Banner Advertiser

Thursday, January 23, 2014

[mukto-mona] S.M Sultan



বাঙালী জীবনেরই প্রতিচ্ছবি : এস এম সুলতান

 

লিখেছেনঃ বালিকা (তারিখঃ ২৩ জানুয়ারি ২০১৪, :৫১ অপরাহ্ন)


বাঙালী জীবনেরই প্রতিচ্ছবি : এস এম সুলতান
-
আঁখি সিদ্দিকা

"আমি মানুষকে খুব বড় করে এঁকেছি, যারা অনবরত বিজি আফটার ওয়ার্ক …. আমি সবসময় কৃষকদের এঁকেছি, কৃষকরা যুগ যুগ ধরে অমানবিক পরিশ্রম করে চলেছে ওদের উপজীব্য করেই সমাজটা গড়ে উঠেছে কিন্তু ওদের চিরকালই বিট্রে করা হয়েছে ব্রিটিশরা করেছে, পাকিস্তানীরা করেছে, '৭১ স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের অনেক আশা দেয়া হয়েছিল কিন্তু দে ওয়্যার বিট্রেড। এই যে একটা এক্সপ্লয়েটেশন প্রসেস, আমার ছবি তার প্রতি একটা চ্যালেঞ্জ শোষণ করো, কিন্তু কোন মশা এদের শেষ করতে পারবে না, ব্রিটিশরা করেছে, পাকিস্তানীরা লুটেপুটে খেয়েছে, এখনো চলছে, কিন্তু এরা অমিত শক্তিধর কৃষককে ওরা কখনো শেষ করতে পারবে না, আমার কৃষক রকম"

"আমার ছবির ব্যাপার হচ্ছে সিম্বল অব এনার্জী। এই যে মাসলটা, এটা যুদ্ধের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে, সয়েলের সঙ্গে যুদ্ধ তার বাহুর শক্তিতে লাঙ্গলটা মাটির নীচে যাচ্ছে, ফসল ফলাচ্ছে। শ্রমটাই হলো বেসিস। আর আমাদের এই অঞ্চল হাজার বছর ধরে এই কৃষকের শ্রমের উপর দাঁড়িয়ে আছে। অথচ সেই কৃষকদের হাজার বছর ধরে মারা হয়েছে …..আমি কৃষকের হাজার হাজার বছরের এনার্জীকে, ওদের এনার স্ট্রেন্থকে এক্সাজারেট করে দেখিয়েছি। কাজের ফিলিংসটাকে বড় করে দেখিয়েছি.." এস এম সুলতান

এস এম সুলতান। নামটিতেই প্রকৃতির গন্ধ। জীবনের গন্ধ। এই মানুষটি যিনি, তিনি আজীবন শিশু থেকেছেন। সুলতান তাঁর বোহেমিয়ান জীবনে মানুষের কাছাকাছি যেতে পেরেছেন, গিয়েছেন সবসময়ই,থেকেছেন মানুষকে নিয়ে। জীবনবোধের কবি রঙ আর তুলির শব্দে ছবি এঁকে গেছেন, নিরলসভাবে। কৃষকের ক্লান্তদিন, কৃষানীর স্বপ্নের বিভোরতা- দেখেছেন ধ্যানমগ্ন হয়ে আপন মহিমায়। ছবি একেঁছেন, বোহেমিয়ান জীবন নিয়ে বেড়িয়েছেন কাদামাটির সোঁদা গন্ধে। প্রকৃতির অপার উপাদানের নিমিত্তে ক্ষেতের আল ধরে, সোনালি ধানের ওষোর ভেঙ্গে হেঁটে বেড়িয়েছেন গাঁও গ্রামের প্রান্তে। শিশুদের প্রতি ভালোবাসায় বিমোহিত সুলতান। শিশুদেরকে ভবিষ্যতের যোগ্য উত্তরসুরি ভেবে শিশুদের গড়ে তোলার ইচ্ছে শক্তির ব্যাপ্তি ছিল রঙের তুলির আঁচড়ে। তাই শিশুদের সখ্য তাকে দিয়েছে অনন্য এক প্রেরণাশক্তি শিশুদের মাঝে নিজেকে বিস্তৃত করাই ছিল তাঁর আরাধ্য। আরাধনার তৃপ্তিতে আপ্লুত হয়েই শিশুস্বর্গের সূচনা করেছেন। নিজের পরিধি বিস্তারের মানসে শিশুসঙ্গ তাকে নিয়ে গেছে ভাবনার অসীম এক জায়গায়। সৌন্দর্য্য পিপাসু প্রকৃতির সৌন্দর্য অবগাহনে গ্রহণ করেছেন যাযাবর জীবনকে জীবনের মোহ ত্যাগ, সীমাহীন আর্থিক অনটন, চারপাশের মানুষের অনভিপ্রেত অসহযোগীতা সংসারত্যাগ তাকে তিলে তিলে রূপান্তরিত করেছে অদ্ভূত ব্যক্তিত্বে। যা নিয়মের বাহির থেকে প্রকৃতির রূপ, রস, সুধাপানে চারপাশকেই নিয়ামক হিসেবে কল্পনার জগতে তুলির সুবিশাল ক্যানভাসে ঠাঁই দিয়েছেন চিত্রচর্চায়। জীবনের অলিগলি পেরিয়ে রক্তমাংসের সুসজ্জিত কশেরুকা ভেদ করে এনেছেন হাড্ডিসার মানুষের নিত্যদিনের জীবন। শৈল্পিক ভাবনা থেকেই তিনি তুলির নরম আঁচড়ে এঁকেছেন গরীব মানুষগুলোকে, যাদের কশেরুকায় মগজে ধনীক শ্রেণীর বসবাস। শোষণের সেই হাতিয়ারকে জাতভেদ ভুলে প্রতিভু প্রজাতির গোয়ালের গবাদি পশুর শৃঙ্গের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তার গভীর কৌতুহলদীপ্ত চোখ চিত্রা নদী দেখেছে, ডিঙ্গি নৌকায় শিশুদের দেশ ভ্রমণের প্রয়োজনীয়তা মানসপটে সযতনে বয়ে নিয়ে দেশ বিদেশে তা উপস্থাপন করেছেন আগামির কথা ভেবে। অন্তরাত্মা আর লৌকিক বিবেচনায় দেশের মাটি বায়ু আকাশ মানুষই ছিল তার আরাধ্য। মানব সেবার ক্যাটাগরিতে প্রাধান্য পেয়েছে নির্বাক ছবি। যার ভাষা নেই কিন্তু আছে প্রকাশের অভিপ্রায়। আর অভিব্যক্তিই তাকে দিয়েছে অনন্য সুন্দর ছদ্মাবরণ জীবন। জাতভেদের বাড়াবাড়িতে বিরক্ত হয়েছেন, কখনো কখনো নিরুদ্দেশ পলাতক জীবনকে সঙ্গী করে মন দিয়েছেন আপন কর্মে

এস এম সুলতান, প্রকাশিত হন বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ারও ৫বছর পর। সুলতান ভীতিতে ভুগেছে বহু প্রতিষ্ঠিত চিত্রশিল্পী, যারা রাষ্ট্রের কাছাকাছি থেকে বোহেমিয়ান সুলতানের সৃষ্টিকর্মকে রাষ্ট্রীয় পক্ষপাতদুষ্টে আড়াল করেছে। কারণ অতীতের সব সৃষ্টিশীলতা যে সুলতানের সৃষ্টিকর্মে ঢাকা পড়ে যেত মুহূর্তে। তার ছবির ভাষার ভীতিতে সুলতানকে ঢাকা শহরেও আসতে অনেকের প্রত্যক্ষ বিরোধীতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। তাই নড়াইল থেকে ঢাকাকে অনেক দূর ভেবে ছুটে গেছেন কলকাতায়। কলকাতায় যখন সুলতানের জয়জয়কার তখনো অতি উচ্চমার্গীয় চিত্রকররা কলকাতায় সুলতান বিরোধীতার পোস্টার ছেপেছেন। রাতের আঁধারে তা কলকাতা শহরের অলিগলিতে সুলতান কপট মুর্খ বলে প্রচারসমৃদ্ধ হয়েছে। কিন্তু তারপরও সুলতান লক্ষ্য থেকে এক চুল পরিমান লক্ষ্যভ্রষ্ট হননি। রাতের বেলায় সুলতান সান্নিধ্যে যারা আত্মতৃপ্তিতে ভুগেছে তারাই দিনের বেলায় সুলতান বিরোধীতায় কাঁপাতেন বক্তৃতার মঞ্চ। কিন্তু তারপরও সুলতান তাদেরকে সঙ্গ দেয়া থেকে বিরত থাকেননি।
সুলতান নিয়ে রাষ্ট্রের অবহেলা সুলতান প্রেমিকদের হতাশ করে। কেন আমাদের সরকার ব্যবস্থা আমাদের রাষ্ট্র এস এম সুলতান নিয়ে এতটা উদাসীন তা বোধগম্য নয়। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, পটুয়া কামরুল হাসান সহ প্রতিথযশা শিল্পীদের নিয়ে পাঠ্যপুস্তকে শিক্ষা দেয়া হয় কিন্তু সুলতান রয়ে গেছেন বরাবরই অনুপস্থিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলাতে সুলতান এক প্রকারে নিষিদ্ধই বটে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চারুকলা ইনস্টিটিউটগুলোতে এস এম সুলতান নিয়ে কোন শিক্ষা দেয়া হয়না। অথচ এস এম সুলতানের চিত্রকর্ম বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলেছে। লন্ডন থেকে প্যারিস এস এম সুলতান দীপ্তমান। প্যারিসের যাদুঘরে এস এম সুলতানের আঁকা তিনটি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও এস এম সুলতান পড়ানো হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে তার প্রিয় স্বদেশে মহৎ শিল্পী বরাবরের ন্যায় অনুপস্থিত অবহেলিত। এস এম সুলতানের জন্মবার্ষিকী মৃত্যুবার্ষিকী নিয়ে রাষ্ট্রীয় কোন আড়ম্বর চোখে পড়ে না। অথচ অনেকের বেলায় রাষ্ট্রীয় আয়োজন দেখে এস এম সুলতান নিয়ে যে বৈষম্য চলছে তা স্পষ্ট হয়। রাষ্ট্রযন্ত্র একপেশে পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে না, হওয়া উচিতও নয়।
তবুও বাঙালির ইতিহাস মৃত্তিকাগন্ধময় ঐতিহের মর্মমূল চিত্রকল্প তার মত দীপ্র ভাষায় রূপায়িত করেছেন খুব কম শিল্পীই। যুগ যুগান্তরের ঘাম-শ্রমের গন্ধমাখা কর্মঠ বাঙালি কিষাণের প্রাণ ভোমরাকে আবিস্কার করেছেন তিনি। বহুকাল প্রবাহী সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অস্তিত্বের নীরবতা ভেঙে তাদের প্রাণ শক্তি অধিকারের সরব জয়ধ্বনি তিনি ঘোষণা করেছেন। এই সততা এই সমাজ সহমর্মিতা।এই মানববোধ, এই প্রাণের টান আপন মৃত্তিকায় প্রোথিত জীবন বিশ্বাস আমাদের সমীহ আদায় করবেই। আমাদের শিল্পকলা যখন জীবন মানবভূমি পরিত্যাগ করে কৃৎকলাকৌশল হৃদগগণের অলীক লোকে উর্ধ্বগামী হবার প্রলোভনে টলায়মান তখন সুলতানের শিল্পকর্ম তাকে টেনে রাখে শেকড়ের দিকে, উপরে ভেসে যেতে দেয় না। তাঁর গুরুত্ব হয়তো ভবিষ্যতে কখন আরো ভালোভাবে অনুভূত হবে। তাঁর ছবি তিনি ছিলেন অভিন্ন। মাটি কৃষি নির্ভর দেশের চিয়ারত জীবন সাধনা সংগ্রাম এবং বিপুল শক্তি তাঁর ছবিতে পাই। কেবলমাত্র মানুষকে নয় তিনি ভালবাসতেন সমগ্র সৃষ্টিকে।
তাঁর ছবি আপাতদৃষ্টিতে নাইভ পেইন্টার। অনেকটা স্বভাব কবির মতো। স্বভাব কবি যেরকম স্বভাব চারণ কবি, এইরকম চারণ চিত্রকরের মতো। তিনি তো প্রকৃত অর্থে স্বভাব চিত্রকর নয় বা নন। তিনি সম¯ ওয়ার্কিং পেইন্টিং-এর ইতিহাসের মধ্য দিয়ে এবং অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে তিনি ওই সরলতার মধ্যে ফিরে গেছেন। সেই স্বাভাবিক একজন গ্রামের পটুয়ার যে সরলতা, তাঁর সরলতা ছবির আঁকিয়ে হিসেবে, এক নয়। তিনি সম¯ অভিজ্ঞতা, বিমূর্ত কলা এবং আধুনিক শিল্পকলার মধ্যে দিয়ে অভিজ্ঞতায়, মানে, ট্রানসেন্ড করে তিনি সরলতায় গেছেন। সো ইট হ্যাজ ডিফারেন্ট ডাইমেনশন এবং এই ডাইমেনশনের কারণেই তাঁর ছবি নেহায়েত নাইভ পেইন্টিং বলে উড়িয়ে দেয়ার উপায় নেই এবং তাঁর ছবির মধ্যে যে বিষয় এবং অ্যাপ্রোচ আছে তার মধ্যে অনেক আধুনিক অ্যাপ্রোচের কিছু সম্পর্ক ইতিমধ্যেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। যেমন সারা বিশ্বে এখন পরিবেশবাদী যে চেতনা কাজ করছে এবং নগরসভ্যতার যে পলিউশন এবং নগরসভ্যতার যে আত্মঘাতী যুদ্ধ এবং জটিলতা, তার বিপরীতে এবং বিপ্রতীপে গ্রামীণ জীবনের সরল অধ্যয়নের মধ্য দিয়ে প্রিমিটিভ জীবনের প্রতি, ফিরে যাওয়ার যে এক ধরনের নতুন প্রয়াস তার সাথে এটা খুব সম্পৃক্ত এবং সুলতানের ছবি দেশের মানুষের তুলনায় বিদেশের মানুষ বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখে। কারণ আধুনিক পশ্চিমের দিকে যে একটা নতুন চিন্তা-চেতনা হচ্ছে ছবি আঁকার ক্ষেত্রে, ভিজ্যুয়াল আর্টের ক্ষেত্রে এবং পরিবেশবাদ ইত্যাদি বিভিন্ন রকম আন্দোলনের ক্ষেত্রে, এইসব ক্ষেত্রে খুব প্রাসঙ্গিক সুলতানের ছবি।
সুলতান জীবন ছবি নিয়ে বলেন- ''আমাদের এখন জীবনকে ভালোবাসা দরকার। জীবনকে ভালবাসতে গিয়ে যদি কৃষকের ছবি না আকঁতে চাই, কোনো অসুবিধা নেই, সিটি এরাউন্ড ঢাকাকে কেন্দ্র করে অনেক কিছু আঁকা যেতে পারে, তা না করে যদি আমি শুধু হরাইজন্টাল থাকি, তা হলে তা ডিজাইন ছাড়া বেশী কিছু হবে না। এসব কম্পোজিশন এমন কোন বড় ব্যাপার নয় এসব পেইন্টিং এর সাথে জীবনের মহৎ কোন আদর্শের সম্পর্ক নাই। তারা এসব ছবির কিছুই বুঝতে পারেনা, তাদের মধ্যে কোন ফিলিংস সৃষ্টি করে না।''
আধুনিকতা বিষয়ে সুলতান বলেন, ''আমি যা অর্জন করিনি, সেটা আমার না, ধার করা জিনিস নিয়ে আধুনিক হওয়া যায়না সেটা করতে গেলে আমাকে খেজুর গাছ, খড়ের ঘর আর নেংটি পড়া কৃষকই আঁকতে হবে সেটাই আমাদের সত্যিকার দেশকে রিপ্রেজেন্ট করে। তা যদি প্রিমিটিভ হয় , তাহলে তাই। ফর্ম ভাঙা, এবস্ট্রাকশন এগুলো মর্ডাণ কোন ব্যাপার না অনেকে ওয়েস্টে পড়াশুনা করতে গেছে, সেখানে কিন্তু তাদের টির্চি মেথড নেই। ওটা আফটার এডুকেশন এখনকার কেউ কেউ হয়তো কোন ইনফ্লুয়েন্স থেকে আঁকছে। সমাজে অবশ্যই অসুন্দর আছে, ভাঙন আছে, তাই বলে আর্টিস্টকে তা ভেঙে-চুরেই দেখাতে হবে এমনতো কোন কথা নেই। ছবি এমন হওয়া উচিৎ যা দেখে মানুষ নিজেকে ভালবাসতে পারে, জীবনকে ভালবাসতে পারে''

সুলতানের নিজের কথাতে এবং ছবিতে আমরা তাঁকে খুঁজে পাই। তিনি নিজেকে কখনও আউট সাইডার মনে করতেন না, প্রশ্ন জাগে তিনি ইউরোপ ছেড়ে এলেন কেন, কেনইবা তিনি নড়াইলে স্থিত হলেন? মধ্যে অনেক বছর ছবি আঁকেননি সেটাও বা কেন? তিনি আসলে নগর জীবনের লক্ষহীন ব্যস্ততা, ছুটে চলা পছন্দ করতেন না, এত ছুটে চলা তিনি অহেতুক মনে করতেন। তার কথায় কাজে যদি সততা না থাকে তাহলে গ্রামই বা কী শহরই বা কি!

তিনি কোন এক সাক্ষাতকারে তাঁর ছবির মানুষগুলো কেন এতো বড় প্রসঙ্গে তিনি বলেন- ''আমি কৃষকদের কাছে থেকে দেখতে শুরু করলাম এবং ওদের সাথে থাকতাম, এত কাছে থেকে দেখতাম যে, ফ্রগ' আই ভিউ থেকে দেখতে শুরু করলাম। অর্থাৎ আগে যেমন বেশি ছোট দেখতাম, এখন রিয়েল থেকে আরও বেশি রিয়েল, বেশি বড় দেখি ওদেরকে।' অর্থাৎ ইন মেটাফরিক্যাল সেন্স, সে বলছে আমাকে যে, 'আসলে আমি তো আগে দেখতাম ওদেরকে দরিদ্র; দূর থেকে মনে হতো, বাংলাদেশের, আমার দেশের গরীব কৃষক কত দরিদ্র। ফলে ওদেরকে আমি ছোট করেই দেখতাম হয়তো। কিন্তু যখন ওদের মধ্যে থাকলাম তখন আমি ওদের দারিদ্র্যটা আর খুব একটা বেশি দেখি না। আমি অবাক হয়ে যাই এটা দেখে যে, ওরা এই দারিদ্র, দারিদ্র্যতার পরেও কী অসীম আত্মবল এবং মনোবল ওদের এবং ওদের মধ্যে যে মানসিক শক্তি বা আভ্যন্তরীণ শক্তি, ইনার ইন্সটিংক্ট সেটা দিয়ে ওরা জীবনকে, জীবনের সাথে স্ট্রাগল করে যুদ্ধ করে চলছে। ওরা কখনোই পরাজিত হয় না। আমার কাছে মনে হয়েছে, ওইটাই হচ্ছে ওদের আসল পরিচয়। দারিদ্র্য ওদের মূল পরিচয় নয়। ওদের পরিচয় হচ্ছে দারিদ্র্যতার, এর পরেও ওরা যে কী করে টিকে থাকে, এত কনফিডেন্টলি, ভেতরের শক্তি যদি না থাকে তাহলে তো ওরা পারত না। তো আমি এই ভিতরের শক্তিটাই দেখাতে চেয়েছি, মানে আউটার ম্যানিফেস্টেসন।''

সেই বড় মনের মানুষদের এঁকেছেন তিনি পেশীর শক্তিতে বলীয়ান করে। আসলে এইটা তাঁদের বাইরের রূপ নয়, ভেতরের রূপ। সুলতান ভ্যান গঘের ছবির মধ্যে কোথায় যেন মিল খুঁজে পাওয়া যায়। দুটি ভিন্ন সময়ে, ভিন্ন দুটি অঞ্চলে- ভিন্ন সমাজে জন্ম নিয়ে বেড়ে উঠেও তাঁরা যেন কত আপন, কত না কাছাকাছি। আঁকার স্টাইল বা ফর্মে নয়, আমার অনুভবে যেন তাঁরা এক। একই আত্মার যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করে দেখি,সুলতানের ছবি জীবনের কথা বলে, একই সাথে ভ্যান গঘের ছবিও তাই। ভ্যান গঘের ছবি দেখলে একটা বিষয়ই মনে আসে, মানুষের প্রতি দরদের জায়গাটি, অকৃত্রিম খাঁটি। সুলতানের ক্ষেত্রেও তাই। মূল বিষয় মানুষ। এই মানুষ কিন্তু শহুরে, বা সভ্য জগতের মানুষ নয়, কেউকেটা টাইপের তো নয়ই, এরা একান্ত গ্রামীণ, অভাবী খেটে খাওয়া। সুলতান ভ্যান গঘ উভয়ের সম্পর্কেই একই অভিযোগ ছিল, তাঁরা নাকি মানুষের এনাটমি জানেন না। কিন্তু এই মিলের চেয়েও বড় মিল হলো এই যে, তাঁদের সৃষ্ট এই এনাটমি না মানা কিম্ভুত মানুষেরা যেন জীবনের আধার। আমাদের কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের কৃষকরাই সুলতানের প্রধান আকর্ষণের বিষয়। সুলতানের ছবির বিশালাকায় পেশীবহুল কৃষক কৃষক পতœ জীবন জীবিকায় ব্য¯ত। কখনো ফসলের মাঠে, কখনো নদীতে নৌকায় কাটা ফসল তোলাতে, কখনো জলাশয়ে মাছ ধরতে, কখনো উঠোনে ধান মাড়াই করতে, কখনো অলস দুপুরে হাতের কাজ সারতে দেখা যায়। কিষাণীকেও দেখা যায় গরুর দুধ দোয়ানোর কাজে, কিষাণের সাথে কাঁধ মিলিয়ে মাড়াই কাজ করতে, বা কখনো পুষ্করিনী থেকে পানি আনতে, ঢেকিতে ধান ভানতে, ধান ঝাড়তে, কখনো অলস দুপুরে সখীর চুল আচঁড়াতে।
তাঁর কাজের ফিলিংস, মূলত এই নিত্যনৈমত্তিক জীবন। সেকারণে সুলতানের ছবিতে সুন্দরী, মোহিনী নারী চরিত্র পাওয়া যায় না। কেননা দুধে আলতা গাত্রবর্ণ, পরিপাটি বেশ গহনা পরিহিতা, মসৃণা অনড়-অকর্মণ্য রমনী পুতুল সদৃশ সৌন্দর্য তৈরী করলেও, সুলতানের ছবির কর্কশ-কর্মঠ, প্রাণচঞ্চল নারী-চিত্রের মত জীবন সেখানে পাওয়া যায় না। এমনকি সুলতানের ছবিতে চুল আচঁড়াতে ব্যস্ত নারীদের দেখেও মনে হয়, এরা যেন একটু আগেই ধান মাড়াই দিয়েছে, বা হেসেল ঠেলেছে, বা গাভী দোহন করেছে।
কৃষকের পেশী, পেশী তো শক্তিরই অপর নাম। সাধারণভাবে আমরা আমাদের হতদরিদ্র কৃষকদের কথা ভাবলেই চোখে ফুটে ওঠে হাড়জিড়ে হালকা পটকা কিছু মানুষের কথা। কিন্তু এই হাড়জিড়ে মানুষই কিন্তু দিনরাত অবিরাম কঠোর পরিশ্রম করে, সে লাঙ্গল চাষ করে, কোদাল দিয়ে মাটি কোপায়, বীজ দেয়, চারা বোনে, সেচ দেয়, ফসল কাটে, মাড়াই করে। এসব কাজ আমাদের কৃষকের শক্ত দুহাতই সমাধা করে। সেই শক্ত হাত-পায়ের পেশী আমরা সুলতানের চোখে দেখি আর কৃষকদের নতুন করে আবিষ্কার করি।
সুলতানের ছবির নারী, সে কিন্তু কামনীয় নয়, পুরুষের মনোরঞ্জনই নারীর জীবন নয়, সেও কাজ করে এবং শক্তি ধরে। ভ্যান গঘের নারীও একই ভাবে কুৎসিত, সমসাময়িক সকল শিল্পীদের কামনীয় -মোহনীয় নারীর তুলনায় তো বটেই। কুৎসিত, কিন্তু শক্ত-সামর্থ্য; অভাবী কিন্তু পরাজিত নয়। এবং এভাবেই সুন্দর, এই সৌন্দর্য দেহবল্লবীর নয়, এটি জীবন সংগ্রামের

ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের ছবিতেও তো তাই। ঘুরে ফিরে এসেছে কৃষকেরা, শ্রমিকেরা, নারীরাও সেসব পরিবারের। অভাবী, হতদরিদ্র। ভ্যান গঘের পটেটো ইটার্স ছবিটি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়েই থাকি। সুলতানের মত করে বলি, "দরিদ্র একটা ক্ষুধার্ত পরিবার নিবিষ্ট মনে আলো-আঁধারিতে বসে কটা আলু খাচ্ছে, একটা কষ্টের ছবি অথচ সেখানেও একটা বিউটি আছে, সেটা ইন্সপায়ার করে। ছবি এমন হওয়া উচিৎ- যা দেখে মানুষ নিজেকে ভালোবাসতে পারে, জীবনকে ভালোবাসতে পারে"
ভ্যান গঘের ছবিও একইভাবে মেহনতি মানুষের প্রতিধ্বনি করে। খনি মজুর দিয়ে শুরু, এরপরে তিনি ক্রমাগত এঁকে গেছেন কৃষকদের, শ্রমিকদের। যখন প্রকৃতিকে ধরেছেন, তখনও জীবনকে দেখেছেন, রঙ্গের খেলায় জীবনকেই আমরা তাই পাই, এমনকি তাঁর স্টিল লাইফও তাই অন্যদের স্টিল লাইফের মত 'স্টিল' নয়। তাঁর স্টিল লাইফ "শুজ" ছবিটি দেখলেই বোঝা যায়, জুতা জোড়া কোন শ্রমিকের, অথবা কৃষকের, জরাজীর্ণ, ছিড়ে যাওয়া কিন্তু বাতিল নয়। যেন এই মাত্র কোন মজুর কাজ শেষে খুলে রাখলো, অথবা কোন মজুর এখনি হয়তো ওটা পরে রওনা দিবে তার কর্মক্ষেত্রে। ওই জুতা জোড়াই যেন এখানে যুদ্ধ করছে, জীবন যুদ্ধ এবং সেটি পরাজিত নয়। অনেকটা এই জুতা জোড়াই যেন সংগ্রামরত মানুষের প্রতিচ্ছবি।
সুলতান বলছিলেন, "দরিদ্র একটা ক্ষুধার্ত পরিবার নিবিষ্ট মনে আলো-আধারিতে বসে কটা আলু খাচ্ছে, একটা কষ্টের ছবি অথচ সেখানেও একটা বিউটি আছে, সেটা ইন্সপায়ার করে ছবি এমন হওয়া উচিৎ- যা দেখে মানুষ নিজেকে ভালোবাসতে পারে, জীবনকে ভালোবাসতে পারে"

এই যে, জীবনকে এভাবে তুলে ধরতে পারা, সেটি সম্ভব হয়েছে কেননা তাঁরা দুজনই জীবনকে খুব কাছ থেকে অনুভব করতে পেরেছেন। এস এম সুলতান তাই জীবনের, মানুষের, প্রকৃতির শিল্পী ছিলেন। এমনকি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের প্রতি, বিশেষত খেটে খাওয়া মানুষের প্রতি ভালোবাসাই তার মধ্যে গড়ে তুলেছে অনন্য এক জীবনবোধ। বাঙালী মুসলমান বিষয়ে তাঁর মত জানতে চাইলে তাইতো তিনি অকপটে বলেন, "ওসব তো সব চক্রান্ত। বাঙালির কোনো ধর্ম নাই, নবী নাই। ওসব হোসেন শাহ আর সব গৌড়ের সুলতানদের চক্রান্ত। বাঙালি ক্যারেক্টারটা পাওয়া যায় গৌড়ের ইতিহাসটা পড়লে। তখন হিন্দু মুসলামান সবাই বৈষ্ণব পদাবলী লিখত। কৃত্তিবাস, বিদ্যাপতি, আফজল খাঁ, মালাধর বসু এঁরা সব রাজকবি। এঁরা বৈষ্ণব পদ লিখেছেন। মুসলমানরাও লিখেছে। মুসলমানদের এক ইউসুফ-জুলেখা লেখা হয়েছে। এসব বেসিকেলি সব সেক্যুলার বই। রামায়ণ ছিল কাব্য, ওটাকে ধর্মগ্রন্থ করেছে সামন্ত প্রভুরা, ওরাই সব ডিভিশন করেছে। ….. বাঙালির কোন অলি-দরবেশ নেই, তোমরা তো অলি হতে পারবে না, তাই আল্লাহ আল্লাহ করো। ……. বাঙালির বেসিক কিছু গুণ আছে, সে ত্যাগী, সংযমী, সরল, সত্যবাদী, অতিথিপরায়ন। আর আমাদের মধ্যে অনেক বড় মাপের অ্যাবসেলিউট থিংকার তৈরি হয়েছে, সেক্যুলার থিংকার। কালিদাস, বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস, জয়দেব, তারপরে মধুসুদন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল।বিদ্যাসাগর আরেকজন বড় মানুষ। মধুসুদনের মেঘনাদবধকাব্য, তিলোত্তমাসম্ভব, শর্মিষ্ঠা এগুলো রিলেজিয়াস মোটিভ নিয়ে লেখা হলেও ওগুলো আসলে অসাম্প্রদায়িক" ঈশ্বর সম্পর্কে আপনার কী ভাবনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলে সহজেই বলেন, "কোন ভাবনা নেই। আমি যখন পাতার রঙ দেখি, আকাশ দেখি তখন ভাবি, যদি কেউ থেকে থাকে সে খুব বড় মাপের একজন আর্টিস্ট" এস এম সুলতান তাই জীবনের পাশে থেকে প্রতিনিয়তই জীবনেরই প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছিলেন। বড় জীবনবোধের শিল্পী তাই তিনি আমাদের কেবল ছবি উপহার দেননি, দিয়েছেন জীবনবোধের আকর



__._,_.___


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___