফেলেন কারা মসজিদের ইমাম মাওলানা আবদুল হাইও। এ সময় কনডেম সেলের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী, জেলার মাহবুবুল আলমসহ কারা কর্মকর্তারা। এর আগে কাদের মোল্লাকে গরম পানি, সাবান ও গোলাপজল দিয়ে গোসল করানো হয়। এরপর রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে কাদের মোল্লাকে কনডেম সেল থেকে বের করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের উত্তর পাশে তৈরি করা মঞ্চের পাশের একটি কক্ষে নিয়ে আসা হয়। হাতে পরানো হয় হ্যান্ডকাফ। মাথা ও মুখ ঢেকে দেয়া হয় কালো রঙের 'যমটুপি' দিয়ে। ৯টা ৫৭ মিনিটে দু'জন কারারক্ষী উপস্থিত হন ওই কক্ষে। দুই বাহু ধরে তাকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যায় ওই দুই কারারক্ষী। এ সময় যেন কাদের মোল্লার পা চলছিল না। মঞ্চের উপরে তোলার পরপরই তার পা রশি দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়। যমটুপির ওপর দিয়ে গলায় রোপ ম্যানিলা (ফাঁসির রশি) পরান সহযোগী জল্লাদ ফারুক ও রাজু। ততক্ষণে ওই ফাঁসির মঞ্চের লিভার ধরে থাকেন প্রধান জল্লাদ শাহজাহান ভঁূইয়া। তার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকেন পাঁচ সহযোগী জল্লাদ ফারুক, রাজু, হাফিজ, সানোয়ার ও ফারুক। এদিকে মঞ্চের এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী। তার ঠিক পেছনে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) একেএম শহীদুল হক, অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল ইফতেখার আলম, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শেখ ইউসুফ হারুন আবদুল্লাহ, ডিআইজি প্রিজন গোলাম হায়দার ও ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ডা. আবদুল মালেক। ১০টা ৩০ সেকেন্ডে ডান হাতে লাল রুমাল তুলেন জেল সুপার ফরমান আলী। জল্লাদ শাহজাহানের দুই হাত ফাঁসির লিভারে এবং চোখ লাল রুমালের দিকে নিবদ্ধ। দেখতে দেখতে ঘনিয়ে আসে সেই সময়। এভাবে ১০টা ১ মিনিট, সঙ্গে সঙ্গেই লিভার ঘুরান জল্লাদ শাহজাহান। মুহূর্তেই মঞ্চের পাটাতন কাদের মোল্লার পায়ের নিচ থেকে সরে যায়। রশিতে ঝুলতে থাকেন কাদের মোল্লা। ধীরে ধীরে নিথর হয়ে আসে তার দেহ। সূচনা হয় একটি অধ্যায়ের। ১০টা ৩১ মিনিটে মঞ্চ থেকে নামানো হয় কাদের মোল্লার লাশ। এর আগে শাহজাহান ভূঁইয়া আলোচিত সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইকে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা মামলায় মৃত্যুদ- পাওয়া আসামিদের ফাঁসি দিয়েছিলেন। এরপর রাত ১০টা ২৬ মিনিটে মডেল হাসপাতালের একটি অ্যাম্বুলেন্স কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করে। তবে অ্যাম্বুলেন্সের নম্বর প্লেটটি ছিল সাদা কাগজ দিয়ে ঢাকা। এরপর র‌্যাব-পুলিশের প্রহরায় আরও দুটি অ্যাম্বুলেন্স ভেতরে প্রবেশ করে। আর অ্যাম্বুলেন্স দুটির নাম্বার হলো, ঢাকা মেট্রো-ছ-৭১০৬৫৪ ও ৭১০৬৭৬। র‌্যাব-পুলিশ-বিজেপিসহ ১৪টি গাড়ির বহর নিয়ে কাদের মোল্লার মরদেহ তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাষানচরে নেয়া হয়েছে। এর আগে কারাগারের সামনে পুলিশ-র‌্যাব ও বিজেপির উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছিল। এছাড়াও আশপাশের ভবনের ওপরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানো হয়। 

ফাঁসির আগ মুহূর্তে কাদের মোল্লা 

ফাঁসির আগ মুহূর্তে কাদের মোল্লা একদমই চুপচাপ ছিলেন। তবে একেবারেই স্বাভাবিক দেখা গেছে তাকে। মুখে কোন কথা না বললেও অনেকটা অবিচল ছিলেন তিনি। কেবল মাঝে মাঝে এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলেন কখনো কখনো। কাদের মোল্লার ফাঁসি হয়ে যাওয়ার প্রায় দুই ঘণ্টা পরে এ কথাগুলো জানা গেছে জেলখানার মেডিকেল অফিসার ডা. রফিক আহমেদের কাছ থেকে। কাদের মোল্লার মেডিকেল চেকআপ টিমের সদস্য ছিলেন তিনি। রাত ১২টা ১০ মিনিটে জেলগেট থেকে বের হন দু'জন। তাদের একজন ডা. রফিক ও অন্যজন ডা. রথিন্দ্রনাথ কু-ু। দু'জনই কাদের মোল্লার মেডিকেল চেকআপের দায়িত্বে ছিলেন। সিভিল সার্জন ডা. আবদুল মালেকের নেতৃত্বে এ টিমে ছিলেন আরও এক চিকিৎসক। কাদের মোল্লা ফাঁসির জন্য প্রস্তুত ছিলেন, তার চেহারা দেখে সেটাই বোঝা গেছে। আমাদের সঙ্গেও কোন বিষয় নিয়ে তার কথা হয়নি। আমরা কেবল তার শারীরিক পরীক্ষা করেছি। ফাঁসিতে ঝোলার আধঘণ্টা আগে তার মেডিকেল চেকআপ করা হয়। তবে মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়ার আগ থেকে প্রতিদিনই তাকে এ চেকআপ করা হতো। এ সময় তিনি সাধারণত কোন কথা বলতেন না। তবে মঙ্গলবার রাতে কাদের মোল্লা একবারই কথা বলেছিলেন। সেদিন তিনি কেবল বলেছিলেন- কই আমাকে তওবা পড়ানোর জন্য তো হুজুর এলো না। এ বিষয়টি আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না বলে আমরা কোন উত্তর দেইনি। তাকে যখন ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়, তখনো তাকে ভাবলেশহীন ও স্বাভাবিক দেখা গেছে। এ চিকিৎসকরা ২০০৭ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় দ-প্রাপ্তদেরও ফাঁসির আগে মেডিকেল চেকআপ করেছিলেন। 

যেভাবে গ্রেফতার ও আইন সংশোধন

মুক্তিযুদ্ধকালে হত্যাকা- পরিচালনার অভিযোগে ২০০৮ সালে পল্লবী থানায় দায়ের করা একটি মামলায় ২০১০ সালের ১৩ জুলাই জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লাকে গ্রেফতার করা হয়। ওই বছরের ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। তদন্ত শুরু হয় ওই বছরের ২১ জুলাই। গত বছরের ২৮ মে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। ৩ জুলাই থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে এ বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদ-ের রায় দেন ট্রাইব্যুনাল-২। কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদ-ের আদেশে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। ক্ষুব্ধ মানুষ সেদিন বিকেল থেকে জড়ো হতে থাকে রাজধানীর শাহবাগ চত্বরে। প্রতিবাদী এই মানুষগুলো স্বতস্ফূর্তভাবে গড়ে তোলে গণজাগরণ মঞ্চ। এরপর সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিটি) আইন সংশোধন করতে বাধ্য হয়েছিল। ১৭ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) সংশোধন বিল, ২০১৩ জাতীয় সংসদে পাস হয়। সংশোধনের ফলে আসামিপক্ষের মতো রাষ্ট্রপক্ষও রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সমান সুযোগ পায়। আগে আইনে দ-াদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল করার সুযোগ ছিল না। আইন সংশোধনের পর গত ৩ মার্চ কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি (মৃত্যুদ-) চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। আর সাজা থেকে অব্যাহতি চেয়ে পরদিন ৪ মার্চ আপিল করেন কাদের মোল্লা। ১ এপ্রিল থেকে আপিলের শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষ হওয়ার ৫৫ দিনের মাথায় ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতে কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদ-াদেশ দেন। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় ৫ ডিসেম্বর ৭৯০ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এরপর রায়ের অনুলিপি সুপ্রিম কোর্ট থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়। গত ৮ ডিসেম্বর বিকেলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ থেকে কাদের মোল্লার মৃত্যু পরোয়ানা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়।

কাদের মোল্লার সঙ্গে পরিবারের সাক্ষাৎ ও ফাঁসি স্থগিত

১০ ডিসেম্বর বিকেলে হঠাৎ করেই মৃত্যুদ-প্রাপ্ত কাদের মোল্লার সঙ্গে দেখা করার জন্য তার স্ত্রী সানোয়ার জাহানের কাছে চিঠি দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। সে অনুযায়ী রাত আটটার দিকে তার সঙ্গে দেখা করতে দুটো মাইক্রোবাসে করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যান পরিবারের সদস্যরা। তারা প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করে ফিরে যান। রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্টে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু ও আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম জানান, ১০ ডিসেম্বর রাত ১২টা ১ মিনিটে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হবে। ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতিও ছিল কারা কর্তৃপক্ষের। তবে ফাঁসির কার্যক্রম স্থগিতের আবেদন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের বাসায় হাজির হন কাদের মোল্লার আইনজীবীরা। তবে ঘোষিত সময়ের দেড় ঘণ্টা আগে তার ফাঁসির কার্যক্রম স্থগিত করেন চেম্বার বিচারপতি। তিনি ১১ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ফাঁসির কার্যক্রম স্থগিত করে বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। শুনানি শেষে গতকাল প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দেন। ফলে তার মৃত্যুদ- কার্যকর করতে আইনগত কোন বাধা নেই বলে তখন জানান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কারা কর্তৃপক্ষ সন্ধ্যায় কাদের মোল্লার সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের দেখা করার অনুমতি দেয়। সন্ধ্যা ৬টা ১৫মিনিটে কাদের মোল্লার স্ত্রী সানোয়ারা জাহান ও বড় ছেলে হাসান জামিলসহ ৯ সদস্য কারাগারে কাদের মোল্লার সঙ্গে প্রায় ৪০ মিনিট কথা বলেন। সাক্ষাৎ শেষে হাসান জামিল কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, বাবা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইবেন কি-না তা ভেবে দেখবেন। আর তার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে চাই। তারই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রাতে কাদের মোল্লার আইনজীবীদের পক্ষে অ্যাডভোকেট আজিম উদ্দিন পাটোয়ারি সাক্ষাৎ চেয়ে একটা দরখাস্ত করেন। কিন্তু সেটা রিসিপ্ট না করে কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন যেহেতু আজ রাতেই ফাঁসি কার্যকর করা হবে সেহেতু সাক্ষাতের অনুমতি দেয়া যাবে না।

কাদের মোল্লার ৬টি অভিযোগ

অভিযোগ-১ (পল্লব হত্যা) : কাদের মোল্লার নির্দেশে আকতার গু-া একাত্তরের ৫ এপ্রিল মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে গুলি করে হত্যা করেন। রায়ে বলা হয়, সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে পাওয়া গেছে, একাত্তরে নবাবপুর থেকে পল্লবকে ধরে আনার মতো দুষ্কর্মে আসামির 'সহযোগিতা' ছিল। পল্লব মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন, এ জন্য তিনি আসামির শিকারে পরিণত হন। এ হত্যাকা- ছিল দেশের বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে নির্মূল করতে পদ্ধতিগত আক্রমণের অংশ। অভিযোগ-২, কবি মেহেরুননিসা ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা : এ অভিযোগ অনুসারে, একাত্তরের ২৭ মার্চ কাদের মোল্লা তার সহযোগীদের নিয়ে কবি মেহেরুননিসা, তার মা এবং দুই ভাইকে মিরপুরের বাসায় গিয়ে হত্যা করেন। রায়ে এ বিষয়ে বলা হয়, সহযোগীদের নেতৃত্ব দেয়ার মাধ্যমে কাদের মোল্লা এ হত্যাকা-ে 'নৈতিক সমর্থন' ও 'উৎসাহ' জুগিয়েছেন, যা দুষ্কর্মে 'সহযোগিতার' মতো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অভিযোগ-৩, সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেব হত্যা : একাত্তরের ২৯ মার্চ সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেবকে মিরপুরের জল্লাদখানা পাম্প হাউজে নিয়ে কাদের মোল্লা ও তার সহযোগীরা জবাই করে হত্যা করেন। প্রাপ্ত সাক্ষ্যের ভিত্তিতে প্রমাণিত হয়, খন্দকার আবু তালেব হত্যাকা-ে কাদের মোল্লা মূল অপরাধীদের নৈতিক সমর্থন ও উৎসাহ জুগিয়েছেন, যা মানবতাবিরোধী অপরাধে সহযোগিতার মধ্যে পড়ে। অভিযোগ-৪, ঘাটারচর ও ভাওয়াল খানবাড়ি হত্যাকা- : একাত্তরের ২৫ নভেম্বর সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত কাদের মোল্লা ও ৬০-৭০ জন রাজাকার কেরানীগঞ্জ থানার ভাওয়াল খানবাড়ি ও ঘাটারচর শহীদনগর এলাকায় শতাধিক নিরস্ত্র গ্রামবাসী ও দু'জন নিরস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেন। এ বিষয়ে রায়ে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপক্ষের সপ্তম সাক্ষী আবদুল মজিদ পালোয়ান ও অষ্টম সাক্ষী নূরজাহান বেগম যে আসামিকে চিনতেন, তা প্রাপ্ত সাক্ষ্যে ট্রাইব্যুনাল বিশ্বাস করতে পারেননি। ফলে এটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয় না যে, ওই হত্যাকা-ের ঘটনায় পাকিস্তানি সহযোগীদের সঙ্গে রাইফেল হাতে কাদের মোল্লা নিজে উপস্থিত ছিলেন। হত্যাকা- যে ঘটেছিল, তা নিয়ে কোন বিতর্ক নেই, কিন্তু এ হত্যাকা-ের সঙ্গে আসামির সংশ্লিষ্টতা প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে। অভিযোগ-৫, আলুব্দীতে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ : একাত্তরের ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাদের একটি হেলিকপ্টার মিরপুরের আলোকদী (আলুব্দী) গ্রামের পশ্চিম দিকে নামে। কাদের মোল্লা অর্ধশত অবাঙালি, রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনাসদস্য নিয়ে গ্রামের পূর্ব দিক থেকে ঢোকেন এবং এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকেন। ওই ব্যাপক হত্যাকা-ের ঘটনায় ৩৪৪ জনের বেশি মারা যান। এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যের মাধ্যমে রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছে, হত্যাকা-ের সময় কাদের মোল্লাকে রাইফেল হাতে সশরীরে উপস্থিত দেখা গেছে। কোন মানবতাবিরোধী অপরাধ যখন অনেক ব্যক্তি ঘটায়, তখন ওই ব্যক্তিদের প্রত্যক্ষ ওই অপরাধ এককভাবে সংঘটনের জন্য সমানভাবে দায়ী। অভিযোগ ৬, হযরত আলী, তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা ও ধর্ষণ : একাত্তরের ২৬ মার্চ মিরপুরের ১২ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর কালাপানি লেনের হযরত আলী, তার স্ত্রী, দুই মেয়ে ও দুই বছরের ছেলেকে হত্যা এবং তার ১১ বছরের মেয়েকে ধর্ষণের সঙ্গে কাদের মোল্লা সংশ্লিষ্ট ছিলেন। হযরতের আরেক মেয়ে ওই ঘটনা লুকিয়ে থেকে দেখেছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে তৃতীয় সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন হযরতের পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য লুকিয়ে থাকা ওই মেয়ে। রায়ে বলা হয়, প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণে অপরাধের ঘটনাস্থলে কাদের মোল্লার উপস্থিতি অপরাধের সঙ্গে তার সংযুক্ততা প্রমাণ করে। আইনগতভাবে ধরে নেয়া যায়, অপরাধ সংঘটনে আসামি নৈতিক সমর্থন ও সাহায্য করেছেন।

ট্রাইব্যুনাল ও আপিল বিভাগে সাজা

ট্রাইব্যুনাল-২-এর রায় অনুসারে, কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে চতুর্থ অভিযোগ ছাড়া বাকি পাঁচটি অভিযোগে অপরাধ প্রমাণিত হয়। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধে সংশ্লিষ্টতা বা সহযোগিতার জন্য, পঞ্চম অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে হত্যা এবং ষষ্ঠ অভিযোগে হত্যা ও ধর্ষণের অপরাধে কাদের মোল্লাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ট্রাইব্যুনাল পঞ্চম ও ষষ্ঠ অভিযোগের জন্য কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন এবং প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় অভিযোগের জন্য ১৫ বছরের কারাদ- দেন। আপিল বিভাগের রায়ে কাদের মোল্লাকে দোষী সাব্যস্ত করার ব্যাপারে পাঁচ বিচারপতি একমত হলেও মৃত্যুদ-ের বিষয়ে বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা ভিন্নমত দেন। আপিল বিভাগের আদেশে বলা হয়, ষষ্ঠ অভিযোগে সপরিবারে হযরত আলী লস্কর হত্যা ও ধর্ষণ সংখ্যাগরিষ্ঠ (৪:১) মতামতে তাকে মৃত্যুদ- দেয়া হলো। চতুর্থ অভিযোগ ঘাটারচর ও ভাওয়াল খানবাড়ি হত্যাকা- থেকে ট্রাইব্যুনাল আসামিকে খালাস দিয়েছেন, রায়ের এ অংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতে বাতিল করা হলো। এ অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হলো। প্রথম পল্লব হত্যাকা-, দ্বিতীয় সপরিবারে কবি মেহেরুননিসা হত্যা, তৃতীয় সাংবাদিক আবু তালেব হত্যাকা- ও পঞ্চম অভিযোগে আলুব্দী হত্যাযজ্ঞ ট্রাইব্যুনালের দেয়া দ- সংখ্যাগরিষ্ঠ (৪: ১) মতামতে বহাল রাখা হলো। গত বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে রায় দেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, বোথ দ্য রিভিউ পিটিশনস আর ডিসমিসড (দুটি পুনর্বিবেচনার আবেদনই খারিজ করা হলো)।

http://www.thedailysangbad.com/index.php?ref=MjBfMTJfMTRfMTNfMV8xM18xXzE1MDA3NQ==

কাদের মোল্লা : মুখে মধু অন্তরে বিষ!

SpecialTop

একজন কাদের মোল্লা






__._,_.___


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___